মনে হলো এইমাত্র সূর্য ডুবে গেছে। পশ্চিম আকাশে লাল আভা এখনো কিছুটা আছে। অথচ ঘরের মধ্যে অন্ধকার প্রবেশ করতে শুরু করেছে। বারান্দায় পিড়ি পেতে বসে আলো জ্বালাতে ব্যস্ত রেহানা। দিয়াশলায়ের কাঠি জ্বলে উঠল। সন্ধ্যাবাতিটা একবার জ্বলেই নিভে গেল আবার। পুরনো কাপড় দিয়ে সলতেটা মুছে আবার আগুন জ্বালালো রেহানা। চমকে ওঠার মতো, আগুন যেন দ্রুত জ্বলে উঠল, অল্প কিছুক্ষণ পরেই ধীরে-ধীরে নিভে যেতে থাকল কুপিবাতি। এবার অবশ্য কিছুটা সময় নিল। এই এত সময় রেহানার একবারও মনে হয়নি, কুপিবাতিতে তেল আছে কি না, দেখি তো একবার! এবার একবার বাতিটা ঝাঁকিয়ে দেখল। এরপর সলতেসহ বাতির মুখাটা খুলে আরও একটু জোরে ঝাঁকাতে লাগল কিন্তু তেলের কোনো সাড়াশব্দ পেল না। সব সময়ই বারান্দার খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখে কেরোসিনের বোতল। এবার উঠে দাঁড়ায় রেহানা। উঠে দাঁড়াতেই মাজার মধ্যে কেমন যেন টনটন করে ব্যথা করে ওঠে। এ আর এমন কি! ইদানিং হাতে ব্যথা, পায়ে ব্যথা, মাজায় ব্যথা—সব সময় লেগেই আছে। দুতিন বার বেদেনীর কাছে সিঙ্গা লাগিয়েও কোনো কাজ হয়নি। অথচ তিনবারে ছয় সের চাউল গেছে তার। তবে এ কথা মাজেদ আলি জানতে পারেনি কোনোদিন। আর সে জানবেই বা কী করে। সে সব সময় থাকে তার ধান্দা নিয়ে। ঘরে থাকলে তো এসব বিষয় দেখবে, মাথা ঘামাবে! হাটে-হাটে গরুর দালালি করে মাজেদ আলি। সপ্তাহে মাত্র দুদিন বাড়িতে থাকে। কিন্তু এই দুদিনও তাকে পাওয়ার উপায় থাকে না। দরবেশপুর তিন রাস্তার মোড়ে নতুন কিছু দোকান বসেছে। সেখানে রাতদিন ভিসিআরে হিন্দি ছবি চলে। সেখানেই বসে বসে চা আর বিড়ি ফুঁকে মাজেদ আলি আর একভাবে টেলিভিশনের দিকে তাকিয়ে থাকে। কখনো মনে মনে বলতে থাকে, টিভির মধ্যে মানুষ গুলান কি সুন্দর, দেখতে কত নাদুস-নুদুস! কত কত সুন্দর করে কথা বলে তারা। এখন মনে হয় বিড়ির নেশার চেয়ে বড় নেশা এই হিন্দি সিনেমা দেখা, সিনেমার মানুষ গুলান শরীরের অর্ধেক বের করে রাখে সব সময়। পেট নাভী বুকের ওপরের অংশ যেন দেখতেই ইচ্ছে করে তার। আর যখন দল বেঁধে নাচতে আরম্ভ করে তখন তো মনে হয় এই দুনিয়াতেই নেই মাজেদ আলি। বেশ অনেকদিন আগে মাজেদ একবার মসজিদের হুজুরের কাছে শুনেছিল, স্বর্গে নাকি এমনই হাজারে হাজারে