শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে (১৮৭৬-১৯৩৮) নানা দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন করা যায়। তার সাহিত্যের জনপ্রিয়তা তাকে উপমহাদেশের ভিনভাষী, ভিনজাতির ঘরে-ঘরে পৌঁছে দিয়েছে। সমগ্র উপমহাদেশে তিন ‘চন্দ্র’ই কথাসাহিত্যে রাজত্ব করেন। বাঙলা সাহিত্যে শরৎচন্দ্র, হিন্দি সাহিত্যে প্রেমচন্দ (১৮৮০-১৯৩৬)১ ও উর্দু সাহিত্যে কৃষণ চন্দর (১৯১৩-১৯৭৮)২। তিনজনই সমান জনপ্রিয়। ভারতবর্ষের প্রায় প্রতিটি রাষ্ট্রীয় এবং রাজ্যভাষায় তাদের সাহিত্য অনূদিত হয়েছে। তাদের কারও জনপ্রিয়তাই সস্তার প্রতিশব্দ হিসেবে আসেনি। তাদের সাহিত্যমান উঁচুদরের। পাশ্চাত্যে তাদের পাঠক, সমালোচক, গবেষক ও ভক্ত-অনুরাগী রয়েছে।
আবার দেখা যায়, তিনি বাঙলা সাহিত্যের অঙ্গনে প্রধান ছয়জন কথাসাহিত্যিকের অন্যতম। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৩৮-১৮৯৪), রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১), বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯৪-১৯৫০), তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯৮-১৯৭১) এবং মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়; তাঁদের মধ্যে কালক্রমে শরৎচন্দ্রের অবস্থান তৃতীয়, আর জনপ্রিয়তায় প্রথম। অবশ্য সাহিত্যমানের বিষয়ে নানা মুনির নানা মত।
উত্তর-আধুনিক শিল্প সাহিত্যকে লেখক-শিল্পী নয়, দর্শক-শ্রোতা-পাঠক নির্ভর গণ্য করা হয় পাশ্চাত্যে। কিন্তু আমাদের দেশের বেশির ভাগ পাঠক সেই মানে পৌঁছে গেছে, এমন ভাবা যায় না। আর যেহেতু শরৎচন্দ্র আধুনিক যুগের লেখক, তাই তাঁকেও আধুনিক বিচারভঙ্গিতে বিচার করা উচিত। আধুনিক যুগে সাহিত্যসমালোচনার যতগুলো পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়েছে, তার মধ্যে প্রায় সবগুলোতেই লেখককে জানার প্রয়োজনীয়তা ছিল। ক্রিয়া এবং কর্ম কর্তারই অনুসারী, তাই সাহিত্যিককে জানতে পারলে তাঁর সাহিত্যকর্মকে ভালোভাবে জানা সম্ভব।
সাহিত্যিককে জানার দুটি পথ আছে। প্রথমটি, লেখকের জীবনী, আলোচনা, সমালোচনা, বিচার বিশ্লেষণমূলক প্রবন্ধ-নিবন্ধ পাঠ করা। দ্বিতীয়টি, লেখকের আত্মজীবনী, স্মৃতিকথা, ভ্রমণকাহিনী, সমালোচনা প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকার পাঠ করা।
বাঙলা সাহিত্যের প্রধান ছয়জন (পূর্বে উল্লিখিত) কথাসাহিত্যিকের মধ্যে বঙ্কিমচন্দ্রের ‘লোকরহস্য’ (১৮৭৪), ‘বিজ্ঞানরহস্য’ (১৮৭৫), ‘কমলাকান্তের দপ্তর’ (১৮৭৫), ‘বিবিধ সমালোচনা’ (১৮৭৬), ‘সাম্য’ (১৮৭৯), ‘বিবিধ প্রবন্ধ’ (১৮৮৭), এবং ‘ধর্মতত্ত্ব’ (১৮৮৮) লেখকের চিন্তাধারা বোঝার জন্য উল্লেখযোগ্য সাক্ষ্য বহন করে। ৩
রবীন্দ্রনাথের ‘আলোচনা’ (১৮৮৫), ‘সমালোচনা’ (১৮৮৮), ‘পঞ্চভূত’ (১৮৯৭), ‘প্রাচীনসাহিত্য’ (১৯০৭), ‘লোকসাহিত্য’ (১৯০৭), ‘সাহিত্য’ (১৯০৭), ‘আধুনিক সাহিত্য’ (১৯০৭), ‘শিক্ষা’ (১৯০৮), ‘ছন্দ’ (১৯৩৬), ‘সাহিত্যের পথে’ (১৯৩৬), ‘সাহিত্যের স্বরূপ’ (১৯৪৩), প্রভৃতি তার সাহিত্য চিন্তাধারা বহন করার মতো প্রবন্ধগ্রন্থ। ‘জীবনস্মৃতি’ (১৯১২), ‘ছেলেবেলা’ (১৯৪০) প্রভৃতি আত্মজীবনী। আরও আছে নয়টি ভ্রমণকাহিনী ও বারোটি পত্রসংকলন। এক রবীন্দ্রনাথকে জানা ও বোঝার জন্য অজস্র উপাদান।
বিভূতিভূষণ গল্প-উপন্যাস ছাড়াও লিখেছেন ‘বিচিত্র জগৎ’ (১৯৩৭), ‘আমার লেখা’ (১৯৬১), ‘স্মৃতির রেখা’ (১৯৪১), ‘তৃণাঙ্কুর’ (১৯৪৩), ‘উৎকর্ণ’ (১৯৪৬), ‘অন্তরঙ্গ দিনলিপি’ (১৯৭৬) প্রভৃতি। এগুলো ছাড়া আরও কিছু স্মৃতিকথা, প্রবন্ধগ্রন্থ ও ভ্রমণকাহিনী আছে। যেমন, ‘অভিযাত্রিক’ (১৯৪১), ‘বনে পাহাড়ে’ (১৯৪৫) ও ‘হে অরণ্য কথা কও’ (১৯৪৮)। এ তিনটি ভ্রমণকাহিনী পড়লে তাঁর প্রকৃতিপ্রেম এবং পরিবেশজ্ঞান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। ব্যক্তিজীবনের সরলতার উৎস এবং ‘আরণ্যক’ (১৯৪৯) উপন্যাসের চরিত্রদের বোঝা যায়। ৬
