তোমারও বয়স হচ্ছে
বয়স হচ্ছে! তোমাকে লিখতে গিয়ে হাতটা কেঁপে যাচ্ছে
স্মৃতিটাও ঘোলাটে; বৃষ্টি দিনের আকাশের মতো।
বয়স হচ্ছে! তোমার মুখচ্ছবি মনে করতে গিয়ে
কুয়াশায় ঢেকে যায়।
ঠিকানাটাও এতদিনে ভুলে গেছি
হলুদ খাম, জারুল গাছ, কলেজ ক্যাম্পাসের সবুজ মাঠ
বিকেলে বলা গল্পগুলো ভুলে যাাচ্ছি।
কতগুলো সময় যোগ-বিয়োগের ধাঁধায় হারিয়ে যায়—
শূন্য বাসস্ট্যান্ড, শ্যাওলা জড়ানো ঘাট
আজকাল বেশ সাবধানে পা ফেলতে হয়
বয়স হচ্ছে—তোমারও!
দ্রোহের আগুনে পোড়ে প্রেম
স্মৃতিগুলো দ্রুত অতীতের পথে হেঁটে যাচ্ছে
যেভাবে ভেসে যায় মেঘ
গ্রীবা ভেঙে ভেসে আসে শ্বাপদের ছায়া
পেছনে শূন্য উঠান, স্ফুলিঙ্গ, মায়া।
হায় স্রোত! কতকাল আগে কচুরিপানা ঠেলে
মিলেছিলে প্রেমিকের পায়
বুকের রক্তে দিয়েছিলে যজ্ঞের আহুতি!
শূন্য ধমনীতে আজ আসা যাওয়ার মিছিল
দ্রোহের আগুনে পোড়া অত্যুচ্চ প্রলাপে
কোলাহলভরা সন্ধ্যা মেলায় বৃষলীপাড়ায়!
প্রণয়কাল
তোমরা যে শরতের মেঘ দেখ
উড়ে যায় ডানা মেলে; শঙ্খচিলের মতো
নদীর বুক ছুঁয়েÑ
নিস্তরণে খেলে যায় ঢেউ
আমি দেখি প্রেমিকের দ্বিখণ্ডিত কষ্ট।
পদ্মার বুক চুইয়ে পরে থাকে শিশিরের ফোঁটা—
সাদা কাশফুলেও মিশে থাকে মৃত্যুর বিছানো চাদর
এখানেই প্রথম প্রণয়ের সাধ ছিল আমাদের
যেখানে আজ অচেনা উড়ো পাখির সংসার
নিশ্চুপ প্রহেলিকায় ব্যস্ত সময়।
যৌবন ও সঞ্চিত পাপ
বয়ে চলা নদী দেখে ভেবেছি
আমার যৌবন; এভাবেই একদিন ছুটেছিল দুর্বার গতিতে
স্রোতের সাথে ছুটেছিলাম আমি।
গাঢ় অন্ধকারের কোনো গলিতে দাঁড়িয়ে
যখন নিলামে তুলেছি কৌমার্য
দীর্ঘদিনের অভ্যাসে পুষ্পারোহীরত সৌরভ থেকে
তখন বাতাসে গন্ধ নিতেই ভুলে গেছি, যেখানে ডাস্টবিন সয়ে গেছে
বছরের পর বছর। আমার মুঠোয় রাখা ছিল প্রেমিকার দেওয়া
অসহ্য যন্ত্রণার উপহার, সেসব উপেক্ষা করেÑ
আমার পকেটে ভরে উঠেছে ধাতব মুদ্রায়
গুনে দেখি বহুমূল্যে সাজানো এতদিনের পাপ।
অবশেষে উদ্ধত জোয়ারের জলে শরীর ভাসিয়ে
ভেবেছি নির্লিপ্ত এক সাধু হব।
ঈশ্বরের খোঁজে
এত কাছাকাছি আসা হয়নি কোনোদিন আগে
মনে হয় বুকের ভেতর
সাতরঙা ঈশ্বর দোল খায়
মানুষ কি সত্যিই বদলায়?
অতটা কঠিন হওয়ার ক্ষমতা মানুষের হয়?
কে এক প্রেম নিয়ে বসে আছে বুকের ভেতর
প্রার্থনায় নত হয়; সে কি তবে ঈশ্বর?
যে গাছ জন্মায় পাখিদের ঠোঁটে চড়ে
কে রাখে সেই পাখির খোঁজ?
পেছনে আকাশ রেখে উড়ে যায় বহুদূর
ভেতরে কর্পূর সন্ধ্যা নামে; সে কি তবে ঈশ্বর?