চট্টগ্রামের ফকিরের গান নিয়ে আলোচনার আগে লোকসাহিত্য সম্পর্কে একটু ধারণা দেওয়া দরকার। লোকসাহিত্য হলো ফোকলোর (Folklore)-এর একটি ধারা। এই Folklore শব্দটির উৎপত্তি ঘটে ১৮৪৬ খ্রিষ্টাব্দে। সে-বছর ইংল্যান্ডের দ্য অ্যাথেনিয়াম নামক পত্রিকায় উইলিয়াম জন থমস্ (William John Thoms) একটি পত্র লেখেন, যেখানে তিনি সর্বপ্রথম শব্দটি উপস্থাপন করেন। শব্দটির দু’টি অংশ, Folk এবং lore। Folk অর্থ লোক, lore অর্থ লোক বিষয়ক জ্ঞান। এককালে অংশদ্বয়ের সমন্বয়ে শব্দটি লেখা হতো Folk-lore। ঊনবিংশ শতাব্দীর সত্তর দশকের শেষদিকে অর্থাৎ ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে ইংল্যান্ডে প্রতিষ্ঠিত ‘Folklore Society’ এই সংস্থার একটি মুখপত্র প্রকাশ করতো, যার নাম ছিল Folklore Record। এই মুখপত্র একসময় Folk-lore নামে সমাদৃত হলেও পরবর্তীকালে তার মধ্য থেকে হাইফেন বিলুপ্ত করা হয়। ফলে তখন থেকে শব্দটি Folklore আকারে পরিচিত।১
Folklore বা ফোকলোর-এর বিভিন্ন সংজ্ঞা রয়েছে। ড. আশরাফ সিদ্দিকী তাঁর সম্পাদিত ‘কিশোরগঞ্জের লোককাহিনী’ গ্রন্থের ভূমিকায় লিখেছেন: “যা কিছু লোক ঐতিহ্যের মাধ্যমে চলে এসেছে কাহিনী, পুরাণ, ছড়া, সংগীত, চারুশিল্প, কারুশিল্প ইত্যাদি লোকসংস্কৃতি বা ফোকলোর”২।
ড. মজহারুল ইসলাম সম্পাদিত ‘বিচিত্র দৃষ্টিতে ফোকলোর’গ্রন্থে লেখা হয়েছে৩:
1. Folklore is the stimulation and forceful agent of culture.
2. Folklore is the backbone of culture.
3. Folklore is the pulse of the people and vehicle of social change.
4. Culture is the essence of civilization and folklore is the mirror of culture.
5. Folklore is the balancing force of culture.
Archer Taylor লিখেছেন৪ :
Folklore is the material that is handed on by tradition either by the word of mouth or by customs and practices. It maybe folksongs, folk tools, riddles, proverbs and other material preserved in words. It maybe traditional tools and physical object like fences or knots.
Dan-Ben-Amos লিখেছেন৫ : Folklore is the artistic communication in small group.
১৯৮২ সালে নির্ণিত Folklore-এর বিজ্ঞানভিত্তিক সংজ্ঞা হলো৬ :
`Folklore is a group oriented and based Creation or groups or indivituals reflecting the expectations of the community as an adequate expression of its cultural and social identity, its standereds and values are transmitted orraly, by initiation or by other means. It forms include, among other,language, liturature, music, fance, games, mythology, rituals, customs, handicrafts, archeteacture and other arts.’