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ষাটটি উপন্যাস আর অনেক গল্প, ৬টি নাটক ও অনেক গান লিখেছেন। স্মৃতিকথা লিখেছেন ‘আমার কালের কথা’ (১৯৫১), ‘আমার সাহিত্য জীবন’- প্রথম খণ্ড (১৯৫৩), দ্বিতীয় খণ্ড (১৯৬২)। এছাড়া ‘লেখার কথা’ (?), ‘যে বই লিখতে চাই’ (?), ‘আমার চোখে কপালকুণ্ডলা’ (?), ‘আমি যদি আমার সমালোচক হতাম’ (?), ‘ইতিহাস ও সাহিত্য’ (?), ‘রবীন্দ্রনাথ ও বাংলার পল্লী’ (?) ইত্যাদি প্রবন্ধ-সমালোচনাগ্রন্থ রয়েছে। ‘মস্কোতে কয়েকদিন’ নামে আছে ভ্রমণ কাহিনীও। বিপুল পরিমাণ গল্প-উপন্যাস-নাটক ও গান ভালোভাবে বুঝতে হলে তারাশঙ্করের এসব রচনা পাঠ করা প্রয়োজন।৭
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় অল্পসময়ে অনেক বেশি লিখেছেন। তবে তাঁর প্রবন্ধগ্রন্থ মাত্র একটি, ‘লেখকের কথা’ (১৯৫৭)৮। প্রবন্ধ-নিবন্ধ কম লেখা এবং তাঁর সম্পর্কে পাঠকের কৌতূহল বেশি থাকার কারণে বইটি বহুল আলোচিত। ওই গ্রন্থভুক্ত ষোলোটি প্রবন্ধ ছাড়াও বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত অনেক প্রবন্ধ-নিবন্ধ অগ্রন্থিত রয়ে গেছে।৮
এবার আমাদের আলোচ্য লেখক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে আসি। তাঁর রচনার পরিমাণ অনেক। তবে প্রবন্ধগ্রন্থের সংখ্যা মাত্র তিনটি। ‘নারীর মূল্য’ (১৯২৪), ‘তরুণের বিদ্রোহ’ (১৯৩০) ও ‘স্বদেশ ও সাহিত্য’ (১৯৩২)।৯ তাঁরও অনেক প্রবন্ধ-নিবন্ধ, ভ্রমণকাহিনি, স্মৃতিকথা, সমালোচনা, রাজনৈতিক প্রবন্ধ, ভাষণ-অভিভাষণ, শোকপ্রস্তাব, মানপত্র, পুস্তক সমালোচনা এবং চিঠিপত্র বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে, গ্রন্থভুক্ত হয়নি। নারীর মূল্যের মতো ‘মূল্য’ সিরিজে অনেকগুলো প্রবন্ধ লেখার ইচ্ছা ছিল, বেঁচে থাকলে হয়তো লিখতেন।১০ তবে শরতের প্রবন্ধসাহিত্য অনালোচিত এবং অবহেলিত রয়ে গেছে।
নারীর মূল্য
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম প্রবন্ধগ্রন্থ নারীর মূল্য প্রথম প্রকাশিত হয় ১৩২০ সনের বৈশাখ থেকে আষাঢ় এবং ভাদ্র থেকে আশ্বিন সংখ্যা ‘যমুনা’ পত্রিকায়। যমুনা ফণীন্দ্রনাথ পাল সম্পাদিত মাসিক সাহিত্য পত্রিকা। প্রবন্ধটি শরৎচন্দ্রের বড়দিদি অনিলা দেবীর নামে প্রকাশিত হয়। ‘যমুনা’ এ যুগের লিটল ম্যাগাজিন। এর প্রকাশনা বার বার বিঘ্নিত হয়েছে। প্রথম যখন ধীরেন্দ্রনাথ পালের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়। এর পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিল মাত্র ১৬। আকার ২৩X১৫ সেমি। দ্বিতীয়বার প্রকাশিত হয় ধীরেন্দ্রনাথ পালের মৃত্যুর পরে ফণীন্দ্রনাথ পালের সম্পাদনায় ৩২ পৃষ্ঠায়। আকার ২৩X১৮ সেমি। শরৎচন্দ্রও কয়েক মাস কাগজটি সম্পাদনা করেছেন। তিনি এটিকে ছোটকাগজই বলেছেন।১১
পত্রিকা ছোট, লেখক কম, তাই পত্রিকার স্বার্থে শরৎচন্দ্রকে তিনটি নামে লিখতে হয়েছে। ১৯১৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারিতে রেঙ্গুন থেকে ফণীন্দ্রনাথ পালকে এক চিঠিতে লিখেছেন,
‘আমার তিনটে নাম
সমালোচনা প্রবন্ধ প্রভৃতি- অনিলা দেবী
ছোটগল্প- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
বড়গল্প- অনুপমা।
সমস্তই এক নামে হলে লোকে মনে করবে, এই লোকটি ছাড়া আর বুঝি এদের কেউ নেই।’ ১২
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, নারীবাদী লেখক ড. হুমায়ুন আজাদ তাঁর বিখ্যাত ‘নারী’ গ্রন্থে জানিয়েছেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সমকালীন নারী লেখকদের প্রতিভা এবং জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে নারীর নাম ধারণ করে ‘নারীর লেখা’ নামে একটি নারীবিদ্বেষী প্রবন্ধ লেখেন। নারীর লেখা প্রবন্ধটিতে যাই লেখা থাক না কেন, শরৎচন্দ্র কেন অনিলা দেবী নামে লিখতেন এ তথ্যটুকু ড. হুমায়ুন আজাদের অজানা থাকাটা দুঃখজনক।
নারীর মূল্য প্রথম গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় চৈত্র ১৩৩০ বঙ্গাব্দে, ১৮ মার্চ ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে। মাঝখানের দশ বছরে এ রচনা নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বয়ে গেছে। শরৎচন্দ্রের লেখা চিঠিপত্র থেকে জানা যায়।
‘নারীর মূল্য’ মূলত সাহিত্যগ্রন্থ না কি সমাজতাত্ত্বিক গবেষণাগ্রন্থ বইটি পড়ার সময় মনে বারবার এ প্রশ্ন ওঠে। কোনও সাহিত্যগ্রন্থের উদ্ধৃতি ব্যবহার করা হয়নি এ গ্রন্থে, অথচ সমাজতত্ত্ব ও নৃতত্ত্বের অজস্র উদ্ধৃতি ব্যবহার করা হয়েছে প্রসঙ্গক্রমে।
