একজন দায়িত্বশীল, নিষ্ঠাবান ও সৎ গল্পকারের কাছে জীবনের গল্প নাকি গল্পের জীবন অধিক গুরুত্বপূর্ণ, তা নিয়ে শূন্যে তরবারি ঘুরানোর মতো নিষ্ফল কিন্তু বিদ্যুৎ ঝলসানো বিতর্ক চলতে পারে দীর্ঘ সময় জুড়ে , শানিত যুক্তির তীক্ষ্ণধার ছুরি—কাটাকাটি খেলাও উপভোগ করা যেতে পারে বেশ কিছুক্ষণ ধরে; তবু এ প্রসঙ্গে আমার একান্ত নিজস্ব মন্তব্য হচ্ছে—গল্প তো যাপিত জীবনেরই ছবি, জীবনের সমূহ দাবিকে নিয়েই গড়ে ওঠে গল্প। প্রশ্ন উঠতে পারে কেমন সেই জীবন? গল্পকারের কলম-ক্যামেরা সেই জীবনের কতোটা গভীর তলদেশের ছবি তুলে আনতে পারে? জীবনপাত্র কতোটা নিঃশেষে নিংড়ে ঝেড়ে মুছে সংগ্রহ করতে পারেন গল্পের মালমশলা? নাকি কেবলই জীবনের উপরিতলে ভেসে ওঠা ফেনারাশিতে আটকে পড়েন গল্পকার? তাহলে আর কেমন গভীর এবং নিবিড় হবে তাঁর হাতে আঁকা গল্পের জীবন? এই বেলুন-ফাঁপা বর্ণনার ফাঁদে পা ফেলে পাঠক কতোটা প্রতারিত হতে পারে, সেই দিকটা তলিয়ে দেখবে কে?
মানুষের তো মোটে একটিমাত্র জীবন। এই এক জীবনের সঙ্গেই সে যুক্ত করে নিতে জানে পূর্বপুরেষের অভিজ্ঞতার নির্যাস এবং উত্তরপুরুষের স্বপ্নমাখা আকাশের রঙ। এক জনমেই সে তখন শত জনমের বিস্তার ঘটিয়ে তোলে। সে তখন পেয়ে যায় জীবনভরা গল্পের নিঃশেষ-অযোগ্য বিপুল এবং বিচিত্র ভান্ডার। জীবনের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে থাকে বহু বিচিত্র গল্পের সম্ভার। গল্পকারের সাধ্য কি সমুদয় সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে গল্পের আদলে ফুটিয়ে তোলে? জীবনের আদিগন্ত মাঠ জুড়ে ছড়ানো আছে গল্পের বীজ, জীবন তার নিজের গরজেই সেই বীজের অঙ্কুরোদ্গম ঘটায়, বাড়িয়ে তোলে, পত্রপুষ্পে পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটায় ; গল্পকারের কাজ হচ্ছে পুরো প্রক্রিয়াটি গভীর মনোযোগ এবং সূক্ষ্ণ অন্তর্দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করা, অতঃপর ফসল তুলে আনা হাতের মুঠোয়। এরপর কোন গল্পকারের হাতের মুঠোয় ক্ষমতা কেমন, তার উপরে নির্ভর করে গল্পের সাফল্য ব্যর্থতা। এ জীবনে চড়াই-উতরাই আছে, লড়াই-সংগ্রাম আছে, আছে প্রাপ্তির আলোক-উচ্ছ্বাস এবং অপ্রাপ্তির প্রগাঢ় হতাশাও। আর এই সব মিলিয়েই জজীবনের অম্লমধুর নির্যাস। সেই নির্যাসমথিত উপাদানের শৈল্পিক বুননে গড়ে ওঠে জীবনের গল্প, জীবনজয়ী গল্প।
