তৃতীয় পর্ব
সালমান তারেক শাকিল: একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন। এই আইন পেশায় কাজ করলেন, রাজনীতি করলেন, আমরা মানবাধিকারের জায়গাটায় যেতে পারিনি। তারপরও অনেকখানি আলোচনায় আসছে আফগানিস্তান-সূত্রে। তো জীবনের এই প্রান্তে এসে কী মনে হয় জীবনের? আপনার সমস্ত প্রাপ্তি কি পেয়েছেন?
ড. কামাল হোসেন: আমার কথা হলো, বাংলাদেশে যারা শহিদ হলেন, তাদের প্রাণের বিনিময়ে আমরা এই সুযোগটা পেয়েছি। রাষ্ট্র, স্বাধীনতা আরেকটা হলো সুস্থ রাজনীতি। জনগণ ভিত্তিক, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে যে রাজনীতি আমরা পেয়েছিলাম ৫৪ থেকে, সেই রাজনীতির মধ্য দিয়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা। স্বাধীনতাকে আমি দেখি সবচেয়ে বড় সুযোগ, অসাধারণ সুযোগ হিসেবে। যেহেতু আমরা সংবিধানের কথা বলি, সেহেতু শোকের মাস ইয়েস। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে যদি আমাদের স্মরণ করতে হয়, উনার স্বপ্নকে আমি সবচেয়ে বেশি স্মরণ করব। উনার স্বপ্ন কী ছিল? এই সংবিধান উনার স্বাক্ষরিত দলিল। এটা খুলে দেখো, সব কথা ওর মধ্যে লেখা আছে। (একটি বই দেখিয়ে) এইযে ‘আমরা বাংলাদেশের জনগণ। ৭১ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসের ২৬ তারিখে স্বাধীনতা ঘোষণা করে জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন, সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করেছি। অঙ্গীকার করছি যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদের প্রাণ উৎসর্গ করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল, সেটা হবে আমাদের দেশের মূল লক্ষ্য। এর মধ্যে ভেঙে যেগুলো আমরা লিখেছি এখানে (বই দেখিয়ে), এই যে মূলনীতিগুলো, কৃষক ও শ্রমিকের মুক্তি।
সালমান তারেক শাকিল: (বই পড়ে) সুন্দর কথা, ‘‘বাংলাদেশের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হবে মেহনতি মানুষকে, কৃষক ও শ্রমিককে এবং জনগণের অনগ্রসর অংশসমূহকে সকল প্রকার শোষণ হইতে মুক্তি দান করা।’
ড. কামাল হোসেন: এইটা বক্তৃতার কথা না। এটা সংবিধানের কথা। সংবিধানের এইটা স্বাক্ষর হলো এক নাম্বার কাজ। এইটা তো আমার কথা না।
ওমর শাহেদ: আমরা আপনাকে সংবিধান নিয়ে প্রশ্ন করেছি, কারণ আমরা শুনেছি যে, এই সংবিধান নাকি পৃথিবীর সুন্দরতম সংবিধানগুলোর মধ্যে একটি।
ড. কামাল হোসেন: এই যে অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা…
ওমর শাহেদ: আপনারা কয় ভাই-বোন ছিলেন?
ড. কামাল হোসেন: আমি আর আমার বোন।
ওমর শাহেদ: আপনি বড় না ছোট?
ড. কামাল হোসেন: আমি ছোট। আমার বোন মারা গেছেন প্রায় দশ বছর হলো।
সালমান তারেক শাকিল: আপনি লেখাপড়া করেছেন কোথায়?
ড. কামাল হোসেন: মেট্রিক করেছি সেন্ট গ্রেভরি স্কুল, লক্ষ্মীবাজার। ৫১ সালে।
সালমান তারেক শাকিল: কলেজ?
ড. কামাল হোসেন: সেন্ট গ্রেভরি স্কুলের পাশেই লক্ষ্মীবাজারে সেন্ট গ্রেভরি কলেজটা হলো, তখন সেখান থেকে।
সালমান তারেক শাকিল: স্যার আপনি তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র?
ড. কামাল হোসেন: না। আমিতো সেন্ট গ্রেভরিতে ফাস্ট হয়েছিলাম। তো ওরা আমাকে বলেছিল স্কলারশিপ দিয়ে বিদেশে পাঠিয়ে দিলো। পরে তো চলে গেলাম।
ওমর শাহেদ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করলেন কবে থেকে?
