রমণী রান্না করে ভালোবাসা
সেই শুভ্রমণী ডুবে থাকে সমস্ত কল্যাণে
সুরুচিপূর্ণ উর্বর সংসারে
মানুষের আড়ালে অন্যরকম এক মানুষ নিয়ে।
পতেঙ্গার সন্ধ্যায় সুশ্রী শামুকের মালা
কী সুন্দর জড়িয়ে থাকে নরম চরের মতোন তার মসৃণ গলায়
ফয়’স লেকের চত্বনীপাহাড়ে রমণী রান্না করে ভালোবাসা
ভালোবাসার অন্যরকম চুলোয় আগুনের পরিবর্তে নূপুর বাজে
আয়নার মতো ঝকঝকে কাঁসার পাত্রে নিশ্চিন্ত বিশ্বাসের সাহসে
ইচ্ছের সব রান্না সাজায় প্রিয় পাখিটির জন্য
একদিন পাখিটি উড়াল দেয়
দু চোখে বেদনা লেপে সেই শুভ্ররমণী জেগে থাকে জেগে থাকে
শ্যামলী
শ্যামলী, তুমি কাকে জড়িয়েছ শরীরে
ভালোবেসে প্রচুর সুরভি আর সৌন্দর্য ভেবে!
এখানে গোধূলির রক্তিম আকাশ গিয়েছে ঢেকে
ছলনার রঙে;
ভরে গিয়েছে কংক্রিটে জীবনের মসৃণ পথ
কুষ্টিয়া ঢাকা চট্টগ্রাম বেশ পথ
হাঁটা হয়েছে আমার,
হাঁটা হয়েছে আমার এরকম সুদীর্ঘ শহর পথ
দেখিনি কখনো এক টুকরো শান্তি মুখ।
বিক্ষুব্ধ তরঙ্গ প্রেম শব্দটির বুকে
শুধু দীর্ঘনিশ্বাসে দুর্গন্ধ
শুধু ভুল বোঝাবুঝি
শুধু হেমলক পয়জন।
শ্যামলী, তুমি যাকে জড়িয়েছ শরীরে
সেখানে কি পেয়েছ একমুঠো প্রকৃত বিশ্বাস
প্রকৃত সুগন্ধ?
একদিন প্রেমিকের মধু সম্ভাষণ
ফণাধারী সাপের ছোবল হয়ে দেখা দেয়
একদিন প্রেমিকের দশটি সুকোমল আঙুল
ঘাতকের হাত হয়ে দেখা দেয়
গোলাপের ভাঁজের মতো তাজা কণ্ঠনালীতে
তার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে
ঘেউ ঘেউ চিৎকারে কোনো এক ক্ষ্যাপা কুকুর
সেখান থেকে কি বেঁচে ওঠা যায়?
বাঁচলেও ‘ভালো আছি’
থাকে কি এরকম সাহস কোনো?
