সাহিত্যের কনিষ্ঠ শাখা ছোটগল্প। যদিও গল্প বলার প্রবৃত্তি মানুষের প্রাচীন। যখন পায়ে হেঁটে মানুষ তীর্থে বেরোতো, তখন মুখে মুখে গল্প বানানোর প্রচলন ছিল। এছাড়া ধর্মীয় গ্রন্থগুলোয় অনুসারীদের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন গল্প বলেই। ইশপের গল্প, বিভিন্ন লোক কাহিনী, রূপকথা, যা আদতে গল্প, এর ইতিহাসও বেশ প্রাচীন। তবে আমাদের সামনে ছোটগল্পের যে রূপ দৃশ্যমান, তা খুব প্রাচীন নয়। এর উদ্ভাবক মোপাসাঁ। এরপর যার নাম বলতে হয়, তিনি চেখভ। এরপর সাহিত্যের অনেক দিকপাল ছোটগল্পকে সমৃদ্ধ করেছেন।
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে দেখি, উইলিয়াম ফোর্টের মিশনারিরা উনিশ শতকের গোড়ার দিকে গদ্যের সূচনা করার প্রায় অর্ধশতক পরে প্রথম সার্থক উপন্যাস রচিত হয় বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের হাতে। ছোটগল্প আসে তারও কিছু পরে। সামান্য মতানৈক্য থাকা সত্ত্বেও বলা যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাতে বাংলা ছোটগল্পের জন্ম। তিনিই ছোটগল্পকে শৈশব অবস্থা থেকে যৌবনে নিয়ে যান। রবীন্দ্রনাথের পরে আমরা বেশকিছু শক্তিমান ছোটগল্পকারের দেখা পাই। তবে কথা হলো—উপন্যাসের ব্যাপক চাহিদার জন্যই হোক আর জাঁ পল সার্ত্রের ‘পৃথিবীর সব গল্প বলা হয়ে গেছে’ বাণীর জন্যেই হোক, বলা হয়ে থাকে ছোটগল্পের দিন শেষ হয়ে গেছে।
ছোটগল্পের দিন শেষ কিংবা ছোটগল্পের মৃত্যুঘণ্টা বেজে গেছে—এসব বির্তক শুরু হওয়ার পরও অনেক সময় কেটে গেছে, বুড়িগঙ্গার বুকে বয়ে গেছে অনেক ঢেউ। কিন্তু ছোটগল্পের ধারা আজও বহমান। উপন্যাসের মতো দীর্ঘ পরিসর না থাকা সত্ত্বেও আমাদের জীবনের নানান বাঁক, অনুভূতি, আমাদের অন্তর্লোক, বহির্লোক, স্বপ্ন, স্বপ্নভঙ্গের ব্যথা, জীবনের ছোট ছোট গল্প ছোটগল্প ধারণ করে চলছে। ছোটগল্পে জীবনের এইসব খণ্ড খণ্ড চিত্র যেন একফোঁটা পানির মধ্যে এক আকাশের অগণিত নক্ষত্র অবলোকন করা।
বর্তমানে ছোটগল্প তরুণদের হাত ধরে যাত্রা করেছে এক নতুন দিগন্তের পানে। তরুণ গল্পকারদের গল্প যখন পাঠ করি, দেখি তাতে প্রতিফলিত হয়েছে জীবনের নানা রঙ; যা নিঃসন্দেহে আমাদের আশান্বিত করে। সমকালীন সমাজচিত্র, সংকট, জীবনের টানপড়েন, ব্যক্তির আশা-হতাশার বিশ্বস্ত চিত্র ফুটে ওঠে এসব ছোটগল্পে। কয়েকজন তরুণ গল্পকারের গল্প পর্যবেক্ষণ করলেই এর সত্যতা পাওয়া যাবে।
শারমিন রহমানের ‘সিরাজের সংসারে’ গল্প শুরু হয়েছে আসন্ন বর্ষায় কুমার নদীর অবস্থা বর্ণনা করে। নদীকেন্দ্রিক এই গ্রামের কয়েক লাইন বর্ণনা পড়ে গ্রাম নিয়ে আমাদের সুখস্মৃতি মনের কোণে তা উঁকি মারে। কিন্তু আমাদের ভুলে গেলে চলবে না—লেখক বর্তমান সময়ে বসে এই গল্প লিখছেন। তাই তো এক স্তবক শেষ হওয়ার আগেই তিনি পরিচয় করিয়ে দেন শেফালী নামের এক জীবন সংগ্রামী নারীর সঙ্গে, যার স্বামী জীবিত