ড. কামাল হোসেন: ৬১-৬২ থেকে ৬৭-৬৮ পর্যন্ত। আইন বিভাগে।
ওমর শাহেদ: আপনি যখন শিক্ষকতা ছেড়ে দেন, তখন আপনি কী ছিলেন? সহকারী অধ্যাপক?
ড. কামাল হোসেন: না। তখন পার্টটাইম বলতো। ক্লাস তো হতো ইভিনিং ক্লাস।
ওমর শাহেদ: আপনি বঙ্গবন্ধুর কাছে আসা বা সংবিধান প্রণয়ন, এই কাজটাতে যুক্ত হলেন কিভাবে?
ড. কামাল হোসেন: আমি যখন ১৯৫৯ সালে আসলাম, দেশে কিন্তু কড়া মার্শাল ল। আয়ুব খান মার্শাল ল করে দিয়েছেন। সোহরাওয়ার্দী সাহেবের সঙ্গে আমার বিশেষ সম্পর্ক ছিল, উনি আমাকে বারে যাওয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছিলেন, লিংকনস-ইন-এ চিঠি দিয়েছিলেন, লেটার-টেটার দিতে হয় এপ্লিকেশানের সঙ্গে। উনি এখানে ঘন ঘন আসা শুরু করলেন, তখন তো আর পলিটিকস ও নাই। মূল কেসটাতে যিনি প্রথম আসলেন, যাকে আমরা মুজিব ভাই হিসেবে পেয়েছি, তার বেইল নেওয়ার জন্য। উনার পেছনে-পেছনে গিয়েছি ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে। সেখানে আমি দেখি যে, উনি ম্যাজিস্ট্রেটকে বারবার মাই লর্ড বলছেন! যে ‘মাই লর্ড, আমি বেইলের জন্য এসেছি’। আমি সরল একটা মনে জিজ্ঞেস করলাম, আমরা তো জানি হাইকোর্টের জজকে মাই লর্ড বলা হয়, এখানে স্যার বলা হয়, অথবা ইওরঅনার বলা হয়। উনি বললেন, তুমি যেটা বলেছ, সেটা ঠিকই। কিন্তু তুমি কি এটা লক্ষ করেছ, মাই লর্ড বললে ম্যাজিস্ট্রেট কত খুশি হয়? আর আমার বেইল পাওয়াটা কত সহজ হয়ে যায়? এগুলো ওনার কাছে কিছুটা অ্যাডভোকেসি শিখলাম আর কি! এভাবে উনার সঙ্গে পরিচয় হলো, আমি শুধু পেছনে দাঁড়িয়ে শুনতাম, কারণ তখন তো আমি জাস্ট এসেছি। আস্তে আস্তে কোর্টে প্র্যাকটিস শুরু হলো, কয়েকটা স্মরণীয় কেস, যেটা এখন চিন্তা করি, যে সব রেলওয়ে ওয়ার্কাররা, তারা একটা স্ট্রাইকে যখন গেল, মার্শাল ল এটাকে অবৈধ ঘোষণা করল। বলল, যারা এই স্ট্রাইকে অংশ নেবে, তাদের চাকরিও যাবে, যারা এটাতে অংশ নেবে তাদের অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। অনেকে চাকরিচ্যুত হলো, অনেককেই সামারি কোর্টে শাস্তি দেওয়া হলো। আমরা সেখানে মামলা করলাম। সবাই বলল, কোনও কেস তো নাই! সরকার যা বলেছে, তাই করেছে। আমার তখন তিন চার বছরের প্র্যাকটিস। ক্রিমিনাল প্র্যাকটিসও না। আমরা বইটই দেখে বললাম যে, না। এদের একটা লিখিত অভিযোগের ওপরে মামলা শুরু করা উচিত ছিল। এরা সামারি কোর্ট করে বিচার করেছে, সেটার প্রয়োজন মনে করেনি। কিন্তু আইনে আমরা দেখলাম, এখানে লিখিত অভিযোগ ছাড়া কেস চালু করা যাবে না। আমরা মামলা করলাম। সফল হলাম, যাদের শাস্তি দেওয়া হয়েছিল, এটাকে অবৈধ ঘোষণা করা হলো। তারা সব চাকরিতে বহাল হলেন। সারাদেশে হাজার হাজার এ রকম ছিল। কালকে চিটাগং-এ আমি স্মরণ করছিলাম, কোর্টে চাকরিচ্যুতদের পরিবারসহ হাজার হাজার লোক এসেছিল, একজন জুনিয়র লইয়্যার দেখেছিল যে, একটা ভালো কাজ করলে কিভাবে মানুষের ভালোবাসা আসে, আর ন্যায়নীতির জয় হয়েছে। এর চে বড় সন্তুষ্টি কিছু আর নেই জীবনে। অনেক হয়েছে এরকম। ইত্তেফাক যখন বাজেয়াপ্ত হলো, দাঁড়িয়েছি, অনেকেই যারা রাজনীতি করতেন, তাঁদের বিনা বিচারে আটক করা হতো। সেগুলো অনেক বড় সন্তুষ্টি। অন্যান্য অনেক কেস লড়েছি। অনেক টাকা ফিস পেয়েছি, কিন্তু সেগুলো এখন আর স্মরণ করা যাচ্ছে না। যে ত্রিশ বছর আগে কী কেস লড়েছিলেন? ভালো কেস কোথায় লড়েছিলেন? এগুলো মনে থাকে না। ন্যায়ের পক্ষে যে একটা জয়, একজন মানুষকে বিনা বিচারে আটক করা হয়েছে, তাকে যদি মুক্ত করা যায়, এটার যে সন্তুষ্টি, সেটা এখনও মনে থাকে আর কি!