দুর্গন্ধে নন্দিত জীবন
আমি এখন নরকের সবক’টি দরজা খুলে
সাহসী সম্রাটের মতো বিজয়ীর বেশে
হাতে তুড়ি দিয়ে হাসতে হাসতে দিব্যি
হেঁটে যেতে পারি সুদীর্ঘ অগ্নি নরকী সড়ক।
কোনো এক কবিতার পুরনো স্বরলিপির মতো কিংবা
কোনো এক নদীর কাতর কণ্ঠ ঝিমানো স্রোতের মতো
উচ্চারণ করে ফেলি ভুল করে আজো :
যেখানে সবচেয়ে বেশি ভালোবেসে সবচেয়ে বেশি ভালো থাকা যায়
সেখানে ব্যক্তিগত নীলিমায় ভালো থেকো তুমি;
যেখানে স্বপ্নেরা ধরা দেয় পাথর হিম রক্ত মুঠোয়
সেখানে আমি এবং আমার কবিতা শুয়ে আছি
ভালোবেসে পাহাড় অরণ্য তামাটে বুক দুঃখী এক নদীর ঘাট
সেখান থেকেও আমার কবিতা অভিমানে মুখ ঢেকে আজো বলে :
তার চেয়ে সেই ভালো সেখানেই থাকো তুমি
সেখানেই ভালোবাসার নামে ভালো থেকো;
যে ভালোবাসা আর ভালো থাকার ভেতর নষ্ট হয় না নারীরা কোনোদিন।
শুধু এই আমি নষ্ট হয়ে গেছি তোমার চোখে
তোমার চোখে এ আমি পাপের সন্তান;
আমিও গর্বে সগর্বে ঘোষণা রাখি তোমাকে :
নরকে দিব্যি আছি নরকী শ্রেষ্ঠ সম্রাট আমি।
দুঃখ, ভালোবেসে পরেছিল লাল বেনারসি
দুঃখ, ভালোবেসে পরেছিল লাল বেনারসি
কাজল মেখেছিল দু’চোখে
ঠোঁটের কার্নিশে এঁকেছিল শিশির তৃষ্ণা
খোঁপার কুসুমে গেঁথেছিল তিনটি রক্তজবা।
কুমারী শরীরের মতো বেড়ে উঠেছিল দুঃখ
দুঃখ, স্বপ্ন দেখেছিল আড়াই হাজার বছর ধরে
বুকের অরণ্যে ইচ্ছেমতো একটি ঘাসফুল বুনবে বলে
বুকের জমিনে ইচ্ছের সবটুকু রঙ বুনে একান্ত একটি ফুল ফোটাবে বলে।
দুঃখ, ভালোবাসার নামে সেজেছিল জীবনের সব রাত
পরেছিল লাল বেনারসি
চোখে মুখে ফুটেছিল মুক্তোর চেয়ে দামি বিন্দু বিন্দু কষ্ট ঘাম
প্রতীক্ষার সুদীর্ঘ পথে তবুও সে হয়েছে আহত স্বপ্নের ছুরিতে।
কামনার উর্বর জমিনে জীবন পেয়ে বসে দুঃখ
কাঁচা হলুদের মতো মুগ্ধতায় কেঁপে ওঠে
মধ্যরাতের লাল গালিচা প্রেম,
মনে হয় এই বুঝি যায় খুলে দুঃখী কপালের দ্বার।
জ্যোৎস্না ধোয়া এক গুচ্ছ ঘাসফুল বুকের ফুলদানিতে সাজিয়ে
দুঃখ দাঁড়িয়ে থাকে কালো জলে ভেজা এক পাথর সড়কে
স্বপ্নের আঁচলে বেঁধে এক সাবজিক সাধ,
যদি কখনো ভুল করে ফিরে আসে সেই নিখাদ প্রাচীন পথিক।
আত্মাহুতির অহংকার
উৎসব শেষে এও এক আত্মাহুতি
এও এক দুঃখ দুঃসহ যন্ত্রণা
বুকের গভীরে এও এক শাণিত বেদনা
এখন কেবলি যে যার মতো ঘরহীন ঘরে ফেরা।
জীবনের চতুর্দিকে পুরনো বসতবাড়ি স্মৃতির হিম অ্যালবাম
ধূসর উদ্বিগ্ন আতঙ্কিত জীবন যাপন।
ক্যাম্পাসে আমতলা সবুজ ঘাসের গালিচা
ক্যাফেটেরিয়া কিংবা সিমেন্টের বেঞ্চ অথবা