Folklore-এর বিভিন্ন সংজ্ঞা রয়েছে যেমন, তেমনি Folklore শব্দটির বিভিন্ন অর্থও রয়েছে। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ শব্দটির অর্থ করেছেন ‘লোকবিজ্ঞান’, ড. আশরাফ সিদ্দিকী অর্থ করেছেন ‘লোক-সংস্কৃতি’৭। ইংলিশ ডিকশনারিতে শব্দটির অর্থ প্রদান করা হয়েছে ‘লোকাচারবিদ্যা’। তবে শব্দটির বিভিন্ন অর্থদাতা ফোকলোরবিদরা মনে করেন, Folklore বোঝাতে Folklore শব্দটি ব্যবহার করাই শ্রেয়; যেহেতু শব্দটির সঠিক অর্থ এখনও আবিষ্কার হয়নি।
বলেছি, Folklore শব্দটির উৎপত্তি ঘটে ১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দে। সে-সময়ে শব্দটির উৎপত্তি ঘটলেও ফোকলোর বিদ্যার আবির্ভাব সম্পর্কে শামসুজ্জামান খান লিখেছেন :
“শিল্প-বিপ্লবের পর ইউরোপে যে নতুন সমাজ ও সংস্কৃতি গঠিত হলো, তা আগেকার গ্রামীণ সমাজের সংস্কৃতি থেকে বহুলাংশে আলাদা। নবসৃষ্ট শহুরে মধ্যবিত্ত এবং নাগরিক শিল্প-শ্রমিকের সংস্কৃতিতেও এল আঙ্গিক ও বিষয়গত নানা পরিবর্তন। এই সংস্কৃতি ধীরে ধীরে একটা সুস্পষ্ট রূপ নিতে শুরু করে এবং এই সংস্কৃতিই হয়ে উঠে মূলধারার সংস্কৃতি। সাধারণ শিক্ষিত নাগরিক মধ্যবিত্ত নতুন এই সংস্কৃতিকে নিজেদের আত্মস্থ করতে প্রয়াসী হন। কিন্তু তাঁদের মনে একটা প্রশ্ন তীক্ষ্মমুখ হয়ে উঠে। প্রশ্নটি হলো, আগে তাঁদের যে সংস্কৃতি ছিল, তার সঙ্গে বিচ্ছেদ ও সম্পর্কহীনতার ফলে তাঁরা কি শিকড়বিচ্যুত হয়ে গেলেন না? তা ছাড়া প্রাচীন সংস্কৃতির প্রতি একধরনের মমত্ববোধ এবং প্রাক্তনের স্মৃতিও তাঁদের মনকে কিছু পরিমাণে পীড়িত করল। এই বোধ থেকেই শিল্প-বিপ্লব-পূর্ববর্তী গ্রামীণ সংস্কৃতির অনুসন্ধান এবং তা নিয়ে কাজ করার জন্য ঐতিহ্যপ্রেমী কিছু শিক্ষিত মানুষ এগিয়ে এলেন। এর ফলেই যে নতুন সামাজিক বিদ্যাটির উদ্ভব ঘটল, তারই নাম ফোকলোর”।৮
Folklore-এর একাধিক ধারা রয়েছে। লোকসাহিত্য হলো তার একটি ধারা, যা মৌখিকধারার সাহিত্য হিসেবে চিহ্নিত। আরেকটি ধারা হলো লোকশিল্প। লোকসাহিত্যেরও আবার বিভিন্ন শাখা রয়েছে। বিশেষ করে আটটি শাখার কথা বিভিন্ন সময়ে উল্লেখ করা হয়: লোকসংগীত, লোকনাট্য, ছড়া, গীতিকা, লোককাহিনি, মন্ত্র, প্রবাদ-প্রবচন ও ধাঁধা।৯ ফকিরের গান লোকসংগীতের শাখাবিশেষ। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মতো চট্টগ্রামেও এই ফকিরের গান পাওয়া যায়। ফকির বলতে চট্টগ্রামে মুসলিম সুফি বা আধ্যাত্মিক সাধকদের বোঝানো হয়। আবার এমন মুসলিমদেরকেও বোঝানো হয়, যারা সুফি বা আধ্যাত্মিক সাধক নয়, কিন্তু কেবল ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করে। এখানে আমরা এ ধরনের ফকিরদের (মুসলিম ভিক্ষুক) কথাই বলছি।
