মা সিরিজ- ২৪
ছেলেবেলায় প্রেসার-কুকারের বাঁশি শুনে ক্ষুধা পেতো
হাত ধুয়েই বসে যেতাম কাঠের পিঁড়িতে।
মা স্টিলের থালা ভরে নিয়ে আসতে মাংসভাত
খাওয়া শেষে না হতেই পেটের ভেতর শুরু হতো বজ্রপাত
হাত না ধুয়েই এক দৌড়ে মন্দিরে বসে-ত্যাগের প্রার্থনায় রত হতাম
মন্দির থেকে ফিরে এলে মা আমায় জল দিয়ে পবিত্র করতেন।
আথচ! আজ সেই প্রেসার-কুকার আমার মস্তিষ্কের ভেতর রান্না করে
বাঁশি বাজাতে বাজাতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে
হায় প্রেসার-কুকার তুমি আমার মস্তিষ্ক হয়ে গেলে।
মা সিরিজ-২৬
মাঝে মাঝে এমন হয়—আমার ডানহাত বামহাতকে
এবং বামহাত ডানহাতকে খুঁজে পায় না।
এমনকি তারা প্রায়ই ঝগড়া করে
ঝগড়া করার কারণ—কে কার চেয়ে বেশি অপরাধ করেছে
আর কে বেশি করেছে পুণ্যের কাজ।
বামহাত ডানহাতকে শাসিয়ে প্রায়ই বলে:
তুই এক বিধবার কুমারী স্তন চাপাচাপি করেছিস।
প্রতি-উত্তরে ডানহাত বামহাতকে বলে:
আমি না হয় চাপ দিয়েছি,
তুইতো তার নরম ত্রিভুজে এঁকেছিস প্রেম।
এরূপ ঝগড়া যখন হাতাহাতিতে রূপান্তরিত হয়
আমি তখন এক দৌড়ে বটবৃক্ষের নিচে এসে দাঁড়াই।
বটবৃক্ষ আমার মায়ের নাম। তার আঁচল ছায়ায়
আমার সকল দুঃখ বিনাশ করি।
আর ডানহাত বামহাত ঝগড়া ভুলে সহদোর ভাই হয়ে যায়।
মা সিরিজ-২৭
খুব ছেলেবেলায় মা আমার দু’পায়ে পরিয়ে দিয়েছিল ঘাঘরা
যেমন করে বাছুরের গলায় পরিয়ে দেওয়া হয় ঘণ্টি।
সেই সময়ে বর্ষার কোনো একদিনে
ঘণ্টিপরা বাছুরকে আমি ঘাঘরাপরা বালক তাড়া করেছিলাম।
কোনো কারণ ছাড়াই আমরা দু’জনে জলে নেমে ছিলাম
জল আমাদের আরও গভীরে নামিয়ে দিল।
বড় হয়ে মায়ের কাছে জেনেছি—অই পুকুর জলের গভীরে আমি নাকি
. দুই ঘণ্টা ছিলাম
আর বাছুরটির ঘণ্টি বাজানো—জলের তলে সাঙ্গ হলো।
সেই থেকে আমি কোথাও কোনো ঘণ্টিপরা বাছুর দেখলে
তার কাছে করজোড়ে ক্ষমা প্রর্থনা করি।
মা সিরিজ-২৮
আমার ঠাকুর-মা অশ্রুবন্ধ্যা ছিলেন
লোকমুখে জানা যায় তিনি তার স্বামীর মৃত্যুতেও কাঁদেননি।
যেদিন তার শতবছর পূর্ণ হবে
সেইদিনই তিনি ঘোষণা দিলেন—স্বেচ্ছামৃত্যু বরণ করবেন
এবং তিনি আমাকে দায়িত্ব দিলেন, তার ডেথ সার্টিফিকেট তৈরি করতে।
এটা নাকি তার আজন্মের শখ
মৃত্যুর আগে তার নিজের কবর ও ডেথ সার্টিফিকেট দেখে যাওয়া।
তার স্বেচ্ছামৃত্যুর সন্ধ্যায় আমার মা যখন হাউমাউ করে কাঁদছিলেন
ঠাকুর-মা তখন মাকে ডেকে জানালেন
. তার অশ্রুবন্ধ্যার গোপন রহস্য।
অতঃপর পর আমি জেনেছি মায়ের অশ্রুলিপি থেকে
আসলে ঠাকুর-মার কোনো অশ্রুগ্রন্থি ছিল না।
মা সিরিজ-২৯
আলোর মাঝে কতটুকু অন্ধকার মেশালে জোছনা হয়
কিংবা অন্ধকারের মাঝে কতটুকু আলো মেশালে জোছনা হয়
তা আজও মানুষের জানা নেই।
আমার মা এখনো জোছনা রাতে
ঘুমপাড়ানি গান গাইতে গাইতে নিজেই ঘুমিয়ে পড়েন।
আমরা জেগে থাকি
কারণ আমাদের জেগে থাকতে হয়—মায়ের পাহারায়
চারিদিকে কেন যে এত ভিনদেশি শিয়াল কুত্তা ওঁৎ পেতে থাকে!