বাংলা কবিতার ছন্দ মূলত তিন প্রকার। স্বরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত ও অক্ষরবৃত্ত। তবে বিশ শতক থেকে কবিরা গদ্যছন্দেও কবিতা লিখতে শুরু করেছেন। এই ছন্দে সুশৃঙ্খল বিন্যাস না থাকলেও ধ্বনিমাধুর্য অটুট রয়ে গেছে। যে মাধুর্যের কারণে ধ্বনিবিন্যাস ছন্দে রূপায়িত হয়। কবি কাজী নাসির মামুন তার কবিতার ধ্বনিগুলোকে সুশৃঙ্খল বিন্যাসে বিন্যস্ত করে তাতে এক বিশেষ ধ্বনিসুষমা দান করেন। ফলে কবিতা পড়ার সময় পাঠক এক ধরনের ধ্বনিমাধুর্য উপভোগ করেন।
কাজী নাসির মামুন পেশায় অধ্যাপক। ইংরেজি সাহিত্য পড়ানোর পাশাপাশি বাংলা সাহিত্যের চর্চা করেন। কাব্যপ্রেমিকদের কাছে জায়গাও করে নিয়েছেন। ‘লখিন্দরের গান’ তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ। যেটি ২০০৬ সালে প্রকাশ হয়। এরপর ২০১১ সালে প্রকাশ হয় ‘অশ্রুপার্বণ’। পাঁচ বছরের ব্যবধানে নিজেকে অনেকটা পরিণত করেছেন তিনি। শাণিত হয়েছে তাঁর কলম।
‘লখিন্দরের গান’ গ্রন্থের ‘পরম্পরা’ কবিতাটি সাত পর্বে বিন্যস্ত। প্রতিটি পর্বকেই আলাদা আলাদা কবিতা মনে হবে। সাত পর্বের ভূমিকায় কবি বলেছেন-
এখানে মরণ অস্থির গায়ে দনকলসের পাতা
বাকল খুলেছে মহাকাল ঋষি, ভেষজের নীল ছাতা।
মাটির ডেরায় ডিমের আদল, ঘুমাও পরম গুরু
তোমাকে ফোটাই দাদাজান পাখি, এখানে তাবৎ শুরু…
কবিতার পরতে পরতে তিনি যেন গল্প বলছেন। প্রাচীন, মধ্য ও আধুনিক যুগের অনুষঙ্গ এনেছেন। ধনবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। নিপীড়িত মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
‘লখিন্দরের গান’-এর দ্বিতীয় কবিতার মূল শিরোনাম ‘রোগলক্ষণ ও তার গোলক-ধাঁধায়’। যার উপ-শিরোনাম পাঁচটি। আলাদা শিরোনামে কথাগুলো বলে গেছেন অনায়াসে। যথা-
এক. প্রেমরোগ
দুই. সকালের কয়েক ফোঁটা
তিন. রাতের বড়ি
চার. ক্ষয়রোগ ও এন্টিবায়োটিক
পাঁচ. চিরঞ্জীব বনৌষধি।
চমৎকার তাঁর বলার ভঙ্গি। প্রাঞ্জল সুরে তিনি বলে ওঠেন-
কাঠুরিয়া কাঠ বেচি
ঘরকন্নার চাল কিনি মনের ভিতর
পাকাবার আগে
প্রেমভাতে টিপ দিও না,
ফেনায় পোড়ালে হাত
ভুলে ভুলে
খুনসুটি হয়।
তাঁর কবিতায় সমসাময়িক সমাজের বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে। শুধু উপমার আতিশয্য নয়- বর্ণনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ অলঙ্কার শোভিত হয়েছে প্রতিটি পঙ্ক্তিতে। উদাহরণ:
