কবিতা নায়ক
উঠে দাঁড়ালাম কবিতার বই থেকে
পাঠের পুরুষ, শব্দের সুড়সুঁড়ি—
স্বপ্ন সমেত রং ও তামাশা এঁকে
তোমাকে দিলাম বৃষ্টির গুড়গুড়ি।
কবিতায় আমি অমিত শোভিত যুব,
নারীকে ডাকছি, মায়া কর্ষণ মাঝে,
পাঠিকা আমার মন পবণের ধ্রুব
আমাকে ভিজিয়ে ভেবে নিলো আজে-বাজে
শরীর সিক্ত, স্বপ্নে ভেজানো দেহ,
কাপড় আঁটানো চোখ কাড়ানিয়া সুখ
মাস্তুল পাল, দেহ-পেশী খাড়া বুক
প্রেমের ফানুসে ছড়ালাম মন-স্নেহ,
শব্দের তীরে শিকারী পুরুষ আমি—
পাঠিকা তোমার হৃৎ-চোখে উঠি-নামি।
শোনো হে সম্পাদক
দায়িত্ব যার সাহিত্য আর ফসলের পুরো মাঠ
গদ্য-পদ্য কবিতা ছাপছো না কি ছাপো শুধু নাম?
কবিতা মেপেছ? সুরের সুষমা, ছন্দের আটঘাঁট
অগোছালো চুল; খোঁজে পরিপাটি ব্যাকরণ সংগ্রাম
মাত্রাবৃত্ত; মৃদু টোকা জ্ঞান, স্বরবৃত্তের ধ্বনি
শ্বাসাঘাত মানে একটি মাত্রা; ছন্দ-ছড়ার নেতা
অথবা গদ্যে অক্ষরগোনা বৃত্তের সিম্ফনি;
মাত্রা মাপার গুণ থাকা মানে কবিতা কুশল জেতা।
ক্ষুধা হলো খিদে, মতো’র প্রয়োগ বাসী ফুল, বাসী বটে,
গল্পে এখন পাঁচ ডব্লিও-এইচের খোঁজ রাখা,
কী কেন কখন কোথায় কে আর কিভাবে কাহিনি ঘটে
প্রতিবেদকের তথ্যের রীতি গল্প-নাটকে আঁকা।
বেণী বাঁধা চুল; খানিক বাক্যে প্রবন্ধ সিঁড়ি গাঁথা
খোলা মতবাদ, কথা কবিতায় শিল্পে সাজাও কাঁথা।
পিসি-তে প্রমোদ
যখন ছিল না সেলফোন, মুঠোফোন
ই-মেইল আকাশ, ফেসবুক দোলাচল
প্রযুক্তি রোদ দেখেনি তো দুটো মন-
মেঘেরা হেসেছে ঝলকিত খোলা জল।
ছিল ডাকঘর, চিঠি খাম, হাতলেখা,
হৃদয়ে-কাগজে গীতি-সুর মৌলিকে-
প্রণয়-প্রণয়ী জ্যোতিষীয় হাত দেখা,
স্বামী সাধনায় খাঁটি চিঠি বউ লিখে।
লেখনীর যুগ দেখোনি যে যুগ, হাঁটো
পিসি-তে প্রমোদ, অস্থির ধোঁয়া-ধোঁয়া,
প্রশান্ত প্রেম তোমাকে দেবে কি ছোঁয়া?
কলেজ খোয়ানো ঝাউতলা জুটি, চাটো-
স্মৃতির বরফ, ল্যাপটপ ছিল না যে,
ঘানি-খাঁটি-প্রেম ছিলো জীবনের ভাঁজে।
তার হারা যুগ
তার হারা যুগ, অদল বদল দিন।
কে যে অবিনাশ, নারীরা ডিম্বাশয়,
পৃথিবী এগোলো, আমি কি অর্বাচীন?
পাখি কি এসেই বসেছে, কিংবা শোয়?
হাতে হাতে যত মুঠোফোন, পাখি ফোন,
ইচ্ছে মতোন ঠিকানা জাহির করে,
তার হারা যুগে কত যে সংগোপন
সম্ভ্রম সেতো- বিনোদনে ঝরে; মরে।
তার হারা যুগ, গ্লোবাল ভিলেজ জানি,
মানুষ মুক্ত, ছাড়া ছাড়া গতিধারা
সতীহারা থেকে কতো নারী পতিহারা,
মতিহারা ঢের পুরুষের তড়পানি-
আগাম পৃথিবী লাগাম দিয়েছে খুলে
এগুচ্ছি সব শংকা ও সংকূলে!
গুম
পদে পদে এত মৃত্যুর ফাঁদ, এত-
জন্ম মানেই মৃত্যুর চিঠি, জানি,
লাশ ভরা খাম, ছিলো তো সমুন্নত,
জীবনতো নয় ব্যাংকের কলমানি!
হুট করে ডাকা, লুট হয়ে থাকা, গুম
খানা তল্লাশ, নথি নেই কোনো, স্যরি-
কার অভিশাপে নেমে আসে চির ঘুম
কার ঘাড়টিকে বিচারসূত্রে ধরি!
প্রযুক্তি যুগ, অযুক্তি খুন দেখে
ভয় পেয়ে গেলে- স্বপ্ন হারাবে ধন,
ভীতির ঘুড়িতে অগণিত জনগণ
অসি আর মসি ঘটনাকাব্য লেখে,
নীরব হত্যা, যুদ্ধের চেয়ে ঘৃণ-
লাশের গন্ধে কাঁদে জল-মাটি-তৃণ।