পালাবো পালাবো বলে
এই জনসমাগম, নগর সভ্যতা,
বিলাসবহুল গাড়ির কালো ধোঁয়া থেকে দূরে-বহু দূরে;
পাহাড়ে বা অরণ্যে সবুজের আশ্রয়ে।
যেখানে সফলতা মানে দুই বেলা খাবার
নিস্তরঙ্গ রাতে নিরুদ্বেগ ঘুম, সকালের শিশির।
এই যে এত চাহিদা, এত আকাঙ্ক্ষার চাপ আমার
সেকি আসলেই আমার?
নাকি তিলে তিলে চাপিয়ে দেওয়া সমাজের?
নিরন্তর এই প্রশ্ন সত্তার।
মানুষকে প্রশান্তি দেয় কাগজের নোট নয়,
সবুজ পাতা। সমুদ্রের ঢেউ, বৃষ্টির শব্দ নৃত্য।
ব্যাংকের ভল্টে নয়, মানুষ বেড়াতে আসে
পাহাড়ে, সমুদ্রে, অরণ্যে।
যতবার মানুষ ভালোবাসতে গিয়েছি,
ফিরতে হয়েছে শূন্য হাতে।
রিক্ত আমাকে আশ্রয় দিয়ে পূর্ণ করেছে বৃক্ষ, প্রকৃতি।
তবে কেন প্রকৃতি নিধন, সমুদ্রে প্লাস্টিক, বন উজাড়?
তবে কেন সবুজ পাতা হত্যা করে লাল নোট তৈরি?
তবে কেন আর অন্যের জীবন যাপন?
কেন এই হিসাবী দানব রূপ?
কেন এত হিংসা—ভেদাভেদ ধর্মের নামে,
জাতের নামে, স্ত্রী ও পুরুষ প্রাণীর নামে।
নিজের কথা শোনো মানুষ—
তুমি প্রকৃতির সন্তান, হও মায়ের মতো।
নির্মল হও প্রকৃতির মতো, সবুজের মতো।
গাছ কাটা হলে প্রতিবাদ কর শহরজুড়ে।
যে প্রেম কেড়ে নেয় মানুষ, সে প্রেম—
অক্সিজেন, বুকের বাতাস দেয় বৃক্ষ।
বৃক্ষই তোমার প্রকৃত প্রেমিক, প্রকৃত স্বজন।
ডেজা-ভূ
প্রেমের ব্যথাগুলো ডেজা-ভূ-এর মতো,
প্যারালাল পৃথিবীতে একদিন বৃষ্টিতে ভিজছিলাম,
বৃষ্টি আমার প্রেমের ক্ষত সারিয়ে দিচ্ছিল।
এই পৃথিবীর বৃষ্টি দেখে, ঐ পৃথিবী মনে পড়ে।
ঐ পৃথিবীতে, আমাদের মেয়ে তুলতুলের বয়স আট
তুমি বড্ড ভুলোমনো—এলোমেলো চুল
চোখে চশমা, কবিতা লেখার বাতিক এখনো।
মনে আছে? তুলতুলের এবারের জন্মদিনে—
কেকের বদলে মোমবাতি আনো!
বৃষ্টিভেজা মধ্যরাতে, তবু তোমার মায়াবী চোখে
সমুদ্রের বালিতে পূর্ণ জোছনায়
অভিযোগ সব যায় ধুয়ে।
এ পৃথিবীতে, তুমি কোথায় জানি না আমি
হয়ত অনেক দূরে, সাত সমুদ্রের পরে।
আমায় তুমি চেন না, নির্বিকার তোমার চোখ।
একা বৃষ্টিতে ভিজছে চীনের মহাপ্রাচীর, একটি কৃষ্ণচূড়া
আমি ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছি, ভরা পূর্ণিমার সমুদ্র—
তুমি—আমি—আর তুলতুল।
আমি তো জানি তুলতুল আছে,
আমার পাশেই কোথাও আছে।
যখন তোমাকে লিখি
যখন তোমাকে লিখি,
মনে হয় তৃষ্ণার্ত আমি—একফোঁটা জলের জন্য।
তোমার উত্তর পেলে মনে হয়,
বুকের ভেতরে আস্ত সমুদ্র জেগে উঠেছে।
সৈকতে ঢেউ ভাঙে—আছড়ে পড়ে, বুঝি সুনামি!
আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে বহুদূরের
সোনালি জোনাকি দ্বীপে,
যেখানে তোমার অপেক্ষা।
আর উত্তর না পেলে বেদনার্ত প্রশ্নগুলো অভিমানে
মরুভূমির ঝড়ে দিশেহারা হয়ে, আশ্রয় খুঁজে মরে।
সাইবেরিয়ার শীতে আহত পাখির মতো,
তুষার পৃথিবীতে চিরবিদায়ের অপেক্ষা।
প্রেমালাপ নয়, সাধারণ কথোপকথনও
যেন অমিয়ধারা, ফ্রস্টবাইটে উষ্ণতা।
তুমি কি পারো না?
আমাকে দিতে ইরানি গোলাপ বাগান,
দিগন্ত বিস্তৃত সবুজের মায়া, পাখিদের কলরব—
যেখানে পৃথিবীটাই আমাদের স্বর্গ।
যেখানে ফুলের দোলনাতে,
আমার এলোচুল স্পর্শ করবে তোমার বুকপকেট।
তুমি কি পারো না?
তোমার হৃদস্পন্দনে আমাকে দোলাতে
শতবার, হাজার বার।
আরও পড়ুন: নির্বাচিত নবীনের কবিতা