তোমার ছায়া হবো
যখন প্রভাতের প্রথম সূর্যকিরণ
ছুঁয়ে দেয় তোমার দীঘলকান্ত অবয়ব—
আমার খুব ঈর্ষে হয়।
কোনো জড়তা ছাড়াই ওরা ছুঁতে পারে তোমায়।
তুমুল হর্ষে নেমে আসা বৃষ্টির তীক্ষ ফোঁটাগুলো
যখন তোমার ঘন কালো চুল বেয়ে চিবুক ছুঁয়ে
নেমে যায় লোমশ বক্ষে—
আমার ভীষণ কষ্ট হয়।
আমার সকল ইচ্ছেশক্তিকে এক করে
যত্নে গড়া ভালোবাসার ছোট্ট ডিঙায় ভেসেও আমি
আমি ছুঁতে পারি না তোমায়।
বেপরোয়া দখিনা বাতাস—
এলোমেলো করে দেয়
ঘাড় অবধি নেমে আসা
তোমার বাবড়ি দোলানো চুলগুলোকে।
অথচ—অথচ ওগুলো অবিন্যস্ত হওয়ার কথা ছিল
আমারই আঙুলের ছোঁয়ায়।
ওই বেহায়া বাতাস—
যেভাবে মৃদু ঢেউ তুলে দেয়
তোমার গেরুয়ারঙা শার্টে–
আহা! যদি আমি দখিনা বাতাস হতাম!
খাঁচায় বন্দি তোমার লাল মুনিয়াটা—
কত যে নিশ্চিন্ত তোমার উষ্ণ আদরে!
সকাল—বিকেল তোমার সাথেই থাকা ওর।
তখন তাকে বড্ড আহ্লাদী দেখায়—যখন
আলতো হাতে ছুঁয়ে দাও
ওর রঙিন ঠোঁট, নরম পালক।
খুব ইচ্ছে আমার—
ওই লাল মুনিয়াটা হই।
কোনো একাকী মুহূর্তে
মনের ভেতর জমে থাকা
তোমার রিনরিনে কষ্টগুলো—
তোলপাড় করে ঝড় তোলে ওই বুকে,
হায়! কেন তোমার ব্যথা হতে পারলাম না!
আমার খুব হিংসে হয় তোমার ছায়াটাকে,
সারাটাক্ষণ তোমার সাথেই
গভীরভাবে লেপ্টে থাকা ওর।
এমনকি—এমনকি যখন ঘুমিয়ে থাকো
শুধু সেই থাকে তোমার একান্ত সাথী হয়ে।
আর জনমে তোমার ছায়া হয়েই জন্ম নেবো আমি।
ইচ্ছে
ইচ্ছে—হবো সকালবেলার
নরম সোনালি রোদ্দুর
ইচ্ছে নিযুত ঢেউয়ের তালে
হবো নীল সমুদ্দুর।
ইচ্ছে—ফুটবো গোলাপ করবী
হাস্নাহেনার ডালে
ইচ্ছে মৃদুলা দখিনা সমীর
হয়ে দোলা দেই পালে।
ইচ্ছে—উড়বো হয়ে দিনমান
সাতরঙা প্রজাপতি
ইচ্ছে দু’হাতে আলোক ছড়াই
হয়ে দেবী সরস্বতী।
ইচ্ছে বিষম চিরতরে ভাঙি
শোষকের কালো হাত
ইচ্ছে হই ক্ষুধার পাতেতে
শিউলির মতো ভাত।
ইচ্ছে—খুকির তুলতুলে গালে
রোদ হয়ে খেলা করি
নিদ নিয়ে আসি নিশিরাতে হয়ে
লালপরী, নীলপরী।
ইচ্ছে—বহাই ধরণীর বুকে
শান্তির সুবাতাস
হবে একদিন ইচ্ছের কাছে
জরা, ক্ষুধা, ক্রোধ নাশ।
আমায় একটা আকাশ দেবে?
আমায় একটা আকাশ দেবে? সুনীল আকাশ?
