চেয়ার
নিবিষ্ট ঘোরের দেশে বাবা সেই প্রাচীন লাটিম
স্বপ্নের গুহায় যার হিসাবের গোলকচেয়ার
আজও দোলে। তবু অঙ্কবেদনার পুস্তকনিদ্রায়
ঘুম-যাওয়া অক্ষরের নিঝুম পাখিরা জ্ঞানে জ্ঞানে
উড়ে আসে বাবার ভেতর। শুধু পতনযজ্ঞের
আলো দেখে মোম হয়ে গলে যান, চেয়ারে বসেন
জমাট গানের মতো মৌন পিতা। সে কি আলোড়ন!
এই গূঢ় সংসারে নিরেট মাংস নিয়ে প্রতিদিন
আমরা যে-প্রত্ন কোপানল ঝরে যেতে দেখি, ক্ষুণ্ন
প্রতিভার দাঁতাল শয্যায় খুন হই যত লোল
গীতল হরিণ,আমি তার ব্যাঘ্রশকট ভেঙেছি।
দেখেছি যাপনকলা, মধু, বিষ, হিংস্র বনায়ন।
তবু সৌরসংকটের মহাকাল রক্ত কারাগারে
যাতনাসবুজ নিয়ে ডাক দেয়: এখানে বসুন।
জানি পিতা সূর্যসমাধির মতো আলোর শরীর
ছেড়ে যাবে, কাঠের চেয়ারে সেই পুত্রমালিকানা—
যেন কোনো স্মৃতি নয়, গান—স্বপ্ন, লীলা ও সংগ্রাম…
জঠর
মায়ের জঠরে এক পুষ্পগোপনতা।
যখন ঝরতে থাকে গন্ধের বৃষ্টিতে
. ভিজে যায় অনঙ্গ সংসার।
তবু মর্মপাথরের বিষণ্ন কঙ্কাল
অন্ধ জাতকের মতো ছুঁড়ে দিলে
তিনিও ভিজেন, যেন কান্নাশকুনের
শাণিত ঠোঁটের পাশে বেদনার সাদা দুধ জমা হলে
আমি এক স্তন্যঘেরা বিবর্ণ সন্তান—
. ফুলমোহনার ঘাসে ঘাসে
তাকে শুধু মাড়িয়ে গেলাম।
ঘুমের পল্লবে তবে কোন স্বপ্ন সঞ্চালনে
সহ্যের সবুজ নিয়ে বসে থাকে মায়ের আঁচল?
ভুলে গিয়ে যাতনার সাংখ্য পরিণাম
পত্রল হৃদয় খুলে তিনিও ডাকেন পাখি: আয় আয়?
যেন কুশপৃথিবীর অশিষ্ট রৌদ্রের ছায়া ফেলে
গান হয়ে ফিরে আসি ডালে ডালে জঠরে তাহার?
গৃহ-১
নদী-জল বাষ্প হয় সমুদ্র সংসারে।
যমুনায় প্রেম নাই, সেই উত্তাল নম্রতা
তোমার বেতস; প্রহারের মতো হাতে নিয়ে
গৃহের অরণ্যে
আমাকে পাগল করে তোলো অথবা সন্ন্যাসী।
কথার কূজনে ডাল ভেঙে ভেঙে
এইভাবে গাছের মৃত্যুর মতো
আমাদের প্রেম।
গৃহ-২
রান্নার উদ্যোগে কিছু মুগ্ধ কড়িকাঠ
মসলার গন্ধ নিয়ে মরে—
সেই হাসিমুখ লোভ করে
তোমাকে বানাই বন।
যত কর্মকাল, বন্য গভীরতা বিভিন্ন সংগ্রামে
সবুজ গুঞ্জন, লাল বৃত্ত করে তোলো।
পতাকার মতো তোমার যৌবন
আমার স্বদেশে ওড়ে।
অনামিকা
তবে কোন অশ্বটান আর আমি সচল সহিস
যৌবন গন্তব্য নয়, অনলপ্রতীক, তাই জ্বলি?
যেদিন অক্লান্ত সূর্য আকাশ মাতায়
. সেদিন তোমাকে বলি চন্দ্রপরাজয়?
রঙধনু-সত্যের উদিত নিউটন ছুঁয়ে ছুঁয়ে
মেঘের গণিত ভালো জানোনি বলেই
বিদিত গোপন তুমি—আপেলসময়,
. কেবলি মাটির দিকে নামো;
পতনস্পর্ধার গায়ে ভূমিষ্ঠ হৃদয় ছেড়ে যাও।
লম্বগণিকার পাশে আমি কতকাল
সমতল মোহের প্রেমিক—
জ্যামিতিক বসন্তবলায়
যতটা তোমাকে পাই উড়ুক্কু যৌবনে বৃক্ষসহচর, তার
সবটুকু পরিমাপ হবে না জেনেও
. সবুজ কম্পাসে গেঁথে আছি।
তবু হে পুলকপাখি, শ্রবণবধির
প্রিজমগল্পের ডানা যখন ছড়িয়ে দাও
আলোর সন্ত্রাস ভেবে এত যে সুমিষ্ট করতলগত হই
তার নাম কী? কী তার ঘনিষ্ঠ মুঠোয় মৃত্যু বরাবর?