রূপকথা আমি যতটুকু আন্তাজ করতে পারছি তোমরা ২০০৭-এ আটকে আছ।
ঠিক তাই স্যার।
ওকে এক কাজ করো। আবার লিখো ১৯৯৭৪। লিখেছ?
লিখেছি স্যার। কোনো কাজ হচ্ছে না।
চন্দ্র আর ঝুমুরের অবস্থা তখন আরও শোচনীয়। পারবে তো ওরা যেতে। কিংবা ফিরে আসতে পারবে তো বর্তমানে। মায়ের মন অধীর হয়। একইসঙ্গে যারা এই বিশেষ সময়টিতে সরাসরি দেখছেন এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের সফল ভ্রমণ, তারাও দ্বিধাগ্রস্ত, কী হবে দু’জনের। এই মুহূর্তে কি ব্যাক করাই ঠিক নয়? কী করবে? সবাই অপেক্ষা করে আছেন বিজ্ঞানী আকবর খান কী বলেন। তিনি এই মুহূর্তে যেন ত্রাণকর্তার আসনে বসেছেন।
আচ্ছা, একটা কাজ করো আরও দশ বছর পেছনে এসো। ১৯৮৪ লিখো। রূপকথা খুব দ্রুত লিখে ফেলে সালটা। ঈশান দেখে নিচ্ছে অন্য কোনো সমস্যা নয় তো? মেশিনে বা কম্পিউটারে কি কোনো গোলমাল হলো?
না, ম্যাম। সব ঠিক আছে।
রূপকথাকে প্রথমবারের মতো খানিকটা অসহিষ্ণু দেখতে পায় ঈশান।
উফ্স।
দু’হাতে মাথাটা চেপে ধরে রূপকথা।
ঈশান কী হবে? সবাই তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে।
ম্যাম. কিছু ভাববেন না। আমরা সফল হয়েছি। এমনকি এখনো আমরা অতীতেই দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু ঠিক যদি নির্দিষ্ট কোথাও পৌঁছুতে নাও পারি তবু সফল। একদম ভাববেন না।
রূপকথার কণ্ঠে যেন আর্তনাদের মতো বের হয়ে আসে,
তাহলে সেই পাহাড় সেই নদী জল গ্রাম…
ঈশান এক মুহূর্তের জন্য সংক্রমিত হয়ে পড়ে। অবাক হয়ে ভাবে, একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানী। যুগান্তকারী আবিষ্কারের সফল ভ্রমণের মাঝখানে যখন পৃথিবীর দৃষ্টি শুধু তারই দিকে স্থির, কী বলছেন এসব! এত সাধারণ ভাবালুতা কি তাকে মানায়? এই সময়ে? কিন্তু না। ঠিক-ই আছে। এই তো আবেগ। ইমোশন। এই ইমোশনই তো আজ বিজ্ঞানকে নিয়ে এলো অসাধারণ এক আবিষ্কারের দ্বারে। কে বলে বিজ্ঞান আর ইমোশনে দ্বন্দ্ব? সব ভুল। সব থিওরি সব ফিলোসফি ভুল। কোথায় কোন ভালোবাসা কোন বেদনা, কি যাতনা কখন যে কি পথ পেয়ে বিকশিত হয়ে ওঠে তা কে বলতে পারে। কী বলবে বুঝে উঠতে পারে না ঈশান। ওদিকে স্যারের উদ্বিগ্ন কণ্ঠ,
ঈশান কী অবস্থা?
স্যার, কী করা উচিত, ভাবছি।
রূপকথা পাঁচ বছর কমাও আরও।
আবার কি-বোর্ডে লেখে ১৯৭৯। বার দুই সালটা লেখার পরও টাইমমেশিনটার কোনো সাড়াশব্দ নেই।
আকবর খান বুঝতে পারেন সমস্যাটা।
আবার লিখো তো ২০০৪ কি ৫ কি ৬?
রূপকথা দ্রুত হাতে লেখে ২০০৫। কোনো কাজ হয় না। লেখে ২০০৪। কাজ হয় না। ২০০৩। কাজ হয় না। কাজ হয় না। কোনো কিছুতেই কোনো কাজ হয় না।
কয়েক সেকেন্ড অতিবাহিত হয়। স্যার বলে ওঠেন,
আর কিছু করার সময় নেই। সময় নষ্ট করা ঠিক হবে না রূপকথা। লিখো ২০৩৬
রূপকথা। স্যার বলে যাচ্ছিলেন আর সে লিখে যাচ্ছিল। ঘোরের মধ্যে ২০৩৬ লিখতে গিয়েই হাত আটকে গেল।
স্যার ফিরতে বলছেন?