‘নারীর মূল্য’ যদিও ব্যক্তিনিষ্ঠ প্রবন্ধের ঢংয়ে লিখিত (তখনকার বেশিরভাগ প্রবন্ধেই লেখকের আমিত্ব নিয়ে অনুপ্রবেশ ছিল স্বাভাবিক। তবু এটিকে সাহিত্যিক প্রবন্ধ না বলে সামাজিক বিজ্ঞানের গবেষণা প্রবন্ধই বলা ভালো। দেশ-বিদেশের অজস্র তথ্যের সন্নিবেশ ঘটানো হয়েছে। প্রবন্ধটি একটানা এবং দীর্ঘ- পঞ্চাশ পৃষ্ঠারও বেশি। পরিচ্ছেদ বিভাগ নেই। পাঠকের অখণ্ড মনোযোগ দাবি করে।
প্রবন্ধের সর্বশেষ অনুচ্ছেদটি হারবার্ট স্পেনসারের বিশাল উদ্ধৃতি। এর আগের অনুচ্ছেদটিতে লেখকের প্রবন্ধ রচনার উদ্দেশ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
‘নারীর মূল্য কেন হ্রাস পাইয়াছে এবং বাস্তবিক পাইয়াছে কিনা এবং মূল্য হ্রাস পাইলে সমাজে কি অমঙ্গল প্রবেশ করে এবং নারীর উপর পুরুষের কাল্পনিক অধিকারের মাত্রা বাড়াইয়া তুলিলে কি অনিষ্ট ঘটে, তাহা নিজের কথায় ও পরের কথায় বলিবার চেষ্টা করিয়াছি- এই মাত্র।’
শরৎচন্দ্র একেবারে তরুণ বয়সে লেখালেখির জগতে আসেননি; এসেছেন মধ্য তিরিশের পরে। তবে লেখক জীবনের শুরুর দিকের রচনা বলে এখানে বেশ সাহস দেখিয়েছেন। যে উদ্দেশ্য নিয়ে প্রবন্ধটি রচনা করেছেন, তা করতে গিয়ে শাস্ত্রের অসম্মান করা হয়েছে কি না, দেশাচারের ওপর কটাক্ষ করা হয়েছে কি না তা ভেবে কোথাও থামেননি। লিখেছেন, ‘যাহা সত্য তাহাই বলিব এবং বলিয়াছিও, অবশ্য ফলাফলের ভার পাঠকের ওপর।’
প্রবন্ধটির তথ্য ও বক্তব্য চারটি সূত্রে গৃহীত হয়েছে দেখা যায়।
১. লেখকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, ধারণা ও বক্তব্য।
২. লেখকের জানা, শোনা ঘটনা, বক্তব্য এবং আলোচনা।
৩. দেশের বিভিন্ন লেখকের রচনা থেকে গৃহীত ধারণা ও উদ্ধৃতি।
৪. বিদেশি লেখকদের গ্রন্থ থেকে আহরিত ধারণা, মন্তব্য এবং উদ্ধৃতি।
শরৎচন্দ্রের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা যাই থাকনা কেন, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং পড়াশোনা বিপুল। তাঁর বাবার লেখালেখির হাত ছিল। বন্ধু-বান্ধবী, মামা ও দিদিরও লেখালেখির অভ্যাস ছিল। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছতে পারেনি, এজন্য ব্যক্তিগত জীবনে বিপুল পড়াশোনা করে সে ক্ষতিপূরণ করার চেষ্টা করেছেন। প্রমথ চৌধুরীর কথা তাঁর ক্ষেত্রেও সত্য; ‘শিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত।’
কানপুর প্রবাসী ‘মিলন’ উপন্যাস-খ্যাত লীলারাণী বন্দ্যোপাধ্যায়কে শরৎচন্দ্র ছোটবোনের মতো স্নেহ করতেন। ২৪ আগস্ট ১৯১৯ তারিখে তাঁকে লেখা এক চিঠিতে জানিয়েছেন, ‘আমার বিদ্যেসিদ্যে কিছু নেই। বড় দরিদ্র ছিলাম- ২০ টি টাকার জন্য একজামিন দিতে পাইনি। এমন দিন গেছে যখন ভগবানকে জানাতাম, হে ভগবান, আমার কিছুদিনের জন্য জ্বর দাও তা’হলে দু’বেলা খাবার ভাবনা ভাবতে হবে না, উপবাস করেই দিন কাটবে। অবশ্য বেশিদিনের জন্য এ অবস্থা ছিল না। মায়ের মৃত্যুর পরে বাবা পাগলের মতো হয়ে যা কিছু ছিল সমস্ত বিলিয়ে নষ্ট করে দিয়ে স্বর্গগত হন। তারপরে পড়তে শুরু করি। ১৪ বছর ১৪ ঘণ্টা ধরে পড়ি। সেই যে একজামিন দিতে পারিনি, কেবল সেই রাগে।’ ১৩
সেই ১৪ বছর পর্যন্ত দৈনিক ১৪ ঘণ্টা করে পড়ার কিছুটা প্রমাণ পাওয়া যায় ‘নারীর মূল্য’তেই। এত তথ্যের সম্ভার আর কোনও রচনায় নেই। ব্যক্তিগত চিঠিপত্রে কিছুটা আছে।
শরৎচন্দ্রের বহুভাষিতাও সমৃদ্ধ। ভবঘুরের মতো ঘুরে বেড়ানোর ফলে ভারতের বিভিন্ন ভাষা জানা ছিল। বার্মিজ ভাষা জানতেন রেঙ্গুন থাকার ফলে। বার্মিজ ভাষা ও সংস্কৃতি ভালোভাবে না জানলে ‘ছবি’র মতো গল্প তার হাত দিয়ে রচিত হতো না। পাশ্চাত্য সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে গভীরভাবে জানার জন্য অতি প্রয়োজনীয় ইংরেজি তো জানতেনই ফরাসিও শিখেছিলেন। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে অভিজাত ফরাসি ভাষার চর্চা ছিল। ছিল প্রমথ চৌধুরীদের বাড়িতেও। ইন্দিরা দেবী ছিলেন এ বাড়ির বউ। তিনি কাকা রবীন্দ্রনাথকে ফরাসি শেখাতেন। ২০ শে বৈশাখ ১৩৩৭ বঙ্গাব্দে রাধারাণী দেবীকে লেখা এক চিঠিতে শরৎচন্দ্র ফরাসি বর্ণমালায় দুই লাইনের কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে প্রসঙ্গক্রমে ফরাসি ভাষার কথা জানান।১৪