ওমর শাহেদ: তারপরে তো আবার দেশে ফিরে আসলেন, দেশে শুরুর দিকে আপনার সহযোগী কারা ছিলেন?
ড. কামাল হোসেন: তখন যে ল ফার্মটা ছিল, অর ডিগনামের কোম্পানি, এটা ঊনিশ শতকে ব্রিটিশ ল ফার্ম খুলেছিল। একজন খুব ভালো বাঙালি সোলিসিটার, একাত্তরে উনি শহিদ হলেন, আহাদ সাহেব এই ফার্মটা করেছিলেন। তখন লন্ডনে একটা পত্রিকায় বেরুলো, তখন তো পূর্ব পাকিস্তান। ঢাকায় একটা ল ফার্ম আছে, ওরা লইয়ার চাচ্ছে, তো যদি কোনও লইয়ার বেরোয়, তাহলে ওরা এখানে বিবেচনা করবে রাখতে। তো আমি একটা চিঠি ওখান থেকে দিয়েছিলাম। নরম্যালি ব্যারিস্টারদের ফার্ম হতো না। সলিসিটারদের হতো। তো বলছে এখানে তো সে রকম কোনও আনুষ্ঠানিকতা নেই, আমাদের এই ফার্মে অ্যাডভোকেট, ব্যারিস্টার, সলিসিটার সবই আছে। আমাদের এখানে ভালো কেসগুলো আসে। আমি বললাম, আমি তো ব্যারিস্টার হতে চাই, আমি কেসগুলোতে ইন্টারেস্টেড। বলল, ঠিক আছে তুমি আসতে পারো। এসে দেখলাম খুব ভালো অবস্থা। মতিঝিলে যেটা কমার্স ব্যাংক ছিল, একাত্তরের পরে কমার্স ব্যাংকের নাম হলো উত্তরা ব্যাংক। ওর উলটোপাশে। আমি যে রুমে বসছিলাম, আমার যে সিনিয়র ছিলেন, আমার চার বছরের সিনিয়র, সৈয়দ মোহাম্মদ হুসেন। উনি পরে জজ হলেন, আমাদের খুব সম্মানীয় জজ হলেন উনি। ওনার সঙ্গে একই রুমে বসে আমি আমার প্র্যাকটিস শুরু করলাম আর কি। ওনার মেয়ে লাস্ট দুই সপ্তাহ আগে ওথ নিয়েছে, কাশিফা হোসেন, জাস্টিস। সেভাবে প্র্যাকটিস করে সে সুযোগগুলো পেলাম, সেভাবে স্কোপগুলো নিতে শুরু করলাম।
ওমর শাহেদ: আর কে ছিলেন?
ড. কামাল হোসেন: পরে শেষের দিকে স্বাধীনতার সময়, কামরুদ্দিন সাহেব ছিলেন, ওখানকার পার্টনার হলেন। আহাদ সাহেব মারা যাওয়ার পরে, একাত্তরের পরে কামরুদ্দিন সাহেব এটার পার্টনার হলেন। আরও ব্রিটিশরা ছিল, এরাগন নামের ব্রিটিশ ব্যারিস্টার—সেও ছিল। আমি তিনবছর ওখানে থেকে ১৯৬৪ সালে নিজের ফার্ম করলাম। নিজেই প্র্যাকটিস শুরু করলাম, ওটা হলো ৫৬/ ৫৭ মতিঝিল। অর ডিগনামও আশেপাশেই ছিল, এই অফিসের ২৫ বছর হয়েছে আর কি। বেশি হবে ২৭ বছর হবে।
সালমান তারেক শাকিল: সীমানা নির্ধারণ মামলার মতো বেশ কয়েকটা মামলা আপনি লড়েছেন, বাংলাদেশের বাইরে আন্তর্জাতিকভাবে আপনার কাজের শুরুটা কবে থেকে?