শহিদ মিনারে জ্বলজ্বলে উজ্জ্বল সারাটা দুপুর
কখনো কখনো সাবাস বাংলাদেশের পাদদেশে
চেতনা উজ্জীবিত সাহসী যুবক, আবার
সন্ধ্যায় প্যারিস রোডে
প্রিয়তমা নারীর হাত ধরে জীবনের অঙ্ক কষা
মাঝে মাঝে ভার্সিটির গাড়িতে কবিতার সংলাপ
রবীন্দ্র নজরুল কিংবা শামসুর রাহমান ওমর আলী।
সে জীবনের কাছে আর ফেরা হবে না আমাদের
আমরা ধূসর চিন্তায় ক্লান্ত
বুকের অরণ্যে এখন কেবলি ব্যর্থতার নীল দীর্ঘশ্বাস
নিহত ইদানীং কেউ কেউ
সোনালি রৌদ্রে স্নানরত ডাহুকী নারীর ডাগর চোখের
শাণিত ছুরিতে
ডাস্টবিনে পচে পচে গলে যায় সুবর্ণ সময় সুরভি সুঘ্রাণ
ভালোবাসার সোনালি শিকলে বাসা বাঁধে
বিষধর নীল সাপ যেন দুঃস্বপ্ন নাগিনীরা সব।
জীবনের চোরাবালিতে
কোথায় কোন শহরে হারিয়ে যাবে পাবনার মিজান
সাংবাদিকতার কলম পিষতে পিষতে মুখ গুঁজে পড়ে থাকবে
কোন পত্রিকা অফিসে যশোরের হুসাইন নজরুল
যন্ত্রণায় আছাড়ি বিছাড়ি প্রেমে ব্যর্থ প্রিয় সুরুজ সোহরাব
হাসি খুশি ঈমান হয়তো ডুবে যাবে
কোনো এক মোটা তাজা সুন্দরী নারীর নেশায়, আর
প্রিয়তমা নারীর অপেক্ষায় আজন্ম দণ্ডিত যুবক রংপুরের শফিক
জীবনের কঠিন বাস্তবতায় দু’হাতে বুক চেপে
ঠোঁট কামড়ে পথ হাঁটে খুলনার রফিক;
আর হিসেব বোঝে না অতশত
শুভ্র সাহসী প্রেমিক কুমারখালীর মধু
শূন্যতার যন্ত্রণা বুকে করে ইদানীং কবি হতে বসেছে বন্ধু রুবেল
এভাবে আর কতদিন এসব করুণ উৎসব ধূসর গান
চোখ ভেজা নৃত্য দোলা!
স্বপ্নের আকাশে কোন ঘুণ পোকা পেতেছে সংসার
উৎসব শেষে আমরা কোনদিকে যাব
কোন দিকে আমাদের সঠিক গন্তব্য
আমরা কিছুই জানিনে তার
ভুল ঠিকানায় যেন বিবর্ণ সংসার আমাদের
সুন্দরী নারীদের আঁচলে বাঁধা সিকি আধুলির মতো
পরাধীন প্রিয় জীবন উৎসর্গ।
উৎসব শেষে এও এক আত্মাহুতি
এও এক দুঃখ দুঃসহ যন্ত্রণা
কোন দিকে আমাদের সঠিক গন্তব্য
কিছুই জানা নেই আজ আর
দলিলে সই নেয় না
আমি এক অদৃশ্য নগরে নিজস্ব ঘরবাড়িতে চলে যাব
গুছিয়ে নেবার মতো তেমন কিছুই নেই,
যারা এসেছ উত্তরাধিকারের দাবি তুলে
অংশীদারের হিসেব কষে দলিলপত্র হাতে
যে যার মতো পাওনা চুকে নিতে কড়ায় গণ্ডায়।
হিসেবের খাতা খুলে দেখি
এ সংসারে সবকিছুই সাদা রয়ে গেছে আমার
সঞ্চিত হয়নি কিছুই
শুধু কিছু দুঃখ রয়ে গেছে বুকের বাম পাশে;
কে নেবে এসো; সই করে দিই দলিলের বুক জুড়ে।
সবাই মুখ নিচু করে থাকে
দলিল বেরোয় না কারো পকেট থেকে…
ভালোবাসার পোস্টমর্টেম
পাখিটা পড়ে থাকে হিম পাথরের মতো
তার কপাল এবং বুকে অসংখ্য সেলাইয়ের দাগ
