শীত আসার আগে আগে আইজদ্দী কামারের ব্যস্ততা বাড়ে। গাছকাটা দার ধার কাটানো বা নতুন দার বায়না পড়ে। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত একহাতে হাপর টানে, অন্যহাতে কয়লার মাঝখানে বৃত্তাকার আগুনের নিচে ফুঁসেফুঁসে ওঠে রক্তিম লৌহদণ্ড। লোহা পিটিয়ে নরম করার প্রয়োজন হলে বড় ছেলে হাতুড়ি ধরে। চিমটি দিয়ে গনগনে লোহাটা এপিঠ-ওপিঠ মেলে ধরলে ঠং ঠং পিটিয়ে যায় ছেলেটা। কামারের হাতের ছোট হাতুড়ির নির্দেশনা পেলেই বজ্রের মতো পড়ে বড়টা। টুং টং টং আওয়াজের বাজনা ওঠে। সেই বাজনার ঘোর ছড়িয়ে যায় রাস্তায়, মাঠে সারাগ্রামে।
বড় রাস্তা থেকে সামান্য হাঁটলে কামারশালা। যাতায়াতের পথে চোখে পড়ে হাঁপরের ওঠানামা, চটার বেঞ্চে বসে থাকা লোকজন, আইজদ্দীর কালো ক্ষীণ দেহের দুলুনি। এখন বেশ সকাল সকাল ছোট্ট সরু পথটায় পায়ের আনাগোনা পাওয়া যায়। সুতুলির মতো মাটির পথ একটু বেঁকে শেষ হয়েছে কামারের চৌচালা ঘরের ভিতে। আশ্বিনের শেষ। মাঠে তবু ভরা ভাদরের নিশান। নাড়াবনে একটু পর দাঁড়িয়ে আছে যে খেজুরগাছ, সেগুলোর ডাল চেঁছে মাথার একাংশ পরিষ্কার করে রসের ভাঁড় ঝোলানো হবে কদিন পর। তাই নতুন নতুন দার বায়না পড়ছে। এই সময়টাতে কামার একা পেরে ওঠে না। ছেলেটাও খেয়ালি। মাঝে মাঝে ডেকেও পাওয়া যায় না। তাই ও পাড়ার সিরাজকে রাখা হয়েছে। সারাদিন থাকে। খাওয়া দাওয়ার পরও দুপয়সা পায়।
উঠোনের ওইপাশে তাকালে একেবারে অন্যরকম দৃশ্য চোখে ভাসে। ঘন বন। মেহগনি চারাগুলো কয়েক বছরে আকাশ ছুঁতে চাইছে। বনের পাশে পুরনো পুকুর। কামারের বাপ-দাদার আমলের হবে। বেশ বড়। পানি শুকোয় না। পাড়ের চারপাশ নারকেল গাছ ও অন্যান্য লতাপাতায় আড়াল হয়ে থাকে। আড়াল পেরুলে দুটো ঘাট নজরে আসে। খেজুর গাছ কেটে সারি-সারি বিছানো, আরেকটা মাটির। মাটি কেটে কেটে সিঁড়ির মতো করা। বেশ আঠালো মাটি শক্ত হয়ে ভাঁজ হয়ে আছে। বেশি বৃষ্টি হলে ভেঙে যায় কোনো কোনো জায়গা। আবার জোড়া দেওয়া হয়।কামারের মেয়ে, পুকুরের নিচ থেকে ডুবে ডুবে মাখনের মতো মিহি কাদা এনে সাজায়। রোদে শুকিয়ে সিঁড়ি নতুন হয়ে ওঠে।
মাটির রঙের মতোই রঙ মেয়েটার। আর্দ্র, মোহন কালো। বাবার মতো রঙ। মার গা দুধে-আলতায় হলেও মেয়েটা তার ধারে কাছেও যায় নি। ছায়া দিয়ে হেঁটেছে বরং। ছেলে দুটো মিশ্র রঙের বলে কথায় কথায় সেই কথা মনে করিয়ে আর মেয়েটার দিকে ইঙ্গিত করে কামারের সাথে রসিকতা করে ওর মা। কামার মিষ্টি হেসে মেয়েকে জড়িয়ে আদর করে। বলে, দশটা না পাঁচটা না এটটা মাত্তর মাইয়ে আমার। বাপ-মাইয়ে এক জাগায় দাঁড়ালি যদি একরকম না দেকা যায়, তালি আর কি হইলো?
হইয়েচে,আর মাইয়ে নে দাম দেকাতি হবে না। বে কিরাম কইরে দুবা, তাই দ্যাকপানে।
সে তুমার ভাবদি হবে না। গার রঙ ধলা হলিই কি চিহারা ভাল হয়? আমার মমতাজের মতো কাটিমযুক্ত (কাঠামো-সুন্দর) মাইয়ে এই গিরামে কইডা আচে?