এবং কর্মক্ষম কিন্তু অলস-মাদকাসক্ত। তাই শেফালীকে চেয়ারম্যান বাড়িতে কাজ করতে হয়। মাতাল স্বামীর লাথি খেয়েও সন্তানের মুখে মাছ তুলে দেওয়ার জন্য গ্রামের সবার সঙ্গে নদীতে মাছ ধরতে যেতে হয়। শেফালীর এই কর্মমুখর পাথর জীবনেও একদিন বসন্তের বাতাস বয়। পাট কাটার মৌসুমে চেয়ারম্যান বাড়িতে কাজ করতে আসা শ্রমিক সুজিত প্রেমে পড়ে শেফালীর। শেফালীও এক সময় সুজিতের নির্মল কোমল প্রেমে ধরা দিতে বাধ্য হয়। স্বপ্ন দেখে সুজিতের সঙ্গে নতুন করে সুখের ঘর বাঁধার। সুজিতরা কাজ সেরে চলে যাওয়ার দিন শেফালীকেও নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়, যাতে শতভাগ সম্মতি থাকে শেফালীরও। কিন্তু সুজিতের সঙ্গে পাড়ি দেওয়ার আগেই সিরাজকে বেঁধে মাদকনিরাময় কেন্দ্রে নিয়ে যায় শেফালীর বাবাতুল্য চেয়ারম্যান। তবে সুজিতের সঙ্গে নতুন দিনের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেওয়ার জন্য ঘর থেকে বেরোতে গিয়েও বেরোতে পারে না শেফালী। যে সিরাজ ঘরে থাকলেও হয়তো মাদকের নেশায় চুর হয়ে শেফালীকে বাধা দিতো না। কিন্তু অনুপস্থিত সিরাজের মায়াই শেফালীকে আটকে দেয়। মায়ার কাছে পরাস্ত শেফালীর সুজিতকে নিয়ে আর ঘর বাঁধা হয় না।
শারমিন রহমান অত্যন্ত নিপুণ হাতে নির্মাণ করেছেন গল্পের কাঠামো। পরিবেশ বর্ণনা ও সংলাপ রচনায় গল্পকার অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। আঞ্চলিক সংলাপ গল্পকে করে তুলেছে আরও আকর্ষণীয়। একটু নমুনা দেখা যাক।
শেফালী…ও শেফালী!
কিডা? আলো বুজিনি? কী অইছে বুজি?
কী অইছে কসনি? তোরে বুলাইতে বুলাইতে আমার গলা ভাইঙ্গা গেল, আর তুই এহন কস বুজি কী অইছে? কানের মাতা খাইছসনি?
চেইতো না বুজি, চেইতোনা.. আমি হুনলে কি এহেনে বইস্যা থাহি কও? আমি হুনি নাই বুজি। তুমি বসো। এ রত্না তোর কাকিরে ফিড়াহান দে।
না রে না, বসবার আসি নাই। গাঙে যাব। গাঙে মাছ গাবাইছে। পাইলা ভইরা ভইরা মানুষ মাছ মারবার লাগছে। আমি হুনলাম কেবল। তাই তোরে খবরডা দিবার লাইগ্যা ডাকপালাগছি। নইলেতো আবার কইতি বুজি আমারে খবরডা কইলা না?
মাছ গাবাইছে? তুমি যাও আমি রত্নার বাপরে নিয়া আইতাছি।
হ, আমি গেলাম তাইলে তাগাদা আয়।
হ, আইতাছি যাও।
ফলে শুরু থেকে শেষপর্যন্ত পাঠকের মনে এক ভালো লাগার রেশ থেকে যায়। শেফালী সংসারের শৃঙ্খল ভাঙতে না পারলেও কোনো অভিযোগ করতে ইচ্ছে করে না লেখকের বিরুদ্ধে। মনে হয় এই তো স্বাভাবিক। এই তো আমাদের সংসারের চিরয়াত রূপ।
