হারানো বোতামের ক্ষীণ হাসি
প্রতিটি গমনে অগম্যও কিছু থাকে;
আকাশে নরম একখানা ডালে
মেঘ দেখতে দেখতে জড়িয়ে যায় পা
লতাপাতার প্রেমে—অলস দিনের পথিকের মতো,
যেন প্রেমিকার গালে না ছোঁয়া এক গোপন তিল।
দূরত্বে গমন সমুদ্রের অনায়াস ছবি
ঘোলাটে আলোয় অগম্য কিছু থাকে পাশে,
যেন হোটেলের ব্যালকনিতে কাটিয়ে দেওয়া পুরো ছুটির দিন।
সব গমনে অগম্যও কিছু থাকে,
থাকে প্রাপ্তি পরিতৃপ্তিহীন গ্রহণ
থাকে বহুযুগ অপেক্ষা করা এক ব্যথা ভরা মন;
যেন তুমি শুধু চেয়ে আছ ঝাপসা আয়নায়—
তোমার চোখ নির্জলা পাথর—
আকাঙ্ক্ষায়—প্রত্যাশায় আর সন্দেহের গভীরতায়।
আমার হারানো বোতামের ক্ষীণ হাসিতে
চেয়ে দেখি—
অনুভূতিগুলো সন্ধ্যার নির্বাতাস প্রেমে
এই ঘর দুয়ার ছাড়িয়ে কোন অন্ধকারে
শিকড় ডুবিয়ে দিয়েছে।
ফেরা
প্রতিটি দিনের শেষে ফেরা থাকে—থাকে পুনরুক্তি,
ফেরা মানে ফিরে আসা নয়—ফেরা মানে
পরের যাত্রার নীরব অনুযোগ; ফেরা মানে
কোমলে-কঠোরে মেলানো হৃদয়ের গোপন স্বীকার—
আশ্রয়হীন আশ্রয়।
ফুলের ফেরা থাকে পাখির গোপন প্রেমে,
পাখিরও ফেরা বাঁধা গোধূলি সন্ধির নৃত্যে;
নদীর ফেরা থাকে সাগরের নোনা ডাকে—
সাগরও ফেরে সাদা আয়ু পেছনে ফেলে
সাধুত্বের প্রশ্রয়ে।
আমারও ফেরা আছে তোমার কাছে
পত্রহীন আহবানে, যে করে ফেরে দিন
রাত মুছে দিয়ে
পরের দিনের কাছে, রাত টুকু আমাদের না বোঝা
অপরাধে মিছে,
তারও ফেরা আছে, প্রেমের গুহার শিয়রের কাছে ।
কতদূর ভুলে থাকা যায়
শিশিরে ভিজেছে রাতের বাকল। প্রভাতে চোখ মেলা প্রাণ চিকচিক রোদের মমতায় গান গায়, তার দু-একটি ধ্বনি নশ্বর বর্তমানে ভিজে যায়—অবিনশ্বর প্রেমের জোয়ারে। ভুলতে থাকো প্রেম এই ভোরের সৃতি—যেমন দিন ভুলে যায় রাতের মায়া, ভুলতে থাকো প্রেম স্বপ্নের কাহন ভুলতে থাকো—যেমন রাত—ভুলে যায় দিনের পৌরুষ-ভুলতে থাকো।
ভুলতে ভুলতে ভুলতে ভুলতে—তারপরে ভুলে যাও ভুলতে থাকা বিষাদের নোনা প্রান্তর। পাশের জানালায় উঁকি দিল কার মুখ, জমানো বেদনার শিশি ভেঙে দিয়েছে কে, সারা ঘরজুড়ে ভুলে যাওয়া ব্যথার মতো সুখ ছড়িয়ে আছে—এই সব ভুলে যাও; তারপর ভুলতে থাকো কাল নিরবধি, ভুলতে থাকো সীমান্ত রেখা, ঘুমের মাঝে আঁকড়ে ধরা এক ভুল আঙুল। ভুলতে ভুলতে ভুলতে ভুলতে দেখো—কখন ভুলে গেছ ভুলে থাকা, ভুলে গেছ ভালো থাকা…কতদুর আর ভুলে থাকা যায়!
ডিল্যুসন
দুপুরের রোদে ভিড়ে ঠাসা বাস—
হঠাৎ মনে হলো—
ছায়াঘেরা বাড়ি;
নিরালা নিভৃত;
পানি ভরা বড় বাথটাব—
বরফের কুঁচি—
গোলাপ পাপড়ি
আর কর্পুর ভাসছে পানিতে।
পাশের ঘরে রবিশঙ্কর
এক মনে সেতার বাজাচ্ছেন।
মনে পড়া
শরীরের কথা ভাবি কখনো কখনো;
যেন আকাশ থেকে দেখা মাটি আর কাদা—
এক হয়ে থাকা চোখের সুর্মার মতো
নির্ভুল এক অপরূপ।
শরীরের কথা মনে পড়ে
যেন পুরনো দিনের কথা—
যেন বহুদূরে দাঁড়িয়ে থাকা একাকী জংশন—
যেন বিপরীতে ছুটে আসা দুটো ট্রেন—
যেন প্রতিধ্বনির বুকে শুয়ে থাকা ধ্বনির আদর।
কোথায় আছ শরীর—এই বোকা অবেলায়;
এত চুপ চাপ—ব্যথা ভরা বকুল,
শান্ত হয়ে আছ
এতটা দূরে সরে গেছ কবে?