কাজেই শরৎচন্দ্রের উচ্চতর জ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে কারও সন্দেহ থাকার কথা নয়। তিনি প্রমথ চৌধুরীর ভক্ত। তাঁকে বোধহয় শ্রদ্ধা করতেন রবীন্দ্রনাথের চেয়ে বেশি। শরৎচন্দ্রের হালকা কথায় ভারী বিষয় লেখার অভ্যাসটা বোধ হয় প্রমথ চৌধুরীর কাছ থেকে পাওয়া। তবে কথাসাহিত্যিক হিসেবে শরৎচন্দ্র অনেক বড় এ লক্ষণটা তাঁর প্রবন্ধ সাহিত্যেও দেখা যায়।
শরৎচন্দ্র মনে করেন, দুনিয়ায় যা কিছু সত্য ঘটে, নির্বিচারে তাকেই সাহিত্যের উপকরণ করলে সত্য হতে পারে, সত্য-সাহিত্য হয় না। এভাবে তিনি ধর্ম, নীতি ও সত্যের সঙ্গে শিল্পের পার্থক্য নিরূপণ করেছেন।
‘নারীর মূল্য’ প্রবন্ধটি তিনি শুরু করেছেন নারীর উপযোগ মূল্য নির্ণয়ের ভঙ্গি দিয়ে। শরৎসাহিত্যে হিউমার ও স্যাটায়ার উভয়ই আছে। তিনি হিউমার বেশি ব্যবহার করেছেন বলে স্যাটায়ার হয়ে উঠেছে খুবই সূক্ষ্ম। গভীর মনোযোগ দিয়ে না পড়লে অনেক সময় ধরা যায় না। এ প্রবন্ধের শুরুটাও অনেকটা এমন, ‘মণি-মাণিক্য মহামূল্যবান বস্তু, কেননা তাহা দুষ্প্রাপ্য। এই হিসাবে নারীর মূল্য বেশি নয়, কারণ সংসারে ইনি দুষ্প্রাপ্যা নহেন।’
আবার অন্যত্র লিখেছেন, ‘সুসভ্য মানবের সংযত শুভবুদ্ধি যে অধিকার রমণীজাতিকে সমর্পণ করতে বলে, তাহাই মানবের সামাজিক নীতি এবং তাহাতেই সমাজের কল্যাণ হয়। কোন একটা জাতির ধর্মপুস্তকে কি আছে না আছে, তাহাতে হয় না। নারীর মূল্য বলিতে আমি এই নীতি ও অধিকারের কথাই এতদূর পর্যন্ত বলিয়া আসিতেছি। Supply Ges Demand-এর কথাও বলি নাই।
এ প্রবন্ধে নারী সম্পর্কে দশটি দিকে আলোকপাত করেছেন লেখক। দিকগুলো নিম্নরূপ:
১. এশিয়া, আফ্রিকা, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এমনকি ইউরোপের বিভিন্ন জাতির প্রাচীন সমাজে নারীর অবস্থান।
২. বিভিন্ন মহাদেশে, বিভিন্ন রাষ্ট্রে নারীর সমকালীন অবস্থা।
৩. বিভিন্ন আদিবাসী সমাজে নারীর অবস্থান।
৪. বিভিন্ন ধর্ম বা শাস্ত্রে নারীর অবস্থান।
৫. দেশ-বিদেশের মনীষীদের মতামত।
৬. সিংহ এবং অন্যান্য ইতর প্রাণীর মধ্যে স্ত্রী প্রজাতির প্রতি পুরুষ প্রজাতির আচরণ এবং মানব (সভ্য) সমাজে তার প্রভাব।
৭. নারী নির্যাতনের ইতিহাস।
৮. নারীর অবমূল্যায়নে লিঙ্গ নির্বিশেষে সব শিশুর প্রতি অবহেলা দেখা দেওয়া।
৯. নারী পুরুষ সম্পর্কের চারটি সূত্র নির্ণয় ও বিশ্লেষণ (স্ত্রী, ভগিনী, কন্যা ও জননী)।
১০. অ্যাডাম স্মিথের মূল্যতত্ত্বের মাধ্যমে দেখিয়েছেন চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে নয়, নারীর মূল্য প্রাকৃতিক কারণে।
এ যুগের নারীবাদীরা শরৎচন্দ্রের এ গ্রন্থের মতো তথ্যবহুল গ্রন্থ খুব বেশি রচনা করতে পারেননি আজ পর্যন্ত। তবে তারা লেখকের সঙ্গে দুটি বিষয়ে সম্ভবত একমত হবেন না।
প্রথম বিষয়: পুরুষের সমস্ত কাজ নারী করতে পারে না এবং নারীর সমস্ত কাজও পুরুষ করতে পারে না।
দ্বিতীয় বিষয়: লেখকের ভাষায়, ‘নারীর মূল্য নির্ভর করে পুরুষের স্নেহ, সহানুভূতি ও ন্যায়ধর্মের উপরে। ভগবান তাহাকে দুর্বল করিয়াই গড়িয়াছেন।’
তরুণের বিদ্রোহ
‘তরুণের বিদ্রোহ’ প্রবন্ধটি ১৯২৯ সালের ৩০ মার্চ রংপুর বঙ্গীয় যুব সম্মিলনীর অধিবেশনে সভাপতির অভিভাষণ। পরে এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় সে বছরই পরের মাসে। ১৮ এপ্রিল ১৯২৯ সারে কলকাতার সরস্বতী লাইব্রেরি এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশ করে। ১৬ আরেক সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, প্রবন্ধটি ১৩৩৮ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন ও চৈত্র সংখ্যা ‘নারায়ণ’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়। ১৫
১৯৩২ সালের ২৩ আগস্ট প্রবন্ধটি পরিবর্তিত আকারে ২য় সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এবং এ গ্রন্থে ‘সত্য ও মিথ্যা’ নামে আরও একটি প্রবন্ধ অন্তর্ভুক্ত করা হয়।১৬
উল্লেখ্য, ‘নারায়ণ’ সে সময় চিত্তরঞ্জন দাশ (তখনও দেশবন্ধু হননি) সম্পাদিত রবীন্দ্রবিরোধী মাসিক পত্রিকা হিসেবে পরিচিত ছিল। ১৯ বাইরে যত সামাজিকতা এবং বিনয় থাকুক না কেন রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে শরৎচন্দ্রের সম্পর্কে এক ধরনের দূরত্ব ছিল। তা ছিল শিল্পাদর্শ, রাজনৈতিক মতাদর্শ এমনকি ব্যক্তিগত কারণেও। শরৎচন্দ্রের প্রবন্ধ এবং ব্যক্তিগত চিঠিপত্রে তার অজস্র প্রমাণ আছে।
