নাইট টেরর
স্বপ্নবিন্দু হতে ঝরো বাতাস এসে
ভাসিয়ে নিচ্ছে আমায়, এরকম ঘুমের প্রবাহে যতিচিহ্নের মতো লাগে নিজেকে—
তুমি এক অর্ধমাল্যফুলে চিরায়ত, যেনো ফসল ডোবানো বৃষ্টির দিনে বর্শা হাতে বেরিয়ে পড়েছো একা,
মনে বাজছে মেঘঠুমরির তাল; বাসনাকে ঝরাপাতায় বসিয়ে, ছেড়ে দিয়েছো নদে;
সেই থেকে ধানের গুচ্ছে নেমে আল টপকানো মাছের দিকে হাত!
এরকম ঘুমের বিভিন্নতা আমাকে এলোমেলো করে
আর, অর্ধনমিত স্বর নেমে এসে কবিতাকে প্রশ্ন করতে থাকে মায়াভরা চিরকুট নাকি মানুষের অন্তর?
তত্ত্বকে উপেক্ষা করে তুমি এসে দাঁড়িয়েছো নাকি ভাষাবিদ, মার্জিনে?
রেস থেকে ঘোড়াদের চিৎকার
লোকালয়ে ঢুকে যাচ্ছে, একটা প্রাণপণ দৌড়ের সিন এসে তোমাকে ধাক্কা দিয়ে জাগায়,
আর জিপসী কোনো রমণীর মতো মহাকাশ রাশভারী!
আংটি
যখন স্বপ্নে প্রচণ্ড হট্টগোল শুরু হয়
মনে হয় গড়িয়ে যাচ্ছি, খাড়া পাথরের টিলা থেকে;
তখন দুটি হাত এসে আমায় ধরে
গা মুছে দেয়, বুঝতে পারি ঘামাচ্ছিলাম—
যখন স্নিগ্ধ হাওয়ার ঢিল, দরজায় নক করে
আমার তখন মনের বহুবচন!
আর যখন একজন কবির অভিমান নিয়ে ভাবি
তখন বুঝতে পারি, হাতের আংটিটিও টাইট হয়ে আছে
আঙ্গুলে; যে কোনো পাথর বসে, পোষ মানাতে পারে না
আংটিকে!
হৃদয়
যার যাবে সকল গল্প ফুরিয়ে
পরাজিতদের পানশালায়, তার শুধু মাতলামি দ্যাখে লোকে;
তার শুধু অশ্রুত ক্ষত, চারপাশে কাতর তমসা জুড়ে খাবি খায়, খাবি খায় ডুবে!
বিপন্ন জ্যোতির কাছে রাঙা হয় সূর্যাস্ত, এরপর;
ধীরে ঝরে বেলি ও বকুল; যার শুধু বেদনার আস্তিন
শারদে পূর্ণ হলো, তার কাছে হাত পেতে বসি
তার থাকে নাকি অনির্ণীত গান?
হৃদয়ে ব্যাপ্ত থাকে স্বর ও লিপি কোনও?
হৃদয় এক সাইলেন্সার নাকি?
বেদনাবন্ধনী, জড়াজড়ি তার গায়ে?
খাম
একদিন খুলে খুলে যাবে হৃদয়ের সমস্ত খাম—
সমস্ত ভাবনার ডালে পাখিরঙে বসে থাকবে মেঘ
এর নাম আর্দ্রতা!
যার সাথে বনিবনা, যার সাথে অপার বাসনা
ভাগাভাগি হলো, খুলে যাবে তারও
গানের গলা ও গীতি;
এ তল্লাটে অজগর হাঁটা পথ, ঝুরি নামা বটগাছ ছেড়ে
কতদূর বেঁকে চলে গেছে, নিশান উড়িয়ে ধূলার!
এরপর জনপদ নাকি? এরপর অপাপস্নিগ্ধ শিশু
টোলে পড়ে স্বরব্যঞ্জনধ্বনি?
মানুষের তবু থাকে সুর, দ্বিধা;
পিতার অসুখ হতে বাতাসে ছড়ানো ফাংগাস কিছু
টেকে আবহাওয়ায়; নিরালায় তার ঝরে, অশ্রু ও
স্মৃতির বিরাগ!
করোনাকালে প্রেম
যখন পৃথিবীর বিকালটা স্বর্গ থেকে আসে আর মানুষে মানুষে দূরত্ব পৃথক হতে পৃথকতর হয়,
পাখি-ঠোঁটে শিস তুলে দেয় ভুট্টা ও বিবিধ জোয়ার-
তোমার ভিতর যদি ঝড় থাকে
আমাকে ছিটকে ফেলো, তুফানি বাতাসে;
কেননা যখন ফটক গলিয়ে ঘরে আসে প্রেম
তখনি হাওড়-পাড়ে ধবধবে কাশফুল; একলা পলাশ
জড়ো করে, লালচে আকাশ বুকে; তখনই শরত ডাকে!
তারপর তুলে রাখি সেই গুঞ্জন, সেতারে;
এসবে বিজয় নাই, নাই কোনও নাট-মন্দির খোলা
আমি শুধু পরাজিত হতে চাই, তোমার পলকে ধুলি!
আমি শুধু করোনা-ত্রিশূলে বাঁধা
দিগন্ত সারাতে চাই, প্রেমে-পদ্যে;
এর বেশি জানা আছে নাকি
ওষুধ-বটিকা কারও?
আরও পড়ুন: সাজ্জাদ সাঈফের কবিতা: মননে-আবেগে ॥ বরুণ কুমার বিশ্বাস