শিশুসাহিত্যের চর্চা চলমান রাখার ক্ষেত্রে একজন লেখকের জন্য অনেক বড় একটি বিষয় তার লেখার নিয়মিত প্রকাশনা। বিভিন্ন দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকার পাশাপাশি দীর্ঘদিন থেকে এব্যাপারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে আসছে বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিন ও শিশুসাহিত্য সাময়িকী। খোঁজ নিলে জানা যাবে, আমাদের দেশে যারা আজ প্রতিষ্ঠিত শিশুসাহিত্যিক তাদের বড় একটা অংশের প্রথম লেখা প্রকাশ হয়েছিল কোনো না কোনো লিটল ম্যাগাজিনে। লিটল ম্যাগাজিন দিয়েই হাতেখড়ি হয়েছে আমাদের অনেকের। পরবর্তীতে অনেক পরে দৈনিকে বা সাপ্তাহিকে তার লেখা ছাপা হয়েছে, একসময় গ্রন্থাকারে প্রকাশ পেয়েছে সব লেখা। অর্থাৎ লেখক সৃষ্টির ব্যাপারে লিটল ম্যাগাজিনের ভূমিকা অপরিসীম।
অনেক লিটল ম্যাগাজিনই পরবর্তীতে নিয়মিত পত্রিকা বা সাময়িকী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কেনো জানি আমার কাছে একটা দৈনিক পত্রিকার শিশুদের পাতার চেয়ে একটা মানসম্পন্ন লিটল ম্যাগাজিন বা সাময়িকী অনেক পছন্দের মনে হয়। দৈনিকের পাতা ঠিক সেইভাবে সংরক্ষণ করা যায় না, যতোটা সহজ একটি পত্রিকা বা লিটল ম্যাগাজিন সংরক্ষণ করা। অলস দুপুরে আমাদের বালিশের পাশে এখনো থাকে কোনো না কোনো পত্রিকা। উল্টে পাল্টে সেটা দেখি আমরা, নিজের লেখার পাশাপাশি অন্যদের লেখা পড়তেও তখন অনেক ভালো লাগে। নিজের লেখার পাশাপাশি যাদের লেখা সেই ম্যাগাজিনে দেখি তাদেরকে সেই মূহুর্তে খুব কাছের মানুষ মনে হয়, মনে হয় তারা সবাই খুব পরিচিত।
বাংলাভাষার শিশু-কিশোর সাহিত্যের বয়স প্রায় দুশো বছর। এই ভাষায় প্রকাশিত প্রথম শিশু-কিশোর পত্রিকা নিয়ে কিছুটা বিতর্ক রয়েছে। অনেকে বলেন ১৮১৮ সালে শ্রীরামপুর ব্যাপ্টিস্ট মিশন থেকে প্রকাশিত মাসিক ‘দিগদর্শন’ পত্রিকাই প্রথম শিশু-কিশোর পত্রিকা হিসেবে ধরতে হবে কারণ এই পত্রিকাতে অন্যান্য বিষয়ের সাথে শিশু-কিশোরদের পাঠ উপযোগী অনেক বিষয় প্রকাশ করা হতো। এতে ভূগোল, প্রাণিবিদ্যা, পদার্থবিদ্যা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা থাকতো। পত্রিকাটির সম্পাদক ছিলেন জন ক্লার্ক মার্শম্যান। আবার অনেকের মতে ১৮২২ সালে কলিকাতা স্কুল বুক সোসাইটি থেকে প্রকাশিত মাসিক ‘পশ্বাবলী’ প্রথম শিশু-কিশোর সচিত্র পত্রিকা। ‘পশ্বাবলী’ পত্রিকার অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিলো এর প্রতিটি সংখ্যায় একটি করে প্রাণীর বিবরণ থাকতো। একইসাথে পত্রিকার প্রথম পাতায় সেই প্রাণির কাঠখোদাই করা চিত্র থাকতো। ১৮৮৩ সালে প্রমদাচরণ সেন প্রকাশ করেন ছোটদের পূর্ণাঙ্গ মাসিক পত্রিকা ‘সখা’।
উল্লেখযোগ্য, সখার পূর্বেও বেশ কিছু পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে কিন্তু সেগুলোতে ছোটদের পাশাপাশি মাঝে মাঝে বড়দের লেখাও ছাপা হতো। এর মধ্যে ১৮৩১ সালে প্রকাশিত ‘জ্ঞানোদয়’, ১৮৫৩ সালে ‘বিদ্যাতর্পন’, ১৮৬০ সালে ‘সত্যপ্রদীপ’, ১৮৬৩ সালে প্রকাশিত ‘অবোধবন্ধু’ উল্লেখযোগ্য। ইংরেজি ১৮৮৫ সালে (বাংলা ১২৯২ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাস) জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশ পায় মাসিক ‘বালক’ যার সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন জ্ঞানদানন্দিনী দেবী। বালক পত্রিকা একবছর প্রকাশের পর তা স্বর্ণকুমারী দেবী সম্পাদিত ‘ভারতী’ পত্রিকার সাথে সংযুক্ত হয়ে যায়। ১৮৯৩ সালে ভূবনমোহন রায়ের সম্পাদনায় শিশু-কিশোর পাঠ্য মাসিক ‘সাথী’ প্রকাশিত হয়। ১৮৯৫ সালে শিবনাথ শাস্ত্রী সম্পাদিত ‘মুকুল’ প্রকাশিত হয় যা ছিলো বেশ আলোচিত। মুকুল এর প্রথম সংখ্যায় লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জগদীশচন্দ্র বসু, নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্য, রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়, হেমলতা সরকার প্রমুখ। পরবর্তীতে যোগীন্দ্রনাথ সরকার, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, কুসুমকুমারী দাশ, কামিনী রায়, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়সহ সেইসময়ের উল্লেখযোগ্য সাহিত্যিকরা এখানে লিখেছেন। এই ধারাবাহিকতায় ১৯১২ সালে বরদাকান্ত মজুমদার সম্পাদনা করেন মাসিক ‘শিশু’ এবং ১৯১৩ সালে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর সম্পাদনায় মাসিক ‘সন্দেশ’।