মাইনুল হাসানের ‘জনক’ গল্পের কাহিনী অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত। নূরা সন্দেহ করে তার রূপসী স্ত্রী রেশমাকে। বিভিন্ন ঘটনা, অনুষঙ্গ, লোকনিন্দা নূরার সেই সন্দেহের বিষকে আরও তীব্র করে তোলে। গল্পের শেষ দিকে নূরা যখন অসময়ে বাড়ি ফেরার মুখে আয়নালকে দেখে তার ঘর থেকে বেরোতে এবং আয়নালের পাশে হাসিমুখে তার স্ত্রীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, তখন তার মনে সন্দেহের আগুন আরও তীব্র হয়ে ওঠে। রাগে মাথায় সে গিয়ে এক দোকানে বসে সিগারেট ধরায়। এমন সময় পাশের বাড়ির রহিমার মা রেশমার চরিত্র সম্পর্কে কটূ কথা বললে মনের সন্দেহ তীব্রতর হয়। তারপর যখন দোকানদারের মুখে শোনে নূরা বাবা হচ্ছে। তখন সে সন্দেহ রূপ নেয় তীব্র রাগে। লেখক নূরার সেই সময়ের অবস্থা এমনভাবে বর্ণনা করেন, যেন আমাদের মনে হয়, আরও একটি ওথেলো নাটক এখন মঞ্চস্থ হবে আমাদের সামনে। কিন্তু লেখক অত্যন্ত চমৎকারভাবে গল্পটি ঘুরিয়ে দিয়ে নিয়ে যান ভিন্ন একটি সমাপ্তির দিকে। এছাড়া এ গল্পে লেখকও চমৎকারভাবে পরিবেশের বর্ণনা ফুটিয়ে তুলেছেন। কখনো কখনো প্রকৃতির সঙ্গে রেশমার রূপের বর্ণনা মিলিমিশে একাকার হয়ে গেছে। তিনি যখন বলেন—‘বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যারাতের একগুঁয়ে নিস্তব্ধতার মধ্যে তার শ্বাস-প্রশ্বাসের মৃদু আওয়াজ শোনা যায়। সেই আওয়াজের সঙ্গে সঙ্গে এক শান্ত ছন্দের তালে তার স্ফীত বুক ওঠানামা করে। ব্লাউজের গোলাপি আবদ্ধ ঠেলে উঁকি দেওয়া পদ্মফুলের মতো তার ভরাট স্তন দুটো বুকের ওঠানামার সঙ্গে হালকা দুলে দুলে ওঠে। আগে একসময় রেশমার এ রোশনাই করা রূপ বস্তির অনেক পুরুষের মধ্যেই কামভাব জাগিয়ে দিত অনায়াসে।’ মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। ইন্দ্রিয়ঘন পরিবেশ সৃষ্টিতে লেখক যে কতটা পারঙ্গম, এতেই বোঝা যায়।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদের ‘সমিরুদ্দি পাগলা’ গল্পে প্রকাশ পেয়েছে জীবনের এক চরম সত্য। পৃথিবীর সব কিছুই পরিবর্তনশীল—গীতার সেই সারকথন। তাই তো যে সমিরুদ্দি পাগলা একদিন যে গ্রামে নিগৃহীত হয়ছিল, নির্যাতিত হয়েছিল, সে গ্রামের নাম তার নামানুসারে পাগলাপাড়া। ‘সমিরুদ্দি পাগলার বাড়ি’, ‘পাগলার পোলা’ যে কথাগুলো ছিল একদিন অপমানজনক, সমিরুদ্দির পোলা কসিরুদ্দি, যিনি গ্রামের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখায় গ্রামের নতুন নামকরণ করা হয়েছে, সেই কসিরুদ্দি বাবার কবরে ‘সমিরুদ্দি পাগলার কবর’ সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়। মেয়েকে বলে, ‘মামণি, পাগলা হচ্ছে আমাদের উপাধি। আমাদের অলঙ্কার। আমরা সবাই পাগল।’
সালাহ উদ্দিন মাহমুদের এই গল্প আমাদের বারবার স্মরণ করিয়ে দেয় জীবনের উত্থান-পতনের কথা। নদীর জোয়ার-ভাটার মতোই জীবন। আজ যা অবহেলিত, নিগৃহীত, কাল তা-ই সমাদৃত, আদরণীয়। আজ যা বরণীয়, কাল তা-ই অবহেলিত। সালাহ উদ্দিন মাহমুদের গল্পের ভাষা অনাড়ম্বর, নিরেট। যার আলাদা একটা সৌন্দর্য আছে। এছাড়া সালাহ উদ্দিন মাহমুদের গল্পে সেন্স অব হিউমারের ব্যবহার পাঠকদের মুগ্ধ করবে।