ক্ষত বিক্ষত এই পাখিটা
এখন একেবারে চুপ হয়ে গেছে
থেমে গেছে জীবনের সব গান।
এই বুকে এই কপালে একদিন ভালোবাসার নামে
প্রিয়তমা নারীর রেশমি হাতের মধুর পরশ ছিল,
ঠোঁটের স্পর্শে চুম্বনের নামে সেখানে একদিন
শাপলার মতো ফুটে ছিল জীবনের দিঘিতে স্বপ্নের ভাস্কর্য।
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে অভিমানে ভাসাত বুক
এই বুকে মুখ রেখে কোনো এক কুসুম কুমারী;
এই মুখ আজ নীরব হয়ে গেছে পাথরের মতো
পাথরের মতো পড়ে আছে বেদনায়
ভালোবেসে কেউ ডাকে না আর।
নির্জীব পাথরের মতো পাখিটা
পড়ে আছে অবজ্ঞার উঠোনের এক কোণে;
পাখিটার বুক জুড়ে কপাল জুড়ে জেগে আছে
অসংখ্য সেলাইয়ের দাগ
ভালোবাসার নামে এও এক অন্যরকম চুম্বনের দাগ কি না
জানি না এও এক অন্যরকম পাথর অভিমান কি না…
প্রিয় পাখিগুলো যখন নক্ষত্র
কোথায় যেন হারিয়ে গেল সোনামুখ সুন্দর মানুষগুলো
ধুলোমাখা কাদামাটি মমতাভরা আঁকাবাঁকা পথ খুঁজে
পাই না তাদের—উড়ে গেছে রঙধনু আসমানে
ফুল-পাখি প্রজাপতি উৎসবে তাদের দেখি না আর
অনুষ্ঠান মিটিং মিছিল নদীঘাট স্কুলমাঠ
বাড়ির উঠোন কোথাও না
একদিন তারা এই মাটিতে পাখিদের মতো উড়ে বেড়াত
ছড়াত সৌরভ ফুলের মতোন—ঘুরত দু চোখে বুনে উদারতা
তারা এখন নক্ষত্র—আলো জ্বলজ্বল জোনাকি আকাশ
কোথায় হারিয়ে গেল সোনারঙ পাখিরা আমার
খুঁজি আমি কেঁদে কেঁদে পথে পথে
নদীঘাটে দাঁড়িয়ে দুর্গা ঠাকুরের সাথে এখনো তো কথা বলছেন
কথার শিল্পী আকবর হোসেন—দত্তপাড়ার পথে
এখনো তো দেখি দিব্যি হেঁটে যাচ্ছেন ব্রজেন বিশ্বাস
কারিকর পাড়ায় হাঁটতেই জলা বিশ্বাস
‘কিরে কেমন আচিস? কবে আইচিস’?
মণ্ডলপাড়ার দিকে পা বাড়াতেই কণ্ঠ হোসেন মণ্ডলের
‘কি নানা চাকরি-বাকরি হলো?’ আমি তো দিব্যি দেখি বাড়ি বাড়ি
খবর নিয়ে ফিরছেন ছাতা মাথায় লাচন আলি মেম্বার
আমি তো দৌড়াচ্ছি এখনো খেলার মাঠে নুরাচাচা চিৎকার করে
দুহাত মাথার ’পর তুলে বলছেন, আরো জোরে আরো জোরে…
রাজসিক চেহারার আজিজ টাণ্ডেল দারুণ দাপটে ঘুরছেন
বাজারের এ-মাথা সে-মাথা—চায়ের দোকানে শুদ্ধ উচ্চারণে
গল্প করছেন আবদুল জলিল—সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে আমি
চলে যাই নদীর ঘাটে নৌকোর ছৈয়ে
মালিথাপাড়ার বটগাছের কাছে দাঁড়িয়ে আমি তো এখনো শুনি
সাদেক মালিথা বলছেন, ‘কী গো শ্বশুর…’ সুরত আলি চাচা
কাস্তে হাতে হেঁটে বেড়াচ্ছেন ফসলি জমির দিকে
আনসার আলি আমাকে কাছে ডেকে নিয়ে এখনি
বললেন, ভার্সিটি তো কাল খুলেছে, রাজশাহী যাওনি?