দেশভাগের পর উনিশশো আটচল্লিশ সালের শেষভাগে আমাদের দেশে প্রথম প্রকাশিত হয় শিশু-কিশোর সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘মুকুল’ যা কেন্দ্রীয় মুকুল ফৌজের মুখপত্র ছিল। মুকুলের সম্পাদক ছিলেন আবদুল্লাহ আল- মূতী, পরিচালনায় ছিলেন মোহাম্মদ মোদাব্বের ও হোসনেআরা। এর পর পঞ্চাশের দশকে প্রকাশিত হয় খেলাঘর যা স্বাধীনতা পরবর্তীকাল পর্যন্ত টিকে ছিলো। মাসিক ‘খেলাঘর’ এর সম্পাদক ছিলেন জেব-উননিসা আহমদ। ১৯৫৫ সালের ৭ মার্চ থেকে ১৯৫৬ সালের ১ জুলাই পর্যন্ত টিকে থাকা সরদার জয়েন উদ্দীন সম্পাদিত পাক্ষিক ‘সেতারা’ ও বিশেষ উল্লেখযোগ্য। ষাটের দশকে আমাদের এখানে যে সকল উল্লেখযোগ্য শিশু-কিশোর পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘সবুজ পাতা’, ‘কচি ও কাঁচা’, ‘টাপুর টুপুর’ ও ‘মুকুল’। সে সময় তদানীন্তন ইসলামিক একাডেমি থেকে প্রকাশিত হতো মাসিক ‘সবুজ পাতা’ যার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন শাহেদ আলী।
১৯৬২ সালের আগস্ট মাসে এর প্রথম সংখ্যা প্রকাশ পায়। সবুজ পাতা এখনো ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত হয় রোকনুজ্জামান খানের সম্পাদনায় কচি ও কাঁচা। কেন্দ্রীয় কচিকাঁচার মেলার মুখপত্র হিসেবে প্রকাশিত হতো মাসিক কচি ও কাঁচা। ১৯৭১ সাল পর্যন্ত এর প্রকাশনা অব্যাহত ছিলো। এই সময়ের আর একটি পত্রিকা ছিলো মাসিক ‘মুকুল’ যার সম্পাদনায় ছিলেন হোসেন কামাল। ‘মুকুল’-এর সম্পাদকীয় উপদেষ্টামণ্ডলীতে যুক্ত ছিলেন এম নাসির আলী। আমাদের আর একটি উল্লেখযোগ্য শিশু-কিশোর পত্রিকা হচ্ছে ‘টাপুর টুপুর’ যা এই ষাটের দশকেই প্রথম প্রকাশিত হয়। টাপুর টুপুর এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ছিলেন এখলাসউদ্দীন আহমদ। ১৯৬৬ সাল থেকে সত্তর দশকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত পত্রিকাটি চালু ছিলো। ১৯৭৪ সালের আগস্ট মাসে ফজল এ খোদার সম্পাদনায় প্রকাশ পায় শিশুকিশোর মাসিক পত্রিকা ‘শাপলা শালুক’।
মূলত বাংলাদেশ বেতারের শিশু-কিশোর পাঠকদের জন্য প্রকাশ পায় এই পত্রিকা। বাংলাদেশ বেতার থেকে শাপলা শালুক প্রকাশিত হতো। ১৯৭৬ সালের অক্টোবরে এই পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত ব্যতিক্রমধর্মী আর একটি পত্রিকা প্রকাশিত হতো যার নাম ‘কিশোর বাংলা’। কিশোর বাংলার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক সানাউল্লাহ নূরী। কার্যনির্বাহী সম্পাদক ছিলেন রফিকুল হক (দাদুভাই)। এটি ছিলো সাপ্তাহিক কিশোর সংবাদপত্র যা ৩২ পৃষ্ঠার অন্যতম একটি চাররঙা ট্যাবলয়েড পত্রিকা। প্রতি শুক্রবার কিশোর বাংলা প্রকাশ হতো। এরপর বিশ্ব-সাহিত্য কেন্দ্র হতে প্রকাশিত কিশোর তরুণদের উৎকর্ষধর্মী মাসিক পত্রিকা ‘আসন্ন’ পাঠকনন্দিত একটি পত্রিকা হিসেবে শিশু-কিশোরসাহিত্যে স্থান করে নেয়। ১৯৮৮ সালে আসন্ন এর প্রথম সংখ্যা প্রকাশ পায়। প্রথম দুটি সংখ্যা সম্পাদনা করেন শিশুসাহিত্যিক লুৎফর রহমান রিটন। পরবর্তীতে শিশুসাহিত্যিক আমীরুল ইসলাম ‘আসন্ন’ সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
আমীরুল ইসলামের সম্পাদনায় আসন্নর মোট ৬০টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়। ২০০৯ সালের পর ‘আসন্ন’ আর প্রকাশিত হয়নি। নব্বই এর দশকে লুৎফর রহমান রিটন সম্পাদিত শিশু-কিশোর মাসিক ‘ছোটদের কাগজ’ ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছিলো। আগস্ট ১৯৯৫ থেকে জুন ২০০১ পর্যন্ত ‘ছোটদের কাগজ’ প্রকাশিত হয়। এছাড়াও সেবা প্রকাশনী থেকে ১৯৯১ সালে প্রকাশিত হয় মাসিক ‘কিশোর পত্রিকা’। কিশোর পত্রিকা একটানা আট বছর টিকে ছিলো। পরবর্তীতে অজ্ঞাত কারণে এর প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়। কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন সম্পাদিত ‘কিশোর তারকালোক’ পত্রিকাও নব্বই দশকে বেশ ভূমিকা রেখেছিলো। উল্লিখিত এই পত্রিকাগুলোর কথা এখনো বিভিন্ন সময় শিশুসাহিত্য মহলে আলোচিত হয়।