‘আমি নিজের পুরো শরীরটা একবার ঘুরে আসলাম। ধস্তাধস্তি করার কারণে আমার পুরো শরীরটাই ক্ষত-বিক্ষত। আর পশুত্বের চিহ্ন রাখতে এরাও কম করেনি। ইচ্ছেমতো অত্যাচার করেছে। আমি বোবা রোবটের মতো সয়ে গেছি। বাধ্য হয়েছি। মুখ, হাত-পা বাঁধা একটা মানুষ আর কি করতে পারে! বাঁ পাশটা ফেটে পুরো কপালটায় রক্তে মাখামাখি হয়ে লেপ্টে আছে। নিচের ঠোঁটের ডান পাশটা ফেটে রক্ত গড়িয়ে জমাট হয়ে আছে। গলার নিচে বেসামাল কামড়ে ছিলে গেছে অনেকটা। বাঁ স্তনের নিচে নখের আচরে এমন হয়েছে যে শকুনের খুবলে খাওয়া মড়ক মনে হচ্ছে নিজেকে। নাভীর নিচের দিকটার অবস্থা আরো খারাপ। পিংক কালারের পাজামাটার অধিকাংশই ছেঁড়া। পাজামাটা ওরা কোনো রকম পেচিয়ে রেখেছে ঠিক। কিন্তু ফিতাটা বেঁধে রাখার প্রয়োজন মনে করেনি। কেনোই বা করবে! কি আর প্রয়োজন আছে সংরক্ষণের! ঢেকে রাখার! বুকের মতো উন্মুক্ত হলেও আমার শরীর এখন আর কাউকে কামউদ্দীপক করে তুলতে পারবে না। যোনির চারপাশ ক্ষত আর রক্তে মাখামাখি। নাহ্ আমার কাছে কিছ্ইু নেই এখন! যার দিকে কেউ ওমন ভঙ্গিতে তাকাতে পারে।’
উপরিউক্ত বাক্যগুলো পড়ার পর আপনার একটু ধাঁধা লাগতেই পারে। আর যখন শুনবেন, কথাগুলো একজন ধর্ষণের শিকার হয়ে মৃত এক নারীর জবানিতে বলা হয়েছে, তখন চমকে উঠতেই পারেন। হ্যাঁ, সানাউল্লাহ সাগর তার ‘চাঁদের মুখোমুখি রাতে’ গল্পটিতে এমনই এক ভিন্ন আঙ্গিক ব্যবহার করেছেন। এই গল্পের কথক একজন মৃত নারী। ধর্ষণের পর তাকে হত্যা করা হয়েছে। সেই মৃত মানুষটি তার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো বর্ণনা করছে। বলছে, তার বেঁচে থাকার সময়কার বিভিন্ন ঘটনা। গল্পে একটি জিনিস লক্ষণীয়, মৃত নারীর তার ধর্ষণকারীদের প্রতি যতটা না ক্ষোভ ফুটে উঠেছে গল্পে, তারচেয়ে বেশি ফুটে উঠেছে তার স্বামী রাফির জন্য হাহাকার, ভালোবাসা। অদ্ভুত রসের এই গল্পের শেষ দিকে এসে আমরা ঘটনার আরেকটি বাঁকে চমৎকৃত হই। যে তিনজন ধর্ষক, ধর্ষণের পর মেরে ফেলা মেয়েটির জন্য কবর খুঁড়ছিল। নিজেদের মধ্যে কথা কাটাকাটি থেকে ঝগড়া লেগে একজন মারা যায়। ফলে মৃত মেয়েটির সঙ্গেই কবর হয় তারই এক ধর্ষকের। মৃতলোকের কাহিনী নিয়ে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, হুমায়ূন আহমেদসহ আরও কয়েকজন গল্প, উপন্যাস লিখলেও সানাউল্লাহ সাগরের গল্পের উপস্থাপনা অনেকের কাছে অভিনব মনে হতে পারে। এছাড়া লেখক প্রকৃতির বর্ণনা, রাতের বর্ণনা এত চমৎকারভাবে দিয়েছেন যে, একটি অখণ্ড সময়ের ঘোর সৃষ্টি হয়।
কাজী মাহবুবুর রহমান তার ‘জহিরের দিনকাল’ গল্পে অভিনবত্বের পরিচয় দিয়েছেন। স্বপ্নের মধ্যে গল্পের শুরু। কিন্তু তথ্যটি জানার আগে কাহিনীর সঙ্গে আমরা পেণ্ডুলাম মতো দুলতে থাকি। আসলে কী হচ্ছে ভেবে? যখন আমাদের ভ্রম ভাঙে, তখন আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে গল্পের নায়ক কি আংশিক অপ্রকৃতস্থ? না কি ভয়ঙ্কর অবসেশনের কারণে তার এই অবস্থা?