অন্যদিকে চিত্তরঞ্জন দাশ ছিলেন শরৎচন্দ্রের প্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তাঁরই আহ্বানে শরৎচন্দ্র প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে আসেন। ১৯২১ সালে তিনি হাওড়া জেলা কংগ্রেসের সভাপতি পদে নির্বাচিত হন। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি ওই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
মজার ব্যাপার হলো, রবীন্দ্রবিরোধী কাগজে ছাপা হলেও এ রচনায় রবীন্দ্রনাথ, তাঁর লেখা কিংবা তাঁর মতাদর্শের বিরুদ্ধে কিছু লেখা হয়নি। বরং চিন্তার দিক দিয়ে রবীন্দ্রনাথের মতোই মত প্রকাশ করেছেন ‘চরকা’ নিয়ে। যদিও তখন তিনি গান্ধীবাদী কংগ্রেসের জেলা পর্যায়ের নেতা। অবশ্য রবীন্দ্রনাথের ‘কালান্তর’র প্রবন্ধ অনেক পরের রচনা। উভয়েরই ‘চরকা’বিরোধিতা অনেক দিক দিয়ে কাছাকাছি। শরৎচন্দ্র করেছেন এভাবে, ‘আমাদের ওদিকে চাষাভূষো দরিদ্র ঘরের মেয়েদের উদয়াস্ত খাটুনি। তারই ফাঁকে আধঘণ্টা যদি সময় পায়, মহাত্মার আদেশ জানিয়ে চরকার হাতল হাতে তার গুঁজে দিলেও ঘুমিয়ে পড়ে। দোষ দিতে পারিনে। বোধ হয় সত্যিকার প্রয়োজন নেই বললেই এমনি ঘটে।’
কাজী নজরুল ইসলামের ওপর এ প্রবন্ধের যথেষ্ট প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। নজরুলের ‘তরুণের সাধনা’ প্রবন্ধটি নামকরণ এবং বিষয়বস্তুর দিক দিয়ে এ প্রবন্ধের নিকটবর্তী। শুধু স্বভাবগত দিক বিবেচনা করলে দেখা যায়, নামকরণ হয়েছে বিপরীত। শরৎচন্দ্র তাঁর প্রবন্ধ পাঠ করেন ১৯২৯ সালে ৩০ মার্চ রংপুরে। আর নজরুল তাঁর প্রবন্ধ পাঠ করেন ১৯৩২ সালের ৬ নভেম্বর সিরাজগঞ্জে। স্থান ও কাল দু’দিক থেকেই কাছাকাছি। বিষয়বস্তুর মিলও লক্ষণীয়। শরৎচন্দ্র লিখেছেন, ‘তরুণেরা তরুণ জাতি- তাদের আর কোনো নাম নেই।’১৭
আর নজরুল লিখেছেন, ‘ইহাই যৌবন, এই ধর্ম যাহাদের- তাহারাই তরুণ। আমাদের দেশ নাই, জাতি নাই, অন্য ধর্ম নাই।’১৮
একই প্রসঙ্গে শরৎচন্দ্র এবং নজরুলের চেতনাগত মিল থাকার এটাও একটা কারণ হতে পারে যে, চিত্তরঞ্জন ১৯২৫ সালে মৃত্যুবরণ করার কয়েক বছর আগের কয়েকটি বছর রাজনীতিতে এত বেশি ব্যস্ত ছিলেন সাহিত্যচর্চা করার সময় পাননি। ‘নারায়ণ’ একটি রুচিশীল পত্রিকা, কিন্তু সম্পাদকের রাজনৈতিক ব্যস্ততার কারণে এটির অবস্থা খারাপ হতে থাকে; এ সময় পত্রিকাটি বাঁচাতে এগিয়ে আসেন জনপ্রিয় এই দুই লেখক। ‘নারায়ণ’কে কেন্দ্র করে তাদের দুজনের মধ্যে সখ্য গড়ে ওঠে।১৯
এ প্রবন্ধে সাহিত্য নয়, রাজনীতিই মুখ্য আলোচ্যবিষয়। মূলকথাগুলো নিম্নরূপ:
১. তরুণ শক্তি প্রস্তুত না থাকলে শুধু শুধু বিপ্লবের জন্য বিপ্লব আনা যায় না। অর্থহীন অকারণ বিপ্লবের চেষ্টায় কেবল রক্তপাতই ঘটে, আর কোনও ফল লাভ হয় না। লেখকের ভাষায়, ‘বিপ্লবের সৃষ্টি মানুষের মনে, অহেতুক রক্তপাতে নয়। তাই ধৈর্য ধরে তার প্রতীক্ষা করতে হয়। ক্ষমাহীন সমাজ, প্রীতিহীন ধর্ম, জাতিগত ঘৃণা অর্থনৈতিক বৈষম্য, মেয়েদের প্রতি চিত্তহীন কঠোরতা এর আমূল প্রতিকারে বিপ্লব-পন্থাতেই শুধু রাজনৈতিক বিপ্লব সম্ভবপর হবে। নইলে অসহিষ্ণু অভিলাষ ও কল্পনার আতিশয্যে তোমাদের ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছুই দেবে না।
এ কথায় মনে হয়, শরৎচন্দ্র মনে করতেন স্বাধীনতার সংগ্রামে বিপ্লবই অপরিহার্য এবং একমাত্র পন্থা নয়।
২. বিপ্লবী রাজনীতিবিদগণের নয় শুধু, গান্ধীবাদীদেরও সমালোচনা করেছেন লেখক।
সত্যমিথ্যা
এ প্রবন্ধটি শুরু হয়েছে শরৎচন্দ্রের একটি প্রবাদপ্রতিম বিখ্যাত উক্তি দিয়ে, ‘পিতলকে সোনা বলিয়া চালাইলে সোনার গৌরব ত বাড়েই না, পিতলটারও জাত যায়।’ প্রবন্ধটি অভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইন, সাহিত্যকর্মে নিষেধাজ্ঞা ও শিল্পী-সাহিত্যিকদের হয়রানির প্রতিবাদে রচিত। এর প্রথম অংশ ‘বাংলার কথা’ পত্রিকায় ৩ ফেব্রুয়ারি ১৯২২ সালে প্রকাশিত হয়। দ্বিতীয় অংশ প্রকাশিত হয় একই পত্রিকায় ২০ মাঘ ও ৫ ফাল্গুন ১৩২৮ বঙ্গাব্দে।