চট্টগ্রাম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় এখানে ফকিরেরা নজর কাড়ে বেশি। চট্টগ্রাম শহর ও জেলার মাজারগুলোতে তাদের উপস্থিতি বিশেষভাবে লক্ষণীয়। চট্টগ্রাম শহরের মাজারগুলোর মধ্যে আমানত শাহর মাজার, বায়েজিদ বোস্তামির মাজার, গরিবুল্লাহ্ শাহর মাজার, মিছকিন শাহর মাজার, বদনা শাহর মাজার, বদর আউলিয়ার মাজার, কাতাল পীরের মাজার অন্যতম। জেলার মাজার বা দরবারগুলোর মধ্যে ফটিকছড়িতে মাইজভাণ্ডার দরবার; পটিয়ায় আমির ভাণ্ডার দরবার, আকবর শাহর মাজার, শাহচান্দ আউলিয়ার মাজার, শাহ আকবর আউলিয়ার মাজার, ইয়াছিন আউলিয়ার মাজার, শাহগদী শাহর মাজার, শরীফ আউলিয়ার মাজার, শাহাজাহান আউলিয়ার মাজার; চন্দনাইশে আমিনুল্লাহ্ শাহ ওরফে বুড়া মাওলানার মাজার, মনু ফকিরের মাজার, মাওলানা রশিদ আহমদ শাহর মাজার, আবদুর রহমান শাহর মাজার, হাছান ফকির শাহর মাজার, নজু ফকিরের মাজার, শের আলী শাহর মাজার, শাহ করিম উল্লাহর মাজার, ওমর আলী শাহর মাজার, ছৈয়দ বুলার মাজার, কম্বলী শাহর মাজার, সর্বল কাজীর মাজার, শাহ হেদায়েত আলীর মাজার, শাহ মাছুম ফকিরের মাজার, মোস্তফা কামাল শাহর মাজার, জিহস ফকিরের মাজার, পুতুন শাহর মাজার, নজিবুল্লাহ শাহর মাজার, আনছুর আলীর মাজার, আবদুল লতিফ শাহর মাজার, হাফেজ ফজলুর রহমানের মাজার, জংলী পীরের মাজার; সাতকানিয়ায় মির্জারখীল দরবার, গারাংগিয়া দরবার, বারেক শাহর মাজার, শাহ শরফুদ্দিনের মাজার; রাউজানে জলিল শাহর মাজার, নাতোয়ান শাহর মাজার, ওয়ালী শাহর মাজার; হাটহাজারীতে শেরে বাংলা শাহর মাজার; লোহাগাড়ায় শাহ পীরের মাজার, শাহ সাহেবের মাজার; সীতাকুণ্ডে বাদশা ফকিরের মাজার, নুরুল আফসার প্রফেসরের মাজার, মহিবুল্লাহ শাহর মাজার, কাজী আলহাজ্ব জামাল উল্লাহ হুজুরের মাজার, আজম শাহর মাজার, ইউসুফ আলী শাহর মাজার, সাদেক মাস্তানের মাজার, বার আউলিয়ার মাজার, খাজা খালু শাহর মাজার, হজরত ডাল চালের মাজার; বাঁশখালীতে বাঘ ফকিরের মাজার, মোনায়েম শাহ আউলিয়ার মাজার, গাজী কালুশাহর মাজার, মকবুল ফকির শাহর মাজার, মাওলানা আশরফ আলীর মাজার, বড় মাওলানা শাহর মাজার, জানে আলী শাহর মাজার; আনোয়ারায় মোহছেন আউলিয়ার মাজার, আলী রজা ওরফে কানুফকিরের মাজার; বোয়ালখালীতে আবুল খায়ের নকশবন্দীর মাজার, ঈছা আহমেদ নকশবন্দীর মাজার প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।১০
চট্টগ্রাম শহর ও জেলার এসব মাজারে ফকিরেরা এককভাবে বা দলবেঁধে গান গেয়ে ভিক্ষা করে। সপ্তাহের বৃহস্পতিবার মাজারগুলোতে দর্শনার্থীর ভিড় বেড়ে যায়। মনে করা হয়, বৃহস্পতিবার মাজার জেয়ারতের মাধ্যমে কিছু প্রার্থনা করলে তা পূরণ হয়। মাজারগুলোতে দর্শনার্থীর ভিড় বৃদ্ধি পাওয়ার এটাই প্রধান কারণ। সেদিন মাজারগুলোতে ফকিরদের দলবেঁধে গান গেয়ে ভিক্ষা করার চিত্র চোখে পড়ে বেশি।
তারা ‘আল্লাহ আল্লাহ্’ও ‘লাইলাহা ইল্লাল্লাহ্’জিকিরের মাধ্যমে কিংবা নিজের দুঃখের কাহিনি উপস্থাপন করেও ভিক্ষা করে থাকে। তারা যেসব গান গেয়ে ভিক্ষা করে সেসব গানের মধ্যে মাইজভাণ্ডারি গানের কথা উল্লেখনীয়। চট্টগ্রামে মাইজভাণ্ডারি গান ব্যাপক জনপ্রিয় হওয়ায় ফকিরেরা এই গান গেয়ে যে ভিক্ষা করে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার মাইজভাণ্ডার গ্রামে মাইজভাণ্ডারি তরিকাকে কেন্দ্র করে মাইজভাণ্ডারি গানের উদ্ভব ঘটে। মাইজভাণ্ডারি তরিকার প্রবর্তক হজরত আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারি (১৮২৬-১৯০৬)। এই তরিকা কাদেরিয়া তরিকার শাখাবিশেষ। আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারির পীরের নাম সৈয়দ আবু শাহামা মোহাম্মদ সালেহ আল-কাদেরী লাহোরী। ১২৭৫ হিজরী সনে আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারি মাইজভাণ্ডার গ্রামে ফিরে এসে আস্তানা স্থাপন করে তাঁর তরিকার প্রচার-প্রসার শুরু করেন। মাইজভাণ্ডার গ্রাম থেকে তরিকাটি প্রচারিত হওয়ায় তার নাম হয় মাইজভাণ্ডারি তরিকা। এই তরিকার শুরু থেকে এই তরিকাকে কেন্দ্র করে গান রচিত হয়ে আসছে। সাধারণত মাইজভাণ্ডারি তরিকার পীর-মুরশিদের শানে মাইজভাণ্ডারি গান রচিত হয়।১১
চট্টগ্রামের ফকিরেরা যেসব মাইজভাণ্ডারি গান গেয়ে ভিক্ষা করে, সেসব গানের মধ্যে নিম্নোক্ত কয়েকটি গান উল্লেখযোগ্য :
হাওয়াতে বিমান চলে কোথা রে ইঞ্জিনের মূল,
কে তার চালক বল, বল দেখি রে সুধীকুল।
কেমন বিজ্ঞানের বল দিবানিশি চলে কল,
শুন হে ইঞ্জিন কক্ষে হু হু শব্দের হুলস্থুল॥
প্রত্যয় না হয় যদি দেখ হে দু’চক্ষু মুদি
দিয়ে দেখ আপনা দু’কর্ণ মুলে দুই আঙ্গুল॥
বিচিত্র ইঞ্জিনের চাল, উঠেছে সহস্র তাল,
বসেছেন ইঞ্জিন মূলে নবীজী হযরত রছুল॥
গুরু যারে দয়া করে সে গিয়ে বিমানে চড়ে
যাইয়া অনন্ত বনে তুলে আনে কাম্য ফুল॥
করিমে কহিছে সার ফুল তুলিবার ইচ্ছা যার,
শিরে ধর মাইজভাণ্ডারি মাওলা ধনের চরণ ধূল॥১২
… … …
কেবা ‘তুমি’কেবা ‘আমি’কে করে তার পরিচয়,
‘আমি’নামে দীন দুঃখী, ‘তুমি’নামে মহাশয়॥
তুমি আমি দুই কি এক সে বুঝিতে পারিবেক
তাওহিদের স্কুলে যেবা ধর্মজ্ঞানের ডিগ্রী লয়॥
একত্বে বাহুল্য ছিল, এইভাবে যুগান্ত গেল
বহুর মধ্যে একের খেলা এখন জগতে হয়॥
একেতে বহুলের মেলা, বহুর মধ্যে একের খেলা
তুমি আমি কথার কথা এক বিনা দ্বিতীয় নয়॥
মাটিতে আদম সৃষ্টি কে তাতে করিল দৃষ্টি
কে তাতে গোপনে বসি সাধারণের ছেজদা লয়॥
‘রব্বে আরেনি’কে বলিল, ‘লনতরাণী’উত্তর পেল,
কারে দেখি মুছা নবী মুর্চ্ছাত হয়ে রয়॥
নবীজী মে’রাজের রাতে জানি না গেলেন কোথাতে
তুমি বল ‘আর্শ তোমার স্থাপিত মানব হৃদয়’॥
তুমি কর্তা ইচ্ছাময়, সব তোমার ইঙ্গিতে হয়,
জানি না জগতবাসী কেন তারে দোষী কয়॥
বুঝতে হলে তত্ত্ব সার ত্বরা চল মাইজভাণ্ডার,
করিমে কয় তথা গেলে সব গোলের মীমাংসা হয়॥১৩
… … …
দেখ একি চমৎকার, দেখ একি চমৎকার।
প্রেমেরি পাশা খেলেন, গাউছে মাইজভাণ্ডার॥
অস্তাঙ্গিত আয়ু বেলা খেলতে চল প্রেমখেলা।
রশ-খেলা খেলতে তোরা, কে কে যাবি আয়॥
হালকার ময়দান যেই কর্বলার মাঠ সেই।
পাললায় মিজান সেই, সব একাকার॥
দুশমনের হাতে মোরা কখনও না দেব ধরা।
গাউছের পায় সপে দেব, প্রাণ আপনার॥
মুনকার নাকীর যবে মন রাব-বুকা জিজ্ঞাসিবে।
শিরে বসি শিখাইবে, উত্তর আমার॥
গাউছধনের প্রেমবলে, লেওয়া-ই-আহমদীর তলে।
হাশরতে হালকা বন্দী নাচিব অপার॥
রঙ্গরশে মত্ত মন, সঙ্গে প্রিয়া গাউছধন।
কামিনী ছটকে হব, পুলছেরাত পার॥
হয়ে গেলে স্বর্গবাসী গাউছেরি চরণে বসি।
প্রেমেরি জয়ধ্বনি দেব, আনন্দ বাহার॥