বাবা-মার কথার মাঝখানে বড় অস্বস্তি হয় মমতাজের। নাইলনের ফিনফিনে ওড়না দিয়ে মুখ ঢাকে। মাথায় পেঁচিয়ে রাখে। তবু সরু সেই কাপড়ে গায়ের সবটা আড়াল হয় না। ঢেউখেলা চুল ওর লজ্জার শিহরণে দুলে দুলে ভেঙে পড়ে পিঠে। একহাতে আঙুল কামড়ে রাখে। অন্যহাতে চুলের আগা সামনে এনে মুখ নিচু করে খেলে। কনুইয়ের ওপরে লাল কামিজের হাতার বেড় টান টান হয়ে জড়িয়ে থাকে সুগোল বাহুযুগল। মেয়েকে এমন দেখে মা বলে, যাও মোমোর বাপ, কাজে যাও, মাইয়ে লজ্জায় আর বাইচতেছে না। রুটি ছ্যাকা হলি পাটায় দুবানে। মেয়ের দিকে মুগ্ধচোখে তাকিয়ে কামারশালার দিকে গেলেন আইজদ্দী। রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে মমতাজকে ইশারা করলেন মা। শীত না এলেও বাতাস বেশ ঠাণ্ডা হয়ে এসেছে এখন। হিম হয়ে আছে রান্নাঘর। ম্যাচের কাঠিতে পাটকাঠি জ্বালিয়ে চুলোয় দিলেন মা।
দুই.
ভাজিরুটি খেয়ে উঠোনে এসে দাঁড়িয়েছে মমতাজ। বাবার কামারশালায় বেশ কয়েকজন লোক এসে বসে আছে। হাঁপরে আগুন উস্কে দিতে দিতে এদিকে একবার তাকালেন বাবা। একটা হাত উঠিয়ে পেছন দিকে দেখিয়ে খেতে আসতে বলল বাবাকে। সিরাজের হাতে হাঁপরের রশি ধরিয়ে দিয়ে বাড়ির ভেতরে আসতে লাগলেন আইজদ্দী। রান্নাঘর থেকে মায়ের গলা ভেসে এলো, আইজ কোনো জাগায় যাইসনে মোমো, কাজ আচে। তোর আব্বার খাইয়ে যাতি ক।
আব্বা আইসতেছে, এই ফাঁকে আমি ওইবাড়িত্তে ঘুইরে আসি মা।
ঠিক আছে।
হঠাৎ দুপদাপ পায়ের আওয়াজে ফিরে তাকালো মমতাজ। পাশের বাড়ির রিজিয়া ভাবী হাঁপাতে হাঁপাতে দৌঁড়ে আসছে। সামনে এসে প্রায় হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাবার মতো। মুখ তুলে শ্বাস আঁটকে কোনোমতে বলল, মুজিবরের মাইয়ের সাপে কাইটেচে, চল দেইকে আসি। কিছু বলার আগেই হাত ধরে টেনে উঠোন পার হয়ে রাস্তায় নামল। হাঁটতে হাঁটতে কেউই কথা বললো না। কেবল দুজনের দ্রুত পায়ের শব্দে সকালের আর্দ্র ধুলো উড়ল একটু। বাড়ির কাছে এসে দেখে মুজিবরের বারান্দায় লোকজনের ভিড়। একজন ওঝা পায়ের গোড়ালি থেকে পাতা পর্যন্ত দুইহাতের তালু দিয়ে চেপে চেপে বিষ নামাতে চাইছে আর জোরে জোরে মন্ত্র পড়ছে। ওঝাকে দেখে অবাক হলো মমতাজ। এই লোকের বাড়ি পাশের গ্রামে। প্রায় চুড়ি-ঘুনসি, আয়না, আলতা এইসব বিক্রি করতে আসে। কাঁধের বাকের দুইপাশে চুড়িভর্তি দুটো ঝুড়ি দোলে। হাড়ি-পাতিলের হকারের মতো এইলোক কখনো নিজের আগমন সুর করে জানান দেয় না। ছিপছিপে বেতের মতো শরীর আর ঠোঁটে মৃদু হাসি নিয়ে সবার উঠোনে গিয়ে দাঁড়ায়। কাউকে দেখলে ঝুড়ি নামিয়ে বসে পড়ে। ছোট ছোট মেয়েরা দৌড়ে আসে। কেউ পিঁড়ি নিয়ে আসে রান্নাঘর থেকে। কত রকমের চুড়ি থেকে এর কাছে। মাঝে মাঝে হাতে উঠতে চায় না। একদিন মমতাজের পছন্দের চুড়ি মোটেই উঠছে না। লোকটা মমতাজের আঙুলগুলো মুঠিতে ধরে নরম করে কয়েকবার চেপে কবজি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বেশ সময় নিয়ে চুড়িগুলো উঠিয়ে ফেললো। হাত নাড়া দিলে ঝুমঝুমির মতো বেজে উঠলো। ব্যথাভরা মুখেও হাসি ফুটলো মমতাজের। রিজিয়া ভাবী সবার সামনে হেসে হেসে ছড়া কাটলো: মানে কও দিনি: পয়লা পয়লা কান্দে, মদ্দি গেলি হাসে। হিহিহি।
ছোট মেয়েরা না বুঝেও হৈ হৈ করে হেসে ওঠে। চুড়িওয়ালা চোখ নামিয়ে হাসে। সেই চুপচাপ ফেরিওয়ালার মুখে খই ফুটছে এখন। শব্দের মৌমাছি ভর করেছে। কিছু কিছু শব্দ অস্পষ্ট। মাঝে মাঝে খিস্তিখেউড়ের মতো কথার সময় স্বর উঁচু ও লম্বা হয়ে হয়ে উঠছে। শব্দগুলো টেনে টেনে বিছানার মতো বিছিয়ে দিচ্ছে মুজিবরের মাটির বারান্দায়। সাপে কাটা রোগী বালিশে হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে পাদুটো সামনে মেলে বসে আছে। মুখচোখ নীলচে। ব্যথায় বিকৃত, ভয়ে কাতর। রোগীর দিক থেকে চোখ সরিয়ে ফিসফিসিয়ে কথা বলল মমতাজ, এই বিটা এত কবি গাচ্চে (মুখ খারাপ করছে) ক্যান, ভাবী?
