চিন্তাসূত্র ডেস্ক
কলকাতার সুবীর মণ্ডল স্মৃতি সংসদ আয়োজিত ‘সুবীর মণ্ডল স্মৃতি পুরস্কার ২০২২’ পাচ্ছেন বাংলাদেশের কবি রাহেল রাজিব ও কলকাতার কবি পৌলমী গুহ। আগামী ৩ সেপ্টেম্বর কলকাতার কলেজ স্ট্রিটে তাদের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।
আয়োজকরা জানান, করোনার কারণে গত দুই বছর সুবীর মণ্ডল স্মৃতি পুরস্কার ঘোষণা করা হয়নি। এ বছর এ পুরস্কার দেওয়া হবে। এতে চল্লিশের নিচে বয়স এমন কবিরা তাদের নতুন পাণ্ডুলিপি পাঠান। তার মধ্যে রাহেল রাজিবের ‘কফিসূত্রে’ এবং পৌলমী গুহের ‘শূন্যের ভেতর’ পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েছে।
রাহেল রাজিব ১৯৮৪ সালের ২৩ অক্টোবর বাংলাদেশের দিনাজপুরের ফুলবাড়ি উপজেলার নাড়িমাটি কাঁটাবাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নেপাল, ভুটান ও ভারত ছাড়াও ঘুরেছেন ইউরোপের ৯টি দেশসহ মিশর ও তুরস্ক। কবিতা দিয়ে শুরু হলেও এখন সমান্তরালে গল্প ও গদ্য লিখছেন। তিনি জি এম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ফুলবাড়ি সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান), স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
সাংবাদিকতা দিয়ে পেশাজীবনের শুরু হলেও বর্তমানে অধ্যাপনা করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। তার কবিতার বই—অবচেতন মনে আগুনের ছোঁয়া, রাত্রিহর্ষক, জুঁইদি ও মাতাল প্রেমিক, বালিঘর, কাকতাড়ুয়াদের গোপন গ্রাম, পাকাপাকি (ছড়া), মুক্তগদ্য—সহজ কথা, অনুমেয় আঘাতের ক্ষত, নানাকথা, প্রবন্ধের বই—কথাশিল্পের করণকৌশল, রহু চণ্ডালের হাড় ও অন্যান্য প্রবন্ধ, পাঠ উন্মোচনের খসড়া, গবেষণাগ্রন্থ—শওকত আলীর ছোটগল্প : বিষয় উন্মোচন ও ভাষার অন্তর্দেশ, কাহলিল জিবরানের দ্য প্রফেট : বিষয় ও শিল্পরূপ, বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় : জীবনের ধ্রুবপদ দিয়েছে বাঁধি, সাক্ষাৎকারগ্রন্থ—গুণিন কথা, ষষ্ঠ বাহাস, গুণিনে অনুনয় প্রভৃতি।
এর আগে তিনি গ্লোব সাহিত্য পুরস্কার-১৯৯৯, বগুড়া লেখক চক্র পুরস্কার-২০১৮, সৈয়দ শামসুল হক চর্চা কেন্দ্র সম্মাননা-২০১৮ ও কফি হাউসের চারপাশে সম্মাননা, কলকাতা-২০১৯ পেয়েছেন।
পুরস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতি জানাতে গিয়ে চিন্তাসূত্রকে কবি রাহেল রাজিব বলেন, ‘পুরস্কার বা সম্মান আনন্দের একইসাথে এটি দায়িত্ববোধের। একজন লেখক হিসেবে এইসব স্বীকৃতি আমাকে প্রতিনিয়ত নিজের লেখার প্রতি আরও বেশি নিবিষ্ট করে। দেশের বাইরের এ স্বীকৃতি নিঃসন্দেহে আমাকে আমার কাজ ও লেখায় আরও বেশি প্রেরণা ও উৎসাহ জোগাবে। পুরস্কার সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই সুবীর মণ্ডল স্মৃতি সংসদের সংশ্লিষ্ট সবাইকে। তারা ‘কফিসূত্রে’ পাণ্ডুলিপিকে স্বীকৃতি প্রদান করেছেন।’
পৌলমী গুহ ১৯৯৫ সালের ১০ আগস্ট আলিপুরদুয়ারের বীরপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব কেটেছে শিলিগুড়িতে, পরে জটেশ্বরে। তিনি ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। কলেজজীবন থেকেই লেখালেখিতে হাতেখড়ি। তার প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় ‘মধ্যবর্তী’ পত্রিকায়। এরপর বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখা প্রকাশ হয়েছে। তার একটি ছোট এক ফর্মার বই প্রকাশ হয়েছে ‘শিশির শিকারের পর’ নামে। বর্তমানে তিনি পেশার সূত্রে কলকাতা নিবাসী। তিনি বিজ্ঞাপন জগতের সঙ্গে যুক্ত। এটিই তার প্রথম পুরস্কার।
পুরস্কারপ্রাপ্তি সম্পর্কে চিন্তাসূত্রকে কবি পৌলমী গুহ বলেন, ‘আমি নিজে সত্যি বলতে কিছু পাওয়ার জন্য লিখিনি কোনোদিন। লেখা আমার কাছে ভীষণ পবিত্র একটা ব্যাপার, অনেকটা সাধনার মতো। তাই যখন পুরস্কারের কথা জানতে পেরেছি, খুব বিস্মিত হয়েছিলাম যে আমার মতো একজন নগণ্য মানুষকেও এত সম্মান দেওয়া হয়েছে। খুবই খুশি হয়েছি। কারণ যাঁর নামাঙ্কিত এই পুরস্কার, তিনিও লেখার জগতের এক সম্মানীয় ব্যক্তিত্ব। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার নয়।’
এর আগে ২০১৪ সালে শ্যামসুন্দর মুখোপাধ্যায়, ২০১৫ সালে সপ্তর্ষি বিশ্বাস, ২০১৬ সালে তারেক কাজি, ২০১৭ সালে সম্রাজ্ঞী বন্দ্যোপাধ্যায়, ২০১৮ সালে অর্ণব রায়, ২০১৯ সালে অনুরাধা বিশ্বাস এ পুরস্কার পেয়েছেন।