উত্তমপুরুষের ছদ্মবেশ থেকে সত্যিকারের নামটি সনাক্ত করতে বা বের করে আনতে পাঠককে অনেক সময় গোলকধাঁধায় পড়তেও হয়। বাংলা ছোটগল্পের ঐশ্বর্যবান মহাজন বটে আমাদের রবীন্দ্রনাথ।
গল্পকারের জন্য শৈল্পিক বুননের ব্যাপারটা খুবই জরুরি, বলা যায় সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। জীবন মানেই গল্প। বিচিত্র সব পাত্রপাত্রী কতো রকম ভাবেই না জীবনপাত্র মেলে ধরে আছে অকৃপণ ভঙ্গিতে! সেখান থেকে যে যেমন পারো, যতোখানি পারো, যতোভাবে পারো তুলে নাও গল্পের মালমশলা ; তুলে আনার এই কাজটি একজন গল্পকার করেন নিজের আনন্দের জন্য, কিন্তু সেই অভিজ্ঞতা- নির্যাসটুকু যখন গল্পের আদলে পরিস্ফুট করেন তখন পাঠকের আনন্দের কথা ভাবতেই হয়। প্রকাশের পূর্ব পর্যন্ত যা একান্ত নিজস্ব, প্রকাশের পর ( যদি সেটা শিল্পকর্মের মতো মানসম্পদ হয়) তা আর কিছুতেই একার থাকে না, হয়ে ওঠে সকলের। একযোগে সকলের সন্তুষ্টি অর্জন হয়তো অসম্ভবপ্রায় ব্যাপার, কিন্তু সকলের মনোযোগ আকর্ষণের অভিলাষ থাকতেই পারে গল্পকারের। তার জন্য চাই যথার্থ শৈল্পিক বুনন। গল্পের বিষয়বস্তু অভিন্ন হবার পরও একাধিক গল্পকারের হাতের বুননশৈলী স্বাতন্ত্র্যমন্ডিত হবার কারণে ভিন্ন ভিন্ন মেজাজ ও চারিত্র্যসম্পন্ন স্বতন্ত্র গল্প হয়ে উঠতে পারে। পাঠকের চোখ ধাঁধাঁবার জন্য গল্পের বুননকৌশলে অভিনবত্ব আনতে চাইলে সেটা হবে এক ধরনের প্রতারণা। দক্ষ এবং শক্তিশালী গল্পকার বিশেষ বিশেষ গল্পের ক্ষেত্রে সেই বুননকৌশলটাকে এতটাই অনিবার্য করে তোলেন যে গল্প পাঠের পর গুণবিচারি পাঠক এই প্রতীতি বুকে নিয়ে আশ্বস্ত বোধ করেন—এই গল্পটি সমস্ত সম্ভাবনাসহ পরিপূর্ণতায় ফুটিয়ে তোলার জন্য শৈল্পিক এই বুননকৌশলের আশ্রয় নেওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল না। বিকল্প অন্য কোনো শৈলী অবলম্বন করলে সেটি হয়তোবা অন্য আর একটি গল্প হয়ে উঠতে পারে।
শিল্পসাহিত্যের যে-কোনো শাখার মতো গল্পের ক্ষেত্রেও সেই গুরুবাক্যটি শিরোধার্য— কী বলা হয়েছে গল্পে তার চেয়ে কেমন করে বলা হয়েছে সেটাই মুখ্য। একটি গল্পে কী আর বলা হবে? অবশ্য সেখানে গল্পই থাকবে । আমরা তাকে কাহিনি বা আখ্যান অথবা যে নামেই অভিহিত করি না কেন, মূলত সেটাই গল্প ।