ফাজিল কতা না কলি বিষ নামে না। তাই উঝারা টাটকা টাটকা কাঁচা কবি গায়। হাসি লুকোতে আঁচল-চাপা দিলো মুখে।
এ আবার কিরাম কতা। শুনিলাম সাপে কাটলি মোন্তর পড়ে, একন দেকতিচি দুনিয়ার ফাজিল কতা কচ্চে এই লোক। কানে পিঁপড়ে গেলিও বাইর হইয়ে আসপে লজ্জায়।
এইডেই আসল কতা, মোমো। মিষ্টি কতায় বিষ যায় না।
ওদের কথার ফাঁকে কতকগুলো স্বর চিৎকার করে উঠল। এই তুমরা ভিড় কুমাও। কারেন ডাক্তার আইসে গেচে। ইংরিশন (ইনজেকশন) দিলি রোগী সাইরে ওটপে একুনি। জটলা দুপাশে সরে গেলে সরু পথের মতো হলো। সেইপথে ছিপছিপে লম্বা, ধবধবে ফর্সা বছর পঁচিশের একটি ছেলে হাতে কালো ব্যাগ নিয়ে বারান্দার দিকে এগিয়ে গেল। ভাবীর মুখের দিকে তাকিয়ে মমতাজ বলল, ও ভাবী, এ যে ওই পাড়ার কামরুল, তা সবাই কারেন ডাক্তার কচ্চে ক্যান্? মুখে হাত চেপে রিজিয়া বলল, খবর দিলি, কারেন্টের মতো সাইকেল চালায়ে চইলে আসে, আর সুইচ টিপলি যিরাম সাথে সাথে আলো জ্বলে, এর ওষুদি কাজ হয় সেইরাম, তাই মানষি ওর নামে দেছে কারেন ডাক্তার! মমতাজ মুখে ওড়না দিয়ে গা কাঁপিয়ে হেসে ফেললো।
তিন.
ও পাড়া থেকে ফিরতে ফিরতে দুপুর গড়ালো। মমতাজদের বাড়ির উঠোনে এসে রিজিয়া হাত উঠিয়ে বলল, বিকেলবেলা আসিস, শাক তুলতি যাবানে। শাক দিয়ে ভাত খাবো রাত্তির বেলা। শীতের সবজিতে মাঠ সবুজ হয়ে আছে। সখিপুর গ্রামের পশ্চিমের এই মাঠের মাটি সবজির উপযোগী। আপাত বালুময় মনে হলেও ঝুরঝুরে এঁটেল মাটির পরতে সন্দেশের দানার মতো স্বাদ ছড়ানো ঔষধীর জন্য। কৃষকেরা যা কিছু বোনে, বনের মতো ঝাঁকড়া হয়ে বেড়ে ওঠে। কিছু পর পর শিম আর পুঁইশাকের মাচান। বেগুন, মূলা, পালং আর ফুলকপির ক্ষেত। মাঝে মাঝে কলুইয়ের এলোমেলো সবুজ লতা ছেয়ে আছে। আলে আলে খেজুরগাছের সারি। কদিন পরই রসের ভাড় উঠবে ওদের মাথায়। ছোট ছোট পাখি, এমনকি মৌমাছিরা রস খেতে আসবে। ঘন হয়ে ওঠা আলের ঘাসের ফাঁকে চিমটি কেটে কেটে বুনোশাক তুলতে তুলতে হেসে থাকা খেজুরের মাথা দিকে তাকালো মমতাজ। আজ হাটবার। তাই মাঠে মানুষ নেই। দূরে চোখ বরাবর কমলা টিপের মতো স্থির হয়ে তাকিয়ে আছে সূর্যটা। কিছুক্ষণ দেখলে সুগোল রঙের ঢেউ খেলে যায় চোখের তারায়। রিজিয়া হেসে বলে, কী দেখতিচিস ওইরাম কইরে? মনে হচ্চে কোনও রাজকুমার যাচ্চে তোর সামনে দিয়ে।তুমি তুমার রাজকুমারের দিকি এইরাম কইরে তাগায় থাকো, তাই না, ভাবী?আমি তাগালি কী হবে রে, ও তো আমার দিকি দেখতিই সুমায় পায় না।ক্যান্, মকবুল ভাই তো সারাদিন বাড়িত্তে নড়ে না। শুদু তুমার চানমুখ দ্যাকে।