করিমের মোনাজাত কবুল কর প্রাণনাথ।
তব প্রেমানলে দহি, হইলাম ছারখার॥১৪
তিনটি গানেরই রচক মাওলানা বজলুল করিম মন্দাকিনী (৯ ফেব্রুয়ারি ১৮৮১-৭ অক্টোবর ১৯৫৯)। তিনি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার মন্দাকিনী গ্রামের সন্তান। তাঁর বাংলা জন্ম-তারিখ ২২ ফাল্গুন। প্রতিবছর এই দিনে তাঁর জন্মোৎসব পালিত হয়। মৌলবি সৈয়দ আজগর আলীর পুত্র, মাদ্রাসার সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী, বিশ শতকের তিরিশ বা চল্লিশ দশকে বার্মার বেছিন শহরে জীবিকার তাগিদে অবস্থানকারী মন্দাকিনী মাইজভাণ্ডারি তরিকার প্রবর্তক হজরত আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারির শিষ্য ও খলিফা। তিনি এই তরিকাভিত্তিক অজস্র গান রচনা করেন এবং একাধিক গানের সংকলন প্রস্তুত করেন; যেমন, ‘প্রেমের হেম’, ‘প্রেমাঞ্জলী’ও ‘শেষ জীবন’প্রভৃতি। গ্রন্থত্রয় প্রকাশিত হলেও আজ দুষ্প্রাপ্য। ‘শেষ জীবন’ প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৫৯ সালে। সম্ভবত তিনি গ্রন্থটি প্রস্তুতের কাজও শেষ করেন ১৯৫৯ সালে। গ্রন্থটির এক স্থলে লেখা: ‘…ইতি-গ্রন্থকার মোহাম্মদ বজলুল করিম আহমদীউল কাদের। ১৩/৬/১৯৫৯ ইং’।১৫
ফকিরেরা লোকজনকে এই গানের মাধ্যমে কবর ও দোজখের ভয়, বেহেশতের লোভ, নামাজ-রোজা পালন করে ও মাতা-পিতাকে সম্মান প্রদর্শন করে পুণ্য অর্জনের প্রয়োজনীয়তা দেখায়, যাতে লোকজনের মনে তাদেরকে ভিক্ষা প্রদানের জন্য করুণার উদ্রেক হয়।
চট্টগ্রামের ফকিরেরা মন্দাকিনীর উপর্যুক্ত তিনটি গান খুবই আন্তরিকভাবে গেয়ে থাকে। প্রথম গানে বিমান বলতে রাছুলের পথ বা ইসলাম, যার ইঞ্জিনের মূল বা পরিচালক রাছুল। গানটিতে বলা হয়েছে, মাইজভাণ্ডারি গুরু বা মুরশিদ যাকে দয়া করেন সেই ব্যক্তি বিমানটিতে চড়তে পারে অর্থাৎ রাছুলের পথে চলতে পারে। দ্বিতীয় গানে তাওহিদের বা একত্ববাদের স্বরূপ ও রহস্যের বর্ণনা রয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, একের মধ্যে বহুর মেলা, বহুর মধ্যে একের খেলা, যা বুঝতে মাইজভাণ্ডার দরবারে যাওয়া দরকার। তৃতীয় গানে গাউছে মাইজভাণ্ডার (আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারি)-র প্রেমের কথা ব্যক্ত করা হয়েছে; মানুষকে আহ্বান করা হয়েছে, তাঁর প্রেমের রসে মত্ত হওয়ার জন্য, তাঁর চরণে নিজেকে সঁপে দেওয়ার জন্য। ফকিরদের উদ্দেশ্য, এই তিনটি গানের বক্তব্য ও সুরে মানুষকে বিমোহিত করে ভিক্ষা আদায় করা। তারা আরেকটি মাইজভাণ্ডারি গানও খুব গেয়ে থাকে। আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারির শানে রচিত গানটি :
বিচ্ছেদের অনলে সদা অঙ্গ জ্বলে
বিনয় করি গো প্রিয়া আয় আয় রে।
আমি বিনয় করি গো প্রিয়া আয় আয় রে।
একেলা ঘরেতে, আসিয়া স্বপ্নেতে
লুটিয়া যৌবন ধন
সে অবধি মনো সদায় উচাটনো
উদাসী হইয়াছি প্রিয়া আয় আয় রে।
কামেরও কামিনী, হইয়া বৈরাগিনী
ত্যজিল পুষ্পের খাট
বন্ধু বন্ধু বলে, ঝম্প দিবো জলে
জীবন ত্যজিব প্রিয়া আয় আয় রে।
তোমারই যাতনা, পরাণে সহে না
সহজ অবলা এ মন