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিনিয়ত প্রকাশিত হচ্ছে বিভিন্ন শিশু-কিশোর পত্রিকা, লিটল ম্যাগাজিন ও সাময়িকী। পঞ্চাশের দশক ও ষাটের দশক পার হবার পর সত্তর ও আশির দশকে হঠাৎ করে ব্যক্তিগত উদ্যোগে শিশু-কিশোর লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশের ধারা অত্যন্ত বেগবান হয়। নব্বই এর দশকেও প্রচুর লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশ পায়। লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশের এই ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এই সকল লিটল ম্যাগাজিন ও সাময়িকীর বেশিরভাগ সম্পাদকই লেখালেখির জগতের মানুষ বিধায় লেখকদের সাথে কমবেশি পরিচিত। ছোটদের জন্য লেখেন না কিন্তু ছোটদের পত্রিকা বা লিটল ম্যাগাজিন বের করেন বর্তমানে এমন উদাহারণ খুব কম। অর্থাৎ তারা দুটো কাজ পাশাপাশি করেন, নিজে লেখেন এবং লেখার পাশাপাশি অন্যদের লেখাও প্রকাশে সহযোগিতা করেন। সাম্প্রতিক সময়ে যে সকল মাসিক পত্রিকা, সাময়িকী ও লিটল ম্যাগাজিন আমাদের চোখে পড়ছে বা আমাদের হাতে আসছে, আমি এখন এখানে শুধুমাত্র সেগুলো নিয়ে জাতীয় ও অঞ্চলভিত্তিক কিছু তথ্য উপস্থাপন করছি। এছাড়াও যে সকল দৈনিক পত্রিকা থেকে নিয়মিত ছোটদের পাতা প্রকাশিত হচ্ছে তার তথ্যও থাকছে।
দৈনিকের শিশুসাহিত্য পাতা
আমাদের দেশে বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে বড়দের সাহিত্যপাতার পাশাপাশি ছোটদের পাতা প্রকাশ একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে কিছু উল্লেখযোগ্য দৈনিকের ছোটদের পাতাকে ঘিরে বিভিন্ন শিশু-কিশোর সংগঠনের কার্যক্রম ব্যাপকভাবে প্রচারিত ছিল। সেই পাতাতে সংগঠনের খবরের পাশাপাশি ছাপা হতো শিশু-কিশোর উপযোগী ছড়া, কবিতা, গল্প ইত্যাদি। যেমন, রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই পরিচালিত কচিকাঁচার মেলা সংগঠনের পাতা ছিল দৈনিক ইত্তেফাক এর ‘কচিকাঁচার আসর’। কবি হাবিবুর রহমান ভাইয়া পরিচালিত শিশু-কিশোর সংগঠন ‘খেলাঘর’ এর পাতা বের হতো দৈনিক সংবাদ এ। রফিকুল হক দাদুভাই পরিচালিত ‘চাঁদের হাট’ এর পাতা বের হতো দৈনিক পূর্বদেশ-এ। মোহাম্মদ মোদাব্বের পরিচালিত সংগঠন মুকুলের ফৌজ এর পাতা ‘মুকুলের মাহফিল’ বের হতো দৈনিক আজাদ পত্রিকায়। রাজশাহী থেকে প্রকাশিত দৈনিক বার্তায় প্রকাশ পেতো মাহমুদ আনোয়ার হোসেন বুড়োদাদু পরিচালিত ‘কিশোরকুঁড়ির মেলা’ সংগঠনের পাতা। বর্তমানে কোনো জাতীয় দৈনিকেই শিশু-কিশোর সংগঠনভিত্তিক পাতা নেই। কিন্তু বেশ কিছু দৈনিক পত্রিকা নিয়মিতভাবে ছোটদের পাতা প্রকাশ করে আসছে।
দৈনিক প্রথম আলোর ছোটদের পাতা, ‘গোল্লাছুট’ যা প্রতি শুক্রবার প্রকাশিত হয়। দৈনিক ইত্তেফাক থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে ‘কচিকাঁচার আসর’। এ পাতাও প্রতি শুক্রবার প্রকাশিত হয়। শুক্রবার আরো প্রকাশিত হয় বাংলাদেশ প্রতিদিন এর ছোটদের পাতা ‘ডাঙুলি’, দৈনিক সমকাল এর ছোটদের পাতা ‘ঘাসফড়িঙ’, প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর ‘ঘুঙুর’, দৈনিক নয়াদিগন্ত’র ‘আগডুম বাগডুম’। শনিবার প্রকাশিত হয় দৈনিক জনকণ্ঠ এর ছোটদের পাতা ‘ঝিলিমিলি’, দৈনিক খোলা কাগজ এর ‘ইচ্ছেডানা’, দৈনিক সময়ের আলো’র ‘প্রজাপতির পাখা’, দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ এর ‘আলোকিত শিশু’, প্রতিদিনের সংবাদ থেকে ‘খেয়ালখুশি’, দেশ রূপান্তর থেকে ‘মিঠাই’, কালবেলা থেকে ‘তাকদুম তাকদুম’। রোববার প্রকাশিত হয় দৈনিক মানবকণ্ঠ থেকে ‘এলেবেলে’, যায় যায় দিন থেকে ‘হাট্টিমা টিম টিম’। সোমবার প্রকাশিত হয় দৈনিক কালের কণ্ঠ থেকে ‘টুনটুন টিনটিন’।
মঙ্গলবার প্রকাশিত হয় দৈনিক আমাদের সময় থেকে ‘ঘটাংঘট’। বুধবার প্রকাশিত হয় দৈনিক ভোরের কাগজ থেকে ‘ইষ্টিকুটুম’ আর দৈনিক বাংলা থেকে ‘সাতভাই চম্পা’। ঢাকার বাইরে থেকেও কিছু দৈনিকের ছোটদের পাতা প্রকাশিত হয়। চট্টগ্রামে কিছুদিন পূর্ব পর্যন্ত দৈনিক পূর্বকোণ এবং দৈনিক পূর্বদেশ এই দুই পত্রিকাই ছোটদের পাতা প্রকাশ করতো। বর্তমানে শুধুমাত্র দৈনিক আজাদী থেকে প্রকাশিত হয় ছোটদের পাতা ‘আগামিদের আসর’। এছাড়া বগুড়া থেকে দৈনিক করতোয়া প্রকাশ করে ‘সবুজ আসর’। এছাড়াও বিভিন্ন জেলায় কিছু দৈনিক শিশু-কিশোরদের জন্য পাতা বের করে থাকে।
উল্লেখযোগ্য কিছু শিশু-কিশোর সাময়িকী ও লিটল ম্যাগাজিন
শিশু