ড. কামাল হোসেন: এসব আসলে ভাগ্যের ব্যাপার বলি আমি। মানুষের তো আসলে যোগ্যতা-টোগ্যতা থাকে। কিন্তু সুযোগ না পেলে তো যোগ্যতা কাজে লাগে না। আমি ভাগ্যবান, কারণ অসাধারণভাবে এই সুযোগগুলো সৃষ্টি হয়েছে। পঁচাত্তরের পরে কী করব, ভাবতেই পারছিলাম না। মাত্র চল্লিশ পাউন্ড পকেটে। কিন্তু সেখানে যারা আন্তর্জাতিক আইনের ব্যাপারে ইন্টারেস্টেড হয়, আমার প্রফেসররা যারা ছিলেন, তো লন্ডন থেকেও তারা খোঁজ নেন, এসব কাজের জন্য তারা কোনও বিশেষজ্ঞ পাবেন কি না। বিশ্বাস করবেন না, কল এল আবুধাবি থেকে। তারা তাদের হোল টেলিফোন টেলিগ্রাফ সিস্টেমকে প্রাইভেট সেক্টর থেকে গভর্মেন্টের আন্ডারে আনতে চায়। আমাকে বলল, আমি ওখানে উপদেষ্টা হিসেবে যাব কি না! চিন্তা করেন অবস্থা। আমি কী অবস্থায় ওখানে আছি, আমি বললাম, হ্যাঁ আমি যেতে প্রস্তুত, কিন্তু ওদের বলে রাখো যে, আমার ব্যাকগ্রাউন্ড এই আমি বাংলাদেশে এই ধরনের দায়িত্বে ছিলাম। না, ওরা তো তোমাকে ফরেন মিনিস্টার হিসেবে পেয়েছিল, তো ওরা খুব আগ্রহের সঙ্গে বলেছিল যে, উনি আসলে তো কোনও কথাই নাই। ওখানে গিয়ে অনেক আইন বানাতে হয়েছে, ওদের আছে এমিরেটেল। ওদের প্লেনে উঠলে দেখবেন ওদের যে কোম্পানি আছে, সেটার নাম হলো এমিরেটেল। এমিরেটস স্টেট অব কমিউনিকেশন। সেগুলোর আইনগুলো ড্রাফট করা হলো, ওদের সঙ্গে চুক্তি যে হলো, সেগুলোর নেগোশিয়েশান। ওরা খুব সন্তুষ্ট হলো, কারণ নেগোসিয়েশনের ভেতরে আমাকে দুবার হাইকোর্ট দেখানোর চেষ্টা করেছে যে, দেখো দেখো আন্তর্জাতিক আইনে তো যে টাকা আমরা দেব, এটাকে তো এইভাবে লোকাল কারেন্সি থেকে নেওয়া যাবে। আমার আন্তর্জাতিক আইন কিছুটা জানা ছিল, আমি বললাম, না এই রেটে না, ওই রেটে, মানে ওদের ৫ মিলিয়ন ডলার আরও বেশি দিতে হবে। ওরা বেঁকে বসল, বলল, না না, এটা আন্তর্জাতিক আইনের ব্যাপার। আমি বললাম, দেখো, আমি কিছুটা আন্তর্জাতিক আইন জানি। যখন দেখি যে, ওরা একদম নড়ছে না, তখন বললাম যে, না, এটার খুব সহজ একটা মীমাংসা হতে পারে, আমরা লিখে দেই যে, আমার বক্তব্য এটা, তোমার বক্তব্য এটা, আমরা এখনই ইন্টারন্যাশনাল যে চাটার্ড একাউন্ট আছে লন্ডনে, ওদের পাঠিয়ে দেই। ওরা যে রায় দেবে, তোমরা তো মানবে? তখন এটা করার পরে ওরা আমাকে বলছে, আচ্ছা আচ্ছা, দেখো তুমিই রাইট।
ওমর শাহেদ: কতদিন ছিলেন আবুধাবিতে?
ড. কামাল হোসেন: যাওয়া-আসার ভেতরে থাকতাম। একেকবার গেলে এক সপ্তাহ থেকে তিন সপ্তাহ থাকতাম, এর থেকে বেশি না।
ওমর শাহেদ: এটা ছিল আপনার প্রথম বাইরের দেশের কাজ?
