যুগের যোগ্যতা
আমার চেয়ে বয়সে বড় যে ঢেউসমগ্র, তার নাম সুরমা।
প্রতিমা হিসেবে যে আমার ভোরে প্রতিদিন ছিটিয়ে
দিত লক্ষ্মীকণা, তার নাম ছিল বৃষ্টি।
আমি কোনো দিনই তাদের দৃষ্টির সীমানায়
দাঁড়াতে পারিনি। বরং চেয়ে থেকেই বারবার
বলেছি- ভালোবাসি, ছায়া!
অনেক প্রেমসম্পর্কের কোনো ছবি এঁকে রাখেনি
এই জাগতিক ক্যানভাস। অথবা যারা চিত্রকর সেজে
পাঠ করে গেছেন তাদের প্রেমিকার চোখ—
তারাও সেই চক্ষুযুগলে কোনোদিন,
দেখতে চাননি বসন্তের অশ্রুশিখা।
শিখা অনেক কিছুই পোড়াতে পারে। আর
মাটি ধারণ করে রাখে তার বুকে সকল ছাইছন্দ।
যুগের যোগ্যতায় যারা সেই ছাইছন্দ খুঁড়ে
উষ্ণতায় রাখতে পারে হাত,
প্রকৃতপক্ষে তারাই প্রেমিক অথবা কবি।
গয়নাবাজি
কয়েকটি বুনোফুল দিয়ে তোমাকে পরিয়েছিলাম দুল
কয়েকটি হাওয়া দিয়ে তোমার জন্য
সাজিয়েছিলাম হেমন্তের নিঃশ্বাস
দুপুরের মধ্যবয়সে রোদ জমিয়ে রাখে যে পাতা—
তার দিকে তাকিয়েই, একটি জামরুল
তুলে দিয়েছিলাম তোমার হাতে।
জানি, অনেক কথাই তোমার মনে নেই আজ!
ঘরহীন মানুষেরা জলের ভেলায়ও বাঁধতে পারে ঘর—
কার্তিকের পাখিরা পুনরায় ভালোবাসার খোঁজে
ডানায় পরে রাখে ধানের গয়না,
আমি তো স্বর্ণকার নই, তাই—
জলের ধ্বনিতে, তোমার জন্য প্রতিটি সন্ধ্যা সাজাই।
যতি ও মধ্যবিরতি
থেমে যেতে চেয়েছিলাম। কোনো চিহ্ন না রেখেই
হয়ে যেতে চেয়েছিলাম—দূরের নাবিক।
কোনো কোনো জাহাজ সমুদ্র থেকে আর যেমন
কোনো দিনই বন্দরে ফেরে না, অথবা
কোনো কোনো ঝড়, দাগ না রেখেই নগরের ওপর দিয়ে
দ্রুত চলে যায়, ঠিক ওদের মতোই…
তুমি আমাকে বিরতি নিতে বললে। অস্ত যাওয়ার পূর্ব
মুহূর্তের সূর্যের মতো, আমার ফ্যাকাশে রঙ দেখে
তুমি বললে—তোমারও যৌবন ছিল!
আমি মধ্য অক্টোবরের ম্যানহাটানে দাঁড়িয়ে আরেকবার
দেখলাম হলুদ পাতা ঝরার দৃশ্য…