জল
বিছানার নিচে জল এসে ফণা তুলে আছে—এই শীতরাতে বাড়তি তাপ আছে কার দেহে? নিদেনপক্ষে একটি বেড়াল!
কিছু নেই, রাত বাড়ে, দাঁড়িয়ে থাকি পায়ের পাতায়। বাকিটা ধীরে ধীরে হয়ে উঠছে বরফ-কাঠামো।
মনে ভাবি তোমার জঙ্ঘাও জেগে আছে লোহাভর্তি রাতে, তোমার স্তনও রিক্ত নীলের নিচে, একা।
এই শীতে আমরা দুজনই টেরাকোটা— যেখানে ছোঁয়াই ঠোঁট— হীম, মাকড়শার লালায় জমেছে শিশির।
দেহ
আমার দেহটা আমার থেকে আলগা হয়ে গেছে। তার পায়ের কাছে ধুলোর ঝাপটাও সহ্য হচ্ছে না, মনে হয়, তাকে নিচে ফেলে লাফিয়ে উঠবে রাস্তাটা— আর তো জানাই আছে রাস্তার লোকগুলো এই সুবাদে বিছানা পেয়েছে ভেবে সঙ্গমে ব্যস্ত হয়ে পড়বে কুড়ানো বিড়ির পাছা ফেলে।
এর মধ্যে আমার নাকে লাগানো খাদ্যের নলে ব্রা শুকাতে দিয়েছে দু’টো বেশ্যা আর ক্যাথেডারে ফুঁ দিয়ে জ্বালিয়ে তুলছে নিভন্ত আগুন। ডাক্তার নার্সদের আজ কাল পরশু আজ কাল পরশু করে করে চলছে যাত্রাপালার রিহার্সেল—
আমি বাঁচব বাঁচব করে নল দিয়ে টেনে নিচ্ছি খাবার, ওই ব্রাগুলোকেই; মেঘ তার খেলা খেলা শেষ করে জানতে পারে আমার নিরাময় হয়েছে।
ঈশ্বর
নিষিদ্ধ বৃক্ষের কাঠ দিয়ে আমি এস্রাজ বানিয়েছি। তাতে সুর তুলেছে উরু ভেজা এক নারী। তুমি তোমার আগুনের জামা খুলে এসে দ্যাখো— শুনতে তো পারবে না তার সিম্ফনি— তবু বলি, তোমার নিসঃঙ্গতার জন্য করুণা হয়। কাছিমের মতো গলা বাড়িয়েছি, পুষ্পের অন্ধকারে চাঁদ ঢেলে দিলে তোমাকে শূন্য মনে হয়।
তোমাকে দয়া করি তোমার পরাক্রম শূন্যতার জন্য। আমার চোখে চোখ রেখে দ্যাখো, আমাদের নারী-পুরুষের ভেতর যে উদ্ভিদ তাতে ফলেছে জীবনের ঘনীভূত বিদ্যুৎ।
তোমার ওই অগ্নিকুণ্ড, দ্যাখো, বারবার নিভে যাচ্ছে— বৃষ্টি নেই তবু নিভে যায়— এস্রাজের সুরে তোমার গিলোটিন খেলনা বন্দুক হয়ে গেছে। যা তুমি পারো আমাদের শিশুর হাতে দিতে। আর তার মিথ্যা মিথ্যা গুলিতে তুমি বাঁচা-মরার খেলাধুলা শেখো। সন্ধ্যায় তোমার অক্ষরহীনতায় ওর মা জ্বেলে দেবে সামান্য প্রদীপ।
তুমি
আমাকে তুমি ডাকলে, খুলে তো যাবেই, খুলে তো যায়ই
হাঁটুঅব্দি ডুবে থাকা ঘাসে, বাতাসের ঢেউ এসে শয্যা পাতে
এইখানে যুদ্ধের মাংসমেদ, কোনো কোনো পুষ্প তবু ফোটে
আমাকে তুমি ডাকলে, এমন তো হবেই, এমন তো হয়ই
আমরা দুজন দাঁড়িয়েছিলাম, সেই ছায়ার দিকে, জলে তিরতির কাঁপে,
কাপে, শীতকালের সূর্যটা
আমাকে তুমি ডাকলে, এক দূরহ পাথর চলে আসে কাছে
ডোমের সামনে
ডোমের সামনে পড়ে থাকব না বলে
আত্মহত্যাও করি না
আমি জানি আমার পাজড়ে কুড়াল
চালাবার আগে সে আমাকে প্রশ্ন করবে
আর আমাকে নিশ্চুপ দেখে
মগজে দু’হাত ডুবিয়ে খুঁজবে
শিং কৈ কুচে মাছ
গনগনে ঘৃণায় সে মাছ রান্না হলে
খেতে আসবে নেকড়েমুখো শিশুর দল
যারা নাসিংহোমে এসেছিলো
টুকরো টাকরো রক্তমাংস স্নেহ নিয়ে