কফিন ঘর
দিন-রাতের কোনো ফারাক নেই
নেই কোনো ক্ষণমাপকযন্ত্র ;
কতিপয় লাশের আকাঙ্খা নিয়ে
ভোরের সূর্য ওঠে
কতিপয় লাশের অপেক্ষায়-থেকে
সন্ধ্যামালতি ফুটে,
তাই কফিন ঘরের কপাট থেকেও নেই!
কফিনের আছে কত রকমফের
আছে জমকালো আভিজাত্যের ছাপ,
কফিনের ভেতরের লাশ জানে-না
দুনিয়াদারির খবর।সে তখন—
জর-নশ্বর, শুধু মানুষের-দায়
কফিনবন্দি লোকটি কালের শকটে
চড়ে, স্বজনের ঘাড়ে সওয়ার হয়ে
মাটির ঘরে শয্যা-পাতে, সে-কি তা জানতো !
জীবনভর জৌলুসের দরিয়ায় ভেসে-ভেসে
কফিন শব্দটি-ই বেমালুম ভুলে গেছে সে
সবকিছু চলে যাচ্ছে ইঁদুরের দখলে
ঘরের ভেতর ইঁদুরের উৎপাতে অতিষ্ঠ
রাতে যখন শুবারঘর আঁধারে ডুব দেয়
তখন নেংটি ইঁদুর যেনো পাখা মেলে উড়ে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে ।
দূর পাহাড়ের চূড়ায়;যে ঈগল চোখের কোঠরে শিকারের ছক আঁকে ক্ষণে ক্ষণে
ঘাতক ইঁদুর ফন্দি আঁটে মনে মনে।
সুচতুর ইঁদুরগুলো রেকি করে ঘরময়
আমার গতিবিধির ভাষা মুখস্ত করে
কখনো তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে প্রকাশ্যে
বিদ্রোহ করে কিংবা বিদ্রূপ করে আমাকে ।
ইঁদুরের সুচাগ্র ধাঁরাল দাঁতের কসরতে
ক্ষত বিক্ষত হয়—
জীবনানন্দ রবীন্দ্রনাথ কিংবা রফিক আজাদের
ভালোবাসার মলাটবদ্ধ বই ,
খামচে খেতে চায় মননের শুভ্র কানন।
ঘুমের সলিলে ভাসতে ভাসতে
যখন অচৈতন্য শয্যাসঙ্গী
ওর নিথর দেহের গন্ধ শুঁকে শুঁকে
হামলে পড়তে চায় সুঠাম বক্ষের মাঝখানে
শালা বেহায়া ইঁদুর—
যে বাগানের মালি হয়েও প্রাণ ভরে
ফুলের সুবাস নিতে পারিনি
বজ্জাত ইঁদুর সেখানেও ভাগবসায়।
ঘরে ঘরে ইঁদুরের উপদ্রব
দেশে দেশে ইঁদুরের আগ্রাসন
পৃথিবীটা একদিন ইঁদুরের দখলেই যাবে নাকি !
আগুন
মা উন্দালে মাটিরসড়া চাপিয়ে
খই-মুড়ি ভাজেন,
ধানের খোসা ফুঁড়ে বকুলফুলের মতো
খই-মুড়ি ফুটে ওঠে,
এক কড়াই ভাজাফুলের গন্ধে
উন্মাদনা আমার চোখেমুখে !
উনুনে সেই-আগুনের আঁচ
আজো লেপ্টে আছে দেহজুড়ে,
আগুনের আঁচে মায়ের শরীরের ঘ্রাণ শুঁকি;
জলের মতো
গায়ে প্রশান্তি মেখে দেয়।
সময়ের চৌকাঠ পেরিয়ে দেখি
চারিদিকে আগুনের লেলিহান শিখা,
হৃদয়ে দহন
ধরিত্রীর দেহজুড়ে দগদগে ঘা।
মা, আমাকে সেই-আগুনের পরশমণি দিয়ে যাও