0১.
বলতে খটকা নেই, আমি খুব বেশি আবেগপ্রবণ
প্রেমে পড়ি, তোমার-তোমাদের, যাদের উড়বার পাখা নেই
অত্যল্প শুদ্ধিতে ভুল করি তাই বার বার।
বলতে লজ্জা পাই না, এই অনুভূতি-ই জানান দেয়,
ভেতরের স্পন্দন; বলে আমি বেঁচে আছি।
আমি কোনো জড়পদার্থ নই
তাই বাঁচি সময়-অসময়ে
বুকের লাভ ডাব-ডুম-ডুম অবিরত
নিঃশ্বাস চলে
আলাপে প্রশংসা-পরিবাদ, তা-ও চলে
কারও ভেজা কাপড় রোদে উড়তে দেখে;
ভেতরও পুড়ে।
ভালোবাসি
সুন্দর, অসুন্দর, স্থায়ী-অস্থায়ী সব
লড়তে ভালোবাসি
লড়ে লড়ে কেবল ঘুমিযে পড়তে পছন্দ করিনা
কেননা, আমি শিশুর মতো সময়কে স্পন্দিত করি।
আমি আমার ভেতরের খামখেয়ালি শিশুটিকে
হারাতে চাই না, যে মেঘেদের কোলে হাসতে হাসতে
ফোঁটা হয়ে ঝরে পড়ে
এটাই আমি। এমনটা-ই আমি।
০২.
আজ পৃথিবী বন্দি হয়েছে ঘরে
আমার ঘরে, যেখানে ইগুয়ানার দলের সাথে
নীরবতা-আমার একমাত্র ভাষা
অশ্রু নয় টার্সিয়াসের বরফ টুকরো চোখে মোমের মতো-
গলে যায় আজ আমার অনুভূতি।
দুরন্তপনা শৈশব, কৈশোর
উন্মাদনায় নীল খামে গোলাপের লুকিয়ে থাকার গল্প
সে দুঃখ হোক বা খুশি-ছাইয়ের মতো স্মৃতি আমাকে
ঘিরে আছে দিবানিশি
আমি নিশ্চিত, শীঘ্রই তারা বাতাসের সাথে উড়ে যাবে।
না লেখা সাদা কাগজের পাণ্ডুলিপিগুলো
ধুলোর আবরণে বিধবা হবে-একে একে
গতকালের প্রেম, রিমঝিম শব্দ, গোধূলিবেলা
গতকাল কল্পনা করা হয়েছিল যে স্বপ্নগুলো,
সব স্থিতু হবে, একে একে হারিয়ে যাবে!
আধাঘুমন্ত মানুষ আমি তখন, ইগুয়ানাদের দৌড়ঝাঁপে
চোখ মেলে জীর্ণোদ্ধারে ক্ষিপ্তবৎ হবো।
০৩
এই যে আজকের আমি, জীর্ণ-শীর্ণ কায়ায়
দৌড়তে না পারা লতা-গুল্মে শ্যাওলা পরা বাকল
এমনটা হওয়ার কথা ছিল না
তবু চাঁদ হাসে আমার আকাশে অহরহ আহ্লাদে
পাখিরা গান গায়
হৃদয় তরঙ্গায়িত হয় কারো আস্থায়-স্পর্শের ব্যগ্রতায়
আমাকে নীলগ্রহের বাইরের কেউ ভাবার দরকার নেই
আমি তোমাদের মতোই
পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের বাইরে ভাবতে পারি-উপলব্ধিতে
আমার জীবন-যাপনের উপায় কেবল ভিন্ন-যা আমি
গ্রহণ করতে শিখেছি স্ব-ভোক্তা উপলদ্ধিতে
তাই মিথ্যে আশ্বাসে হৃদয়কে ক্ষত করি না।
০৪.
আধো আলোয় ঘেরা ছোট্ট কুঠুরি
তাতে ঝুলে আছে সাদার উপর জলছাপের-কয়টি পর্দা
পর্দার ভাঁজে জাল বিছিয়ে আছে তিনটি বছর-
মাকড়সার মতো
আমাকে এখানেই খোঁজে পাবে, এখানেই থাকি আমি
লাজুক বধূর মতো-ঘোমটা টেনে
আমি আমার রণের স্ব-ভোক্তা।
এই লড়াই চলমান অস্তিত্ব ধরে রাখার-তবু
আমি তো আমি-ই, যেমনই হই
তোমরা আমাকে হারিয়ে যাওয়া স্মৃতির মতো ছেড়ে যাও
সোনা ঝরা রোদ যেমন করে ছেড়ে যায় মেঘলা আকাশ
ঝড়ের গর্জন কঠিন ধ্বনিকে প্রতিধ্বনিত করলে,
তাল-লয় ছেঁড়া গান যেমন করে পানসে হয়ে যায়
তোমরা আমাকে ঠিক এবাবেই ছেড়ে যাও।
তবুও আমি আছি, যেমনই হই-তা নিয়েই আছি
অধিশয়িত ঝরা মেপলের পাতার মতো
নায়াগ্রার ক্ষিপ্র স্রোতে ভাসমান নিক্ষিপ্ত বাষ্পের মতো
হয়তো এখানে দাঁড়ানোর আর কোনো সুযোগ নেই,
কিংবা বলা যায় ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে এভাবেই থাকতে হবে-
আবর্তিত শুক্লাপক্ষ-কৃষ্ণপক্ষের অপেক্ষায়…
তবু আমি আছি, যেমনই হই-তা নিয়েই আছি
জীবন কেবল হিজল ফুলের লাল গাচিনা নয় জেনেও
রয়ে গেছি অগ্নুতাপ বুকে জীবনের অভ্যন্তরের
উত্তপ্ত ও গলিত পাথর,
ছাইয়ের ধ্বংসাবশেষ দেখার অপেক্ষায়।