তারপর তার একটি দীর্ঘশ্বাস ভেসে গেল নদীর দিকে
হিসাবের খাতায় মগ্ন ব্যাংকার আনছার আলি
তার সামনে যেতেই বললেন, ‘পড়ালেখা ঠিকমতো করছো তো’?
আমাকে দেখেই কাছে ডাকলেন অসুস্থ আফতাব দোকানদার
মসজিদের এককোণে তসবি হাতে বসে আছেন কাঞ্চন বিশ্বাস
অনুজতুল্য রায়ডাঙার আবুল বিমর্ষ পাখি এক—কেঁদে কেঁদে
উড়ছে গাঁয়ের পথে—জবাফুলে ছেয়ে থাকা ঘরের পোটনিতে হঠাৎ
আমাকে দেখেই কী যে খুশি হয়ে পাশে এসে বসে অনুজা শিরিন
জুঁইফুলের মতো হেসে বলল, ‘মেজোভাই কেমন আছেন’?
আমি তো এখনো হাঁটি হানেফ ভাইয়ের হাত ধরে
বিদঘুটে অন্ধকার লেপা আঁকাবাঁকা সব পথ,
জোড়াবেঁধে ঘুরে বেড়ানো আদুরী ফরিদা বোন উঠোনে বসে
এখনি বলল, ‘মাজিভাই আমাক তো একদিনও দেখতি
গেলিনি’ অভিমানে ভিজে ওঠে পাখিটির দু চোখ
প্রাণের পাখিরা কাঁদি আমি তোমাদের জন্যে
স্মৃতিভরা এইসব পথে
জবাফুলের গাছের নিচে বসে পড়ছি গুরুপদ দত্তের কবিতা আর
ও বসে আছে জড়োসড়োভাবে আমার গাও ঘেঁষে,
উত্তরভিটের বারান্দায় শুয়ে আছেন অসুস্থ জুব্বার মিস্ত্রি
‘দাদা কেমন আছেন’?—জিজ্ঞেস করতেই কেঁদে ফেললেন
হাত ধরে—তার দু চোখে সমুদ্র
আমার মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করছেন বিষ্টু ঘোষ
করিম তাঐ মানা ফুপা বিনোদ আলি… মাথা নুয়ে
ভেজা পাখির মতো আমি তো দাঁড়িয়ে আছি এখনো
মিশে গেল মাটিতে এসব সোনার মানুষ
এই মাটিতেই বুক পেতে কাঁদি তোমাদের খুঁজে
বড় চাচা হাকিম শেখ ডালির ভেতর আমাকে বসিয়ে মই দিচ্ছেন
চারা ধানের জমিতে—ভয়ে ডালি ধরে কাঁপছি এখনো
পিতামহ গণি শেখ ফিরছেন মাঠ থেকে বৃষ্টিতে জবুথবু সাহসী পাখি
জনিরুদ্দিন আয়নুদ্দিন দাদার কাঁধে চড়ে এখনো
ঘুরে বেড়াচ্ছি সবুজ গ্রাম আর শস্য ফুলের গন্ধমাখা মাঠের পর মাঠ
সবুজ ফসল ফুল-পাখি রোদ বৃষ্টির সাথে ঢেউ খেলছে রঙিন সময়
ক্ষুধায় চোঁ চোঁ করছে পেট তবু ঘরে ফেরার সময় নেই
মা ব্যাকুল হয়ে খুঁজছেন টো টো করে ঘুরে বেড়ানো এই আমাকে
আমি তো দিব্যি শুনতে পাচ্ছি, ‘বাপ, আর কত জ্বালাবি?