অন্যথায় বিবৃত সমাজে নির্বিকার যুবতীরা দারুণ ধর্ষিতা হয়, আর
বিচূর্ণ রূপের থালা তাড়িয়ে বেড়ায়
ঘোরতর ভ্রমান্ধ পুরুষ।
শরীর নিয়তি যার, সোমরসে কামের সাধনা
সে-ও চায় নির্বাণে নোঙর-পাতা ঘুম।
দেহের কলিঙ্গ আছে। পুড়ে পুড়ে অশোক রাজাও
উড়ুক্কু সমাজে ত্রাণ চায়।
আর্যাবর্তে সুখ নেই; বর্ণভেদে বিচিত্র নয়ন।
যুবক অন্ধের আলো খোঁজে-
দৃশ্য নয়, শঙ্খমণি চোখ তার দাবি।
কাজী নাসির মামুনের কবিতায় ইতিহাস উঠে এসেছে প্রাসঙ্গিকভাবে। প্রীতিলতা, তিতুমীর, বাঁশের কেল্লা, বৃটিশবিরোধী আন্দোলন আবশ্যক উপকরণ। উঠে এসেছে দেশাত্মবোধ। ‘দুগ্ধবতী’ শিরোনামের ৩টি কবিতায়ই দেশপ্রেম উচ্চকিত হয়েছে। কবি জন্মভূমিকে দুগ্ধবতী বলে আখ্যা দিয়েছেন। তবু কবির মনে গ্লানি জমে ওঠে। দেশমাতৃকার জন্য কিছুই করতে পারি না আমরা। শুধু বলে যাই:
আমরা মাঠের বুকে সবুজ সন্তান
সোনার পলল চুরি রুখতে পারিনি
নিজেকে বিক্রয় করে দুগ্ধ কিনে খাই।
দোকানে মুদির পাঠ। স্কুলঘর। সামনে প্রহার।
পতির বিহনে আজো সত্রানিয়া বাজারমাতৃক-
পোয়াতি নদীর সাথে পাল্লা দেয় সন্ততির জন্মে।
কবি যৌতুকের প্রসঙ্গ এনেছেন কবিতায়। তার পঙ্ক্তিতে মানবিকতা, প্রাণীপ্রেম, আত্মপ্রচার বা আত্মকাম, আকাঙ্ক্ষা প্রভৃতি উপমার লালিত্যে মোহনীয় হয়ে ধরা দেয়। কাজী নাসির মামুনের ‘পতনের কালিন্দি নিশায়’ কবিতাটিকে মনে হবে একটি স্বল্প আখ্যান। আখ্যানটি পাঁচটি পর্বে বিন্যস্ত। প্রত্যেকটি পর্বেই নতুন নতুন স্বাদ। গ্রামীণ দৃশ্যের অবতারণা করেছেন কবিতাজুড়ে। গ্রামীণ শব্দের মাঝে মাঝে শহুরে বা নাগরিক শব্দের মেলবন্ধন লক্ষ করা যায়। যেন নতুন এক দ্যোতনার সৃষ্টি করেছেন তিনি।
‘ধানগাছ চিরদিন থাকে না’ কবিতাটি দুই পর্বে ভাগ করা। ‘ডাহুক সয়েছি ক্ষয়’ কবিতাটি পাঁচ পর্বে বিভক্ত। পর্ব বিভাজনে দারুণ মুন্সিয়ানা তাঁর। অধিকাংশ কবিতায় পর্ব বিভাজন লক্ষ করা গেছে। তাঁর কবিতায় গ্রামীণ অনুষঙ্গই প্রধান উপজীব্য বলে মনে হয়েছে। গ্রামবাংলার আবহমান শব্দগুচ্ছ কবিতায় প্রাণ পেয়েছে। শহর ও গ্রাম সহোদরের মতো এসেছে পঙ্ক্তিমালায়। কবি বলেন:
সহনে রকমফের, বহুতল মানব বিধান
ভবের মাদকরুটি ভোজ্য তেলে, ভালোবাসা বাকি
শহর প্রণয়ে গ্রাম বৈদিক মনের রঙে খাকি
ইউনিকলের পায়ে জলকুচি, গ্যাসীয় প্রমাণ।
জলের দ্রষ্টব্যে তবু বৈবাহিক মন পাকাপাকি
শুঁড়িনীর শরাব বোতলে নদী, রাধা, তুমি সাকি।