শাহবাগের দোয়েল চত্বরে অবস্থিত বাংলাদেশ শিশু একাডেমির প্রধান কার্যালয়। শিশু একাডেমি থেকে প্রতি মাসে প্রকাশিত হয় শিশু-কিশোর পত্রিকা মাসিক ‘শিশু’। চাররঙা এই পত্রিকাটি শিশু-কিশোরদের জন্য সরকারি উদ্যোগে প্রকাশিত নিয়মিত পত্রিকা। ১৯৭৭ সালের অক্টোবর মাসে শিশুর প্রথম সংখ্যা ঈদ সংখ্যা হিসেবে প্রকাশিত হয়। প্রথম সংখ্যার সম্পাদক ছিলেন জোবেদা খানম। এরপর থেকে প্রতি মাসে ‘শিশু’ প্রকাশিত হয়ে আসছে। শিশুসাহিত্যিক ফারুক নওয়াজ দীর্ঘদিন এই পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে শিশু একাডেমির মহাপরিচালক শিশুসাহিত্যিক আনজীর লিটন পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
নবারুণ
চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর হতে প্রতি মাসে প্রকাশিত হয় মাসিক ‘নবারুণ’। সত্তর দশক থেকে নবারুণ প্রকাশ পেয়ে আসছে। সরকারি পত্রিকা বিধায় বিভিন্ন সময় বিভিন্নজন এই পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেন। ‘নবারুণ’ সম্পাদনার সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত ছিলেন কবি আব্দুস সাত্তার। শিশুসাহিত্যিক নাসরীন মুস্তাফাও বেশ কিছুদিন যুক্ত ছিলেন নবারুণ-এর সাথে।
ধানশালিকের দেশ
বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয় শিশু-কিশোর পত্রিকা ‘ধানশালিকের দেশ’। পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৭৪ সালে। ‘ধানশালিকের দেশ’-এর শুরুতে সম্পাদক ছিলেন ড. মযহারুল ইসলাম এবং নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন হাসান জান। এখন তিন মাস অন্তর অন্তর পত্রিকাটি প্রকাশিত হচ্ছে। ‘ধানশালিকের দেশ’-এর বর্তমান সম্পাদক বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। নির্বাহী সম্পাদক সরকার আমিন।
কিআ-কিশোর আলো
প্রথম আলো প্রকাশনা গ্রুপ থেকে প্রায় দশ বছর যাবত নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে শিশু-কিশোর পত্রিকা ‘কিআ’। একটি দৈনিক পত্রিকা হতে এজাতীয় উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। ‘কিআ’ প্রতি মাসের প্রখম সপ্তাহে প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটির সম্পাদক আনিসুল হক।
কিশোর বাংলা
বেশ কয়েক বছর যাবত পূর্বের ‘কিশোর বাংলা’ নতুন আঙ্গিকে ও মালিকানায় মোহাম্মাদী গ্রুপ অব কোম্পানীজ থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। পূর্বে ‘কিশোর বাংলা’ ছিলো সাপ্তাহিক পত্রিকা, এখন মাসিক প্রকাশিত হয়। সম্পাদক মীর মোশাররেফ হোসেন। বর্তমানে পাঠকরা অনলাইনেও পত্রিকাটি পড়তে পারেন। ‘কিশোর বাংলা’র অফিসটি আজিজ ভবন (৯ম তলা), ৯৩, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০, বাংলাদেশে অবস্থিত।
টইটুম্বুর
‘টইটুম্বুর’ একটি শিশু-কিশোর মাসিক পত্রিকা যা ১৯৯২ সাল থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। ‘টইটুম্বুর’-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক সেলিমা সাবিহ। ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক নওসেবা সবিহ কবিতা।
ইকরিমিকরি
‘ইকরিমিকরি’ প্রকাশনী হতে ছোটদের মাসিক পত্রিকা ‘ইকরিমিকরি’ বেশ কিছুদিন যাবত নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। বৈশাখ ১৪২৬ মাসে ‘ইকরিমিকরি’-এর ১ম সংখ্যা প্রকাশিত হয়। সম্পাদকীয় কার্যালয় গ ৩৮, শাহজাদপুর, গুলশান, ঢাকা। ইকরি মিকরি এর সম্পাদক মাহবুবুল হক, নির্বাহী সম্পাদক কাকলী প্রধান।
জল পড়ে পাতা নড়ে
বেঙ্গল পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত হয় শিশুতোষ মাসিক পত্রিকা ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’। বেঙ্গল বুকসে এর প্রতিটি সংখ্যা পাওয়া যায়। পত্রিকাটি একটু ভিন্ন আকারের। চাররঙা এবং বেশ আকর্ষণীয়। নিয়মিত পত্রিকার পাশাপাশি প্রতি মাসেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য ব্রেইল সংখ্যা বের করা হয় এবং সেগুলো বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। প্রতিমাসে ২০টি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২২০ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বাচ্চাদের কাছে পৌঁছে যায় ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’র ব্রেইল সংখ্যা।
ফুলকুঁড়ি