আসি ভাত খ্যায়া নে কচ্চি’
কোথায় হারিয়ে গেল জননী আমার—কোথায় হারিয়ে গেল
সোনাপাখি উৎসব—খুঁজি আমি কেঁদে কেঁদে পথে পথে
দুঃখময়ী শ্যামবর্ণ রাত
মানুষ এখন যেন প্রাণহীন বধির পুতুল
শামুকের মতো লুকিয়ে নিচ্ছে নিজেকে
নিজের ভেতর—ভুলগানে জেগে থাকে শুধু শুধু
দুঃখময়ী শ্যামবর্ণ রাত
দোয়েল পাখিটি কেঁদে কেঁদে ফিরে যায়
দুঃখিনী গড়াই জেগে থাকে বিধবার মতো
কচুরিপাতার মতো টানা টানা চোখের বউটি
প্রতিদিন একাত্তর শকুনের ঠোঁটে
শহিদ মিনার দাঁড়িয়ে থাকে ক্ষত শরীরে
পথের প্রাচীর ঘেঁষে—আবর্জনা দুর্গন্ধে অবহেলায়,
চোখের শিশির ভেঙে আসে না এখানে
পাখিদের প্রভাতফেরি ‘আমার ভাইয়ের রক্তে
রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি …’
নতুন প্রাণের আনন্দে অন্তঃসত্ত্বা নারীর মতো
কতদিন হেসে ওঠে না সবুজ মাঠ নদী-নালা
বাউলের একতারা—ভুলগানে জেগে থাকে
শুধু শুধু দুঃখময়ী শ্যামবর্ণ রাত;
কেউ অন্ধকার ভেঙে দাঁড়ায় না বুক পেতে
প্রাণহীন বধির পুতুল যেন মানুষ এখন।
জানি তবু একদিন সব আঁধার মুঠোয় ভরে
জেগে উঠবেন একালের কোনো এক
বিপ্লবী বাঘা যতীন
জীবনযাপন
একমুঠো আলো খুঁজি—খেয়েপরে বাঁচার মতোন সাদাসিধে
ভবিষ্যৎ খুঁজি—আঁধারে নিজেকে নিজের দু হাতে…
বাড়িঅলা বাসা ছাড়ার তাগিদ দিচ্ছে ক’মাস থেকেই
বৃদ্ধ বাবার জন্যে টাকা পাঠানো হয় না এখন আর
মায়ের খোঁজ জানি না—অসুস্থ বাচ্চা পুড়ছে জ্বরের আগুনে
বারোভূতে লুটে নেয় মাটি মেয়ে সোনামুখ
বউটার মন ভালো নেই—শুকিয়ে গেছে কবুতর শরীর
ঘর ছেড়ে গেছে কেজিদরে মাদাম বোভারি আন্না কারেনিনা
সঞ্চয়িতা দি গড অব স্মল থিংকস সাধক বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ…
বাজারের ব্যাগে তেলাপোকার বাড়ি—ঋণের বোঝায়
পা’র কাছে নুয়ে পড়েছে মাথাটা
দৈত্যের মতোন ভয়ংকর হাতে ভাঙি
আত্মজার মাটির ব্যাংক—যেন সিঁধেল চোর নিজেই নিজের ঘরে
কাঁটাতারে ঘেরা জুয়াড়ি জীবন
এভাবে আঁধার ভেঙে ভেঙে কতদূর হাঁটা যায়
বারবার ঘুরপাক খাই অন্ধকারে
একমুঠো আলো খুঁজি—খেয়েপরে বাঁচার মতোন