গল্পের কথক কিছু দিন আগে বিয়ে করেছে। কিন্তু সে নিজে কোনো কাজ করে না। হয়তো এই কারণেই গল্প কথকের মানসিক পীড়নের শুরু। ফলে বাস্তব পৃথিবীর সঙ্গে মাঝে জন্ম নেয় এক নিজস্ব জগৎ। এই দুই পৃথিবীর দ্বন্দ্ব এই গল্পের মূল উপজীব্য। মনস্তাত্ত্বিক এই গল্প এই ব্যর্থ নিরস গল্প হতে পারতো কিন্তু লেখকের গতিশীল গদ্য, সেন্স অব হিউমারের ব্যবহার গল্পটিকে অসাধারণ করে তুলেছে।
‘দরখাস্ত’ গল্পে ইলিয়াস বাবর আমাদের সমাজের অতি পরিচিত একটি বিষয়কে তুলে এনেছে। গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র আলমগীর হোসেন। একটি ফলের দোকানে কাজ করে। সহজ সরল এক ব্যক্তি। জীবনের বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে এখানে এসে থিতু হয়েছেন। ভাইয়ে ভাইয়ে দ্বন্দ্বে জায়গা জমি হারিয়েছেন। এখন সন্তানদের পড়ালেখা শিখিয়ে মানুষ করার জন্য দাঁত কামড়ে পড়ে আছেন এই ফলের দোকানে। যেখানে অতি প্রয়োজনেও ছুটিছাঁটা মেলে না। আলমগীর হোসেনকে সবাই মুরুব্বি বলে ডাকে। মুরুব্বি সবার হাসি-ঠাট্টার কেন্দ্রবিন্দু। সবাই তাকে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করে। মুরুব্বির বয়স হয়েছে কিছুটা। ঘটনাক্রমে সে দাঁড়ি রাখে। কিন্তু সে নিজেকে বয়স্ক ভাবতে এখনো অভ্যস্ত নয়। তাই সে বাড়িতে যেতে চায় না। তার ভাষায়, ‘দাড়ি রেখেছি তো মেয়ের মারে না জানিয়ে; আয়নায় দেখছি দাড়িতে আমারে বুড়া লাগতাছে। কোনমুখে আমি এখন বাড়ি যাবো? কী বলবো মেয়ের মারে? আমি সেদিন হাচা হাচা ইনশাল্লাহ বলিনি, মেঝো ভাইয়ের চাপে বলেছি। আপনাদের শরমে বলেছি। এই সাদা দাড়ি আমারে মানায়নি। আমার বয়স কি আর দাড়ি রাখার মতো হলো? আমি কিভাবে বাড়ি যাবো?’
তখন তাকে নিয়ে আরেক দফা হাসি, ঠাট্টা, তিরস্কার শুরু হয়। ‘বেলাল ভাইয়ের সেইরকম গলা। একা চিল্লায় বলে উঠলেন—এই দেখছো, এই নাকি মরদ, বউয়ের কথা ছাড়া পা-ও দেবার পারে না।’
এই ঠাট্টা যে মুরুব্বির জন্য কত অসহনীয় তা লেখক তুলে ধরেছেন, ‘আড়চোখে আমি দেখি মুরব্বির মুখের দিকে—ছলছল করছে চোখজোড়া; ওখানে হয়তো অব্যক্ত হয়েই ক্ষমা চায় যাবতীয় পার্থিব জোরজুরি থেকে!’
এখানে ইলিয়াস বাবর আমাদের জন্য একটি বার্তা রেখে গেছেন, তা হলো একজনের জন্য যা হাসি আনন্দের, অন্যজনের জন্য তা নাও হতে পারে। আর আমরা অধিকাংশ সময় এই বিষয়টি বেমালুম ভুলে থাকি।
‘নিঝুম বিদায়বেলা’ গল্পটি মাহরীন ফেরদৌস উত্তম পুরুষে বয়ান করেছেন। গল্পের মূল চরিত্র ছেলেটি নানা ফোবিয়ায় আক্রান্ত। তার মনোলোকে সে নিঃসঙ্গ বাসিন্দা। তার ভাষায়, ‘আমার জগৎ খুব ছোট। সেখানে আমার বাবা-মা বাদে নতুন কোনো সম্পর্ক নিয়ে আমি ভাবি না। আমার তেমন কোনো বন্ধুও নেই। সঙ্গ প্রয়োজন হলে আমি রাতে সিনেমা ছেড়ে ঘুমাই। সিনেমার শব্দ, কথোপকথন আমার জন্য সফট নয়েজের মতো কাজ করে। ঘুম ভালো হয়। কোথাও যাওয়ার পথে আমি কানে ইয়ারফোন গুঁজে গান শুনি। ট্রেনে অধিকাংশ সময় বই পড়ি। ঘরে একা থাকার সময় গিয়ার ভিয়ারে থ্রিডি সিনেমা দেখি। আমার প্রতিটি মুহূর্তকে ব্যস্ত রাখতে আমি প্রযুক্তি অথবা বইয়ের কোনো না কোনো সাহায্য নেই। আমি একটা বিদেশি ফার্মে কাজ করি এবং সেখানেও খুব প্রয়োজন না পড়লে আমাকে কেউ ঘাঁটায় না। শুধু নিজের কাজ নিয়ে আমি অত্যন্ত সচেতন বলে আমি এই সুবিধাটুকু অর্জন করতে পেরেছি।’