রূপকথার গলার আহত স্বর শুধু স্যার নয় মা বোন পেরিয়ে সবাই বুঝতে পারে।
না স্যার না। স্যার এ হয় না। এ হতে পারে না স্যার
রূপকথা বুঝতে চেষ্টা করো। মধ্যবর্তী কোনো সময়ে এভাবে থেমে থাকা ঠিক হবে না। তুমি ফিরে এসো। তুমি সফল, তোমার আবিষ্কার সফল।
কিন্তু স্যার…
রূপকথাকে শেষ করতে দেন না আকবর খান। নিজের শিষ্যকে এভাবে পরাজিত করতে পারবেন না তিনি সবার সামনে। এই কথাটা তার বিশ্ববাসীর সামনেই বলতে হবে। এই সন্দেহটাই তিনি আগে করেছিলেন। কিন্তু রূপকথা আহত হতে পারে। মাঝখানে থেমে যেতে পারে তার গবেষণা এ আশঙ্কায় তিনি এতদিন সম্ভাবনাটার কথা বলেননি।
রূপকথা এখন যা বলছি শোনো। এ তোমার আবিষ্কারের অসফলতা নয়। এ আমি এই অবর্ণনীয় মুহূর্তের সাক্ষী হয়ে রয়েছেন যারা তাদের সবার জন্য বলছি। সবাই শুনুন। আমার যতটুকু ধারণা, জন্মের আগে কেউ যেতে পারবে না অতীত ভ্রমণে। রূপকথা তুমি জন্মেছ ২০০৭ সালে। তাই ২০০৭ এরপর আর টাইমমেশিন যেতে পারছে না।
স্যার। রূপকথার গলায় কান্নার ছোঁয়া পেয়ে আকবর খান বলেন,
রূপকথা । বি প্র্যাকটিক্যাল। তুমি বিজ্ঞানী। তুমি গবেষক। প্রতি মুহূর্তে পুরাতন আর নতুনের সংঘর্ষে পথ চলা তোমার। ভেঙে যাওয়া আর তার পড়ে থাকা টুকরোগুলো নিয়ে পথ চলাই তোমার কাজ। তুমি বিজ্ঞানী। তুমি ভেঙে পড়লে চলবে না। তুমি ফিরে এসো। তুমি সফল। টাইমমেশিন আবিষ্কৃত হয়েছে। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে ইচ্ছায় তুমি এই যুগান্তকারী আবিষ্কার করতে নেমেছিলে তা হয়তো সফল হয়নি। কিন্তু ইউ আর অ্যা গ্রাট। ইউ হ্যাভ ডান আ ট্রিমেন্ডাস জব সাকসেস্ফুললি। কাম ব্যাক মাই ডিয়ার। কাম ব্যাক। রূপকথার হাত ওঠে না। তার দিকে একবার তাকায় ঈশান। বুঝতে পারে ম্যামের দ্বারা এ সম্ভব নয়। কি-বোর্ডে চেপে দেয় ২০৩৬ সাল। টাইমমেশিনটা একটা জোর ঝাঁকুনি দিয়ে নড়েচড়ে ওঠে। সাংবাদিকরা ঝাঁপিয়ে পড়ে আরও এক দারুণ কৌতূহলে। কি সেই ঘটনা? কেন রূপকথা ফিরতে চাচ্ছিল না। কেন সে এতটা ডেসপারেট ছিল। চলে যেতে চাচ্ছিল ১৯৭৪/৭৫/৭৬/৭৭/কিংবা ৭৮ এ। তবে কি টাইমমেশিনের মতো এমন একটা বিরাট সাফল্য কিংবা আবিষ্কারই তার লক্ষ্য ছিল না? ছিল আরও কিছু পেছনে!
পরের দিন দেশের আর বিদেশের সব পত্রপত্রিকায় ছাপা হয় রূপকথার আর মায়ের ছবি। ক্যাপশন-টাইমমেশিন আবিষ্কার আর তার সফল ভ্রমণ, রূপকথা রাজকন্যার যে স্বপ্ন তাকে বানালো বিশ্বজয়ী সাইন্টিস্ট ।
শেষ