জলঘড়ি
জলঘড়ি নেমে গেছে সৈকতে
পায়ে পায়ে ন্যুব্জ স্থলের জলীয়মান—
বীজ থেকে ছায়াবৃক্ষ উড়ে যাচ্ছে
বিলীয়মান পৃথিবীর পথে।
ঋতুকাল শেষে অনাবিল পাখি সমুদয়
বংশের ঝাড় মেলে দিয়ে ডানার পশমে,
মুক সৌন্দর্যে ভরে প্রান্তকে ডেকে নেয়
নিঃশ্বাসের জড়তায়।
আরও কোমলতা এনে দিও
মলিন চোখের আশ্রয়ে—
বিশ্বাস যেখানে দীর্ঘজীবী হয়,
অন্যূন আক্ষেপে ঝিনুকের সঞ্চয়
প্রবল ভবিষ্যত!
খনন
বাঁশপাতায় চিরুনি এঁকে যায় সকাল।
মাড়ের ধুঁয়োয় ভাতের গন্ধ লেগে থাকে,
মায়ের মুখ সেখানে জলছাপে চেনা—
পাপড়ির কোলে হয়ত কোথাও চিকচিক দুঃখসকল।
নেশার হাওড়ে কথা কয়
যারা পরবাসী মেঘ;
তাদের পরিচিত গতরের বাতাস—
আবছায়ায় ভেসে যায় প্রেতের হাহাকার
নির্বাকের বুনিয়াদে।
জলের কানে গান শোনানো হলে
চাঁদের চোখেও ঘুম নেমে আসে।
আসর জমানো জোনাকিরা শীতল—
ভৌতিক রাত
শিস কেটে যায় ভোরের জল্পনায়।
এইসব ক্লান্তি আর কোদালের খনন
জমিনের গায়ে আদর করা রাতের ছবি হয়ে থাকে।
দীর্ঘশ্বাস
এখানে জীবন অন্য নামে পরিচিত
খুশবু নেই সোহাগী নদীর স্রোত
বসন্তে আলগা রোদের আঁচ কেবল
মড়কের গান শোনায় শষ্য সকল।
রূপকথারা তাঁবু এঁটে বসে এখানে
প্রতি সন্ধ্যায় তেলের কুপিতে,
দরদের বুকে খা খা রোদ নামে—
ঘাম কথা কয়, তৃষাতুর কাকের স্বরে।
এইখানে
জীবন আরোপিত বড়,
প্রেম তার ভাসমান দীর্ঘশ্বাস
পাড়ভাঙা শব্দের মতো।
দৃশ্য
দৃশ্যের ভেতরে দৃশ্যের ক্রমশ পাকিয়ে যাওয়া ক্ষোভ
প্রায়োগিক আহার সেরে আয়োজন করছে
দুপুর ঘুমের।
বাইরে কি মেঘ জমছে অনেক?
অথচ রোদের বাড়তি আনাগোনা বেড়েছে
প্রচুর—
উঠোনে মাকড়ের বসতি।
ক্লেদের ঘানি জমে উঠতে উঠতে অপাঙ্ক্তেয় হয়ে যায় কেবল ছায়ার সুখ।
তৃপ্তির স্বাদ ভুলে অনাহুত কোন সূত্রমালা
গোছাতে থাকি পুনঃপুনঃ।
দেখা
আয়নায় মুখ দেখি না, ক্যামেরায় দেখি
সুন্দর মুখের ক্যামোফ্লাজ।
ঝোপের আড়ালে লুকোনো জোড়াচোখের
খাবি খাওয়া কামনা দেখি—
আলো আর আগুনের পার্থক্য দেখি।
উৎপত্তি আর উৎপাতের নিয়ামক দেখি।
এ শুধুই দেখে যাওয়া;
দৃশ্যের বাইরে থেকে পরিচিত জগতকে
দেখার মানে কেবল ঈশ্বর রাখেন না!