ঈশান বাংলাদেশে চলে এসেছে প্রায় ২০/২৫ দিন আগে। ও অবশ্য টাইমমেশিনটা সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে। কারও হাতে ছাড়তে ভরসা করেনি। সরকারের অনুমতিক্রমে শাহজালাল এয়ারপোর্টের হ্যাঙ্গারে রাখা আছে টাইমমেশিনের বডি। বডি বলছি এ কারণে, যতক্ষণ না এটি সফলভাবে পেছনে ভ্রমণ করাতে পারছে এর আরোহীকে, ততক্ষণ পর্যন্ত একে টাইমমেশিন বলা যাচ্ছে না। জাস্ট প্লেনের মতো শেপ এর একটা যন্ত্র বিশেষ। বলতে গেলে যন্ত্রটি বিলাসবহুল। দারুণ দেখতে তো বটেই। দুটো সিট আছে এতে। রূপকথার কথামতোই ঈশানের ডিজাইনে তৈরি এটি। সামনে একটি মনিটর আছে। তাতে সংযুক্ত থাকবে গবেষণাগার থেকে সবগুলো কম্পিউটার। সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করা যাবে এর মাধ্যমে টাইমমেশিন আরোহী সঙ্গে। এখন পর্যন্ত পরিকল্পনা আছে রূপকথাই প্রথম ভ্রমণ করবে। আর স্যার তো আছেন নেটে। ঈশান আছে। আরও আছে বেশ কয়েকজন নামকরা কম্পিউটার প্রোগ্রামার। যারা সারাক্ষণ রূপকথার গবেষণার থিওরি নিয়েও কাজ করে গেছেন এতগুলো বছর ধরে। আগামীকাল খুব ভোরে ওপেন করা হবে টাইমমেশিন। রাতে ঘুমানোর বদলে উত্তেজনা আর নানা দরকারি সব আলাপ আলোচনার জন্য ঈশান আকবর খান রূপকথা চন্দ্রকথা আর বাকি সব সহকারী গবেষক-প্রোগামার এক জায়গায় থাকবেন ঠিক করেছেন। লাইভ টেলিকাস্ট করবে বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অনেকগুলো টিভি চ্যানেল। বিদেশি চ্যানেলগুলো তো আছেই। ডিনার শেষ। মধ্যরাত। গবেষণাগারে আকবর খান শুরু করলেন, রূপকথা। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে। যে মুহূর্তে তুমি ২০৩৬ সাল থেকে বের হয়ে যাবে, সেই মুহূর্ত থেকে তুমি শারীরিকভাবে আমাদের সামনে থেকে আড়াল হবে। তোমাকে আমরা কেবল দেখতে পাব মনিটরের ছবিতে। জানোই তো ইথার তরঙ্গ থেকে বাকি সব ধারণ চলতে থাকবে।
জ্বি স্যার।
চন্দ্রকথা বলে,
কিন্তু দিদিকে তো আমরা দেখতে পাব, না স্যার?
দেখা যাক।
রূপকথা আর আকবর খান দু’জনকেই এ জায়গাটাতে খানিকটা দ্বিধান্বিত মনে হয়।
আর আর বাকি সব কিছু সম্পর্কে ভাবনা তো তোমার স্পষ্টই। না কি?
আমি ভাবছি স্যার, দীর্ঘ একটা সময় পার হওয়ার পর যখন অনেক পেছনে পৌঁছাবো তখন তাপমাত্রার বেশ খানিকটা পার্থক্য থাকবে।
হুম। এখন বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে তাপ বেশি। তুমি যদি ঠিক ঠিক ঐ স্থান আর সময়টিতে যেতে পারো, তবে তাপের তারতম্য হতে পারে ঠিকই। মানে ওখানে তাপমাত্রা বর্তমান থেকে অবশ্যই তুমি কম পাবে।
স্যার আমি ভাবছি…
রূপকথাকে চিন্তিত দেখায়।
কোথায় বা কোথাও কি আটকে যাওয়ার সম্ভবনা আছে বা থাকতে পারে কি না।
হুম। সেটাও ভাবা আছে আমার। তুমি আগে বলো কী কী হতে পারে। আটকে যাওয়া বা বিপদ?
এক হতে পারে বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে গেলে যদি সংযোগটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, তখন কী করা যাবে।
না না। এটা কোনো সমস্যা নয়। সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিত করা হয়েছে। ভেবো না।
এটি একটি সময়সাপেক্ষ ভ্রমণ।
হুম। এটা বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে। আর একটি বিষয় তুমি তো জানই। যেহেতু তুমি নিজেই যাচ্ছ তোমার অতীতে কিংবা সমসাময়িক অন্য কারও সময়ে তোমার নিজেকে সেখানে দেখতে পাওয়ার কোনো কারণ নেই।
জি, স্যার। আমি জানি।
আকবর খান যোগ করেন, দ্বৈতজীবন কিন্তু এখানে সম্ভব নয়। এটা মনে রেখ।
হুম। টাইমমেশিন অন হওয়ার সাথে সাথে আমি বর্তমান মানে এখন আর অতীত মানে পেছন দু’জায়গা থেকেই ইনভিজিবল হয়ে যাব।
হুম। কেবল আমরা তোমাকে দেখতে পাব। যাক। সব কিছু তোমার গ্রিপেই আছে। কোনো চিন্তা করো না। রেডি হয়ে নাও। আর দু’ঘণ্টা বাকি আছে।
আর স্যার। নিজের খাবার ব্যবস্থা নিজেই করতে হবে।
হুম। পর্যাপ্ত খাবার আছে তোমার মেশিনে। সমস্যা হবে না আশা করি। আমি এখন শুধু ঠিকঠাক মতো ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকব।
ফিরে আসাটা হবে আমাদের ‘প্রজেক্ট টাইমমেশিন ১৯৭৪ টু ২০৩৬’-এর দ্বিতীয় সাফল্য। বেস্ট অব লাক্ মাই ডিয়ার।
চলবে…