ব্রিটিশ সরকারের রাজরোষ কিভাবে শিল্পী-সাহিত্যিকের জিভ কেটে, হাত-মুখ বেঁধে রেখেছে। কী এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে দিন যাপন করেছেন এ দেশের লেখকেরা তার ইতিহাস এ প্রবন্ধ। বঙ্কিমচন্দ্রের ‘চন্দ্রশেখর’ মঞ্চস্থ করার সময় রাজদ্রোহিতার অভিযোগে ইংরেজ চরিত্রের নাম ও জাতি বদলে দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আবৃত্তি অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত কবিতা ‘এবার ফিরাও মোরে’র বিশেষ-বিশেষ অংশ বাদ দেওয়া হয়েছে ইংরেজ সরকারের ভয়ে। কিভাবে লেখকের সত্যকে সরকার মিথ্যা বলে পরিত্যাগ করেছে। আর সরকারের মিথ্যাকে সত্য বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছে তার প্রতিক্রিয়া এ প্রবন্ধ। লেখকের বক্তব্য, ‘ভাষা যেখানে দুর্বল, শঙ্কিত, সত্য যে দেশে মুখোশ না পরিয়া মুখ বাড়াইতে পারেনা, যে রাজ্যে লেখকের এত বড় উঞ্ছবৃত্তি করিতে বাধ্য হয়, সে দেশে রাজনীতি, ধর্মনীতি, সমাজনীতি সমস্তই যদি হাত ধরাধরি করিয়া কেবল নীচের দিকে নামিতে থাকে, তাহাতে আশ্চর্য হইবার কী আছে?’২০
স্বদেশ ও সাহিত্য
‘স্বদেশ ও সাহিত্য’ গ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৩২ সালের আগস্ট মাসে। প্রকাশক : আর্য পাবলিশিং কোম্পানি, কলকাতা। এ গ্রন্থে চারটি প্রবন্ধ সংকলিত হয়। প্রবন্ধগুলো:
১. ভবিষ্যৎ বঙ্গসাহিত্য ( বরিশালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সভায় প্রদত্ত অভিভাষণ-১৯২৩)
২. সাহিত্য ও নীতি (নদীয়ায় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনে সভাপতির অভিভাষণ-১৯৩৫)
৩. সাহিত্যে আর্ট ও দুর্নীতি (মুন্সীগঞ্জে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সভার সভাপতির অভিভাষণ-১৯২৪)
৪. আধুনিক সাহিত্যের কৈফিয়ত (শিবপুর ইন্সস্টিটিউটের সাহিত্যসভায় সভাপতির অভিভাষণ ১৩৩০)
বিষয়বস্তুর দিক দিয়ে চারটি প্রবন্ধই কাছাকাছি। এ গ্রন্থের বাইরের আরেকটি প্রবন্ধ ‘সাহিত্যের রীতি ও নীতি’, সেটিও বিষয়ের দিক দিয়ে নিকটতম। এ প্রবন্ধটি ১৩৪৪ সনের আশ্বিন সংখ্যা ‘বঙ্গবাণী’তে প্রকাশিত হয়। মৃত্যুর মাত্র দুই মাস আগে প্রকাশিত এটিই সম্ভবত শেষ পূর্ণাঙ্গ প্রবন্ধ।
ভবিষ্যৎ বঙ্গসাহিত্য প্রবন্ধে লেখক প্রধানত সাহিত্যিক পরিবেশের কথা বলেছন। ‘সত্য ও মিথ্যা’য় যে কথা বিশ্লেষণ করেছেন নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে। এখানে সেই কথাটিই ভবিষ্যৎ সাহিত্য রচনার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির পূর্বশর্ত বিবেচনা করেছেন। লেখকের মতে, ‘আমাদের সাহিত্যে নতুন জিনিস দেবার জো নেই। ইউরোপের কথা ধরুন। ওদের Church আছে, Navy আছে, Army আছে। ওদের অবাধ মেলামেশা আছে, আনন্দ আছে। আমাদের এদিকে যাওয়ার জো নেই, ওদিকে যাওয়ার জো নেই।
এদেশে রাজদ্রোহী হওয়ার আশঙ্কা মাথা রেখে সাহিত্যচর্চা করতে হতো। লেখকের ধারণা, ‘তাই আমার মনে হয়, বড় সাহিত্যিক আমাদের দেশে তখন আর জন্মাবে না। রাজনীতিতে, ধর্মে, সামাজিক আচার-ব্যবহারে যেদিন আমাদের হাত বাঁধা, পা গুটানো থাকবে না, যেদিন আনন্দের ভেতর দিয়ে লিখতে পারা যাবে, সেই দিন আবার সাহিত্য সৃষ্টির দিন ফিরে আসবে।’
‘সাহিত্য ও নীতি’ প্রবন্ধের নামকরণেই বিষয়বস্তু অনুমান করা যায়। শরৎচন্দ্র এ প্রবন্ধে তাঁর জীবনদর্শন প্রকাশ করেছেন মূল্যতত্ত্বের মিশ্রণে। পরকাল তার জানা নেই, তাই আলোচ্য নয় বলে জানিয়েছেন। কিন্তু ইহলোকে বিশ্বমানব যে লক্ষ্যের দিকে নিরন্তর চলেছে তার তিনটি অংশ- Art, Morality এবং Religion. তাঁর মতে যা কিছু অসুন্দর, অকল্যাণকর তা Art হতে পারে না তিনি Art for art’s sake তত্ত্বে সরাসরি অবিশ্বাস স্থাপন করেছেন।
Idealistic এবং Realistic তত্ত্বের দ্বন্দ্বও তিনি অস্বীকার করেছেন। এ দু’টিকে পৃথক করার পক্ষপাতী নন তিনি। এ প্রসঙ্গে তাঁর মত এমন, ‘Art জিনিসটা মানুষের সৃষ্টি। সে nature নয়। সংসারে যা কিছু ঘটে এবং অনেক নোংরা জিনিসই ঘটে- তা কিছুতেই সাহিত্যের উপাদান নয়। প্রকৃতি বা স্বভাবের হুবহু নকল করা Photography হতে পারে, কিন্তু সে কি ছবি হবে? দৈনিক খবরের কাগজে অনেক কিছু রোমহর্ষক ভয়ানক ঘটনা ছাপা থাকে, সে কি সাহিত্য?’