তুই বন্ধু বিহনে মনেরই আসনে
বসাবো কাহারে প্রিয়া আয় আয় রে।
দাস হাদী বলে প্রেমেতে মজিলে
নাহি কো মুক্তির আশ,
যাবৎ জীবন করো হে জপন
প্রেমের জপনা প্রিয়া আয় আয় রে।১৬
গানটির রচয়িতা আবদুল হাদী কাঞ্চনপুরী। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার কাঞ্চনপুর গ্রামের সন্তান এই আবদুল হাদীও হজরত আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারির শিষ্য ও খলিফা ছিলেন। তিনিও মাইজভাণ্ডারি তরিকাভিত্তিক অনেক গান রচনা করেন। হাদী গানটিতে প্রিয়া বলতে আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারিকে বুঝিয়েছেন। গানটিতে লক্ষণীয়, তিনি তাঁর বিরহ বা বিচ্ছেদ-যন্ত্রণা সইতে না পেরে তাঁকে কাছে আসার সম্ভাষণ জানাচ্ছেন। গানটির সুর অসম্ভব বেদনা-বিধুর, যার কারণে শুধু চট্টগ্রামে নয়, পুরো বাংলাদেশে গানটি ব্যাপক সমাদৃত। চট্টগ্রামের ফকিরেরা গানটি গাইলেই তাদের ভিক্ষার পাত্র ভরে যেতে থাকে। বলা বাহুল্য, ফকিরেরা কথা পরিবর্তন করেও মাইজভাণ্ডারি গান গেয়ে ভিক্ষা করে থাকে। একটি মাইজভাণ্ডারি গানের অংশবিশেষ :
আমি তোমার দয়ার ভিখারি, বাবা ভাণ্ডারি,
আমি তোমার দয়ার ভিখারি।
দূর করিতে ভবের জ্বালা
জপি তোমার নামের মালা গো,
গাউছুল আজম নামে সুধাধ্বনি, বাবা ভাণ্ডারি,
আমি তোমার দয়ার ভিখারি।১৭
ফকিরেরা এই গানের কথা পরিবর্তন করে এভাবে গেয়ে থাকে :
আমি তোমার দয়ার ভিখারি, ও মুসাফির,
আমি তোমার দয়ার ভিখারি।
দূর করিতে ভবের জ্বালা
জপি খোদার নামের মালা গো,
খোদাতালার নামে সুধাধ্বনি, ও মুসাফির,
আমি তোমার দয়ার ভিখারি।১৮
ফকিরেরা গানটিতে লোকজন থেকে তাদের দয়া অর্থাৎ টাকা-পয়সা চাওয়ার কথা বসিয়ে দিয়েছে।
ভিক্ষা করতে গিয়ে তারা মাইজভাণ্ডারি গান ছাড়াও চট্টগ্রামের আরও পীর-অলিদের শানে, যেমন, মোহছেন আউলিয়ার ও আলী রজা ওরফে কানুফকিরের শানে রচিত গানও গেয়ে থাকে। আবার মরমি গানও তারা গায়। নিম্নোক্ত সৈয়দ মহিউদ্দিন ওরফে মহিআল ভাণ্ডারি রচিত মরমি গানটি গেয়ে তারা লোকজনকে বিশেষ করে তাদের ক্ষণস্থায়ী জীবন ও পরকালের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চায়, মনে করিয়ে দিতে চায় জীবন সাঙ্গ হওয়ার আগে গুরুর শরণ নেওয়ার মাধ্যমে পরকালে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এভাবে তারা লোকজনের অন্তর নরম করে তাদের কাছ থেকে দয়া অর্থাৎ অর্থ আদায় করে।
আইতে নিজে কান্দিলি যাইতে কান্দাবি স্বজন
দুই কান্দনের মাঝে রে তোর জীবন-মরণ।
ওরে ভোলামন…
কেন এত হাসাহাসি, অতি ভালোবাসাবাসি,
মিঠা রঙ্গ মাখামাখি ক্যান্ রে ভোলামন?
ওরে কচু পাতার জলের কথা রাখিও স্মরণ।
খুন, লিপ্সা, ভাগাভাগি, তার ভেতরে রাগারাগি,
হিংসা তরে মারামারি ক্যান রে ভোলামন?
ওরে দুষ্টু কর্মে ইবলিসের ইচ্ছা হয় পূরণ।
আছে বলে পরাণপাখি গায়ের জোরে হাঁকাহাঁকি,
দমের নিশ্বাস অবিশ্বাসী য্যান রে ভোলামন?
ওরে পুট্টুস কইরা দেহ ছাড়ি যাইতে কতক্ষণ?
চিতা কিংবা গোরস্থানে, আগুন না হয় মাটির সনে
রঙ্গ সাঙ্গ হইবার আগে য্যান রে ভোলামন?