নিজের জীবন নিয়ে মগ্ন থাকা এই ছেলেকে তার বাবা-মা একদিন মেয়ে দেখতে নিয়ে যায়। বিয়েতে তার খুবই অনাগ্রহ। হয়তো বাবা-মাকে খুশি করার জন্যই সে তাদের সঙ্গে পাত্রী দেখতে রাজি হয়।
মেয়েদের বাড়িতে যাওয়ার পর একপর্যায়ে মেয়ে তাকে ছাদে নিয়ে যায় কথা বলার জন্য। ছাদে মেয়েটি তাকে বিয়ের প্রতি অনাগ্রহের কথা জানায়। কিন্তু ছেলেটি তখন মেয়েটির প্রতি এক অদ্ভুত টান অনুভব করতে থাকে। ছেলেটির ঊর্বর মস্তিষ্কের কল্পনাই হোক, আর ভবিষ্যৎ দেখতে পারার ক্ষমতাই হোক, ছেলেটির মনোলোকে ভবিষ্যতের ছবি ভেসে ওঠে। সে মেয়ের সম্পর্কেও বেশ কিছু কথা বলে, যা মেয়েটিকে বেশ আশ্চর্যান্বিত করে। তবে মেয়েটি তার সিদ্ধান্তে অনড় থাকে।
ছেলেটি নিজের মাঝে একটি বদল দেখে। বিয়ের প্রতি যার অনীহা ছিল, সেই নিজেই মেয়ের জন্য কাতর হয়ে পড়ে। মেয়েকে নিয়ে সুখ স্বপ্ন তৈরি করতে থাকে। প্রকৃতপক্ষে মনস্তত্ত্বের এক রহস্যময় জগৎ উন্মোচিত হয়েছে মাহরীন ফেরদৌসের গল্পে।
মোস্তফা অভি-র ‘বুড়োর নাত জামাই’ গল্পে মানবচরিত্রের এক রহস্যময় দিক ফুটে উঠেছে। মা মরা মিনু তার নানার কাছে থাকে। দাদারও নাতি ছাড়া কেউ নেই। মিনুর বিয়ের বয়স হলে দাদা অস্থির হয়ে ওঠে মিনুকে বিয়ে দেওয়ার জন্য। পাত্রও ঠিক করে ফেলে একদিন। পাশের গ্রামের ফরহাদের সঙ্গে বিয়ে হয় মিনুর। কিন্তু বিয়ের দিন থেকে জামাইয়ের আচরণ দেখে কেমন সন্দেহ জাগে বুড়োর। বাসর ঘর ছেড়ে মাঝরাতে ফরহাদ বেরিয়ে এলে বুড়ো জামাইর কাছে সব জানতে চায়। ইতস্তত করে একসময় সব ঘটনা খুলে বলে তার দাদাশ্বশুরের কাছে।
ফরহাদের বাবা মারা যাওয়ার পর তার ফুপু দুই মেয়েকে নিয়ে উঠে আসে ফরহাদদের সংসারে। ফুপাতো বোন মিলির সঙ্গে একপর্যায়ে গোপন অভিসারে মিলিত হয় ফরহাদ। মিলি বা মিলির শরীরের আহ্বান কোনোটাই এড়াতে পারে না ফরহাদ। তাই বিয়ে করার পরও সে নতুন বউকে মন থেকে গ্রহণ করতে পারছে না।
বুড়ো বুঝতে পারে মিনুর কপালে সুখ নেই। তারপরও বুড়ো নাত জামাইকে সান্ত্বনা দেয়। মিনু ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে এলে ফরহাদ মিনুকে ঘরে নিয়ে যায়। কিন্তু বাসর রাতে মিনুর দেহের নৈবদ্য গ্রহণ করে না ফরহাদ। জামাইয়ের আচরণ দেখে মিনুর স্বপ্ন ভেঙে যায়। বাসর ঘর সম্পর্কে মিনু বান্ধবীদের কাছে যা যা শুনেছে, তা কিছুই মেলে না তার সঙ্গে।
ফরহাদ পরদিন বাড়ি ফিরে এলে মিলি আরও হিংস্র উন্মত্ত হয়ে ওঠে ফরহাদকে আরও নিবিড় করে পাওয়ার জন্য। ফরহাদের আর শ্বশুরবাড়ি ফিরে যাওয়া হয় না। মিলিকে নিয়েই ফরহাদ মেতে থাকে। একদিন মিলির ছোট বোন হাসু তাদের ঘনিষ্ট অবস্থায় দেখেও ফেলে।
গল্পের একপর্যায়ে ফরহাদ মিলির মেজো বোন লিলির স্বামীর সঙ্গেও মিলিকে অপ্রীতিকর অবস্থায় দেখতে পায়। তখন মিলি সম্পর্কে তার মোহ ভেঙে যায়। মনেপড়ে পল্লীর সরল এক বালিকার কথা। যে তার জন্য অপেক্ষা করে আছে। অবশেষে ফরহাদ ফিরে যায় তার পরিণীতা মিনুর কাছে।