নারে, কাঠের ব্যবসা করতি করতি ওর মন কাঠের মতন শুকনো হইয়ে গেচে। ব্যাপারিরা আসে বাড়ি, আর তাইগের সাতে কতা কয়, আমি শুদু চা-পানি সাপ্লাই দি। হুট কইরে বাইর হইয়ে যায়, আর আসে সেই রাত্তিরি। আমি ভাত বাইড়ে রাইকে ঘুমোয় যাই। ও কখন আইসে শোয় টেরও পাই নে। আবার মাঝে মাঝে ভোরের দিকি টের পাই। ঘুমির ঘোরে অত ঝাঁকাঝাকি ভাল লাগে? কদেকিনি?ভাইর কাছে আর কী কী সাপ্লাই দ্যাও, তাই কও। আর ওই ঝাঁকাঝাকিডা এটটু কিলিয়ার কইরে কও। হিহিহি।যাহ, তুই হলি দুইদে মাইয়ে, তোর মুখ টিপলি দুধ বাইর হয়, এত কতা শুনতি হয় না।হয় ভাবী, না শুনলি শেকপো কনতে?। আর আমি দুদে মাইয়ে তুমার কলে কিডা?
মমতাজের দিকে ভালো করে তাকালো রিজিয়া। আঁধার-কৃষ্ণ মেয়ে। সোনালি রোদের স্নানে গলে গলে যাচ্ছে যেন। সুডৌল মুখশ্রী। ডাগরকালো চোখের ওপরে সরু ভুরুর উড়াল। পূর্ণিমার রাতের সাগরের ঢেউয়ের মতো কেশদল ঢেউ হয়ে নেমে আছে পিঠে। চিকন কপালে ঢেউখেলা চুল উড়ে এসে সরে সরে যাচ্ছে। সুগোল বাহুযুগল অনেক সাধনায় গড়া প্রতিমার বাহুর মতো। পুরু ঠোঁটদুটো রক্তিম হয়ে আছে। মনে হয় লাল কাঠি-লজেন্স চুষে চুষে কাঠিটা ফেলে দিলো এইমাত্র। দুকাঁধ বেয়ে ঝরনার মতো নেমে আসা সাদা ওড়নার দুপাড় উড়ে যেতে চাইছে দিগন্তের ফিনফিনে মেঘের সঙ্গে। ঝুঁকে একমনে শাক তুলছে মমতাজ। তালুর ভেতরটা শাকে ভরে উঠলে বাম হাতের ডালায় রাখছে। হঠাৎ দাঁড়িয়ে রিজিয়ার দিকে তাকালো। রিজিয়া চোখ সরালো না। কপট রাগে চিবুক ফুলে আছে মমতাজের। রাঙা কামিজ ফুঁড়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে স্তনদুটো। কী রে মোমো, তোর মাইতি কারও হাত পইড়েছে নাকি। একেবারে যে টসটইসে! মুহূর্তে বুকের দিকে দেখে লাল হলো মমতাজ, ধুর ভাবী, কী সব কতা যে কও? হুঁ…, কিসসু যোনো বোজে না। এত বড় হলি, তা শখ লাগে না, না? আয় শখ মিটোয় দি এটটু। হাত উঁচিয়ে এগিয়ে গেল রিজিয়া। শাকের ডালা ফেলে আলের ওপর দিয়ে দৌড়ে দূরে গিয়ে বসে পড়ে হাসতে লাগলো মমতাজ।
চার.
কচি কচি সবজি খেতে ভিড় করে পাখি, খরগোশ ও অন্যান্য প্রাণী। ক্ষেতের মাঝখানে টিন টাঙিয়ে দড়ি ঝুলিয়ে নেওয়া হয়েছে টোঙঘরের ভেতরে। দড়িতে টান দিলে টিন বাজে। ভয়ে ওরা দূরে পালায়। খুব মিহি আওয়াজে টুংটুং শব্দ শুনছে রিজিয়া। এমন সময় এই শব্দ আসবে কোথা থেকে? আধোজেগে চোখ বিড়বিড় করে ভাবতে চাইছে। চোখ মেলে এলো। ল্যাম্ফোর আলোয় ঘরের অন্ধকার দুলছে। বেড়ে রাখা ভাতে তরকারির বাটি উপুড় করলো মকবুল। উঠে, ঘাড় কাত করে দেখল রিজিয়া। বউকে চোখভরে দেখে পাতে মন দিলো। কখন আইসলে তুমি?