গল্পের বিষয়বস্তু হতে পারে নানা রকম। ব্যক্তিজীবনের আনন্দ-বেদনা, প্রেম-বিরহ, সামাজিক সমস্যা-সংকট,আচার-বিশ্বাস, ব্যক্তির ভেতরের আস্থা-অনাস্থার দোলাচল ও দ্বন্দ, ভেতরের বাঁধন আলগা হয়ে যাওয়া—এ রকম আরো কতো কিছু নিয়ে গল্প লেখা যেতে পারে। আবার একই বিষয়বস্তু নিয়ে দশজন গল্পকারের হাত থেকে দশ রকম গল্প পাওয়া যেতে পারে। হ্যাঁ, দশজন লিখেছেন বলেই গল্প হবে দশটি দশ রকমের। এই ‘রকম’ বা স্টাইলের ভেতরেই থাকে গল্পকারের নিজস্বতা। কারো গল্পের শুরুতেই থাকে নাটকীয় চমৎকারিত্ব, যা পাঠকের বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ না করে পারে না। কেউ বা শুরু করেন সংলাপ দিয়ে। গল্পের শেষ অধ্যায় দিয়েই শুরু হয় গল্প। অথবা মধ্যবর্তী কোনো এক বাঁকবদলের জায়গা থেকে গল্প শুরু করে ধীরে ধীরে ডালপালা মেলতে মেলতে এগিয়ে চলেন কেউ কেউ। শুধু কি এগিয়ে চলেন? তা হবে কেন! গল্পের প্রয়োজনে অথবা স্বতন্ত্র শৈলী প্রকরণ নির্মাণের স্বার্থে যে-কোনো মিতবাক গল্পকার এগিয়ে চলতে চলতে ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে পড়তেও পারেন, ফ্ল্যাশব্যাকে আলো ফেলে পিছিয়ে আসতেও পারেন, পিছিয়ে আসা তারপর আবার সামনে এগিয়ে যাওয়া—এই রকম কতো না ভঙ্গিতে দুমড়ে মুচড়ে গল্পের সম্প্রসারণ ঘটে চলে। এই সব ভঙ্গি বা স্টাইল নিয়ে কতো না পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়ে চলেছে। এক রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছই যদি সামনে মেলে ধরা যায়, কতো রকম স্টাইল যে চোখে পড়বে! উত্তমপুরুষে গল্প বলা তাঁর প্রিয় ভঙ্গি, তবু কি বিভিন্ন গল্পে কম কিছু বৈচিত্র্য দেখিয়েছেন? এই উত্তমপুরুষকে নিয়েই কতো রকমের রাখাঢাকা, কতো না রহস্যের অবগুণ্ঠন! উত্তমপুরুষের ছদ্মবেশ থেকে সত্যিকারের নামটি সনাক্ত করতে বা বের করে আনতে পাঠককে অনেক সময় গোলকধাঁধায় পড়তেও হয়। বাংলা ছোটগল্পের ঐশ্বর্যবান মহাজন বটে আমাদের রবীন্দ্রনাথ। গল্প-সূচনা নিয়েই অভিনব কতো না কলাকৌশল আর পরীক্ষা-নিরীক্ষা তিনি করেছেন! যেনবা প্রতিটি গল্পের সূচনাতেই তাঁর অভিনবত্ব চাই। ‘একটি ক্ষুদ্র পুরাতন গল্প’ শিরোনামের গল্পটির সূচনা হয়েছে এ ভাবে—‘গল্প বলিতে হইবে? কিন্তু আর তো পারি না। এখন এই পরিশ্রান্ত অক্ষম ব্যক্তিটিকে ছুটি দিতে হইবে।’ এরপর নিজের ‘অক্ষমতা’ সম্পর্কে বেশ দীর্ঘ অথচ বিনীত ব্যাখ্যা প্রদান শেষে লেখক জানাচ্ছেন—’আজ কিন্তু অতি ক্ষুদ্র এবং পৃথিবীর অত্যন্ত পুরাতন একটি গল্প মনে পড়িতেছে। মনোহর না হইলেও সংক্ষেপবশতঃ ধৈর্যচ্যুতি না হইবার সম্ভাবনা।’
