সৌভাগ্যের ট্রেন
সাহসের কথা শুনে দু’হাতে আঁধার ভেঙে সূর্যমাখা এনেছি সকাল
পাখিডাকা এই ভোর তোমার অপেক্ষা করে ঘুমিয়েছে প্রিয় তিতুমীর
তারাদের বাড়িঘর বিশ্রাম পালঙ্ক জুড়ে শুয়ে আছে মেঘের শরীর
সহস্র আলোক বর্ষ অযুতাংশ সময়ের বয়ে চলা এ পৃথিবী মহিষের পাল
আমিও আদিম বটে সভ্যতার সূর্য ছুঁয়ে দেখেছি যে সমুদ্র অতল
গ্রহদের নানাবাড়ি নক্ষত্র শ্বশুরালয়ে কতবার হয়েছি অতিথি
পৃথিবী আমার বোন ওরা তাই ভালো চেনে উপকারী যত পঞ্চবিথি
গন্তব্যে পৌঁছাতে হলে আরো আরো প্রয়োজন বায়ুভর্তি আয়ুর বতল
শিল্পীর চোখের কোণে এখনো আসেনি রাত আসেনি এ দীর্ঘ ছায়াপথ
মিল্কিওয়ে তিমিপিঠে চকচকে কারুকাজে পরিমিত রূপালি বালিশ
ব্লাকহোল থিওরির সূত্রগুলে তৈরি হয় বৈজ্ঞানিক আজব মালিশ
ভোরের আযানে রোজ ঘুম ভাঙে; আহ্বানে বেড়ে ওঠে নতুন শপথ
তারকা তারকা চোখে বেলা শেষে খেলা করে জাগতিক সুখের হরিণ
মহামায়া অবনত অশ্রুসিক্ত গোধূলির জলযানে ভাসে অরিয়ন
চাঁদ হয় বরযাত্রী বাতাসেরা বিউগলে সুর তুলে তৈরি করে শুদ্ধ উচ্চারণ
আমার ফিনিক্স মন মঙ্গল জমিন জুড়ে সার্চ করে ফিরে আয়োডিন
সাহস ও সুন্দরেরা মিলে মিশে আজকাল এক হয়ে উঠছে নিলামে
ফেরারি সত্যের মতো দুর্বিনীত এ দুর্যোগে চাপাপড়ে আছে অর্থনীতি
অসহায় চোখগুলো যদিও আগামী মাপে ভুলে ভরা তবুও সম্প্রীতি
আমাদের প্রার্থনায় ব-দ্বীপ স্টেশনে সৌভাগ্যের ট্রেন এসে থামে
জননী আমার
জননী আমার তুমি এর চেয়ে বড় সত্য আর কিছু নয়
তুমিতো মৃত্তিকা মাগো যে বলয়ে গড়ে ওঠা আমার শরীর
হাজার অতীত স্মৃতি কষ্ট জড়ো কাঁটাশূল বেদনার তীর
তুমি সত্য তুমি আলো আকাশ উদার যার নেই পরাজয়
নিজ হাতে অগ্নি জ্বেলে সে অনলে আজ আমি করি বসবাস
আগামী জানি না বলে ভুলকে সঠিক ভেবে পড়ে যাই পিছে
শুনেছি লোকের মুখে বেহেশত জননীর দু’পায়ের নিচে
মায়ের এ আশির্বাদে হয়তোবা হতে পারি আমি ইতিহাস
জননী আমার তুমি যার কাছে এই দেশ মানচিত্র ঋণী
একটি বুলেট শুধু মৃদু শব্দে খুলে ফেলে যে নাকের ফুল
তুমিতো সঠিক মাগো বাদ বাকী পৃথিবীর সব স্মৃতি ভুল
অমূল্য সম্পদ এক যা হয় না কোনোদিনো হাটে বিকিকিনি
শূন্যতায় পুড়ে পুড়ে এই মন তাই আজ হয়েছে পাথর
তোমারি পবিত্র মনে আমারি পতাকা যেন সুগন্ধি আতর
তোমার আকাশ
(উৎসর্গ : কবি আবদুল মান্নান সৈয়দ)
দেখা হতো তাঁর সাথে মাঝে মাঝে কবিতার পথ ও প্রান্তরে