হুরপরী আছে। তারা দেখতে এত সুন্দর যে, পৃথিবীর কোনো নারীই তাদের সমকক্ষ নয়। তারা সব সময় এভাবে নেচে-গেয়ে ছেলেদের মনরঞ্জন করে বেড়াবে। একজন পুরুষের জন্য সত্তর জন হুর থাকবে নিয়োজিত। এসব কথা খুব বেশিক্ষণ ভাবতে পারে না মাজেদ। মনের মধ্যে কেমন যেন করে ওঠে। অতসব রেখে বাড়িতে কী আর এমনি এমনি মন টিকে! তার ওপর রেহানার মুখে মেছতার দাগ। আর শরীরে অসুখ লেগেই থাকে। রাতদিন বাতের ব্যথায় কাতরায়। কোনো কোনোদিন মাজা নিয়ে উঠতেই পারে না। এই গরমের দিনে রেহানার সমস্ত শরীরে ঘামের গন্ধে তার কিছুতেই ঘুম আসে না। মাজেদ বাজার থেকে আতর এনে রেখেছে। ঘর থেকে বাহির হলেই শরীরে আতর লাগায়। রেহানা আবার আতরের গন্ধ একেবারে সহ্য করতে পারে না। তার নাকি বমি বমি লাগে।
এই এত সময় মাজেদের কথা ভাবতে ছিল রেহানা। হঠাৎই বুকের ভেতর কেমন যেন করে ওঠে। ইদানিং এই চিনচিন ব্যথাটা তাকে বড় বেশি অস্থির করে তুলছে। মাঝে মাঝে মনে হয় তার সব কিছুই শেষ হয়ে আসছে! তবে কি সে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। ইদানিং মৃত্যু চিন্তা তাকে কুরে-কুরে খায়। হৃদয় তোলপাড় করে। বড় কিছু হলেও তো মানুষটা কোনোদিন ডাক্তার পর্যন্ত দেখাবে না। রেহানা মরলেই সে যেন বেঁচে যায়। নতুন আরও একটা বউ ঘরে আনতে পারে। তাকে দিয়ে নাকি আর পোষায় না। এখন আর রাতের বেলায় একসঙ্গে এক বিছানায় থাকতেও চায় না মাজেদ। ঘরে একটি মাত্র চৌকি। মাটির মেঝে। সেখানে রাত হলে তেলাপোকা ঘুরঘুর করে বেড়ায়। সেই মেঝেতেই একমাত্র
সন্তান মুরাদকে নিয়ে ঘুমায় রেহানা। দুই একরাতে রেহানার চোখে ঘুম আসে না। সারারাত জেগে থাকে। মাজেদ নাক ডেকে ঘুমায়। কোনো কোনো রাতে মাজেদের কাছে গিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা যে করেনি তা কিন্তু নয়। রেহানার শরীরের স্পর্শ পেলেই জেগে ওঠে মাজেদ। কিছু সময় বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে। তারপর খিস্তি-খিউড় করতে থাকে।
এই মাগি, তোক চৌকির উপুর আসতি কইছে কিডা? যা এখান থেকি কোচ্ছি।
আপনে আমার সাতে এমবা করেন ক্যা। মনে হয় আমি মানুষ লা! এই সুংসারের জন্যি আমি কি না করি? তারপরও আপনে….
কথা রাইখি গেলু কচ্ছি, না হলি আমি কিন্তুক ঘর থেইকি বার হইয়ি যাব নে?