মাত্র আসলাম।
শীত পিরাই পইড়ে গেচে, গার চাদরডা নে বাইর হবা।
নাহ, শীত কনে? রাইত হলি যা একটু বাতাস ভিজে ভিজে হয়।
বাতাস ভিজে থাকলিও তুমি যে এইরাম শুকনো কেন থাকো? এত দেরি কইরে বাড়ি আসলি আমার কীরাম লাগে তা আর কবে বুঝবা?
মুখ নিচু করে খেয়ে কাঁথার ভেতরে সেঁধিয়ে দিল নিজেকে। পাশ ফিরে থাকা বউকে টেনে ফেরাতে চাইল। খুব ধীরে ফিরে তাকালো রিজিয়া। ঠাণ্ডা চোখে স্বামীকে দেখছে। মানুষের মুখে নাকি অনেক কিছুই লেখা থাকে। এর মুখমণ্ডল সাদা কাগজ।
বরকে বিছানায় রেখে উঠল রিজিয়া। ভোর হয়েছে। ইটের রাস্তায় বিরল পায়ের শব্দ। মাঝে মাঝে সাইকেলের বেল বাজতে বাজতে মিলিয়ে যাচ্ছে। উঠোন থেকে রাস্তার দিকে দেখে রান্নাঘরে পা বাড়ালো। সকালে গরমভাত খেতে পছন্দ করে মকবুল। সঙ্গে রাতের বাসি তরকারি গরম করে দিলেই হয়। খেয়ে চলে যায়। দুপুরে কোনোদিন আসে, কোনোদিন আসে না। কাঠ কিনবার জন্যে দূরের গ্রামেও যেতে হয়। সারাদিন রিজিয়ার এ-বাড়ি ও বাড়ি করে কাটে। মকবুলের আপনজন বলতে মা ছিল। গেলবছর মারা গেছেন। এখন ওরা দুটোমাত্র প্রাণী। আর পাড়াপ্রতিবেশি। মমতাজ হঠাৎ হঠাৎ আসে। গল্প করে। চলে যায়, মার গলা শুনে। যে বাড়িতেই যায় না কেন, কামারশালার শব্দ নানাভঙ্গে ভেসে আসে। একেক সময় একেকরকম শুনতে। কখনো জোর ঝন্ ঝন্ শব্দটা মোলায়েম হয়ে এসে ছোট হতে থাকে। রিজিয়া তখন মনের চোখে দেখতে পায় রক্তিম লোহাদণ্ডটা চেটাল হয়ে রূপ নিচ্ছে কিছু একটার। এই যেমন তরকারি কুটবার বটি কিংবা নিড়ানী। মানুষও কি লোহার মতো আঘাতে আঘাতে অন্যকিছু হয়ে ওঠে? অন্যরকম কিছু?
পাঁচ.
শীতের আকাশে মেঘ কেমন যেন বেমানান মনে হতে চায়। এমনিতেই রোদ লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে থাকে। তার উপরে জমাট জলকণা যদি ছায়া ফেলে ফেলে আঁধার করে দেয় চারপাশ, হিম আর যেতেই চায় না। মকবুল চলে গেলে বারান্দায় নিঝুম হয়ে বসে থাকে রিজিয়া। শীতলপাটির ওপরে অদৃশ্য হিম বিছানো। পাদুটো জড়ো করে চাদরের ভেতরে এনে উবু হয়ে বসে দেয়ালে হেলান দিলো। গলার বেড় থেকে চাদর ঢিলা করে অগোছালো আঁচল উঠিয়ে দিতে গিয়ে কী ভেবে কোলের ওপর ফেলে রাখল। তাকাল বুকের দিকে। তিন বছরে সন্তান হয়নি। প্রথম প্রথম মিলনে অনীহা হলেও পরে দিনেরাতে সাপের মতো শঙ্খ লেগে থাকতে মন চাইত। কত রকম করে খেলতো মকবুল এই দেহটা নিয়ে। চুলার ঝিক তোলার সময় নরম মাটির স্তূপটাকে যেমন নানা দিক থেকে অতি আদরে দশ আঙুল বুলিয়ে চলে কেউ, মকবুলের আদর তেমন শেষ হতে চাইত না। দীর্ঘশ্বাসে বুকটা ফুলে ফুলে উঠতে চাইল। তলপেটের চিনচিন ব্যথাটা ছড়িয়ে মুখে এসে স্থিত হলো। একহাতে যোনিদেশ চেপে সরুচোখে তাকাল বাইরে। আবছায়ার মতো কারও মুখ ভেসে উঠলো।
মকবুল ভাই বাড়িতি নেই ভাবী?