‘ফুলকুঁড়ি’ অনেক পুরনো সচিত্র শিশু-কিশোর মাসিক পত্রিকা। ৪৫ বছর যাবত প্রকাশিত হচ্ছে মাসিক ফুলকুড়ি। ১৯৭৮ সালে ‘ফুলকুড়ি’র প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়। প্রথম দিকে সম্পাদক ছিলেন মাসুদ আলী। বর্তমানে এই পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এস এম মিজানুর রহমান। উপদেষ্টামণ্ডলীতে আছেন মাহবুবুল হক ও জয়নুল আবেদীন আজাদ।
কিশোরকণ্ঠ
১৯৮২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মাসিক শিশু-কিশোর পত্রিকা ‘কিশোরকণ্ঠ’-এর প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়। ‘কিশোরকণ্ঠ’ প্রকাশের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন প্রয়াত মতিউর রহমান মল্লিক। এর পর থেকে নিয়মিত প্রকাশ হয়ে আসছে। ‘কিশোরকণ্ঠ’-এর বর্তমান সম্পাদক মোশাররফ হোসেন খান।
ঝুমঝুমি : সম্পাদক, শায়লা রহমান তিথি
শিশুসাহিত্য সাময়িকী ‘ঝুমঝুমি’। সম্পাদক শায়লা রহমান তিথির সাথে ‘ঝুমঝুমি’তে যুক্ত রয়েছেন শিশুসাহিত্যিক পাশা মোস্তফা কামাল। ‘ঝুমঝুমি’র প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয় ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে। এর পর থেকে প্রতি মাসে নিয়মিত বের হচ্ছে। প্রায় ৮০টির অধিক সংখ্যা প্রকাশ পেয়েছে ‘ঝুমঝুমি’র।
কিশোরলেখা : সম্পাদক, আইরিন নিয়াজী মান্না
‘কিশোরলেখা’ প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৮৮ সালের অক্টোবরে। সম্পাদক আইরীন নিয়াজী মান্না তখন স্কুলের ছাত্রী। এ পর্যন্ত মোট প্রকাশিত সংখ্যা ৫০ টির বেশি। চমৎকার প্রচ্ছদ ও অঙ্গসজ্জায় পত্রিকাটি প্রকাশ হয়ে থাকে।
কানামাছি : সম্পাদক, মঈন মুরসালিন
প্রকাশনা সংস্থা প্রতিভা প্রকাশ থেকে মঈন মুরসালিনের সম্পাদনায় বের হয় ‘কানামাছি’। ২০০৬ এ প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়। এ পর্যন্ত ‘কানামাছি’র প্রকাশিত সংখ্যা ৫৬ টির অধিক।
চন্দ্রাবতী একাডেমি বার্ষিকী
বাংলাদেশের শিশুসাহিত্য সংকলন বা সাময়িকী যা-ই বলি না কেন আলোচনা করতে গেলে আবশ্যিকভাবে আসবে চন্দ্রাবতী একাডেমির নাম। প্রায় প্রতি বছর বিশাল কলেবরে বাছাই করা লেখকদের বাছাই করা লেখায় সমৃদ্ধ সংকলন বের করে থাকে চন্দ্রাবতী একাডেমি। প্রধান সম্পাদক মাহফুজুর রহমান ও নির্বাহী পরিচালক কামরজ্জামান কাজলের বিশেষ উদ্যোগ এই সংকলনগুলো, যা প্রশংসার দাবি রাখে। বিভিন্ন ধরণের রচনা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন সংকলন প্রকাশিত হয়। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নামে এই সংকলন প্রকাশিত হয়। যেমন, ‘আকাশ কুসুম’, ‘পাখি সব করে রব’, ‘সকাল বেলার পাখি’, ‘তেপান্তর’, ‘বিষটি পড়ে টাপুর টুপুর’, ‘চিরদিন তোমার আকাশ’, ‘আমরা সবাই রাজা’, ‘সাতসকাল’, ‘অনেক আকাশ’, ‘কথার ঝাঁপি’, ‘আজ আমাদের ছুটি’, ‘চাঁদ উঠেছে ফুল ফুটেছে’, ‘থোকায় থোকায় জোনাক জ¦লে’। পাঠকেরা সবাই কমবেশি এই সংকলনগুলোর সাথে পরিচিত। সম্পাদনা বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্নজন করে থাকেন। এই সংকলনগুলো সম্পাদনায় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন প্রয়াত সুবলকুমার বনিক। তিনি বেশ কিছু সংখ্যা সম্পাদনা করেছেন। এছাড়া অনেকগুলো সংখ্যা সম্পাদনা করেছেন শিশুসাহিত্যিক রহিম শাহ। সম্পাদনা করেছেন সাজ্জাদ আরেফিন, দেবাশীষ দেব, আনোয়ারুল ইসলাম। অতিথি সম্পাদক হিসেবে বেশ কিছু সংকলন সম্পাদনা কেেরছন ওপার বাংলার শিশুসাহিত্যিক শ্যামলকান্তি দাশ। এছাড়া শিশুসাহিত্যিক ফারুক হোসেন সম্পাদনা করেছেন দুইশ বছরের উল্লেখযোগ্য লেখা নিয়ে চন্দ্রাবতীর সর্বশেষ সংকলন।
কিশোর : সম্পাদক, আশরাফুল আলম পিনটু
‘কিশোর’-এর প্রথম প্রকাশ ডিসেম্বর ২০১০-এ বিজয় দিবস সংখ্যা হিসাবে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখা ছিলো সবগুলো। ‘কিশোর’ প্রথম সংখ্যা শুরুর অনুপ্রেরণা ছিল প্রধানত ধ্রুব এষের বলে সম্পাদক আশরাফুল আলম পিনটু জানান। প্রতিটি সংখ্যার প্রচ্ছদ ও শিল্প নির্দেশক ধ্রুব এষ। এ পর্যন্ত প্রকাশিত মোট সংখ্যা ২১টি। ‘কিশোর’-এর আলাদা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্রায় প্রতি সংখ্যায় একটি করে পূর্ণ উপন্যাস। প্রচুর গল্প, ছড়া ও কিশোর কবিতা। এছাড়া ‘কিশোর’-এ অন্ত্যমিল ছাড়া ছড়ার নিরীক্ষা করেছেন শিশুসাহিত্যিক আমীরুল ইসলাম ও সুজন বড়ুয়া। আমীরুল ইসলামের বিদেশি ছড়ার অনুবাদও এখানে অনেক প্রকাশিত হয়েছে। অনেক লেখক যারা শিশুসাহিত্য রচনা থেকে বেশ কিছুদিন দূরে ছিলেন তাদের ফিরিয়ে নিয়ে আসার ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে ‘কিশোর’। তারা হচ্ছেন অরুনাভ সরকার, হালিমা খাতুন, ফয়েজ আহমদ, এখলাসউদদীন আহমেদ, আব্দুল হাই মিনার, তুষার কর, মঞ্জু সরকার প্রমুখ। এছাড়া প্রচুর নতুন লেখককে লেখা প্রকাশের সুযোগ দেয়া হয়েছে ‘কিশোর’-এ। শিশুসাহিত্যিকদের বইয়ের বিজ্ঞাপন যে কত শৈল্পিক হতে পারে তা ‘কিশোর’-এ দেখিয়েছেন বিশিষ্ট আঁকিয়ে কিশোর এর শিল্প সম্পাদক ধ্রুব এষ।