কিছু সময় স্থির থেকে। এবার রেহানা বলতে থাকে।
আপনেক আর যাতি হবিলা। আমিই যাচ্ছি…আপনে শান্তি কইরি ঘুমান।
রেহানা কেরোসিনের বোতল হাতে নিয়ে দেখে, যত সামান্য একটু তেল বোতলের নিচে পড়ে আছে। এই তেলে সন্ধ্যাটাও পারি দিতে পারবে না। মানুষটা কখন আসে কে জানে। ঘরে বাতি না দেখলে আবার চিল্লাপাল্লা শুরু করে দেবে। কেরোসিন টুকু কুপিবাতিতে ঢেলে সোলতেটা ঠিক করে লাগায়। দিয়াশলায়ের কাঠিও বেশি খরচ করা যাবে না। একটা কাঠিতে আগুন জ্বালাতে হবে তাকে। কিন্তু এককাঠিতে আগুন জ্বালাতে পারে না রেহানা। তিন তিনটি দিয়াশলায়ের কাঠি খরচ হয়ে যায়। সে কারণে মন খারাপ হয় তার। ছেলেটাও আজ দু’দিন বাড়িতে নেই। নানীর বাড়িতে গেছে আম খেতে। সে কারণেও মন খারাপ হতে পারে। তবে তার এই মন খারাপ খুব একটা বেশি সময় থাকবে না। বড় জোড় এক ঘণ্টা। তারপর আবার অন্য কাজে নিমগ্ন হলেই আর মন ভালো হয়ে যাবে। কখন মন খারাপ হয়েছিল তার! কেন মন খারাপ হয়েছিল । সব হারিয়ে যাবে মন থেকে। রেহানার ঘরের সামনে এক চিলতে উঠোন। উঠোন পেরুলেই রান্না ঘর। আর ঘরের পেছনে আম-জাম-তেঁতুল মিলে গোটা পাঁচেক বৃক্ষ দাঁড়িয়ে আছে আকাশমুখী হয়ে। এখনো ঘরে ফেরার সময় হয়নি মাজেদের। তার আঁচলে তখনো ডিম বিক্রির আঠারো টাকা। এবার স্থির হয়ে কিছু সময় ভেবে নেয় রেহানা। মোল্লার দোকান থেকে একপোয়া কেরোসিন আনবে কি না! মানুষটার আশায় থাকলে এ সংসার কবেই শেষ হয়ে যেত। দরোজা ভিড়িয়ে দিয়ে শিকলটা লাগাতেই মাজেদ সামনে এসে দাঁড়ায়। তার হাতে ব্যাগ ভর্তি বাজার।
তা গ্যাদার মা এখন আবার কোনে যাচ্ছুলু?
যাব আর কোনে, ঘরে একফোঁটা কেরোসিন নাই। তাই মোল্লার দোকানের দিকে যাচ্ছিলিম আবার।
তাই ক, আমি ভাবলিম কিনা কি? তালি দে আমিই আনতিছি কেরোসিন। তোক আর এই সন্ধ্যা বেলায় যাতি হবিলা।
রেহানা একভাবে তাকিয়ে থাকে। এই মানুষটা কি মাজেদ! না অন্য কোনো মানুষ।
মাজেদের বাড়ি থেকে মোল্লার দোকান খুব বেশি একটা দূরে না হলেও এখন এই আগাম বর্ষায় রাস্তায় পাক-কাদায় ভর্তি। সে কারণে দোকানে যেতে কিছু সময় লাগতে পারে। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও মাজেদ ফিরে আসে না। কুপিবাতিটা সেই কখন নিভে গেছে। রেহানার চোখে রাজ্যের ঘুম। শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিতেই কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে কিছুই মনে নেই। যখন ঘুম ভাঙে তখন রাত্রী গভীর। হঠাৎ করেই মাজেদের কথা মনে পড়ে। মানুষটা সেই যে তেল আনতে গেল। কুপিবাতিটা লাগাবে সে উপায় নেই। উঠে বসে রেহানা। চৌকি থেকে নিচে নামে। ঘরের মেঝেতে পাড়া বিছানয় মনে হয়, কে যেন ঘুমিয়ে আছে। হঠাৎ চমকে উঠে রেহানা। একটু এগিয়ে যেতেই, রেহানার পায়ের সাথে শুয়ে থাকা মানুষটার ছোঁয়া লাগে। দু-জনই একসাথে চমকে উঠে তখন।
কে?
কে?