সে আমাদের বাড়তি পাওয়া। তাই বলে নতুনত্বের নামে গল্পশৈলী ভাঙাভাঙির ব্রতকে শিরোধার্য করা কিছুতেই গল্পকারের কাছে কাম্য হতে পারে না। গল্পকার অবশ্যই জীবনের গল্প বলবেন, জীবনকে ভালোবেসে, সম্মান করে; সেই গল্প উপস্থাপনের কৌশলও নিশ্চয়ই তিনি নিজের মতো করে নির্ধারণ করেও নেবেন।
গল্প কি এখান থেকেই শুরু হয়ে গেল? গল্পকার এরপর বর্ণনা দিচ্ছেন, ‘পৃথিবীতে একটি মহানদীর তীরে একটি মহারণ্য ছিল। সেই অরণ্যে এবং সেই নদীতীরে এক কাঠঠোকরা এবং একটি কাদাখোঁচা পক্ষী বাস করিত।’ তাহলে এই গল্পটির সত্যিকারের সূচনা কোথা থেকে বলা যাবে? রবীন্দ্রনাথ এ রকমই। ‘দর্পহরণ’ নামে আরও একটি গল্পের প্রতি দৃষ্টিপাত করা যাক। গল্পের সূচনাতেই লেখক বলেছেন, ‘কী করিয়া গল্প লিখিতে হয় তাহা সম্প্রতি শিখিয়াছি। বঙ্কিমবাবু এবং স্যার ওয়ালটার স্কট পড়িয়া আমার বিশেষ ফল হয় নাই। ফল কোথা হইতে কেমন করিয়া হইল, আমার এই প্রথম গল্পেই সেই কথাটা লিখিতে বসিলাম। ‘ প্রথম গল্প? চমকে না উঠে উপায় আছে? ফাল্গুন/১৩০৯ সালে লেখা এই গল্পকে রবীন্দ্রনাথের প্রথম গল্প বলে কে মানবে? তাহলে এ গল্পের শুরুতে এরকম এক উদ্ভট তথ্য পরিবেশনের মানে কী? মানে আর কিছু নয়, গল্প শুরুর এও এক অভিনব কৌশল বটে। ‘ কী করিয়া গলরপ লিখিতে হয় তাহা সম্প্রতি শিখিয়াছি’ বলে যে স্বপ্রণোদিত ঘোষণা দিয়েছেন, সেটাও ওই কৌশলেরই অংশ মাত্র। এ ঘোষণা গল্পকার রবীন্দ্রনাথের নয়, উত্তমপুরুষের ভাষ্যে এ গল্পের নায়কেরই। এ রকম কত- ভাবেই না গল্প শুরু করেছেন তিনি। ‘স্ত্রীর পত্র’ নামের গল্পটি তো শুরু হয়েছে ‘শ্রীচরণ কমলেষু’ দিয়ে, আর শেষ হয়েছে
‘তোমার চরণতলাশ্রয়চ্ছিন্ন মৃণাল’ দিয়ে ; অর্থাৎ এক চিঠিতেই গল্প শেষ।
শুধু রবীন্দ্রনাথের গল্প থেকে নয়, এ ধরনের অসংখ্য ব্যতিক্রমধর্মী দৃষ্টান্ত তুলে ধরা যেতে পারে শরৎ-মানিক-বিভূতি- তারাশঙ্করের গল্প থেকেও।
গল্পকে গল্পের মধ্যে রেখে গল্প পরিবেশনের ভঙ্গিতে কৌশলে নতুনত্ব আনার প্রয়াস শুধু রবীন্দ্রনাথের গল্পেই নয়, শরৎ-মানিক-বিভূতি-তারাশঙ্করের গল্পেও দেখা যায়। গল্প-গদ্যের গাঁথুনি নিয়েও তো নেহায়েত কম কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়নি! কমলকুমার মজুমদার একাই যে নিজস্ব গল্পভাষার সৌধ নির্মাণ করেছেন তা বিস্ময়কর। কিন্তু গল্পকে তিনি গল্পহীন করে তুলতে চেষ্টা করেছেন, এমন অভিযোগ কিছুতেই করা যায় না। গদ্যশৈলীকে নিয়ে ইচ্ছেমতো শুধু নয় সাধ্যমতো