আল পাচিনো!
বলুন তো আল পাচিনোর সেরা সিনেমা কোনটি? ভাবছেন সেন্ট অব এ ওম্যান, দ্য গডফাদার টু, দ্য ডেভিলস অ্যাডভোকেট, স্কারফেস নাকি অন্য কিছু?
আসলে আল পাচিনোর কোনো সেরা সিনেমা নেই, কেননা আল পাচিনো তার সব সিনেমাতেই সেরা।
তবে আল পাচিনোর ১৯৭৯ সালের ‘অ্যান্ড জাস্টিস ফর অল’ মুভির নাম কতজন শুনেছেন? যারা শোনেননি, তাদের জানিয়ে রাখছি, সিনেমাটি কোর্টরুম বা আদালতকেন্দ্রিক সিনেমাগুলোর মাঝে চকচক করে ঝুলছে তিন যুগ ধরে।
কেন ঝুলছে?
কেননা, প্রখ্যাত কানাডিয়ান পরিচালক নরমান জ্যুইসনের একটি বিখ্যাত কাজ ‘অ্যান্ড জাস্টিস ফর অল’ যার বাংলা অর্থ ‘এবং সবার জন্য সুবিচার’।
সুবিচারের জন্য মানুষ আদালত সৃষ্টি করেছে এবং সুবিচারের জন্য আদালতে যায়। তবে কতজন সুবিচার পায়? কী চলে আদালতে? একজন সৎ উকিলের মন কিভাবে তার নির্দোষ ক্লাইন্টের জন্য কেঁদে চলে? একজন বিচারক যখন ধর্ষক হয়ে ওঠেন, তার বিচার কী? এ রকম আরও অনেক উত্তর হয়তো এই সিনেমাটিতে মিলবে।
শুরুতেই বাল্টিমোর শহরের চৌকস ডিফেন্স অ্যাটর্নি আল পাচিনোকে আর্থার কির্কল্যান্ড চরিত্রে দেখা যায় জেলে। তার অপরাধ জাজ হেনরী টি ফ্লেমিংকে বিচারকার্য চলার সময় ঘুষি মারা। মারবেই না কেন? তার একজন ক্লাইন্ট জেফ ম্যাকাউলা নির্দোষ হওয়া সত্ত্বেও জেল খেটে চলেছে দেড় বছর ধরে। উপযুক্ত প্রমাণ হাজির করলেও বার বার আর্থারের প্রচেষ্টা নষ্ট করে দেয় ফ্লেমিং। ফলে তরুণ জেফ ম্যাকাউলা দিনের পর দিন পাগলপ্রায় হয়ে ওঠে। জেলে নানা নির্যাতনের স্বীকার হতে থাকে সে।
বাবা মা থেকে বিচ্ছিন্ন আর্থারের তার দাদা ছাড়া কেউ নেই। শত ব্যস্ততার মাঝেও দাদা স্যামের সঙ্গেই দেখা করতে যায় আর্থার। অন্যদিকে গেইল পেকারের সঙ্গে সখ্য সৃষ্টি হয় আর্থার কির্কল্যান্ডের।
এরপর এক ট্রান্সজেন্ডার বা হিজড়া ক্লাইন্ট র্যাল্ফ এজিকে সামান্য অপরাধের জন্য আটক করা হয়। শেষপর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহে সিনেমাটিতে কিছু নাটকীয় মোড় নেয়।
একসময় তার বন্ধু ও সহকর্মী জে পর্টার পাগলপ্রায় হয়ে ওঠে। কেননা কিছুদিন আগেই এক বিচারক একজন হত্যা মামলার আসাসিকে ছেড়ে দেন। অথচ তাকে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য যথেষ্ট প্রমাণ হাজির করে জে পর্টার। ছাড়া পাওয়ার কিছুদিন পরেই শিশু হত্যা করে আসামি। গভীর রাতে মদ্যপ অবস্থায় আর্থারের বাড়িতে এসে আক্ষেপ করে, সে যদি তাকে দোষী সাব্যস্ত করতে পারত তাহলে হয়তো আজকে নির্দোষ শিশুকে মরতে হতো না। একপর্যায়ে দেখা যায় জে পর্টার আদালত প্রাঙ্গণে মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত হয়ে থালা ছুড়ে মারতে থাকে।
আর্থারের অনুপস্থিতিতে এজিকে ভুল বিচারে জেল দেওয়া হয়। অপমান সহ্য করতে পারে না এজি। ত্রিশ মিনিটের মাথায় আত্মহত্যা করে। এ ঘটনায় আর্থার গভীর কষ্ট পায়, আক্ষেপ করে। তার অন্য সহকর্মী ওয়ারেনের গাড়ি ভাঙচুর যেন তার কষ্টগুলোর বহিঃপ্রকাশ। এ থেকে বোঝা যায় একটি ভুল বিচার কী করে একজন নিরপরাধ মানুষের জীবন বিপন্ন করতে পারে।