সাহিত্যের সঙ্গে নীতির পার্থক্য আলোচনা করতে গিয়ে লেখক এ প্রবন্ধের বেশির ভাগ অংশ জুড়ে বঙ্কিমচন্দ্রের সমালোচনা করেছেন। বিশেষ করে কৃষ্ণকান্তের উইল উপন্যাসে গোবিন্দ লালের পিস্তলের গুলিতে রোহিণীর মৃত্যু হওয়াটা তিনি কখনই মেনে নিতে পারেননি। মৃত্যুর জন্য তিনি আক্ষেপ করেননা, করেন, অকারণ অহেতুক জবরদস্তির অপমৃত্যুতে। হতভাগিনীর মরণে পাঠক-পাঠিকার সুশিক্ষা থেকে আরম্ভ করে সমাজের বিধি ও নীতির কনভেনশন সমস্তই বেঁচে গেল সন্দেহ নেই, কিন্তু তার মৃত্যু হয়েছে সত্য সুন্দর আর্ট এর। লেখকের মতে, ‘উপন্যাসের চরিত্র শুধু উপন্যাসের আইনেই মরতে পারে, নীতির চোখ রাঙানিতে তার মরা চলে না ।’
লেখক তাঁর নিজের পল্লীসমাজ উপন্যাসেরও প্রসঙ্গ টেনেছেন। এ উপন্যাসে বিধবা রমা তার বাল্যবন্ধু রমেশকে ভালোবাসে, এটা নীতিবাদীদের কাছে ভালো লাগেনি। যতীন্দ্র মোহন সিংহ এ উপন্যাসের বিরুদ্ধে ‘সাহিত্যের স্বাস্থ্যরক্ষা’ নামে প্রবন্ধ লিখে তীব্র ধিক্কার জানান। বিষয়টি নীতিগত কিন্তু শিল্পসম্মত নয়। শরৎচন্দ্র মনে করেন, দুনিয়ায় যা কিছু সত্য ঘটে, নির্বিচারে তাকেই সাহিত্যের উপকরণ করলে সত্য হতে পারে, সত্য-সাহিত্য হয় না। এভাবে তিনি ধর্ম, নীতি ও সত্যের সঙ্গে শিল্পের পার্থক্য নিরূপণ করেছেন।
‘সাহিত্যে আর্ট ও দুর্নীতি’ প্রবন্ধটি পূর্বোক্ত প্রবন্ধের অংশ বলেই মনে হয়। যদিও এর রচনাকাল এগারো বছর আগের। তবে বিষয়বস্তুর প্রায় অভিন্নতার কারণেই এটা মনে হয়। এখানেও তাঁর ‘পল্লীসমাজ’ উপন্যাসের প্রসঙ্গ আছে, আছে বঙ্কিম-সাহিত্যের সমালোচনাও। বঙ্কিমচন্দ্রের সাহিত্যের সমালোচনা আছে আধুনিক সাহিত্যের কৈফিয়ত প্রবন্ধেও। ওখানেও তিনি সেই রোহিণীকে গুলি করে হত্যা করার তীব্র সমালোচনা করেছেন। ‘চন্দ্রশেখর’-এর শৈবলিনী ও প্রতাপ চরিত্রের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করেও বঙ্কিমচন্দ্রের সমালোচনা করেছেন।
প্রসঙ্গত, আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত ‘সুলভ শরৎসমগ্র’-এর ভূমিকায় শরৎচন্দ্রকে বঙ্কিমচন্দ্রের সাহিত্যরসে জারিত বলেছেন সুকুমার সেন। তাঁর ওপর সাহিত্যগুরু বঙ্কিমচন্দ্রের ভাব, প্রভাব ইত্যাদি রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি তার বক্তব্যের পক্ষে অবশ্য কোনও প্রকার প্রমাণ দেননি। অথচ শরৎচন্দ্রের প্রবন্ধসাহিত্য এবং চিঠিপত্র পড়ে মনে হয় সুকুমার সেন এ দিকটা খুঁজেও দেখেননি।
নীতিবাদীরা যখন অভিযোগ করছিলেন বাংলা সাহিত্যে সীমাহীন দুর্নীতি ঢুকেছে, তখন সাহিত্যে শিল্পবস্তু আর দুর্নীতির পার্থক্য আলোচনা করতে গিয়ে এবং আধুনিক সাহিত্য কেন উনিশ শতকীয় সাহিত্যাদর্শ থেকে দূরে সরে গেছে তার কৈফিয়ত দিতে গিয়ে বারবার বঙ্কিমচন্দ্রের প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। এক অর্থে বঙ্কিমী আদর্শের বিরুদ্ধে তাঁকে একজন বিদ্রোহী বলেই মনে হয়। দু’টি উদ্ধৃতিতে তাই প্রমাণিত হয়।
এ সময় শরৎভক্তরা তাঁকে দিয়ে এ প্রবন্ধটি লিখিয়ে নেন। এটা মূলত নবীন-প্রবীণের দ্বন্দ্বের প্রামাণ্য। এখানে শরৎচন্দ্র যথাযোগ্য শ্রদ্ধা রেখেই রবীন্দ্রনাথের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। রবীন্দ্রভক্তদের সবাই যে অকপট এটা সত্য নয়, এ কথাই শরৎচন্দ্র বোঝাতে চেয়েছেন রবীন্দ্রনাথকে।
‘বঙ্কিমচন্দ্র ও তাঁর চারিদিকের সাহিত্যমণ্ডলী একদিন বাংলার সাহিত্যাকাশ উদ্ভাসিত করে রেখেছিলেন। কিন্তু মানুষ চিরজীবী নয়; তাঁদের কাজ শেষ করে তাঁরা স্বর্গীয় হয়েচেন। তাঁদের প্রদর্শিত পথ, তাদের নির্দিষ্ট ধারার সঙ্গে নবীন সাহিত্যিকদের অনৈক্য ঘটেছে- ভাষা, ভাব ও আদর্শে। এমনকি প্রায় সকল বিষয়েই।’ (সাহিত্যে আর্ট ও দুর্নীতি)
দ্বিতীয় উদ্ধৃতিটি দেখা যাক,
‘সম্প্রতি একটি কলরব উঠিয়াছে যে, আধুনিক উপন্যাস লেখকেরা বঙ্কিমসাহিত্যকে ডুবাইয়া দিল। বঙ্কিম সাহিত্য ডুবিবার নয় সুতরাং আশঙ্কা তাহাদের বৃথা। কিন্তু আধুনিক ঔপন্যাসিকদের বিরুদ্ধে নালিশ এই যে, ইহারা বঙ্কিমের ভাষা, ভাব, ধরন-ধারণ, চরিত্রসৃষ্টি কিছুই আর অনুসরণ করিতেছেনা, অতএব অপরাধ ইহাদের অমার্জনীয়; ইহার জবাব দেওয়া একটা প্রয়োজন।… অভিযোগ ইহাদের সত্য আমি তাহা অকপটে স্বীকার করিতেছি, বঙ্কিমচন্দ্রের প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধা আমাদের কাহারো অপেক্ষা কম নয়, এবং সেই শ্রদ্ধার জোরেই আমরা তাঁহার ভাষা, ভাব পরিত্যাগ করিয়া আগে চলিতে দ্বিধাবোধ করি নাই। মিথ্যা ভক্তির মোহে আমরা যদি তাঁহার সেই ত্রিশ বৎসর পূর্বেকার বস্তুই শুধু ধরিয়া পড়িয়া থাকিতাম ত কেবলমাত্র গতির অভাবেই বাংলা সাহিত্য আজ মরিত।’ (আধুনিক সাহিত্যের কৈফিয়ত)