তাঁর ‘হাইরোগ্লিফিক্স’ একটি দীর্ঘ কবিতা। কবিতাটির চরণ সংখ্যা ১৮১। পড়লে একটি গদ্যের স্বাদ পাওয়া যায়। দীর্ঘ কথাগুলো এমন ভঙ্গিতে বলে গেলেন অথচ কোথাও ছন্দের একটু পতন নেই। উপমায় মাধুর্য্য মাখানো, অনুপ্রাসে রসোত্তীর্ণ।
এছাড়া ‘ঝড় ও মরা কটালের দিন’ ৯৮ লাইন, ‘মিয়াবাড়ির বৈঠকখানায় যজ্ঞবুড়ির গালগল্প’ ১৬৭ লাইন ও ‘শিশু যাকে প্রাণে জড়ায় আমি তা-ই চক দিয়ে লিখি’ ৭৭ লাইনের দীর্ঘ কবিতা। তবে ‘শিশু যাকে প্রাণে জড়ায় আমি তা-ই চক দিয়ে লিখি’ কবিতাটি আকারে একটি ছোটগল্পের মতো। অনেকেই হয়তো এটিকে কবিতা বলতে চাইবেন না।
এ গ্রন্থের নামকবিতা ‘লখিন্দরের গান’ দশ পর্বে বিন্যাস করা হয়েছে। কবিতায় বেহুলা-লখিন্দরের জলেভাসা জীবনের ছবি ফুটে উঠেছে। বেহুলা-লখিন্দরের গল্পকে উপজীব্য করে সময়ের টানাপড়েন তুলে এনেছেন কবি।
তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘অশ্রুপার্বণ’ প্রকাশিত হয় ২০১১ সালে। অর্থাৎ প্রথম কাব্যগ্রন্থের পাঁচ বছর পর। এ গ্রন্থে ‘সুতিয়া নদী’র উপস্থিতি পাই আমরা। পাশাপাশি শস্য, বৃক্ষ, কৃষক, পাখি, নদী, ফুল, ঘাস, সাপ, প্রজাপতি, নারী প্রভৃতির উপস্থিতি লক্ষণীয়।
তাঁর কবিতায় হতাশার রেখা চোখ ছুঁয়ে যায়। মনের গহীনে জমে ওঠে ক্লেদ-গ্লানি। দীর্ঘশ্বাসের বয়ানে বয়ানে জমা হয় অমর কথামালা। নির্বাক কবি তবু বলে যান:
আজ ভালোবাসা নয়-উপেক্ষা শিখেছি বলে মানুষ অপর
করে চলে আসি। দেখি, সবুজ ছিনাল-অন্তর্ভেদী জীবনের পাশে অবিশ্বাসী
তুমুল তুফান এক বাঁশঝাড়
বুনো টগরের চারপাশে শেকড় ছড়িয়ে আছে।
আমি ওই বুনো টগরের মতো
নির্বাক তাকিয়ে থাকা সাদা ফুল, ঝরে যেতে এসেছি এখন?
দূরে পথ; বাঁশের তোরণ ছেড়ে নারীর সিঁথির মতো
বেঁকে গেছে; আকাশ নেমেছে উবু হয়ে
ঠিক তার পায়ের কাছেই।
এরপর ‘মেলা’ শিরোনামের কবিতায় ৬টি পর্ব শোভা পাচ্ছে। কবিতা না বলে একে অনুগল্প বলা যায়। প্রত্যেক পর্বই একেকটি গল্পের সমান। কবিতা পাঠেও গল্পের স্বাদ মন্দ নয়। যদিও কবিতা জীবনের কথা বলে। অনেক গল্পের শিল্পীত বৃহৎ প্রয়াস। কবি অনায়াসে কবিতার ঢঙে গল্প বলে গেছেন-‘আমার সকল কথা নদী হবে আজ। লিখবো ঢেউয়ের মতো অবারিত প্রাণের চন্দন মিলিয়ে/ যাবার। জীবনের একান্ত মেলার সব কথা এক হয়ে মেশে। আজ শুধু অন্য কথা হোক।’
এক নিঃসীম আকাঙ্ক্ষা রেখে যান পাঠকের মনে। ‘আজ শুধু অন্য কথা হোক’- সেই অন্য কথাই হয়তো তার কাব্যভাষা। এমন অভিনব কাব্যভাষা নিরস কবিতা পাঠককে সরস করতে সক্ষম হবে। টেনে নিয়ে যাবে পঠনের শেষপ্রান্তে।