এর মাঝে আরেকটি ঘটনা ঘটে যায়। জাজ হেনরি টি ফ্লেমিং-এর বিরুদ্ধে একটি ধর্ষণ মামলা হয়, যেটিতে ডিফেন্স অ্যাটর্নি হিসেবে আর্থারকে লড়তে অনুরোধ করা হয়। আর্থার মামলাটি নিতে চায় না। সে সময় আর্থারকে ব্লাকমেইল করে ফ্লেমিং। তাই শেষমেশ মামলাটি নিতে বাধ্য হয় আর্থার।
জেফ ম্যাকাউলাও বেঁচে থাকতে পারে না। জেলে দিনের পর দিন যৌন নির্যাতনের স্বীকার হয়ে ম্যাকাউলা অস্থির হয়ে ওঠে। দুই জন নিরাপত্তাকর্মীকে আটক করে ম্যাকাউলা। আর্থার ছুটে যায় ম্যাকাউলাকে বোঝাতে। তবে কাজ হয় না। জানালার পাশে একটু নড়াচড়া করতেই পুলিশের গুলিতে নিহত হয় ম্যাকাউলা।
আর্থারের শোক গভীর হয়। এদিকে সে নিশ্চিত হয়, হেনরি টি ফ্লেমিং আসলেই ধর্ষণ মামলায় দোষী।
সিনেমার শেষ ভাগে হেনরি টি ফ্লেমিং-এর মামলার ট্রায়াল। খুব দুর্বলভাবে বাদীপক্ষ ধর্ষণ মামলাটিকে জুরিদের সামনে তুলে ধরে। যার বিপরীতে আর্থার দিতে থাকে এক বিখ্যাত বক্তব্য, যে বক্তব্যের উপস্থাপনায় আল পাচিনো এক অন্য রকম অভিনয় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। হয়তো এই উক্তির টোনটা বজায় রেখেই আল পাচিনো ‘সেন্ট অব এ ওম্যান’ চলচ্চিত্রে সর্বকালের সেরা সিনেমাটিক উক্তি দিয়েছিলেন।
ট্রায়ালে আর্থার জুরিদের উদ্দেশে বলতে থাকে, তার কাছে মামলাটি ডিফেন্স করার জন্য উপযুক্ত প্রমাণ আছে। সে ইচ্ছা করলেই মামলাটি জিততে পারে, অন্যদিকে ধর্ষণের পক্ষে একটাও প্রত্যক্ষদর্শী নেই। কিন্তু তার মনে শুধু একটি মাত্র প্রশ্ন জাগে।
কেন ধর্ষিতা মেয়েটি মিথ্যে বলবে?
The one thing that bothered me, the one thing that stayed in my mind and I couldn’t get rid of it, that haunted me was WHY. Why would she lie? What was her motive of lying? If my client is innocent, She’s Lying. Why? Was it blackmail? No. Was it jealousy? No. Yesterday, I found out why. She doesn’t have a motive. You know why? Because she’s not lying. And ladies and gentlemen of the Jury, the prosecution is NOT gonna get that man today, No! Because I’M GONNA GET HIM! My client, the Honorable Henry T. Fleming, SHOULD GO RIGHT TO FUCKING JAIL!’
এই উক্তিটির আদালতে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে, আর্থারের প্রিয় জাজ রেইফোর্ড বলেন, ‘Kirkland, You are out of order!’
এতে আর্থারের উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। আর্থার আদালত কক্ষে রেইফোর্ডকে উদ্দেশ করে বলে ওঠে এক উদ্ভট কথা, You’re out of order! You’re out of order! The whole trial is out of order!
এই ট্রায়ালে হয়তো আর্থার ডিফেন্স অ্যাটর্নি হিসেবে হেরে যায়। তবু আদালত কক্ষে আর্থারের জন্য হাততালির জোয়ার ওঠে। কেননা, আর্থার মামলায় হারলেও একটি প্রকৃত আসামির সাজার পথ পরিষ্কার হয়। এমন একজনের সাজা হতে চলেছিল যে, শুধু একটা মেয়েকেই ধর্ষণ করেনি, বিচার ব্যবস্থাকেই ধর্ষণ করে চলেছিল দিনের পর দিন। হয়তো এই সুবিচারটি আর্থার উৎসর্গ করেছিলেন জেফ ম্যাকাউলার প্রতি।
এত দারুণ গল্পের চিত্রনাট্যের জন্য অস্কার মনোনয়ন পেয়েছিল ‘৭৯ -এর এই সিনেমাটি। আর আল পাচিনো? তার কথা বলতে নেই। শুধু তার অভিনয়টা এক দৃষ্টিতে দেখে যেতে হয়। তাকে পুরস্কারের মাপকাঠিতে মাপা যায় না।