গল্পে জীবন কখনো থেকে থাকে না। সে যেকোনো সময় বাঁক বদল করতে পারে। এই বিষয়টিই বোঝানো হয়েছে। বুড়ো তার নাত জামাইকে বলেছিল, ‘তয় মোনে রাইখ্য দাদুবাই, জেবনডা এট্টা সমুদ্দুর, বেমালা বড়। যুদি পিছেরডা লইয়াই থাহো তয় তোমার জেবনডা অইবে ফুডা নাওয়ের এল্লা মাঝির নাহান। পানি হেচপা আর এক পাড়ের দিক চাইয়া থাকপা। ওপার তো পইরা রইচে।’
অভি গল্পে আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহার লক্ষণীয়। এছাড়া প্রাকৃতিক দৃশ্য বর্ণনা, চরিত্র নির্মাণেও অভি দক্ষতার পরিচয় দেখিয়েছে। মানব জীবনে ফ্রয়েডিয় তত্ত্বের প্রভাব চমৎকার ভাবে ফুটে উঠেছে তার গল্পে।
আমরা ক্রমশ শহুরে জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়লেও আমাদের শেকড় পড়ে আছে গ্রামে। তাই গ্রামকে যত ভুলে থাকার চেষ্টা করি না কেন? এখনো আমাদের গ্রামে ফিরে যেতেই হয় কোনো না কোনো কারণে। বরং গ্রামে থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আমরা এক গভীর সংকটে পড়ে গেছি।
সুবান্ত যায়েদের ‘কিঞ্চিৎ সহজ মৃত্যু হলে’ গল্পে আমরা দেখি অনু দীর্ঘদিন পর গ্রামে ফিরে এসেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছু ভুলে গেলেও অনু তার গ্রামে পথ-ঘাট ঠিকই মনে রেখেছে। বাড়ি পৌঁছানো আগেই পথে অন্ধকার নেমে এলেও অনু ঠিকই তার বাড়ি পৌঁছে যায়। জনক-জননী তাকে দেখে উচ্ছ্বসিত হলেও তার মন থেকে বিমর্ষভাবে কাটে না। মূলত সুবান্ত যায়েদের গল্পে একই সাথে গ্রাম, গ্রামের প্রকৃতি, মানুষের সম্পর্ক উঠে এসেছে তেমনি জনপ্রিয় লেখক সাজিদ অনুর ভেতর যে দহন, পীড়ন, আত্মসংকট ফুটে উঠেছে। জীবিত থেকেও অনু যেন মৃত। এই জীবন বয়ে বেড়ানো যেন মৃত্যুর চেয়ে যন্ত্রণাময়। তাই তো গল্পের শেষে আমরা দেখি—‘তারপর অনু, দুয়েকবার সখ করে বিদেশি মদ খাওয়া জনপ্রিয় লেখক সাজিদ অনু, দারুণ দুঃখে বিষের মতো দেশি মদ গেলাসের পর গ্লাস গলায় ঢালতে ঢালতে ভাবে; তবে দারুণ হতো, যে মৃত্যুর ভেতরে সে ডুবে গেছে তারচে কিঞ্চিৎ সহজ মৃত্যু হলে।’
হোসনে আরা মণির ‘বংশবাতি’ গল্পে বংশরক্ষার জন্য ছেলে সন্তান জন্ম দেওয়া—এই যে পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব তার সমালোচনা করেছেন। গল্পে নিতাই, যে নিজে সাতপুরুষের ভিটেয় প্রদীপ দেওয়ার জন্য একমাত্র পুরুষ। অর্থাৎ পৈতৃক বংশরক্ষা পেয়েছে নিতাইয়ের জন্মের মাধ্যমে। এখন নিতাই দুই কন্যা সন্তানের জনক। দুই মেয়ে জন্ম হওয়ার পর নিতাই আর কোনো সন্তান না নেওয়ার জন্য ভাবে। কিন্তু নিতাইয়ের মা বংশরক্ষার জন্য নিতাই চাপ দিতে থাকে যেন নিতাই নমিতা আবারও সন্তান নেয়। কেননা ‘কত প্রাচীন চক্রবর্তী বংশ! এককালে নাকি এ ভিটেতেই মহাআড়ম্বরে লক্ষ টাকা ব্যয় করে মা দুগ্গার পুজো হত। কালিপুজোর পাঁঠাবলির রক্ত মন্দিরের চাতাল থেকে গড়িয়ে সত্তরটি সোপান ভিজিয়ে চিত্রার জল লাল করে তুলত।’ সেই চক্রবর্তী বংশ নাশ হয়ে যাবে তা কি হতে দেওয়া যায়?