না মজনু ভাই, আইজ এটটু সকাল সকাল গেলো। অনেক নাকি কাজ। ফিরতি অনেক রাইত হবে আইজও। তাই বইলে গেলো।
অনেক কাজ? হাসলো মজনু।
মজনুর রহস্যের হাসি নজর এড়ালো না রিজিয়ার। ভাবলো একটু। এই ছেলেটা মাঠে সবজি চাষ করে। টোঙ ঘরে থেকে সারারাত পাহারা দেয়। মাঝে মাঝে বাড়ি থেকে টিনের বাক্সের শব্দও শোনা যায়। হঠাৎ হঠাৎ বাড়ি এসে মকবুলের খোঁজ করে। রিজিয়া ঘোমটা টেনে অল্পে উত্তর দেয়। এতেও কৃত্রিম উষ্মা প্রকাশ করে বলে, আমি তুমার দেবর, আমারে এত লজ্জা ক্যান্ ভাবী? চারহাত ঘুমটা দিলি ভাবীর চানমুখির হাসি দ্যাকপো কী কইরে? রিজিয়া রসিকতা করে, তুমি হইলে মজনু, তুমার কি আর লাইলির অভাব আছে, তাইগের মুখির হাসি দেখো গে যাইয়ে। মজনু দমে না। ক্ষেতের তাজা তাজা বেগুন, শশা, শিম এনে হুড়মুড় করে রান্নাঘরে ঢুকে যায়। পিড়ি টেনে বসে। রিজিয়া পায়ের কাছে, বুকের কাছে কাপড় টেনে উসখুস করে। বলে, তুমার ভাই বাড়ি নেই। পরে আবার আসপা। একটু গম্ভীর হতে চেষ্টা করে মজনু, ভাইর ব্যবসা কীরাম হচ্চে ভাবী? বিটা মানুষ অত কথা কী কয় আমার সাতে? বাড়ি আইসে খাওয়ার পরই বিছেন গরম করে, হিহি। মজনু লাই পায়, শুদু কি বাড়ির বিছেন গরম করে, আর কিছুতি তাপ দেয় না? হাহাহা। নাহ, তুমি বড্ড অসভ্য, যাও এখন, তানা হলি দিলাম এই নাকড়ির বাড়ি। ওরে বাবা বলে কপট ভয়ে ঘাড় নিচু করে দৌঁড়ে পালায় মজনু ।
ছয়.
পূর্ণিমা শেষ হয়েছে সপ্তাহখানেক আগে। সন্ধ্যার পর চাঁদ আসে দেরিতে। খুব ম্লান। মনখারাপ করে দিগন্তের পারে ক্ষয়ে যাওয়া আহত চাঁদটা বড় কষ্টে এসে দাঁড়ায়। এই ছায়া-অন্ধকার প্রিয় মমতাজের। আলোর দুধে ভেসে যাওয়া রাত দেখে মনভার যায় না মোটেই। দিনের মতো সবকিছুই যেন আলগা করে দিতে চায় ওইসব রাত। একটু গহন, একটু গোপনকিছু করবার অবসর দেয় না। কামারশালার ঝংকার থেমেছে সেই সন্ধ্যারাতে। মা-বাবা ঘুমিয়ে ওইঘরে। ভাই দুজন বারান্দায় শোয়া।
পুকুরের দিকটার হালকা জানালার কাঠের ফ্রেম ধরে টান দেয় মমতাজ। দড়ি বেঁধে নড়বড়ে পাল্লাসহ নামায় বাইরে। এক পা নামিয়ে মাটির ঠাঁই পায়। দুহাতে জানালাটা কোনোমতে আগের জায়গায় রাখে। অন্ধকার ঝুঁকে আছে পানিতে। মেহগনি বাগান আর নারকেল-সুপারির সারিগুলো নীরবে নতমুখে প্রিয়জনের প্রতীক্ষায় যেন দাঁড়ানো।
পুকুরের পরে দুতিনটে জমি পার হলে মজনুর সবজি-ক্ষেত। নির্দিষ্ট কোনো পথ নেই যাবার। এলোমেলো আলে যেতে যেতে পা আর পথের সখ্য হয়েছে। পা টেনে টেনে নেয় আলপথ। মমতাজের চলা দ্রুত হয়। নিশুতি ক্লান্ত চাঁদটা বেঁচেছে মেঘের আড়ালে গিয়ে। আলো দেওয়ার ভান করার দরকার নেই। টোঙ ঘরের সামনে বাঁশের মাচানে দুটো ছায়া নড়ছে। খাসখুস শব্দ আসছে। এক মুহূর্ত দাঁড়ায় মমতাজ। এসময় মাঝে মাঝে দুবন্ধুকে গল্প করতে দেখে। পায়ের আওয়াজ পেলে একজন উঠে চলে যায়। আজ দুজনই চুপচাপ বসে আছে। মমতাজ আরেকটু কাছে যেতেই একজন উঠে দাঁড়ালো। কথা শোনা গেল, আমি গেলাম রে।
দূর থেকে মনে হয় টোঙঘরটা উবু হয়ে ঘুমিয়ে আছে। চটার ছোট্ট দরোজা সরিয়ে ভেতরে গেল মমতাজ। কাঠের চওড়া খাট পাতা। কোণায় হারিকেন নিবু করে জ্বালানো। অতি ক্ষীণ শিখা প্রাণান্ত চেষ্টায় ঘরটার অন্ধকার মুছতে চাইছে। নীরব পায়ে ছায়া এলো। মমতাজ খাটে বসে সহজ গলায় জানতে চাইল, ওই মজনু এত রাত্তির কী করে তুমার সাতে?