কাজী নাসির মামুনের কবিতায় নাগরিক জীবনের যাবতীয় অসঙ্গতি ফুটে ওঠে ‘এই শেষ চুমুক তোমার’ কবিতায়। মিলিটারি ভ্যান, পুলিশ, ট্রাক চালক, রিকশাওয়ালা, বারবণিতা, রাতের গণিকা, কিছুই বাদ পড়ে না তাঁর কবিতা থেকে। একটি নিটোল চিত্র এঁকে চলেন কবি চরণে চরণে। কবি ক্ষিপ্ততার সঙ্গে বলেন-
শুধু আমি রক্তবিরচিত বুনো সভ্যতার তিক্ত উপহাস;
মানুষের গীতল পশ্চাতে লাথি মেরে
অগত্যা মাস্তান। খলনগরীর পাঁজাকোলে
গিরিকা দেবীর কথা ভাবছি; যেন সে
জাদু বীণা, বাঁশি; প্রাণে তিলোত্তমা হাতে আখগাছ
দেখিয়ে বলছে: এই নাও, লাঠিভরা শরবত,
এই শেষ চুমুক তোমার…
কবি মানুষের কামনা-বাসনার কথা বলেন। যৌবন, যৌন জীবন, সঙ্গমের হাহাকারের কথা বলেন। কল্পনায় নয় সময় এলে বাসনা জাগে যৌবনের। কবি একা একা লগি হাতে ঢেউ খোঁজেন। খোঁজেন গোপন উৎসব-
যৌবন পালিত হবে গোপন উৎসবে?
যেন পিঠা পাতায় মুড়িয়ে দিল কেউ;
সৃজিত জীবনে তবু হাহাকার মিটল না।
যেন সর্প সঙ্গমের প্যাঁচানো লতায়
ষোড়শীর বেণী-বাঁধা চুল মিলিয়ে দেখেছি:
মানুষেরও জল আছে, বিষ। মানবীর আছে মেঘ, ফণা।
অন্যত্র কবি উদ্যমী কিশোর, নারীর প্রত্যাশা, প্রেমের প্রসূন, জীবনের অপচয় ভুলে গিয়ে নতুন সাঁতারের প্রত্যাশা করেন-
উলম্ব স্বাদের কথা ভুলে গিয়ে অবগাহনের-
এই প্রেম,
এই ঘূর্ণাবর্ত জীবনের মগ্ন অপচয়
. বহুমুখী হতে চায়।
. সময়য়ের শূন্য ছেড়ে জলজ উল্লাসে চায় নতুন সাঁতার।
‘চিরুনিপ্রহর’ কবিতায় বিপথগামী কিশোরের উচ্ছন্নে যাওয়ার কথা বলেন-
বাবার সামনে; আর দেখো, ছোট ভাই
শুকনো পাতার মতো ঝরে যাচ্ছে উচ্ছন্নের বাতাসে আমূল।
কবি সেই অনুভূতি চিকন চুলের মতো ধরে রাখেন। তিনি ভাবেন কেউ এসে সারিয়ে তুলবে।
‘কথাসৌধমালা’ কবিতাকেও ছয় পর্বে বিভক্ত করেছেন কবি। প্রত্যেকটি পর্বকে স্বতন্ত্র কবিতা বললে ভুল হবে না। ছয়টি পুষ্পকে কথার সুতোয় গেঁথে মালা তৈরি করেছেন। তিনি কবিতাগুলোতে প্রেম, মহাকাল, গতি, মনস্তাপ, স্বপ্ন, মৃত্যু, বেদনা ও স্মৃতিকে যুথবদ্ধ করেছেন। তাঁর ‘জন্মের অর্বুদে বসে বসে’ কবিতাটিও তিনটি পর্বে ভাগ করা।
কাজী নাসির মামুন বর্তমান প্রেক্ষাপট, সমাজবাস্তবতা, স্কুলছাত্রীদের উত্যক্ত করা অতপর একদিন ঝরে যাওয়ার দৃশ্য এঁকেছেন ‘ফুল ফুটে ঝরে যায়’ কবিতায়। কবি বলেছেন-
ছেলেরা বাস্তব; যত গন্ধ দিলে ফুল বলে বিশ্বাস করবে
মেয়েরা, ততটা ফুটে থাকে রোজ অমূল্য রাস্তায়।