শিশুসাহিত্য সারথি : সম্পাদক, সুজন বড়ুয়া
‘শিশুসাহিত্য সারথি’ একটি ব্যতিক্রমধর্মী শিশুসাহিত্য সাময়িকী যার সম্পাদক খ্যাতিমান শিশুসাহিত্যিক সুজন বড়ুয়া। শিশুসাহিত্যের সাথে যুক্ত প্রায় সবাই এই সাময়িকীর সাথে পরিচিত। এটি এমন একটি গদ্যপ্রধান সাময়িকী যেখানে গবেষণাধর্মী গদ্যকেই বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। শিশুসাহিত্যের এমন উৎকর্ষধর্মী সাময়িকী বর্তমান সময়ে খুবই কম বলা যায়। লেখক তালিকা বেশ সমৃদ্ধ। প্রথম সংখ্যা জানুয়ারি ২০১৮ মাসে প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে প্রতি ৩ মাস অন্তর বের হচ্ছে। গবেষণামূলক গদ্য আমাদের শিশুসাহিত্যে খুবই কম। ‘শিশুসাহিত্য সারথি’ গদ্যলেখক তৈরিতে বেশ জোরালো ভূমিকা রাখছে। এ পর্যন্ত ‘শিশুসাহিত্য সারথি’র প্রকাশিত মোট সংখ্যা ১২টি। সুজন বড়ুয়া ছাড়াও ‘শিশুসাহিত্য সারথি’র সাথে যুক্ত আছেন শিশুসাহিত্যিক সিরু বাঙ্গালি, মুস্তাফা মাসুদ, আহসান মালেক, শিবুকান্তি দাশ আর মালেক মাহমুদ। আরো যুক্ত আছেন আদিগন্ত প্রকাশনের কর্ণধার মোশতাক রায়হান।
শাপলা দোয়েল : সম্পাদক, রহিম শাহ
‘শাপলা দোয়েল’ ছোটদের পত্রিকা। ২০০৭ এর ১লা বৈশাখ থেকে প্রকাশিত হচ্ছে ‘শাপলা দোয়েল’। এই পত্রিকার ভিন্নতা হচ্ছে এটা মূলতঃ ঋতুভিত্তিক পত্রিকা। ঋতুকে বিষয় ধরে সব ঋতুতেই প্রকাশ পেয়েছে। পত্রিকাটি বিভিন্ন সময় বিভিন্নজন সম্পাদনা করে থাকেন। আফম মোদাচ্ছের আলী কয়েকটি সংখ্যা সম্পাদনার সাথে যুক্ত ছিলেন।
ছোটদের সময়, লাটাই : সম্পাদক, মামুন সারওয়ার
এ সময়ের চমৎকার একটি পত্রিকা ‘ছোটদের সময়’ যার সম্পাদক শিশুসাহিত্যিক মামুন সারওয়ার। ‘ছোটদের সময়’ প্রথম প্রকাশিত হয় ২০১৩ সালে একুশে গ্রন্থমেলায়। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে বের হচ্ছে। পত্রিকাটি শিশুসাহিত্য বিষয়ক ম্যাগাজিন। ‘ছোটদের সময়’ ছাড়াও আরেকটি ছড়ার কাগজ প্রকাশ করেন মামুন সারওয়ার, নাম ‘লাটাই’। ছডার কাগজ লাটাই পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয় ২০১০ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে। সব শেষ সংখ্যাটি প্রকাশিত হয ২০০৯ সালের মার্চ মাসে, যা ছিলো ফারুক হোসেন সংখ্যা।
আলোকলতা : সম্পাদক, হুমায়ুন কবীর ঢালী
‘আলোকলতা’ বেশ সমৃদ্ধ ও বিশাল আকৃতির শিশুসাহিত্য সংকলন। ‘আলোকলতা’র প্রথম সংখ্যা ২০০৯ সালে প্রকাশিত হয়। এরপরে ২০১২ সালে। তৃতীয় সংখ্যার কাজ চলছে বলে সম্পাদক জানিয়েছেন।
আনন : সম্পাদক, স. ম. শামসুল আলম
‘আনন’ ফাউন্ডেশনের নাম আমরা সবাই জানি ‘আনন’ এর প্রতিষ্ঠাতা শিশুসাহিত্যিক স. ম. শামসুল আলমের কারণে। নিয়মিত সাহিত্য সভা, সেই সাথে প্রতি বছর ‘আনন’ শিশুসাহিত্য পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে আমাদের কাছে সংগঠনটি বেশ পরিচিত। প্রতি বছর একটা করে সংখ্যা প্রকাশ করে ‘আনন’। ‘আনন’ প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয় ২০১৩ সালে। এ পর্যন্ত মোট ৬টি সংখ্যা বের হয়েছে আননের।
টুপটাপ : সম্পাদক, ওমর ফারুক নাজমুল
‘টুপটাপ’ প্রথম সংখ্যা জুন-জুলাই ২০১৪ তে প্রকাশিত হয়। মোট প্রকাশিত সংখ্যা ১০টি। বিষয়ভিত্তিক সংখ্যা বের করে ‘টুপটাপ’। প্রথম সংখ্যা ছিলো, পাখি বিষয়ক, দ্বিতীয় সংখ্যা, ঢাকা সংখ্যা, তারপর বই সংখ্যা, দেশ সংখ্যা, রেলগাড়ি সংখ্যা, চাঁদ সংখ্যা, ছুটি সংখ্যা, কিশোরবেলা সংখ্যা, প্রজাপতি সংখ্যা ইত্যাদি।
পাঁপড় : সম্পাদক, অদ্বৈত মারুত
অদ্বৈত মারুতের সম্পাদনায় ‘পাঁপড়’ বের হচ্ছে অনেক বছর থেকে। ‘পাঁপড়’র নির্বাহী সম্পাদক আহমেদ জুয়েল। যতটুকু জানি ‘পাঁপড়’ সম্প্রতি ২০ বছরে পা দিয়েছে।
রঙধনু : সম্পাদক, শাহ আলম বাদশা
‘রঙধনু’র প্রথম প্রকাশ ২০১৬ সালে। এ যাবত মোট ১০ টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে।