শরৎচন্দ্রের এই আত্মঘোষণার পরেও তাঁকে বঙ্কিমী ভাবধারার সাহিত্যিক বলা কি সঙ্গত? তিনি মনে করতেন একনিষ্ঠ প্রেমের মর্যাদা নবীন সাহিত্যিক বোঝে, এর প্রতি তাঁর সম্মান ও শ্রদ্ধার অবধি নেই, কিন্তু সে যা সইতে পারে না তা হলো ফাঁকি। সাহিত্য জাতীয় ঐশ্বর্য, এ ঐশ্বর্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত। বর্তমানের দৈনন্দিন প্রয়োজনে তাকে ভাঙিয়ে খাওয়া চলে না।
তিনি তাঁর বহুল আলোচিত ও সমালোচিত উপন্যাস ‘চরিত্রহীন’-এর প্রসঙ্গও বিভিন্ন প্রবন্ধে কখনো সরাসরি, কখনো ইঙ্গিতে আলোচনা করেছেন। এ প্রসঙ্গে তাঁর একটি স্মরণীয় উক্তি আছে। কথাটা তিনি শুরু করেছেন এভাবে, ‘পরিপূর্ণ মনুষ্যত্ব সতীত্বের চেয়ে বড়; এই কথাটা একদিন আমি বলেছিলাম। কথাটা যৎপরোনাস্তি নোংরা করে তুলে আমার বিরুদ্ধে গালিগালাজের আর সীমা রইল না।’
সাহিত্য যদি সত্য সত্যই দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে এজন্য তিনি সমালোচকদেরও দায়ী করেন। তাঁর ভাষায়, ‘সংসারে রাবিশ বই-ই কেবলমাত্র রাবিশ নয়, সমালোচনার ছলে দায়িত্বহীন কটূক্তির রাবিশেও বাণীর মন্দির পথ একেবারে সমাচ্ছন্ন হয়ে যেতে পারে।’
আধুনিক তরুণ সাহিত্যিকদের পক্ষে শরৎচন্দ্র অনেক কথাই লিখেছেন। আধুনিক সাহিত্য আজ হয়তো অসুন্দর ও আনন্দহীন মনে হতে পারে, কিন্তু এটাই শেষ কথা নয় আধুনিক সাহিত্য সম্বন্ধে একথা সবার মনে রাখা প্রয়োজন মনে করেন।
তিনি মনে করেন, ‘পূর্বের মতো রাজরাজড়া, জমিদারের দুঃখ-দৈন্য-দ্বন্দ্বহীন জীবনেতিহাস নিয়ে আধুনিক সাহিত্যসেবীর মন ভরে না। তা নিচের স্তরে নেমে গেছে। এটা আপসোসের কথা নয়। বরং এই অভিশপ্ত অশেষ দুঃখের দেশে, নিজের অভিমান বিসর্জন নিয়ে রুশ সাহিত্যের মতো যেদিন সে আরও সমাজের নিচের স্তরে গিয়ে তাদের সুখ, দুঃখ বেদনার মাঝখানে গিয়ে দাঁড়াতে পারবে, সে দিন এই সাহিত্য সাধনা কেবল স্বদেশ নয়, বিশ্বসাহিত্যেও স্থান করে নিতে পারবে।
‘আধুনিক সাহিত্যের কৈফিয়ত’ প্রবন্ধটি শেষ করেছেন সমালোচকদের অভিযোগটিকে একেবারে উল্টে দিয়ে মানুষকে মানুষ ভেবেই হয়তো লেখকেরা দুর্নীতি করে ফেলেছেন।
তিনটি প্রবন্ধের বাইরে শরৎচন্দ্রের অগ্রন্থিত প্রবন্ধের সংখ্যা অনেক। নারী, সমাজ, রাজনীতি, শিক্ষা, রবীন্দ্রনাথ, গান্ধী, চিত্তরঞ্জনসহ বিভিন্ন বিষয়ে। এর মধ্যে বিষয়বস্তুর অভিন্নতার কারণে শুধু সাহিত্যের রীতি ও নীতি প্রবন্ধটি নিয়ে একটু মন্তব্য করা যায়। ১৯২৮ সালে রবীন্দ্রনাথ ‘বিচিত্রা’ পত্রিকায় ‘সাহিত্য ধর্ম’ নামে একটি প্রবন্ধ লিখে অতি আধুনিক সাহিত্যিকদের নানাভাবে আক্রমণ করেন। এরপরে প্রত্যাঘাতও আসতে থাকে। নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত প্রতিপক্ষে মাথা তুলে দাঁড়ান। এ সময় শরৎভক্তরা তাঁকে দিয়ে এ প্রবন্ধটি লিখিয়ে নেন। এটা মূলত নবীন-প্রবীণের দ্বন্দ্বের প্রামাণ্য। এখানে শরৎচন্দ্র যথাযোগ্য শ্রদ্ধা রেখেই রবীন্দ্রনাথের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। রবীন্দ্রভক্তদের সবাই যে অকপট এটা সত্য নয়, এ কথাই শরৎচন্দ্র বোঝাতে চেয়েছেন রবীন্দ্রনাথকে।
তথ্যসূচি:
১. রামবহাল তেওয়ারী। ‘হিন্দি সাহিত্যের ইতিহাস’ পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমী, কলকাতা, জানুয়ারি ২০০৪।
২. খাজা আহমদ আব্বাস: ভূমিকা, কৃষণ চন্দর: ‘গাধার আত্মকথা’ (অনুবাদ: মোস্তফা হারুন) মুক্তধারা, ঢাকা, ১৯৮২
৩. সেলিনা হোসেন ও নূরুল ইসলাম সম্পাদিত। ‘বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান’, ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭।
৪. হুমায়ুন আজাদ। ‘লালনীল দীপাবলি বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী’, আগামী প্রকাশনী, ঢাকা,
৫. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘উপন্যাস সমগ্র-১’, ঢাকা,
৬. অরুণকুমার মুখোপাধ্যায়। ‘কালের প্রতিমা’, কলকাতা, ১৯৭৪।
৭. ‘দেশ’- ২৫ জুন, কলকাতা-১৯৮৮।
৮. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘লেখকের কথা’, কলকাতা,
৯. ভীষ্মদেব চৌধুরী ও সৈয়দ আজিজুল হক সম্পাদিত। ‘মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়: শতবার্ষিক স্মরণ’, অবসর ঢাকা, ২০
১০. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। ‘গল্পসমগ্র’, (ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ সম্পাদিত), ঢাকা, ২০০
১১. শরৎ রচনাবলী অষ্টমখণ্ড- ‘ঝিনুক পুস্তিকা’, ঢাকা। ‘ভারতী’র লেখক মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে ৭. ১. ১৯১৪ তারিখে এক পত্রে শরৎচন্দ্র লিখেছেন, ‘‘… ঐ রকম করিয়া ‘ঠাকুর দেবতার মূল্য’, ‘হিন্দুশাস্ত্রের মূল্য’ বলিয়া প্রবন্ধ শুরু করিব।
১২. ‘দেশ’ সাহিত্য সংখ্যা-১৩৯৭, কলকাতা
১৩. শরৎরচনাবলী অষ্টমখণ্ড-
১৪. ঐ
১৫. শরৎরচনাবলী পঞ্চমখণ্ড।
১৬. বিশ্বজিৎ ঘোষ ঐ
১৭. গ্রন্থপরিচয়। শরৎরচনাবলী অষ্টমখণ্ড-
১৮. সুনীল দাস: ‘নারায়ণ ও চিত্তরঞ্জন’। দেশ ঐ
১৯. কাজী নজরুল ইসলাম। ‘তরুণের সাধনা’ রুদ্রমঙ্গল। গ্রন্থলোক, কলকাতা ১৯৬৫
২০. শরৎরচনাবলী অষ্টমখণ্ড।