… … … … …
একদিন ঝরে যাবে।
কবি নানাবিধ নিরীক্ষায় প্রাচীন থেকে আধুনিক যুগের উল্লেখযোগ্য উপাদান ব্যবহার করেছেন। তাঁর অনুভূতি, কল্পনা, ভাবনা শুধু নিজেকেই ব্যপৃত করে না। পাঠকের অন্তরেও নীরবে দাগ কাটে। কবি দ্ব্যর্থহীন চিত্তে বলতে পারেন- ‘সিঁদেল চোরের কাছে জোছনাকে/ শত্রু মনে হয়।’
তাঁর ‘অন্ধ পরিভাষা’, ‘দেহতত্ত্ব’ ও ‘নৈশকালীন’ কবিতা তিনটিতে যৌবনের গান গেয়েছেন। শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার নিখুত বর্ণনা তুলে এনেছেন। কেননা এই শরীরটাই আমাদের অস্তিত্ব। প্রত্যেকের দেহে বাস করে একজন ‘নিজাম ডাকাত’।
বিদগ্ধ কবির অভিজ্ঞতা-প্রসূত চেতনালব্ধ প্রত্যেকটি কবিতার চরণে শৈশবের স্মৃতি ভেসে ওঠে। পাশাপাশি দেশের প্রতি সীমাহীন দরদ ঢেউ খেলে যায় মনের গহীনে। কবি তাই বলেন-
দেখি, দেশ- এই স্বর্ণমাতৃকা আমার
অনেক বিভূতিসহ কান্নার সোনালি
আঁচড়ের মতো; খচিত কম্পন হয়ে নামছে আমার বুকে; বলছে, সাবাস!
. বৌচি খেলা শেষ হলে তুমি
. কোথাও যেও না সোনা; তোমার হৃদয় আজ গোল্লাছুটে;
ফড়িঙের বিজন বিদেশ মাতিয়ে রাখছে।
তাঁর কবিতায় ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায়। ধর্মীয় কাহিনি আসে প্রেরণার সুরে। পৌরাণিক অনুষঙ্গ আসে অভিজ্ঞতার ঘোড়ায় চড়ে। কবি বলেন-
মমি করা ফেরাউন তার দেহ থেকে একটু একটু ইতিহাস
. আমাকে দিয়েছে খুব সযত্ন ভঙ্গিতে।
ঝালরের মতো সেই ঘুম
বিমূঢ় সাজিয়ে রেখে আমি-যে গড়েছি এক পাতালপুরীর সিংহাসন
তাকেই বলছি পিরামিড-
. এখানে ঘাসের শয্যা আগুন মঞ্জরি দিয়ে কে-যে
পুড়েছে, অক্ষম ঘূর্ণিবায়ু কিছু তার
বলে না এখন। বলে রক্ত,
. হাড়ের কাহিনি,
সাদ্দাদ কারুন রুক্ষ রাবণের সংশয় বিভূতি।
এই কাব্যগ্রন্থের নামকবিতা ‘অশ্রপার্বণ’ যেন আর একটি স্বতন্ত্র কাব্যগ্রন্থ। কেননা কবিতাটি একটি দীর্ঘ আখ্যান। একটি শিরোনামের মধ্যে ছয়টি আলাদা কবিতা স্থান পেয়েছে। ‘অশ্রুপার্বণ’র জন্য আলাদা ভূমিকাও রয়েছে। স্বতন্ত্র একটি গ্রন্থের আভাস রয়েছে এর মধ্যে। ভূমিকায় কবি বলেন-
এখানে ফানুস ওড়ে; রঙিন বাতাসে ওড়ে টাকা।
অনেক উদ্বৃত্ত জীবনের গান মোড়ে মোড়ে বিরচিত হয়।
পাঠক তাঁর সমগ্র সৃষ্টিতে যেন ‘উদ্বৃত্ত জীবনের’ গান শুনতে পাবেন। তাই গ্রন্থ দু’টি বহুবার পড়ার আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করতে পারে। কবিকেও বাঁচিয়ে রাখতে পারে অনন্তকাল।