ভাঙাগড়া করেছেন, তাঁর এই নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে রচিত হয়েছে ভিন্ন এক ভাষা-সোপান। সাম্প্রতিককালে জটিল এবং বন্ধুর সেই সোপানে পা রেখে কেউ কেউ ( তাদেরও কি গল্পকার বলতে হবে!) গল্পের শরীর থেকে গল্পানুগ রক্তমাংস অস্থিমজ্জা খসিয়ে ফেলে গল্পহীন করে তোলার কসরতে মত্ত হয়ে উঠেছেন। এই গল্পহীনতার চর্চার মধ্য দিয়েই তারা নাকি নতুন গল্পধারা নির্মাণ করে চলেছেন। গল্পের নামে গল্পকেই দূরে ঠেলে দেওয়া! তা বেশ। কাঁঠালের আমসত্ত্ব আর বলে কাকে! গল্প লেখা হবে, তবু তার ভেতরে গল্পটাই থাকবে না! বেশ কৌতুকপ্রদ আবদার বটে।
আমাদের যাপিত জীবনের ভাঁজে ভাঁজে কতো না বিচিত্র গল্পের সমারোহ! গল্প কি সত্যিই ভেবেচিন্তে নানা দিকে আটঘাট বেঁধে তারপর লিখতে বসতে হয়?
লেখকের মস্তিষ্কপ্রসূত পূর্বপরিকল্পিত বাঁধনের গন্ডি কি সব সময় মেনে নেয় গল্পের জীবনমুখী চরিত্রেরা? বিধবাবিবাহ-বিমুখ বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর বিষবৃক্ষ কিংবা কৃষ্ণকান্তের উইলে বিধবা চরিত্রগুলো আঁকতে গিয়ে কিভাবে নিজেই নিজের কাছে পর্যুদস্ত হয়েছেন, সচেতন পাঠকমাত্রই সে কথা নিশ্চয়ই স্মরণ করতে পারেন। জীবনঘনিষ্ঠ চরিত্রের দাবি ওই রকমই। লেখকের হাতের ক্রীড়নক সে হতে চাইবে কেন? বরং ক্ষেত্রবিশেষে এ ধরনের শক্ত মেরুদন্ডের চরিত্রগুলো নিজেদের স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফূর্ত বিকাশের স্বার্থে গল্পকারের ভাবনার গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করে, এমন কি কখনোবা নতুন মাত্রায় পথ দেখিয়ে গল্পকারকে পূর্বসিদ্ধান্তের ভার থেকে মুক্তি দেয়, স্বস্তি দেয়। কেবল কাহিনি বা ঘটনার বিবরণ উপস্থাপনের দায়িত্ব পালন নয়, আধুনিক গল্পকার মানবচরিত্রের দৃশ্যমান অথবা অদৃশ্য জটিল কুটিল সূক্ষ্ণাতিসূক্ষ্ম গ্রন্থি মোচনের প্রতি অধিক যত্নবান হন। আর সেটা করতে গিয়ে গল্পের কাঠামোশৈলীতে অভিনবত্বের ছোঁয়া লাগতেই পারে। সে আমাদের বাড়তি পাওয়া। তাই বলে নতুনত্বের নামে গল্পশৈলী ভাঙাভাঙির ব্রতকে শিরোধার্য করা কিছুতেই গল্পকারের কাছে কাম্য হতে পারে না। গল্পকার অবশ্যই জীবনের গল্প বলবেন, জীবনকে ভালোবেসে, সম্মান করে; সেই গল্প উপস্থাপনের কৌশলও নিশ্চয়ই তিনি নিজের মতো করে নির্ধারণ করেও নেবেন। কিন্তু শেষ কথা হচ্ছে— গল্পহীনতা নয়, গল্পই যেন মুখ্য হয়ে ওঠে সেই গল্পে।