সবুজ সারেং
সায়াহ্নে উঠোনে ভাসে ফেরারি মেঘের ছায়া—বাউলবনের ঘ্রাণে সহসা ডাহুক ডাকে; আমার শিথানে চরে সারস কালিম ঘুঘু বনগুইসাপ; তোমার প্রণয় যাচে চাঁদ সোনাদিয়া দূরগামী ঢেউ।
দুহাতের দশটি আঙুল রেখেছি নদীর গায়ে—হৃদয়ে মেখেছি নুন পান চুনের পরশ, রোদের সোহাগে গলে এ কোন সোয়ারি-নাইয়রি-নাকফুল!
রোদকে বলেছি শোনো—এবার মাটির বুকে ভালোবাসা দাও, সাগরের সব জল ভালোবেসে ওকে রাতদিন ছোটে ঠিক তীরের মায়ায়, নদী ও রোদের সাথে মিতালি পেতেছি—এবার ফাগুনে বুঝি নাচবে দোয়েল।
হৃদয়ের দুই তীরে আকাশ ও আখা মায়াবী রোদের বাড়ি খুঁজে ফিরে ওড়ে, জলের বাহানা বুঝে মেঘের মিছিল গোনে জাল ও পালের প্রাণ সবুজ সারেং।
বাঁধন
দাঁতে ঠোঁট চেপে ধরে সুতোগুলো কাটো,
উনুনে নাটাই রেখে জ্বালাও আগুন—
সব শেষ,
কিছু আর নাই বাকি—নাই অবশেষ;
দরজা জানালা বাঁধো—
ছাদকে আকাশ ভেবে ঘর বাঁধো রোজ,
বাঁধো খোলাচুল;
দুই চোখ বেঁধে ফের
নিজেরে তাকাও—দ্বিখণ্ডিত হৃদপিণ্ড
কাঁদে হুলুস্থূল।
ছায়াচক্রে
পরাভূত ছায়াচক্রে ঘুরপাক খায়
বুবুর কানের দুল
শতায়ু কাছিম
সবুজ কমলালেবু;
প্রলম্বিত ক্রূর ছায়া পোড়ায় সুরের নদী, সহজিয়া নারী, আলোর ভোমর।
এইখানে জল আছে জোছনার যাদু আছে বারো মাস শিস দেয় ভোরের দোয়েল,
মুক্তিকামী ধানপাতা ডানা মেলে ওড়ে, রোদের আরশি দেখে জলের উনুন।
মাটি আর মুরুলির চারপাশে তবু আনাগোনা করে ঈশ্বরের শব—ঘনঘোরছায়া;
আদিম ছায়ারা ফের হাজার কিসিম—
চাপাতির ছায়াতলে টুকরো টুকরো ভোর,
চায়নাকুড়োল ছায়া সবুজ টিয়ের ডানা,
কাটা রাইফেল ছায়া ঠিক গোরের আঁধার।
এই সব ছায়াচক্রে শীত ঘুমে কাঁপে রোদের বাতাশা চাঁদ—পেয়ারা, বাতাবি লেবু,
শীতার্ত মালেক মাঝি।
অযুত রাতের পরে প্রভাতের ঘায়ে একদিন খুলে যায় আগুনগিরির মুখ—
আলোকডানায় ডিগবাজি খেলে মাটির ময়না পাখি।