ড. কামাল হোসেন: ওই রকম বড় কাজ আর কি! তার ওপরে পাশাপাশি যেহেতু আমার রিসার্চটা ছিল পেট্রোলিয়াম আইনের ওপরে, যেহেতু আমি মিনিস্টার ছিলাম। আমাকে বলল, কী বিষয়ে রিসার্চ করবে? বললাম, দেখো, আমি মিনিস্টার থাকতে বুঝতে পেরেছি, আমার কতখানি এ বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করার প্রয়োজন আছে। কারণ কাজের মধ্যে তো অনেক হয়েছে, কিন্তু যখন নেগোশিয়েট করতাম, তখন বুঝতাম, বাইরে কতকিছু হয়েছে যা আমরা জানলে সুবিধা হয়। আমি বললাম, অন্যান্য দেশে যেসব কন্ট্র্যাক্ট হয়েছে, আইন হয়েছে, সেসব দেশে আমি যাব, সেসব দেশ থেকে ম্যাটেরিয়াল সংগ্রহ করে আমি বই লিখব। আমি তখন ইরাক গিয়েছি, কুয়েত গিয়েছি, ল্যাটিন আমেরিকায় আর্জেন্টিনা গেছি, ইন্দোনেশিয়াতে গিয়েছি, আলজেরিয়া গিয়েছি, ওদের সবার ম্যাটেরিয়াল সংগ্রহ করে একটা বই লিখলাম, যেটা ৭৯ সালে বেরুল। ‘ল অ্যান্ড পলিসি ইন পেট্রোলিয়াম ডেভলপমেন্ট’। এটা হলো বইয়ের টাইটেল। বইটা লিখে সন্তুষ্টি হলো, আমার জ্ঞানের অনেক ঘাটতি ছিল, যেটা আমি অনেকটা গবেষণা করে বুঝতে পেরেছি। ভালো হলো, বইও ছেপে গেল, এ সময়টাও ভালো কাটল। হঠাৎ আমি ফোন পাই জাতিসংঘ থেকে। গণচীন প্রথমবারের মতো জাতিসংঘ থেকে টেকনিক্যাল অ্যাসিসট্যান্স চাচ্ছে। কী? তারা অয়েল কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করতে চায়, অনেক কোম্পানি গেছে, আমরা একটা টিম বানাচ্ছি, সেটা হবে আন্তর্জাতিক টিম, একজন আমেরিকান লইয়ার, একজন কানাডিয়ান জাজ, একজন অরিজিন স্টেট কোম্পানির কাউন্সিলর, আমরা তোমাকেও চাচ্ছি। আমি বললাম, ভাই আমি তো ওদের মতো না, আমার তো মাত্র একটা বই বেরিয়েছে, আমার ঘাটতি পূরণের জন্য বইটা আমি লিখেছি। বলল, ওই বই দেখেই তোমাকে আমরা চাচ্ছি, ওই বই তোমার একটা পরিচয় যেটার কারণে আমরা তোমাকে চাই। তুমি আসো। চিন্তা করেন, একটা রাষ্ট্রকে অ্যাডভাইস দেওয়া, ইউএনও বলছে এটা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ চীন কোনোদিন আগে এরকম একটা সাহায্য চায়নি। এটাকে আমরা খুব গুরুত্ব দিচ্ছি, বেস্ট পসিবল টিম পাঠাতে চাই, অনুবাদ করার জন্য ১ মিলিয়ন ডলারের যন্ত্রপাতি পাঠাচ্ছি, কারণ তোমরা তো ইংরেজিতে বলবে, আর ওখানে সবাই তো আর ইংরেজি জানা লোক না। এজন্য অনুবাদের যন্ত্রপাতিও পাঠাচ্ছি। তো জানুয়ারি মাসে কড়াশীতের মধ্যে আমরা ওখানে গিয়েছি। গিয়ে শুরু করেছি। যেটা আমাকে খুব ইমপ্রেস করেছে, মন্ত্রী পর্যায়ের লোকেরা, মানে ডেপুটি মিনিস্টার যারা, সকাল নয়টায় শুরু করতাম, তারা একদম খাতা পেন্সিল নিয়ে প্রত্যেক লাইন বাই লাইন নোট লিখত।
শেষ
বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা আজও হান্ড্রেড পার্সেন্ট প্রযোজ্য: ১ম পর্ব ॥ ড.কামাল হোসেন
বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা আজও হান্ড্রেড পার্সেন্ট প্রযোজ্য: ২য় পর্ব ॥ ড.কামাল হোসেন