কিছু সময় পর, রেহানা বুঝতে পারে মাজেদ মেঝেতে শুয়ে আছে। মাজেদ সিতান থেকে ম্যাচ লাইট নিয়ে আলো জ্বালায়। রেহানা কুপিবাতি নিয়ে আসে। বাতিতে তেল ওঠায়। মাজেদের হাত থেকে ম্যাচ লাইট নিয়ে বাতি জ্বালায়। অল্প সময়ের মধ্যে সমস্তঘর আলোময় হয়ে যায়। মাজেদ একটা মোচড় দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। আবার চৌকির ওপর গিয়ে বসে। রেহানাকে উদ্দেশ করে বলতে থাকে।
মোল্লার দোকানে যাইয়ি সে আরেক কাণ্ড। মোল্লা বাড়িত নাই। অনেক সুময় ধইরি ডাকাডাকি করার পর, মোল্লার বউ উইটি আসলি। আসার পর সেই যে গল্প জুইরি দিলি। আমাক তো আসতিই দিতি চায় না।
হঠাৎ করে জিহ্বায় কাঁমড় দেয় মাজেদ। এসব কী বলছে সে। রেহানা কোনো মেয়ে মানুষকে সহ্য করতে পারে না। আগের কথাগুলো ধামাচাপা দেওয়ার জন্য নতুন করে আবার কথা বানাতে থাকে। এই এত সময় একভাবে রেহানা তাকিয়ে আছে মাজেদের মুখের দিকে। বড় অচেনা লাগছে আজ মানুষটাকে। নিজের শরীরে নিজে চিমটি দিয়ে দেখে, সে কোনো স্বপ্ন দেখছে কি না?
আপনে কী কোচ্ছেন! আমি তো কিছুই বুজতি পারতিছিনি।
নারে বউ, এতুন এক স্বপ্ন দেখতি ছিলিম। সে কতাই তোক কোচলিছিম আর কি।
দুই.
মোল্লার বউয়ের বয়স একটু বেশি হলেও এখনো দেখতে বেশ সুন্দর। তারপর ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলে সব সময়। এক সময় তো মাজেদ প্রায় প্রেমেই পড়ে গিয়েছিল। সেসব কথা আর মনে করতে চায় না মাজেদ। পুরনো দিনের পুরনো কথা সব ভুলে যেতে চায় এখন। তখনো মাজেদ বিয়ে করেনি। হাল আবাদের কাজ করে। এক নাগারে মোল্লার বাড়িতে কাজ করেছিল প্রায় তিন বছর। সে সময় মোল্লার বউয়ের সে কি আদর! কাছে বসে ভাত খাওয়াতো। গল্প করত। কোনো কোনোদিন গরমে বাতাসও করে দিত। ফুল তোলা তালপাখার বাতাস। তেল নিয়ে বাড়ি ফিরে আসার পর থেকেই মানুষটাকে বেশ মনে পড়ছে আজ।
এখন রাত ঠিক কত আন্দাজ করতে পারে না রেহানা। মাজেদের সামনে খাবারের আয়োজন করে। একসাথে বসে দু’জন ভাত খায়। এত আদর যত্নের কোনো কারণ বুঝতে পারে না রেহানা। অনেকদিন পর দু’জন এক বিছানায় ঘুমায়। রেহানার কাছে সবকিছু যেন স্বপ্ন-স্বপ্ন মনে হয়। মানুষটার এমন আচরণে কেমন যেন সন্দেহ লাগে। আবার না! কোন আকাম করতে যাচ্ছে মাজেদ। প্রতিবারই সে এমনই করে, কোনো আকাম করার আগে খাতির বেড়ে যায় তার, আদর যত্ন বেড়ে যায়। এ সংসারে এমন তো অনেক দিন দেখে আসছে সে। বাদ বাকি রাতটুকু আর কারও চোখে ঘুম আসে না। জেগে-জেগে গল্প-গুজুবে কাটিয়ে দেয়। ফজরের আজান হলে রেহানা বিছানা ছেড়ে ওঠে। কলের পাড়ে গিয়ে গোসল করে। অজু করে নামাজ আদায় করে। তখনো মাজেদ ঘুমিয়ে আছে। ভোরবেলা থেকেই নানা কাজে লেগে যায় রেহানা। গরু ছাগল গোয়াল ঘর থেকে বের করা। বাসি হাড়ি পাতিল পরিষ্কার করা। উঠোন ঝাড়ু দেওয়া থেকে শরু করে এক সঙ্গে অনেক কাজ করতে হয় তাকে। মাজেদের ঘুম থেকে জাগতে জাগতে রেহানার রান্না পর্যন্ত হয়ে যায়।
মাজেদ ঘুম থেকে জেগে গোসল খাওয়া শেষ করে একটা সাদা লুঙ্গি ও সাদা শার্ট পরে বাড়ি থেকে বের হয়। কোথায় যাচ্ছে কী কারণে যাচ্ছে, তেমন কোনো কথাই রেহানাকে বলে না মাজেদ। রেহানাও কিছু জানতে চায় না। তার ওপর অনেকদিন পর একটু ফুরফুরে মেজাজে আছে রেহানা। অনেকদিন পর একটা ভালো রাত্রী গেছে তার। সে কারণে মাজেদের ওপর আর কোনো রাগ অভিমান নেই আজ তার।
তিন.