সৎ গুরু তোকাইয়া ধরো মহির নিবেদন।১৯
চট্টগ্রামের ফকিরদের অনেকে শুধু মাজার নয়, রাস্তা-ঘাটে, রেলস্টেশনে, রেলে, বাসে এবং বাড়ি-ঘরেও এককভাবে বা দলবেঁধে ভিক্ষা করে থাকে; রেলে, বাসে ও বাড়ি-ঘরে সাধারণত এককভাবেই ভিক্ষা করে। তারা মাইজভাণ্ডারি গান, পীর-অলিদের শানে রচিত গান ও মরমি গান ছাড়াও ‘দান করলে ছওয়াব মিলে’এমন বক্তব্যধর্মী গানও গায়। এরকম একটি গানের অংশবিশেষ: ‘একটা টাকা দিয়া যান/ আখেরাতে ছওয়াব পাইবেন/ পাহাড়ও সমান’। অনেক ফকির মাজারে বা অন্যত্র ভিক্ষা করতে গিয়ে তাদের অশেষ দুঃখময় জীবনের বর্ণনা অনেকাংশে পাওয়া যায় এমন গান নির্বাচন করে গেয়ে থাকে। অন্ধ ফকিরদের দেখা যায় তারা প্রায়সময় ফকির অন্ধ আমিনুল রচিত ও সুরারোপিত নিম্নোক্ত গানে তাদের বেদনাময় জীবনের ইতিবৃত্ত খুঁজে পায় :
আমি অন্ধ কপাল মন্দ সকলরে জানাই,
আমার মতো দুখের কপাল এ সংসারে নাই,
আমার মতো পোড়া কপাল এ জগতে নাই।
অন্ধ হইয়া না দেখিলাম দুনিয়াদারী,
আমার তরে পেতে মন চায় কী সুন্দর নারী,
আমি না দেখিতে না পাইলাম এ ব্যথাটা যে জানাই।
(হায়) অন্ধ হইয়া পেলাম দুনিয়ায় দুঃখ-বেদনা,
মর্ত্যের মাঝে পেলাম আমি দুঃখ-লাঞ্জনা,
আমার অন্তরে কত্তো ব্যথা, ব্যথা বোঝার মানুষ নাই।
আমিনুলে অন্ধ হইয়া না দেখল দুনিয়া,
কাঠের মালা গলায় লইয়ে বেড়ায় রে ঘুরিয়া,
এখন গান হলো মোর সঙ্গের সাথি, গান গেয়ে সংসার চালাই।২০
অন্ধ আমিনুল ও তার গানটি কোন্ অঞ্চলের জানা যায় নি। অন্ধ কালা নামে এক ফকিরের রচিত ও সুরারোপিত একটি গান পাওয়া গেছে। অন্ধ কালা ও তার এই গানটিও কোন্ অঞ্চলের জানা সম্ভব হয় নি। চট্টগ্রামের ফকিরদের অনেকে মাজারে বা অন্যত্র এই গানটিও গেয়ে ভিক্ষা করে থাকে :
আশেপাশে ময়মুরুব্বি যে আছেন যেথায়
সত্যি কথা হায় এই অন্ধ কালা কয়,
জগৎ নামের ইস্টিশনে কারো থাকন নাই
কারো থাকন নাই এই ইস্টিশনে ভাই।
একবার আইসা থাইকা যাইবা, এমন হবার নয়
সবার যাইতে হয় এক নতুন ঠিকানায়।
হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান কারো নিস্তার নাই
কারো নিস্তার নাই, না হইলে মুমিন ভাই।
আমার আল্লাহ নবীজির নাম।
আল্লাহর কাছে সবই আছে একটি জিনিস নাই
নাইরে মিথ্যা নাই, তার সবই সত্যি ভাই।
নবী বলছেন নামাজ পড়ো, রোজা রাখো তাই,
এই দুনিয়ায় ভাই বেহেশত যদি চাই
বাড়ি-গাড়ি, টাকা-কড়ি কিছুই রবে না
সঙ্গে যাবে না, সব হইয়া যাইবো ছাই।
মাটির দেহ মাটি হইয়া মিলবো মাটিতে
হইবো যাইতে ওই আন্ধার ঘরে ভাই।
আমার আল্লাহ নবীজির নাম।
পিতা-মাতার মত আপন দুনিয়াতে নাই
নাইরে আপন নাই, বৃথা বুইঝো না ভাই,
নিজে খাইছেন না খাইছেন কি তাহার হিসাব নাই
নাইরে হিসাব নাই, সব সন্তানদের খাওয়ায়।
কত যত্নে লালন পালন করছেন জীবনভর
হইও না তার পর, তয় কানবা জনম ভর
প্রাণের আপন সদাই যেজন কাছে না আর রয়
সত্যি কথা হায় এই অন্ধ কালা কয়।
আমার আল্লাহ নবীজির নাম।২১
