এ রোদ পলকা আলো, ছেনাল-প্রবণ
এই রোদ মচমচে নয়
অথচ কী ঝাঁ চকচকে!
হাওয়ার চাদরে ঢাকা সে এক শীতল প্রতারক!
মেরুর বিন্দু ছুঁয়ে বরফের দানামাখা
সফেদ ফরাস—যেন আপাদ ভদ্রালোক, তবে ভদ্রলোক নয় জেনো;
আড়মোড়া ভেঙে ছাড়ে; পথে যে নামায়!
পথে পথে রোদের বাহার, চূর্ণ তুষারের ত্রসরেণুরেখা
এত রোদ! ওম নেই, কী বিষণ্ন একা!
এ রোদ পলকা আলো, ছেনাল-প্রবণ!
মানুষের ত্বকে ডুবে উষ্ণতা খায়।
এ রোদ নপুংসক,তবু—
দিব্যি হাসে, যেন রাজার জামাই!
ভুল করে রোদের ছলে পড়ো না যেন!
এশীয় চামড়ায় এসে সাদা রোদ
বরফের ফোস্কা এঁকে দেবে!
এ বড় বিদেশবিভুঁই! মেরুর ছলনায় তুমি
পথ হারাবে।
হতঃশ্বাস
কিছু মানুষ জন্মাবার বহু আগেই দুঃখের দীর্ঘশ্বাস বুকে তুলে নেয়
তোমাকে আমি তাই কোনো দীর্ঘশ্বাস দিতে পারিনি!
কতোবার ভেবেছি নক্ষত্রের অঙ্গুরি এনে
তোমাকে পরাই
তুমি কর্তিত আঙুলের গল্পে আয়োজন ভারি করে তুলেছ।
তোমার জন্যে কত প্রত্যুষের রোদ্দুর কুড়িয়ে আমি সোনালি ফরাস বুনেছিলাম;
অন্ধকারের ছায়া হয়ে তুমি রাত্রির বুকে মিশে গেলে!
জীবন একবারই যায়—যে যেমন সাজায়!
তুমি তার প্রবল ব্ল্যাকহোল—
নিজের অন্তর্গতে অন্ধকারের প্রচ্ছায়া হয়ে রও।
তোমার নির্বাসনা বাষ্পে আমার চোখ ভিজে যায়
তুমি কী মানুষ ছিলে, না কি ছিলে কেবলই হতঃশ্বাস?
কবরফুলের মতো সন্ধ্যা নেমে এলে
ধোঁয়াশা জমে ওঠে, কুয়াশার ছানি ঢাকে চোখ।
অলোখঝরা
ছুঁতে গেলে মনে হয় কী দূরত্ব তোমার!
বুকের ভেতর কাঁদে একা ইহকাল
কুড়িয়ে পাওয়া নদী কোথায় যে হারায়
ব্রহ্মাণ্ড হাই তুলে কেবলই ঘুমায়!
নক্ষত্র নদীর মতো কেন ভেসে যায়!
আঙুলে তৃ্ষ্ণা ছিল পারিনি ছুঁতে
গোপন আংটি কেবল মসলিন লুকায়
স্বর্গগঙ্গা দেখার ছলে রাত্রি বুনে যাই
হয়তো প্রেম নয় দেহ কলস উছলায়।
যে মেঘ ঝরার আগে দিয়েছে শূন্যতা
ভেতরে ভাঙেনি ভাঁজ আড়মোড়া কাম
দূর কোন্ দিগন্তের রঙশালা হতে
রঙ নিয়ে সূর্য যায় মুছে তার নাম।
প্রেমের মতো ঘ্রাণ নাকে এসে লাগে
নিদ্রাকুসুম মেখে কে কোথায় জাগে!
উদ্ভাসন
বরফখচিত গাছের মতো নিরাজন হয়ে ছিলাম।
জানি—যুদ্ধ যত না বাইরের তারও বেশি অন্তর্গতে
মানুষের শব্দশর বিঁধে নিজকে ভেঙে নেবো
এমন কখনও হবে না।
সময়ের লেগে থাকা ক্ষতে,প্রলেপে-প্রতাপে
কত যে বাহানা!
তবু যাকে নির্মাণে নিয়ত নিবেদিত এতগুলো বছরে—সে আমি অক্ষয় জেনো।
তবে মানুষের বিষমাখা তীর কাঁকড়াশব্দ
আঁকশির মতো বিঁধে গেলে
আমিও নিরাজন হই—
শান দিয়ে তুলি তাকে, সে তো নয়
রিপ ভ্যান উইংকেলের রাইফেল—
যে ঘুমিয়েই থাকবে!
নিজের মনোলগে অচূর্ণিত চিতা হয়ে নিজেকে পোড়াই।