রাতের বেলাতেই সব কথা পাকাপাকি হয়েছিল। সকাল বেলাতেই বাড়ি থেকে বের হবে মোল্লার বউ বিনা। মোল্লা আজ বেশ ক’দিন তাবলিক জামাতে গেছে। বাড়িতে মোল্লার বউ একা। এক মেয়ে মোল্লার, তাও বিয়ে হয়েছে বছর পাঁচেক আগে। বাড়িঘরে ঠিকমতো তালা দিয়ে ঘর থেকে বের হয় বিনা। রাস্তায় দাঁড়িয়ে এদিক-ওদিক তাকাতে থাকে। আর কেউ দেখলেও কোনো প্রকার সন্দেহ করবে না তাকে। তার ওপর চোখ দু’টি ছাড়া সবই বোরকায় ঢাকা। কোথায় যাবে কেমন করে যাবে সব ঠিকঠাকই ছিল। রাস্তায় এসে এক ভুটভুটি ভাড়া করে। ঘণ্টা খানিক সময়ের মধ্যে আজিমনগর স্টেশনে এসে উপস্থিত হয় বিনা। অনেক আগে থেকেই স্টেশনে বসেছিল মাজেদ। বেলা একটার ট্রেনে তারা রাজশাহীতে যাবে। সেখানে হোটেলে দুই-একরাত থাকবে। স্টেশনের সব মানুষই অচেনা। কেউ যেমন তাদের চেনে না। তারাও তেমনি কাউকে চেনে না। সেদিন ট্রেন ছিলো দু-ঘণ্টা লেট। স্টেশনে ট্রেন আসতে তিনটা বেজে গেল। ট্রেন স্টেশনে এসে দাঁড়ালে লোকজন ছুটাছুটি করতে থাকল। ভিড় আর ঠেলাঠেলি করে ট্রেনে উঠল মাজেদ আর বিনা।
দিন শেষে ক্ষণে ক্ষণে বাড়ির বাহিরে যায় রেহানা। এদিক-ওদিক চেয়ে দেখে মাজেদ আসছে কিনা। দুপুর থেকেই তার মনের ভেতর কেমন যেন করছিল। কোনো কাজ ঠিকমতো করতে পারছিল না। মাজেদকে রেখে খেতে পারছিল না। কেমন যেন অজানা এক শঙ্কা এসে তাকে ভাবিয়ে তুলছিল। বেলা শেষে ঘর থেকে বাহিরে আসে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে। পাশের বাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। এমন সময় পড়াময় খবর ছড়িয়ে পড়ে। মোল্লার বউ বিনা ঘর ছেড়ে পালিয়েছে। কার সঙ্গে পালিয়েছে! কেন পালিয়েছে তার কিছুই জানে না কেউ। রেহানার বুকের ভেতর কেমন যেন করে ওঠে। কিসের অভাব মোল্লার বউয়ের। যার জন্য এই বয়সে এসে নাঙ ধরতি হবে। নাঙের সাথে পালাতি হবে। বুকের ভেতর পুরনো ব্যথাটা আবার জেগে ওঠে রেহানার।