শিল্পের এত এত মাধ্যম থাকার পরও ছড়াকেই কেন বেছে নিলেন?
একমাত্র ছড়াকে বেছে নিয়েছি, তা পুরোপুরি বলা চলে না। আমি সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় চর্চা করি। তবে, মনে করি, ছড়া যত দ্রুত পাঠককে আকৃষ্ট করে, তত দ্রুত সাহিত্যের অন্য মাধ্যমে করে না। সম্ভবও নয়। এছাড়া ছড়ার মাধ্যমে অল্প কথায় বেশি মেসেজ দেওয়া যায়। ছড়ার শক্তিটা অনেকটাই আলাদা।
ছড়া লেখার পেছনে কোনো অনুপ্রেরণা কাজ করেছে? করলে কী সেটা? কার অনুপ্রেরণায় আপনি ছড়া রচনায় আগ্রহী হলেন?
না, কোনো অনুপ্রেরণা কাজ করেনি। তবে, লেখালেখির শুরুতে কবিতার পাশাপাশি কিছু ছড়া লিখেছি। পরবর্তী সময়ে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাইয়ের সংস্পর্শে আসায় ছড়া লেখার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছি। সেটা শিশুদের উপযোগী। তার আগে আশির দশকের শেষ দিকে অবশ্য রাজনৈতিক ছড়া লেখার অনুপ্রেরণা পাই আবু সালেহ’র ‘তাড়িং মারিং’ ছড়ার বইটি পড়ে। এটা আমি কাজে লাগাই রাজাকারদের বিরুদ্ধে ছড়া লিখে। এখনো সমকালীন ছড়া লিখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।
রাজনৈতিক ছড়ায় বেশি আগ্রহ বোধ করেন?
নানা অসঙ্গতি তুলে ধরতে চেষ্টা করি। সে সময় এগুলোকে রাজনৈতিক ছড়া বলা হলেও বর্তমানে সমকালীন ছড়া বা সময়ের ছড়া হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
বিষয় হিসেবে রাজনীতি না প্রেম-প্রকৃতিকে বেশি গুরুত্ব দেন?
রাজনীতি। প্রেম-প্রকৃতি নিয়ে খুব কম ছড়া লিখেছি।
আপনি বললেন, ছড়ায় অল্প কথায় বেশি মেসেজ দেওয়া যায়। কিন্তু সে মেসেজ জাতি বা রাষ্ট্রকে প্রভাবিত কতে পারে?
প্রভাবিত করতে পারে। কিন্তু চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনি। যাকে নিয়ে বা যে প্রতিষ্ঠান নিয়ে লেখা হলো, তিনি বা সেই প্রতিষ্ঠান এগুলো সযত্নে এড়িয়ে যান। অথচ একটু শুধরে নিলে তারা অনেক ভলো কিছু দিতে পারেন জাতিকে।
কার কার ছড়া আপনাকে আলোড়িত করে?
সুকুমার রায়, অন্নদাশঙ্কর রায়, সুকুমার বড়ুয়া ও লুৎফর রহমান রিটন—এই চারজনকে মাথায় করে রাখি। এরপরও অনেকের ছড়া আমাকে আলোড়িত করে। অনেক নাম, কাকে রেখে কার নাম বলি। এসব লেখকের ছড়া সম্পর্কে বুঝিয়ে বলার কিছু নেই। সবাই অবগত যাঁরা ছড়া পড়েন।
কোন ছন্দে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?
স্বরবৃত্তে অর্থাৎ ছড়ার ছন্দেই। তারপরও মাত্রাবৃত্তে কিছু কিছু ছড়া লিখে স্বস্তি পেয়েছি- বিশেষ করে ৬ মাত্রায়। ৪ মাত্রার চেয়ে ৬ মাত্রায় কষ্টের কথা বেশি ফুটিয়ে তোলা যায় বলে মনে করি। যেমন- কেবল চেঁচানো কথায় পেঁচানো/ ছেঁচানো হামানদিস্তায়- / কেউ তো বোঝে না কেন পানি কম/ সুরমা তিতাস তিস্তায়।
কিন্তু চার মাত্রার মাত্রাবৃত্তেও মনের কথা অনেক বলা যায়। এছাড়া, ছয় মাত্রার মাত্রাবৃত্তে অনেকটা ধীর লয়ে হয়ে যায় না? সেক্ষেত্রে সাধারণ পাঠক কি পদ্য আর ছড়াকে এক করে ফেলে না?
না, আমি তা মনে করি না। ছড়া লেখার ভেতরে যদি গতি থাকে, সেই গতি পাঠককে টানবে। মাত্রা ৪-৬ যা-ই হোক না কেন। ছড়া আর পদ্যের ভাষা আলাদা। ছন্দে নিরূপণ করা যাবে না। অনেক সময় পদ্যের আদলে ছড়া হয়, আবার ছড়ার আদলে পদ্য হয়।
ছড়ায়ও কবিতার মতো মধ্যখণ্ডন ও পর্বসন্ধির প্রয়োগ করেন ছড়াকাররা। আপনি বিষয়টিকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
এটা মন্দ নয়, তবে সব ক্ষেত্রে করা ঠিক নয়। মধ্যখণ্ডন আমিও মাঝে-মাঝে করেছি। অনেক সময় পাঠককে বুঝানোর জন্যে ছন্দে ভাঙচুরও করে থাকি। প্রতি পঙ্ক্তিতে পর্ব-মাত্রাসংখ্যা সমান না-ও থাকতে পারে।
চিন্তাসূত্রতে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ। চিন্তাসূত্রের জন্য শুভকামনা।