[মনপ্রসাদ সুব্বা। দার্জিলিঙের কবি মনপ্রসাদ সুব্বা ভারতীয় নেপালি সাহিত্যের একজন অগ্রপঙ্ক্তির কবি-সাহিত্যিক। কবির ১০টি কবিতা সংকলন, একটি উপন্যাস, একটি রচনা সংকলন ও একটি আলোচনা সংকলন প্রকাশিত রয়েছে। ১৯৯৮ সালে কবিতা সংকলন ‘আদিম বসতি’র জন্য কবি সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার পান। এছাড়া, বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে কবি সম্মানিত হয়েছেন। কবির কবিতা ইংরেজি, বাংলা, হিন্দি, মৈথিলি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। নিচের কবিতাগুলো নেপালি ভাষা থেকে অনুবাদ করা হয়েছে।—বিলোক শর্মা।]
সাব অলটার্নের মাথা
‘Can the Subaltern Speak?’—Gayatri Spivak
তারা সব সময়
সাবঅলাটার্নের ভারী হেলমেট দিয়ে
আমার মাথা দমিয়ে রাখতে চায়।
হেলমেটের ওপরে
আকাশের অস্তিত্ব রয়েছে কি না
তা জানতে নেই সাব অলটার্নের!
আদেশ আমার কাঁধের ওপরে চড়ে
কত হুরমত আদায় করেছে
হিসাব নেই।
আদেশকে ঔদ্ধত্য দেখাতে
সাবঅলটার্নের বুক থেকেও কি
বেরিয়ে আসবে কোনো ওজনদার আওয়াজ?
বাহ! সাবঅলটার্নের স্যালুট
কত ঐশ্বর্যময়! কত সৌন্দর্যবোধপূর্ণ!
স্যালুট গ্রহণকারীরা ভেতরে-ভেতরেই গর্বিত বোধ করছেন।
আরে! কিন্তু আজ এ কী হলো?
অত পুরু হেলমেট ভেদ করে
সবুজ দুর্বারা যত্রতত্র বেরিয়ে পড়েছে।
বছরের পর বছর
লোহার তলায় দমিত থেকেও
মৃত্যুবরণ না করা অভিমতের দুর্বারা এখন
নিজের ভাগের আকাশে হাত বুলিয়ে চলেছে
এবার দূরে ছুড়ে ফেলবো এই হেলমেটটিকে
আমার আকাশ আমার কাছে নেমে এসেছে
আমার মাথাকে ভালোবাসায় আদর করতে।
(কিনারাকা আওয়াজহরু-থেকে)
আমার শব্দ
ফুলের পরাগে একটা অক্ষর খুঁজে পেলাম।
এক টুকরো পাথর আর এক চিমটি মাটিও আমার হাতে এসে অক্ষরেই পরিণত হলো।
আর এই অক্ষরগুলোর সঙ্গে
একবিন্দু ঘাম আর একবিন্দু অশ্রু মিশিয়ে
একটা শব্দের আকৃতি দিলাম
আর আমার প্রশ্বাসের গন্ধ মিলিয়ে
আমার স্বরের তরঙ্গের সঙ্গে ছেড়ে দিলাম।
আমার থেকে বেরোনোর পর
সেই শব্দ পুরোপুরি ভবঘুরেতে পরিণত হল।
যেখানে গেল সেখানকারই হলো।
যার সঙ্গে থাকলো তারই হলো। তবে কোথাও স্থায়ীভাবে থাকতে পারলো না।
আজকাল কোথাও তার সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ হলে কেবল সে-ই আমাকে চেনে।
আমি ভালোভাবে চিনতে পারি না তাকে।
কখনো-সখনো সে আমায় আওয়াজ দেয়।
কিন্তু তার স্বর অনেক ভিন্ন মনে হয় এখন। ভিন্ন হতেই থাকে।
একবার প্রশ্ন করলাম তাকে,
‘তুই কেন এভাবে বদলে যাস্, হুঁ, আমার শব্দ?’
সে মুখের ওপর উত্তর দিলো:
‘আরে! তুমিই বা কেন নিজেকে বদলাতে চাও না?
তুমি কি নিজেকে কখনো ন বদলানো ভগবান ভেবেছ?
নিয়মিত বদলেই আনন্দ রয়েছে।
নিয়মিত বদলেই তো গতি রয়েছে, তাই জীবন রয়েছে। বুঝলে?’
(ভুঁইফুট্টে শব্দহরু থেকে)
আমার ইতিহাসের কথা
তোমার মিথ্যা কথাগুলোর নখের আঁচড় দিয়ে
আমার ইতিহাসের পিঠ রক্তাক্ত করে দিলেও
বহু বছর আগেই সময় দিয়ে
ট্যাটু করে রাখা শব্দেরা
পিঠে পূর্ববৎ রয়েছে।
তোমার পায়ের সেকেন্ড হ্যান্ড বুটদ্বারা
আমার ইতিহাসের তালুকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করলেও
হাতের তালুতে অঙ্কিত থাকা
সেই স্পন্দিত রেখাগুলো
অল্পটুকুও ধুয়ে-মুছে যাবে না।
আমার ইতিহাসের মুখে যে জিহ্বাটি রয়েছে
তার আকৃতিটা আসলে আমারই গ্রামের মানচিত্র
আর সেই জিহ্বা দিয়ে
যে ভাষাই উচ্চারিত হোক না কেন
তার কথাটি কোনোদিন পরিবর্তন হবে না।
(কিনারাকা আওয়াজহরু থেকে)