শঙ্খচিলের মতোই সেথায় ভাসবো আমি
উড়ে উড়ে ক্লান্ত হলে তোমার বুকেই আসবো ফিরে
যেমন ফিরে দিনের শেষে ক্লান্ত পাখি আপন নীড়ে।
মিষ্টি রোদের সকাল হবো
ঘুম ভাঙাবো আলতো চুমে কপোল জুড়ে।
নীল বেদনায় সিক্ত তোমার রিক্ত ও মন
অমৃতোসম ধারার মতোই রিমঝিমিয়ে পড়বো ঝড়ে
বুকের পরে, ভাসিয়ে নেবো কষ্টগুলো।
দেবতা আমার, গঙ্গাধারার পবিত্রতায় শুদ্ধ করে
নিজ অঙ্গেতে মাখবো তোমার মলিন ধুলো।
দেবে তোমার সবটা আকাশ? রাত্রিকালে—
হীরক দ্যুতির উজ্জ্বলতায় রাঙিয়ে দেবো,
আমি শুধু একটুখানিই স্বপ্ন নেবো।
আমি বঙ্গবন্ধুর কথা বলছি
আমি ভোরের স্নিগ্ধতা মাখা
সদ্য পাপড়ি মেলা গোলাপের দিকে তাকাই।
সেখানে তোমাকে দেখতে পাই।
পূব দিগন্তে সিঁদুরে আবির মাখা
প্রদীপ্ত প্রভাত রবির দিকে তাকিয়ে
তোমাকেই দেখতে পাই।
ফসলের সম্ভারে নত আদিগন্ত বিস্তৃত
সবুজ প্রান্তরের দিকে তাকিয়ে
অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করি—
প্রতিটি দানায় তোমারি নাম লেখা।
মধ্য দুপুরে শীতলক্ষায় সাঁতার কাটা
দুরন্ত কিশোরের পুরোটা অবয়বে
তোমারই প্রতিচ্ছবি।
ঘর্মাক্ত শরীরের ক্লান্ত জীবন বয়ে চলা
শ্রান্ত রিক্সাচালক কিংবা
কারখানায় কাজ করা প্রতিটা মলিন মুখ
তোমার অপরিহার্যতার কথা বলে।
ঝাঁঝালো স্লোগানে মুখরিত রাজপথ
দুর্নীতিমুক্ত দেশ চাই, সড়কে নিরাপত্তা চাই,
ভীতিমুক্ত শিক্ষাঙ্গন চাই—
তোমার অত্যাজ্য অস্তিত্বকে প্রবলভাবে স্মরণ করিয়ে দেয়।
অনেক উঁচুতে পতপত করে উড়তে থাকা
সবুজ আর লালের স্বপ্নীল পরিচয়টি
তোমার প্রতি কৃতজ্ঞতার গান গায়।
সাঁঝের আকাশে নিশ্চিন্তে নীড়ে ফেরা পাখির ঝাঁক
তোমারি নামের বন্দনা গীতি করে।
এতসব কিছুর মাঝে
একমাত্র আমিই যেন বেসুরো একজন।
ধানমন্ডির ৩২ নম্বর, রক্তে ভেজা সিঁড়ি,
কালো ফ্রেমের মোটা চশমা,
রক্তজবার রঙে রঞ্জিত তোমার সাদা পাঞ্জাবী—
আমাকে প্রবল অপরাধী করে তোলে।
মনে করিয়ে দেয় এক বেঈমান জাতির কলুষিত ইতিহাস।
লজ্জায়, লজ্জায়, ঘৃণায়, বিষন্নতায় কুঞ্চিত হয়ে উঠি,
আমি যে এ জাতিরই অংশ!
পিতা, আমি তোমার কথা বলছি।
আমি বঙ্গবন্ধুর কথা বলছি।
আমি সাত কোটি জনতার অস্তিত্ব রক্ষাকারী
সেই অমোঘ কণ্ঠস্বরের কথা বলছি-
যা উচ্চকিত হয়ে সাত সাগরের ওপার থেকে
এনে দিলো বহুল কাঙ্খিত স্বাধীনতা,
একটা স্বাধীন ভূ-খণ্ড, একটি স্বর্গীয় সংগীত
আর দেদীপ্যমান এক পবিত্র নিশান।
ডাক্তার
সুন্দরপুরে এক
টেকো মাথা ডাক্তার
মেরেছে শতেক তবু
বহু নাম ডাক তার।
জ্বরে ধরাশায়ী কোনো
রোগী এলে ধমকায়
পথ্য লঙ্কা জল
শুনে পিলে চমকায়।
ব্যথা বুকে? রাঙা চোখে
কষে দেয় থাপ্পর
কানে ধরে উঠবোস
ভয়ে রোগী মরমর।
ফেটেছে পায়ের গিরে
একি মহা ঝঞ্জাট!
ডাক্তার বলে তারে
হাতে ভর রেখে হাট।
ওবুদের ছোট খোকা
সর্দিতে সর্দিতে হাঁস-ফাঁস
দেখে বলে ডাক্তার
গোবরের পিঠে খাস।
বুক করে ধড়ফড়
বাড়ে হৃদ কম্পন
ফেলে দিতে হবে হার্ট
লিখে প্রেসক্রিপশন।
হলো বা মরণ ব্যধি
করিসনে এত ভয়
চিরতরে যাবে সেরে
হেসে ডাক্তার কয়।
একে একে বল সবে
কে কী রোগে ভুগছিস
আমি আছি ডাক্তার
আমাকে খবর দিস।