গল্পটল্প করে। বিয়েসাদী করতি চায়, সেইসব কতা কয়।
ওর আবার বিয়ে লাগে, ও তো দুনিয়ার মজনু, হিহিহি।
লাগবে না ক্যান্? ওর স্বাদ-আল্লাদ নেই? এই কথা বলতে বলতে কাছে এসে নাক টিপে দিলো। মমতাজ মোমের মতো গলে সামনে মেলে আসা হাতের তালুর ভেতরে মুখ রাখলো। মুখ উঠিয়ে চুমু খেলো ছায়াটা। ঘনশ্বাস নিতে নিতে সালোয়ার কামিজ ফড়ফড় খুলে ফেলে হাতপা মেলে শুয়ে তাকিয়ে থাকলো। ছায়াটা দড়িছেঁড়া ষাঁড়ের মতো লাফ দিয়ে উঠে বসলো মমতাজের পায়ের কাছে। দুহাতে দুপা সরাল দুদিকে। আলোটা কাঁপছে। নিভে যেতে চাইছে। আলো উস্কে দিলো ছায়াটা।
থাক আর আলো বাড়াতি হবে না। বললো মমতাজ।
তোরে পুরো না দেখলি কি ভালো লাগে?
বছর ধইরে দেইকেও মন ভরিনি?
সারা জীবনেও ভরবে না।
উহ্, শুদু কতার কতা। মন ভুলাইনে কতা তুমার কাছ তে কেউ শিখতি চালি শিখতি পারে। তা রিজিয়া ভাবীর কাছে যাওয়া না ক্যান্ সেইরাম এটটা?
ওর কথা আর কইসনে মোমো। এটটুও মন ভরে না। তুই তো আমি আসার সাথে সাথে সব খুইলে বসি থাকিস, আর ও বিলাউজও খুলতি দেয় না। শায়াডা তাই আমার উটোয় নিতি হয়, কীরাম লাগে ক?
আমার তো তা মনে হয় না, মকবুল ভাই। মনে হয় সারাদিন চালিউ ভাবী না করবে না।
তুই কি বেশি জানিস আমার বউর কতা?
তা জানি। ও ভালো কতা, আমাগের ব্যাপারডা ভাবী জাইনে ফেলিনি তো?
না রে। আমি কইয়ে আসি কাজের খুপ চাপ। দূরে যাইয়ে কাঠ কিনে আনতি হয়, তাই রাইত হইয়ে যায়।
তুমি এত মিথ্যে কতা কতি পারো? আমারে আদর কইরে কত কতা কও, সব কি ফাঁকি?
পিরিত কল্লি এটটু এটটু ওইরাম কওয়া লাগে। মিথ্যে কতাও কতি হয় সত্যি সত্যি, হাহাহ।
যাও আমি আর নেই তুমার সাতে।
কি কচ্চিস, দাঁড়া চাখাচ্চি মজা।
কচি নগ্নদেহ মন্থন করছে মকবুল। অভ্যস্ত আদরে শিউরে শিউরে উঠছে মমতাজ। খাটের কুচকাচ শব্দে উৎকর্ণ হয়ে আছে প্রান্তর।
সাত.