কখনো আলোকদিন কখনো সন্ধ্যার মতো রাত পাহারায়
কেমন আছি, কেমন আছেন এতোটুকু বিনিময়ে পথ হেঁটে যায়
অবাধ্য সময়ে তিনি আমাদের না জানিয়ে অন্য গ্রহান্তরে
শ্রাবণ উড়াল মাখা কাশফুল এই দিনে কাফন সময়
আমরা আহত হই ব্যথিত ফুলের মতো তুমি শূন্যতায়
কবিতার এই পথে আমরাও বেড়ে উঠি তোমার ছায়ায়
অসুন্দর মৃত্যুর কাছে মানে না তো কোন কবি তাই পরাজয়
অসংখ্য নক্ষত্র ভাসা বায়বীয় এ আকাশে তুমি ধ্রুবতারা
তোমার হাতের ফাঁকে ঝরে পড়ে রাশি রাখি অক্ষরের ফুল
যেমন কৈশোরে দেখা মোহনীয় সুবাসিতো আমের মুকুল
অনন্ত নক্ষত্রে তুমি আশা রাখি পেয়ে যাবে মেঘের পাহারা
শিশির আগামী দিনে শিথানের পাশে রাখা জীবনানন্দ দাশ
বামপাশে নজরুল পড়ে আছে ঠিক যেন সদ্য পড়া শেষ
তরুণ কবিটি অব্ধি আরো আরো কতো কিছু বিশেষ বিশেষ
সাদা সাদা মেঘবাড়ি শূন্য করে হেসে ওঠে তোমার আকাশ
বরফ চোখের খোঁপ
নিয়ত দশক আসে নতুনের ফোটে ফুলঝুরি
তিরিশে জীবনানন্দ চল্লিশের প্রিয় ফররুখ
কবিতা বাতাসে মিশে তৈরী হয় পাখি উড়া সুখ
আনাচে কানাচে নড়ে পদ্যময় প্রস্ফুটিত কুঁড়ি
পঞ্চাশের মাহমুদ ফজল কাদেরী রাহমান
আলোর জোয়ারে ভেসে যারা ছোঁয় কঠিন আগামী
চর্যার নায়কগণ ইতোমধ্যে হয়ে ওঠে দামি
তাদের এ ঘাসপথে যে কবিতা হয় বহমান
মেঘের পাহাড় কেটে যারা আনে বৃষ্টির সকাল
তাদের দর্শন তত্ত্বে পৃথিবীর বিস্তৃত সভ্যতা
ঈশান নৈর্ঋত ভেঙে চূর্ণ করা যত নীরবতা
বরফ চোখের খোঁপে বেঁচে থাকে কবি দীর্ঘকাল
দশকে বিশ্বাসী নই অদশকে থেকে যেতে চাই
ফুলের সুবাস মেখে মহাকালে বাজাবো সানাই
ছায়াবৃত্ত ইতিহাস
সনেট জোয়ারে ভেসে আমি যাবো মৃত কোন কবিতা নগরে
আহত কলম বলে লিখে যাবো ক্রমাগত আগামীর গীত
মৃত কোন জনপদে হয়তো বা শোনা যাবে আমার সংগীত
হয়তো বিশেষ দিনে আমার সমাধি রবে গোলাপ টগরে
বোমারু বিমানগুলো সেকালে কি এরকম ছড়াবে বারুদ
নাকি হবে পৃথিবীটা রসায়ন যৌগে গড়া স্বপ্ন ভস্ম ছাই
মানুষে রোবটে বিয়ে! এমন তো হতে পারে; স্বাগত জানাই
সৃষ্টির নিগূঢ় তত্ত্ব ছায়াবৃত্ত ইতিহাস জানেন মাবুদ
অতীতের সিঁড়ি ভেঙে খুব দ্রুত হেটে যায় সময় জাহাজ
জাহাজ ভেতরে আমি একা একা বসে বসে দিন রাত ভাবি
শুরু কিংবা শেষ কবে কোথায় রক্ষিত আছে আগামীর চাবি
মানুষের অসাধ্যতা ভুলিয়ে দিয়েছে আজ বিজ্ঞানের সাজ
আশা জাগানিয়া স্রোতে অতঃপর আগন্তুক ত্রিকাল প্রহর
কবিতার ক্ষেতজুড়ে সোনাফলা শব্দমালা বইছে নহর