ছোটদের পদক্ষেপ : সম্পাদক, জান্নাতুন নিসা ও বাদল চৌধুরী
২০০৫ থেকে যাত্রা শুরু ‘ছোটদের পদক্ষেপ’-এর। অনিয়মিতভাবে এ পর্যন্ত ২০টি সংখ্যা বের হয়েছে। নতুন আঙ্গিকে ২০১৯ থেকে বের হচ্ছে। তিন মাস পর পর, ঋতু ভিত্তিক ।
ছড়ার কাগজ : সম্পাদক, রমজান মাহমুদ
প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয় ২০০২ সালে। এ পর্যন্ত মোট প্রকাশিত সংখ্যা ৩টি।
চট্টগ্রাম
ছড়াপত্রিকা : সম্পাদক, মাহবুবুল হাসান
‘ছড়াপত্রিকা’ একটি আলোচিত শিশুকিশোর পত্রিকা। প্রথম সংখ্য বের হয় ১৯৯৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এ পর্যন্ত বেরিয়েছে ২১টি সংখ্যা। সর্বশেষ বেরোয় ২০১৮ সালে রাশেদ রউফ সংখ্যা। ‘ছড়াপত্রিকা’র যেসব সংখ্যা ‘এ সংখ্যার ছড়াকার’ শিরোনামে বের হয়েছে সেগুলো হলো, সুকুমার বড়ুয়া, আকুল খায়ের মুসলেহ উদ্দিন, আল মাহমুদ, আবু সালেহ, শাহাবুদ্দীন নাগরী, হাসান হাফিজ, লুৎফর রহমান রিটন, রাশেদ রউফ সংখ্যা।
শিশুসাহিত্য : সম্পাদক, রাশেদ রউফ
রাশেদ রউফ অনেক লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনা করেছেন। তার মধ্যে ‘শিশুসাহিত্য’ রাশেদ রউফের সম্পাদিত অন্যতম সাময়িকী। জুন ২০০৬ এ প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়। এ পর্যন্ত মোট প্রকাশিত সংখ্যা ৮টি। ‘শিশুসাহিত্য’ গদ্যপ্রধান গবেষণাধর্মী লেখাকে প্রাধান্য দিয়েছে বরাবরই। সেটাই এই সাময়িকীর প্রধান বৈশিষ্ট্য।
চেরাগ : সম্পাদক, উৎপলকান্তি বড়ুয়া
‘চেরাগ’ চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় লেখা উৎপলকান্তি বড়ুয়ার সম্পাদিত ছড়া সংকলন। ৫টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে ‘চেরাগ’-এর। উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে ‘চেরাগ’-এর প্রতিটি সংখ্যাই উৎপলকান্তি বড়ুয়ার নিজের হাতে লেখা। ১ম সংখ্যা ২০০২ প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ লিমেরিক সোসাইটি হতে প্রকাশ পেয়েছিলো উৎপলকান্তি বড়ুয়ার হাতের লেখা সংকলন ‘লিমেরিক’-এর ৪টি সংখ্যা। সংকলন ‘ঝিনুক’ও তার হাতের লেখা। উল্লেখ্য যে, হাতের লেখা ম্যাগাজিন ‘শেখ মুজিবের ছড়া’, ‘সন্ত্রাসবিরোধী ছড়া’, ‘রাজাকার বিরোধী ছড়া’ তার সম্পাদনায় ইতিপূর্বে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতীকী : সম্পাদক, মিজানুর রহমান শামীম
১৯৮৭ সালে প্রথম সংখ্যা প্রকাশ পায়। একাধারে ‘প্রতীকী’র ১৯টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। ‘প্রতীকী’ ছড়াসাহিত্য পুরস্কার দিয়েছেন ৪ জন গুণী ছড়াকারকে। এছাড়া ৬৫টি সাহিত্য আড্ডা করেছে তারা।
কথন : সম্পাদক, ফারুক হাসান
১ম সংখ্যা বের হয় ১৯৮৭ সালে। হাতের লেখা ১ম সংখাটি ছড়াকার উৎপল কান্তি বড়ুয়ার স্বহস্তে লেখা। ‘কথন’ সম্পাদক ফারুক হাসান সম্প্রতি প্রয়াত হয়েছেন।
আলোর পাতা : সম্পাদক, এমরান চৌধুরী
এমরান চৌধুরীর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় শিশু-কিশোর সাময়িকী ‘আলোর পাতা’। প্রতি তিন মাস অন্তর এটি প্রকাশিত হয়। ডিসেম্বর ২০১৭ তে প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়। এ যাবত প্রকাশিত মোট সংখ্যা ১০টি।
কিশোরবেলা : সম্পাদক, অমিত বড়ুয়া
প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয় সেপ্টেম্বর ২০২১ এ। এ যাবত মোট প্রকাশিত সংখ্যা ১০টি।
ছোটদের কাগজ কলম : সম্পাদক, আখতারুল ইসলাম
‘ছোটদের কাগজ কলম’-এর মোট ১০টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে জানুয়ারি ২০১১ তে।
রাজশাহী
ডাকঘর : সম্পাদক, হাসনাত আমজাদ
মনন-উৎকর্ষী সাহিত্য কাগজ ‘ডাকঘর’-এর প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয় জুলাই ২০২২ এ। দুই বাংলার লেখকদের লেখা নিয়ে বৈচিত্র্যে ভরপুর কাগজ ‘ডাকঘর’-এর প্রথম সংখ্যায় বড়দের সাহিত্যের পাশাপাশি ছোটদের সাহিত্যও স্থান পেয়েছে। প্রথম সংখ্যার বিশেষ আয়োজন ছিল, রাজশাহীর সাহিত্য। দ্বিতীয় সংখ্যা শুধুমাত্র শিশু-কিশোর সাহিত্য নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ
ফড়িংরাজা : সম্পাদক, তাহমিদ আবরার