সন্ধের পরপরই শুয়ে পড়েছে রিজিয়া। বিকেলের মেঘে ঝিরঝিরে একটু বৃষ্টি নেমেছিল। শীতে জড়সড় হয়ে ভাত সাজিয়ে রেখে লেপের ওমে যেতেই দুচোখ ভেঙে এসেছিল। মাঝে একবার বাইরে যেতে হয়েছিল। ঘুম আর জোড়া লাগছে না। ওমটাও ফুটো বেলুনের বাতাসের মতো বেরিয়ে গেল মনে হয়। গায়ে জোরে লেপ চেপে গুটিসুঁটি মেরে শুয়ে চোখ বুঁজে আছে। কাকঘুম এসেছে কেবল। ভেজানো দরোজা নড়ে উঠে ক্যাচ্ করে হা হয়ে থেমে রইল। মনে মনে ভাবছে, জেগে থাকলেও আজ আর কথা বলতে যাবে না। জোর করে চোখ বুঁজে পাশ ফিরল। প্লেটের শব্দ হওয়ার কথা। কিন্তু কোনো সাড়া নেই। মকবুল বোধহয় খেয়ে এসেছে। বিছানায় চুপচাপ বসে আছে। নিঃশ্বাসের শব্দ আসছে। বৃষ্টির নতুন পানিতে পাশের ডোবার ব্যাঙগুলো সুর করে ডেকে ডেকে হঠাৎ চুপ হয়ে যাচ্ছে। সেসময় ঝড়ের মতো লাগছে নিঃশ্বাস। লেপ উঠিয়ে আলতো করে শুয়ে চিবুকে চুমু খেলো। খুব মিষ্টি গন্ধ আসছে। আজ মনে হয় সেন্ট মেখেছে। কাল রাতের বেলা খেয়ে এসে আদর করে করে নিজেই ঘুমে নেতিয়ে পড়ল। হাতটা আধকাটা ডালের মতো ঝুলে রইল পেটের পরে। সারারাত তাতানো কড়াই হয়ে এপাশ-ওপাশ করতে হলো। আজ তাই সকাল সকাল প্রেম শুরু করেছে। হাসি পেল রিজিয়ার। দ্রুত-হাত ঘাড় পেরিয়ে একটি স্তনের ওপরে এসে থামল। তালু মেলে চাপলো। সাপের মতো নেমে দ্বিতীয়টায় পাঁচ আঙুল দাবালো। এরপরে একটু উঠে দুহাতে দুইস্তন মুহুর্মুহু মথিত করতে লাগলো। রিজিয়া পাশ ফিরে সোজা হয়ে চোখ খুললো। কথা বলতে যাবে, কিন্তু মুখের ওপরে একটি হাত ভারী হয়ে রইলো।
কতা বইলে না ভাবী, আমি আমি।
ওরে আল্লাহ, মজনু তুমি আমার কাছে আইছ? কি সব্বোনাশ! মুখ ঝাঁকিয়ে বিড়বিড় করে বললো রিজিয়া।
তাতে কি ভাবী? তোমার দুক্কু আমি বুঝি। সুখী সুখী ভইরে দোবো তুমার জীবন। মানা করবা না।
না না ভাই, ইডা হয় না। তুমি যাও। তুমার ভাই আইসে পড়বেনে।
আসপে না। তুমি কিছু বইলে না ভাবী। আমারে মাফ কইরে দ্যাও। আমি আর থাকতি পারিতিছি নে। জানি ইডা ঠিক না। কিন্তু মকবুল ভাই তো তুমার প্রতি অন্যায় করে। আর তুমার রূপযৌবনে গাঙের পানি হার মানে।
কথা বলতে বলতে চুমোয় চুমোয় ভরিয়ে দিতে লাগলো মজনু। ব্লাউজের ঢিলা বোতাম ফড় ফড় করে খুলে গেলো। মসৃণ পেটের ওপর দিয়ে চেটাল হাতের আঙুলগুলো শায়ার ফিতে পেরিয়ে যোনিতে এসে নামলো। উহ করে উঠে বসলো রিজিয়া। নিজেই ঝাঁপিয়ে পড়লো মজনুর ওপরে।
লুঙি গোছাতে গোছাতে বাইরে গেল মজনু। ফিরে এলো একটু পরে। রিজিয়া তাকিয়ে আছে। আধশোয়া, লেপের ওম জড়িয়ে বালিশে হেলান দেওয়া। মুখ হাসি হাসি। দেখছে মজনুকে। কে বলবে, এই ছেলে বিয়ে করেনি!
বইল্লে যে, মকবুল আসপে না। কনে গেছে? তুমি এইসুমায় জাইনলে কী কইরে?
সত্যি কতা বললি সতি পারবা?
হ্যাঁয় পারবো, তুমি কও।
তুমার কোনো অসুবিদে হলি দায়িত্ব আমি নোবো ভাবী, চিন্তা কইরে না। মনে হচ্চে, মকবুল ভাই তোমারে তেমন ভালোবাসে না।
কারে ভালোবাসে? খুইলে কও মজনু।
ও মমতাজের কাছে যায়।
কী কইলে তুমি!
ঠিক বলিচি ।
কত দিন তে এই কাজ?
বছরখানিক হবে।
তাই তো কই, এই বয়েসে ওই ছেমড়ির বুকির অবস্থা এইরাম ক্যান্! আসুক আইজ বাড়ি।
না না, তুমি কিসসু কইয়ে না। দোষ ওই ছেমড়ির, আমি সব জানি।
একজনের দোষ দ্যাও ক্যান্? এই কাজ কি একা একা হয়?