এই গানের বক্তব্য, এই জগতে কেউ থাকতে পারবে না, অর্জিত সম্পদ-সম্পত্তি, অর্থ-কড়ি ত্যাগ করে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবাইকে একদিন চলে যেতে হবে নতুন ঠিকানায় অর্থাৎ অন্ধকার ভরা কবরে বা চিতায়। সেখানে মাটির দেহ মাটিতে লীন হয়ে যাবে। আরও বক্তব্য, আল্লাহর কাছে মিথ্যের কোনো স্থান নেই। তার পক্ষ থেকে তার নবী ঠিকই বলেছেন, পরকালে বেহেশত পেতে হলে নামাজ-রোজা পালন করে পুণ্য অর্জন করতে হবে। এই গানে এই বক্তব্যও রয়েছে যে, এই পৃথিবীতে মা-বাবার চেয়ে সন্তানের জন্য কেউ আপন নয়, যারা নিজেরা খেয়ে না খেয়ে সন্তানদের অতি যত্নের সঙ্গে লালন-পালন করেন। সুতরাং তাদের কখনো পর করা উচিত নয়।
ফকিরেরা লোকজনকে এই গানের মাধ্যমে কবর ও দোজখের ভয়, বেহেশতের লোভ, নামাজ-রোজা পালন করে ও মাতা-পিতাকে সম্মান প্রদর্শন করে পুণ্য অর্জনের প্রয়োজনীয়তা দেখায়, যাতে লোকজনের মনে তাদেরকে ভিক্ষা প্রদানের জন্য করুণার উদ্রেক হয়।
তথ্যসূত্র
১. উইলিয়াম জন থমস্ : তাঁর ফোকলোর চর্চায় স্বজাত্য বোধ (প্রবন্ধ), কনক আমিরুল ইসলাম। সংগৃহীত।
২. কিশোরগঞ্জের লোককাহিনী, সম্পাদনা : ড. আশরাফ সিদ্দিকী, বাংলা একাডেমি-ঢাকা, ১৯৬৫।
৩. বিচিত্র দৃষ্টিতে ফোকলোর, সম্পাদনা : ড. মজহারুল ইসলাম, বাংলাদেশ ফোকলোর সোসাইটি, পরিবেশক : আগামী প্রকাশনী, অক্টোবর ১৯৯৭।
৪. Archer Taylor : Folklore and the student of literature, the Pacific of spectator vol-2, 1948
৫. Dan-Ben-Amos : Towards a Definition of Folklore in Context. Journal of American Folklore-1971.
৬. নমিতা ম-ল, লোকসংস্কৃতি: সংজ্ঞা ও পরিভাষা সন্ধান (প্রবন্ধ), লোকসংস্কৃতি, জুলাই-১৯৯৯, বাঁকুড়া লোকসংস্কৃতি একাডেমী।
৭. লোক-সাহিত্য, প্রথম খণ্ড, ডক্টর আশরাফ সিদ্দিকী, গতিধারা প্রথম প্রকাশ, আগস্ট ২০০৮, পৃষ্ঠা: ৩৪।
৮. ফোকলোরচর্চার সেকাল ও একাল, শামসুজ্জামান খান, প্রথম আলো, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।
৯. লোকসাহিত্য, ওয়াকিল আহমদ, বাংলাপিডিয়া।
১০. ব্যক্তিগত অনুসন্ধান।
১১.ক. গাউসুল আজম মাইজভাণ্ডারীর জীবনী ও কেরামত, মওলানা শাহসুফী সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভাণ্ডারী; জানুয়ারি ২০১৮, ২৭তম প্রকাশ; প্রকাশক: আলহাজ্ব শাহসুফি ডা. সৈয়দ দিদারুল হক মাইজভাণ্ডারী, মোন্তাজেম, জিম্মাদার ও সাজ্জাদানশীন, দরবার-এ-গাউসুল আজম মাইজভাণ্ডারী গাউছিয়া আহমদিয়া মঞ্জিল, মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফ, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম।
খ. ব্যক্তিগত অনুসন্ধান।
১২. সংগৃহীত।
১৩. সংগৃহীত।
১৪. সংগৃহীত।
১৫. বাংলাদেশের বিস্মৃতপ্রায় লোকসঙ্গীত-১ম খণ্ড, সংগ্রহ ও সম্পাদনা: শামসুল আরেফীন, ফেব্রুয়ারি ২০১২, বলাকা-চট্টগ্রাম, পৃষ্ঠা: ১০৫।
১৬. সংগৃহীত।
১৭. সংগৃহীত।
১৮. সংগৃহীত।
১৯. সৈয়দ মহিউদ্দিন ওরফে মহিআল ভাণ্ডারি থেকে সংগৃহীত।
২০. সংগৃহীত।
২১. সংগৃহীত।