‘ফড়িংরাজা’ শিশু-কিশোর উপযোগী একটি ঝকঝকে সাময়িকী। এপার বাংলা ওপার বাংলা দুই বাংলার লেখকসমৃদ্ধ এ সংকলনটি ইতিমধ্যেই লেখক ও পাঠকদের দৃষ্টি কেড়েছে। পত্রিকার অঙ্গসজ্জা, ইলাস্ট্রেশন বেশ আকর্ষণীয়। প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয় মার্চ ২০০৯ মাসে। এখন পর্যন্ত মোট প্রকাশিত সংখ্যা ১১ টি। সর্বশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে ফেব্রুয়ারি ২০২০ এ।
লালমনিরহাট
ঝিনুক : সম্পাদক, বদরুন নাহার
প্রথম প্রকাশ : ফেব্রুয়ারি ২০০৯। এ যাবত প্রকাশিত সংখ্যা : ২৩টি। শিশুতোষ সংখ্যা ৪ টি বের হয়েছে। বাকীগুলো ছোটোবড় সবার জন্য ছিল। ‘ঝিনুক’ এখন থেকে শুধু শিশুতোষ সংখ্যা প্রকাশ করবে বলে জানিয়েছে।
কিশোরগঞ্জ
আড়াঙ্গি : সম্পাদক, জাহাঙ্গীর আলম জাহান
‘আড়াঙ্গি’, ২০০৯ সালের ২৬ মার্চ ১ম সংখ্যা প্রকাশিত হয়। এ পর্যন্ত মোট ১৬টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম জাহানের সম্পাদনায় আর একটি পত্রিকা প্রকাশিত হয়, নাম ছড়া-সংক্রান্তি। এর মোট ৫টি সংখ্যা বেরিয়েছে।
সিলেট
ছড়ালোক : সম্পাদক, শাহাদত বখত
‘ছড়ালোক’ ১৯৯৯ সালে প্রথম সংখ্যা বের হয়। এই ছড়ার ছোটোকাগজের নামকরণ করেছিলেন কবি দিলওয়ার। নামলিপি এঁকেছিলেন শিল্পী ইসমাইল গণি হিমন। দ্বিতীয় সংখ্যা ২০০০ সালে ‘কবি দিলওয়ার’ সংখ্যা। যেটা কবি দিলওয়ারের জীবদ্দশায় প্রকাশ পায়। পরবর্তীতে অনিয়মিত ভাবে বাকি সংখ্যাগুলো বের হয়। সর্বশেষ ১০ম সংখ্যাটি (মুজিব শতবর্ষ শতছড়া) ১৪ ডিসেম্বর ২০২০ বের হয়।
ছন্দালাপ : সম্পাদক, বশির আহমেদ জুয়েল
বশির আহমদ জুয়েল সম্পাদিত ছড়াসাহিত্যের ছোটকাগজ ‘ছন্দালাপ’ ২০১০ থেকে এ পর্যন্ত ৯টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়ছে। ‘ছন্দালাপ’-এর সাথে যুক্ত আছেন সিলেটের প্রবীণ শিশুসাহিত্যিক বিধুভূষণ ভট্টাচার্য। ছন্দালাপের অনেকগুলো সংখ্যার মধ্যে দুটি বিশেষ সংখ্যা রয়েছে। ‘দিলওয়ার সংখ্যা’ (৬ষ্ঠ সংখ্যা) নভেম্বর, ২০১৩ তে এবং ‘ওবায়দুল গনি চন্দন সংখ্যা’ (৭ম সংখ্যা) ২০১৪’র নভেম্বর-এ।
শীতলপাটি : সম্পাদক, ইমন শাহ
ছোটকাগজ ‘শীতলপাটি’র মোট ৫টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে।
আঞ্চলিক : সম্পাদক, সজল দাশ
শ্রীমঙ্গল থেকে প্রকাশিত হয় আঞ্চলিক ভাষার ছড়া সংকলন ‘আঞ্চলিক’। সজল দাশের পাশাপাশি উৎপলকান্তি বড়ুয়া এই সংকলনের সাথে যুক্ত রয়েছেন।
খুলনা
কুটুমপাখি : সম্পাদক, জোতির্ময় মল্লিক
‘কুটুমপাখি’ প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৭৯ সালে। ডিমাই ১/৮ সাইজ, ৩২ পাতা। প্রথমদিকে তিন মাস অন্তর প্রকাশিত হতো। এরপর ১৯৮৫ সালে (এপ্রিল-মে-জুন) বন্ধ হয়ে যায়। এই সময় মোট ২১টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়। এর পর ২০০৮ সালে ২য় পর্যায় (জুলাই-আগস্ট-সেপ্টেম্বর) আবার প্রকাশনা শুরু হয়।
বগুড়া
কুঁড়ি : সম্পাদক, আব্দুল খালেক
২০১৭ সালের শুরুর দিকে ‘কুঁড়ি’ প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়। ভাষার মাস, মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সাদা-কালো প্রচ্ছদে ছোট্ট পরিসরে প্রকাশিত শিশু-কিশোরদের জন্য বগুড়ার দ্বি-মাসিক পত্রিকার প্রথম প্রকাশ ‘কুঁড়ি’। সারাদেশের শিশু-কিশোরদের হাতে ‘কুঁড়ি’ তুলে দেয়ার প্রত্যাশায় ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে ‘কুঁড়ি’ মাসিক আকারে প্রকাশ করা হচ্ছে।
পাবনা
হইচই : সম্পাদক, নুরুল ইসলাম বাবুল
ছোটোদের পত্রিকা ‘হইচই’ এ পর্যন্ত প্রকাশ পেয়েছে ৪টি সংখ্যা। প্রথম সংখ্যা : অক্টোবর ২০১৪, দ্বিতীয় সংখ্যা : মার্চ ২০১৫, তৃতীয় সংখ্যা : নভেম্বর ২০১৫, চতুর্থ সংখ্যা : জুলাই ২০১৭তে। পঞ্চম সংখ্যার কাজ চলছে বলে জানা গেছে।
রংপুর
ছররা : সম্পাদক, এস এম খলিল বাবু
১ম সংখ্যা ২০০১ সালে প্রকাশিত হয়। এ পর্যন্ত মোট প্রকাশিত সংখা ২৯টি। সর্বশেষ সংখাটি প্রকাশিত হয় ফেব্রুয়ারি ২০২৩-এ।
এছাড়াও দেশের বাইরে নিউইয়র্ক থেকে সামস চৌধুরী রুশো, খালেদ শরফুদ্দীন আর মন্জুর কাদেরের সম্পাদনায় বের হয় ছড়া সংকলন ‘ছড়াটে’। বেশ কয়েকটি সংখ্যা ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। দেশের বাইরে থেকে আরো প্রকাশিত হয় আলমগীর বাবুল আর আহমেদ গিয়াসের সম্পাদনায় ‘চিচিং ফাঁক’।
এই প্রতিবেদন অসম্পূর্ণ। বিভিন্ন সুত্র হতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এটি লেখা হয়েছে যেখানে অনেক লিটল ম্যাগাজিন, সংকলন বা সাময়িকীর কথা হয়তো বাদ পড়ে যেতে পারে।