চাঁদ-সরোজে বাড়ে অব্যক্ত কথার মনস্তাপ
একটি বিষয় তোমাকে হয়নি বলা —
ঘানার বাজার থেকে কেনা যে মুখোশগুলো ঝুলিয়েছি দেয়ালে
তাদের অক্ষিগোলকে রাত-নিশীথে জমে ওঠে জল,
যখন গুলবাগিচা হয় নিষ্ফলা
তাকিয়ে থাকে তারা কী যেন এক খেয়ালে…
তিবলিসির পুরানো বই এর দোকান থেকে কেনা
প্রকান্ড সে আকর কেতাবটি থেকে বেরিয়ে আসে চিত্ররাজি
কিছু ফিগারিন নৃত্য করে ফ্লোরে— ঢিমে তালে দেয় ডিগবাজি,
ক্লদ মোনের পুকুরটি কাঁচের টেবিল-টপে ফুটায় গোলাপি শালুক
কাউচে কম্বল টেনে মুড়ি দেয় আলাস্কার তুলতুলে গ্রিজলি ভালুক…
ক্রুসেডি জামানার একটি কেল্লা
ফায়ারপ্লেসের শিথানে উঠে বসে—যেন শোপিস এক অবিকল
আঙিনায় ফুটে ওঠে পূর্ণিমায় মন্ত্রমুগ্ধ ছল,
ঔক বৃক্ষরাজির খোড়লগুলোর কার্নিশে বসে
নয়টি কাঠঠোকরা মশগুল হয়ে জোৎস্না দেখে—
জাদুবলে যেন থেমে গেছে তাদের ঠুকঠুকানো সংলাপ,
এ বিষয়টিও বলা হয়নি তোমাকে
তাই চাঁদ-সরোজে বাড়ে অব্যক্ত কথার মনস্তাপ।
আরাধ্য বৃক্ষটির থানে
হাঁটতে হাঁটতে চলে আসি
আদিবাসীদের আরাধ্য বৃক্ষটির থানে,
নিকানো চাতালে পা ছড়িয়ে বসা যায় দুদন্ড,
জুড়ায় শরীর-মন—
বাতাস বাহিত ভেষজের সুরভিত অনুপানে,
ক্রিস্টালে বর্ণালী ছড়ায়— পড়ে থাকা পাথর খন্ড;
বুসানের বেওমেওসা মন্দির—
ভাবি—ঝ্যান ঘরানার শ্রমণদের কথা,
প্রকৃতির সাথে প্রগাঢ় সম্পর্ক তাঁদের
মেডিটেশনের মৌন প্রথা;
মুদে আসে চোখ দুটি
শরীরে হাঁটাচলা করে পতঙ্গ এক,
ধ্যানের নিবিড় প্রকরণে হলো কী ত্রুটি…
ভাবি বারেক,
অনুভব করি কিছু একটা জড়িয়ে যাচ্ছে দেহ
সূক্ষ সুতোর মসলিন পরশে কে যেন ছড়াচ্ছে—স্নেহ…
অবশেষে মেলি চোখ—
সামান্য দূরে…
তন্তুর অন্তর্জালে বসে মাকড়শা এক উৎসুক,
চোখের আরশিতে তার যায় দেখা—
ঊর্ণনাভে জড়ানো মুমূর্ষ মানুষ
পড়ে আছে একা,
পারিনা ছড়াতে এ ববিনের বন্ধন
বাউরি বাতাস বয়ে আনে
হানি সাকোলের সুরভিত চন্দন।
মেঘে মেঘে প্রচ্ছন্ন সংগীত
এই বিষয়টা তো তুমি জানো
প্যারাস্যুট থেকে সমুদ্রের শঙ্খ-সবুজ শূন্যতায়
আমি ঝাপ দেইনি কখনো—
কিন্তু চেতনায় কেন জানি উদ্ভাসিত সে দিব্য অনুভব,
আজটেক পিরামিডের ধাপে ধাপে শুয়ে আছে
করোটি কংকালের শীলিভূত শব;
আমার হাই-ডেজার্টে ফুটে ওঠে ভূঁইফোঁড় মাশরুম
ফিরে আসে আমাজন থেকে নির্বাসিত বৃক্ষরাজি
আমার ভেতরে তৈরি হয় বিশাল এক বোধিদ্রুম;
ফিরে আসে হারানো বৈভব
সঙ্গম সুস্মিত শয্যায় পুষ্পগন্ধে,
অজস্র কাকাতূয়ার কণ্ঠে
. কল্লোলিত হয়
হরেক বর্ণের সংহিতা নানা ছন্দে,
মনে আছে—পাথরের চিত্রার্পিত পাণ্ডুলিপি পাঠ
এখনো খুলে রেখেছ তুমি সংসারের কপাট?
আমি দেখি—ভিন্ন এক ছায়নিবিড় গ্রহজুড়ে
জড়ো হচ্ছে বেগুনি বাষ্প—মেঘে মেঘে প্রচ্ছন্ন বৃষ্টির সংগীত
ভাঙে সংসার—নড়ে ওঠে চারচালা ঘরের মরীচিকাময় ভিত।
আরও পড়ুন: গাভি-প্রণোদনা-ঢেউ ॥ আমিনুল ইসলাম