বংশরক্ষার জন্য নিতাই আবার সন্তান নিতে চায়। কিন্তু ডাক্তার যেন বারবার একই কথা রিপিট করে শোনান নিতাইকে, ‘কনগ্রাচুলেশন মি. চক্রবর্তী, ইউ আর গোয়িং টু বি ড্যাড অব অ্যা বিউটিফুল ডটার’ তখন নিতাইয়ের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। কয়েকবার নমিতা এবারশন করে গর্ভের সন্তান নষ্ট করে ফেললেও এক পর্যায়ে নমিতা বিদ্রোহ করে। সে নিতাইয়ের মতকে আর মেনে নিতে চায় না। গর্ভের সন্তানকে আর হারাতে চায় না।
বংশরক্ষার জন্য ছেলে সন্তান কামনা যার জন্য একের পর এক কন্যা সন্তান হত্যা করতে দ্বিধাহীন পিতা ও গর্ভের সন্তানকে সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে পৃথিবীতে আনতে আগ্রহী মায়ের সংগ্রাম এ গল্পের উপজীব্য।
কন্যা সন্তান পৃথিবীতে আসার দিন যতই এগিয়ে আসতে থাকে নিতাইয়ের ততই দুশ্চিন্তা বাড়তে থাকে। কিভাবে এই সন্তানকে পৃথিবীতে আসা থেকে বিরত রাখা যায়। কিন্তু শেষপর্যন্ত মাতৃত্বের জয় হয়। লেখক অত্যন্ত চমৎকারভাবে এ গল্পের সমাপ্তি টেনেছেন। নিতাই যখন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছিল, তার কন্যা সন্তানকে কুমার নদে ফেলে দিতে নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে কিছুদিন আগে তার মতো এক বাবা ছুড়ে ফেলেছিল তার কন্যাকে, তখন তার ঘুম ভাঙে ওয়া ওয়া শব্দে। ‘ব্যাপার বুঝতে তার কিছু সময় যায়। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে উঠে গিয়ে সে উঁকি দেয় নতুন চালা বাঁধা আঁতুড় ঘরে। আশ্চর্য! নমিতার কোল আলো করে শুয়ে থাকা নবজাতিকা নিতাইয়ের দিকে চেয়ে চোখ মটকে হাসে। যেন ওইটুকু শিশুর চোখে নিজের দুর্বুদ্ধি ধরা পড়ায় নিতান্ত অপ্রতিভ নিতাই আরও হতবুদ্ধি হয়ে পড়ে যখন দেখে যে নমিতা শিশুটির নিম্নাঙ্গ তার দিকে উঁচিয়ে ধরে আগ্রাসী একরোখা বিজয়িনীর নির্লজ্জ্ব হাসি হাসছে।’
পুরনো কথায় আবার ফিরে আসি, ‘গল্পের দিন শেষ, গল্পের দিন শেষ’ বলে যারা মাতোয়ারা, তারা কতটা ভ্রান্তিতে আছে, তা উপরিউক্ত গল্পগুলো পাঠ করলেই বোঝা যাবে। এসময়ের গল্পের ভাষা, শৈলী আমাদের এই বলে আশ্বস্ত করে যে, এই তরুণ গল্পকারদের অনেকেই বাংলা গল্পকে আরও দূরে নিয়ে যেতে পারবেন তাদের মেধা, শ্রম অধ্যবসায় দিয়ে। তারা সবাই কম-বেশি নিরীক্ষাপ্রবণ (অবশ্য নিরীক্ষা বলতে যারা জটিল, অস্পষ্ট কিছুকে বোঝে, তাদের কথা ব্যতিক্রম, কেননা প্রতিভাবান লেখক, শিল্পী তাদের কাজে কমবেশি নিরীক্ষা করে থাকেন)। এই নিরীক্ষা, এই ভাঙা-গড়ার মাঝে তারা পাড়ি দেবেন দূরের পথ। কেননা সচেতন লেখকদের লেখা উত্তরোত্তর উত্তরণ ঘটেই। বরং না ঘটলেই তা হবে অস্বাভাবিক।
বংশবাতি ॥ হোসনে আরা মণি
কিঞ্চিৎ সহজ মৃত্যু হলে ॥ সুবন্ত যায়েদ
জহিরের দিনকাল ॥ কাজী মাহবুবুর রহমান
সিরাজের সংসারে ॥ শারমিন রহমান
জনক ॥ মঈনুল হাসান
চাঁদের মুখোমুখি রাতে ॥ সানাউল্লাহ সাগর
সমিরদ্দি পাগলা ॥ সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
দরখাস্ত ॥ ইলিয়াস বাবর
বুড়োর নাতজামাই ॥ মোস্তফা অভি
নিঝুম বিদায় বেলা ॥ মাহরীন ফেরদৌস