কী এক অশনি আজ
কী এক অশনি আজ ঝেঁকে বসেছে তোমার কাঁধে
লকলকে লোলজিহ্বা ঘুরে বেড়ায় সর্বত্র…যেন এক
নাঙা তলোয়ার! তোমার সবুজ চোখ থেকে গড়িয়ে
পড়ছে অজানিত জলের ঝরনা! গূঢ়তত্ত্ব কিছুই বুঝি
না। কী এক অদ্ভুত বোধ তবু সহজিয়া ডানা মেলে
উড়ালের গল্প বোনে। কে যাবে পেছনে রেখে সেই
স্মৃতিসূত্র? কবেকার কোন বিষণ্ন আন্দামানের
ফি ফি আইল্যান্ডে জপেছি তোমার নাম, কে নেবে
শঙ্খের সুর? কণ্ঠ সাধে বিজন বনের হরিয়াল!
এই সড়কে তোমার গাড়ি চলবে না! বড্ড বেমানান!
যেতে পারো শহর পেরিয়ে দূর মফস্বলে…ঘন বনের
ভেতর বাজে ঝিঁঝি-ঐক্যতান! ওই সুরে বুঁদ হয়ে
মৃত্যুর লাগাম টানে কোন মহাজন? কাঁপছে
নগররাষ্ট্র, রাখালের সবুজ বাথান; মুখে মুখে
ঘোরে মাস্ক; তবু কারা জীবনেরে প্রণয় সুতোয় বাঁধে!
কী এক অশনি আজ ঝেঁকে বসেছে তোমার কাঁধে!
মেটাফর
কী এক স্তব্ধতা ভর করে আছে ঘরে ও বাইরে!
শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে খুব! মনে হচ্ছে যেন একটু
একটু করে কমে যাচ্ছে অবারিত অক্সিজেন!
শৈশবের রেলগাড়িটি কী দ্রুত ছুটে যাচ্ছে
অজানা গন্তব্যে…আমি রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে
যেন এক অবাক কিশোর! তুমি কি শুনতে পাচ্ছ,
বন্ধু? কী ডাক ডাকছে কৈশোরের নদীটি! প্রাণবন্ধুর
কথা মনে আছে? ওই যে নদীঘাটের খেয়ামাঝি!
বুড়ি নদীর কথাই বলছি! ভয়াল বরিষনে
প্রবল স্রোতের তোড়ে ভেসে যেতো নদীটির বুক!
অবাক রোদ্দুরে দাঁড়িয়ে তো দেখেছো তা;
তোমার আমার তারুণ্যের রাজসাক্ষীও তো!
আচ্ছা বন্ধু, অতীতের কেন এই পরাবৃত্তি? জীবনের
এই ক্রান্তিকালে রেলগাড়িটি কি কোনো মেটাফর?
কেন যে গাইছে উদাসী বাউল এক: সময় নাই রে…
কী এক স্তব্ধতা ভর করে আছে ঘরে ও বাইরে!
তবু স্বপ্ন দেখি
এমন অসুখ আর কখনো দেখিনি পৃথিবীর পথে…
কী বিষণ্ন আর মায়া মায়া মুখগুলো জীবনের কাছে
আকুতি জানায়: যদি আরও কিছুদিন বেঁচে থাকি
সবুজ বাতাসে…তবে ভাঁটফুলে লিখে যাবো নাম
আমিও ছিলাম! এই মাটি ঘাসফুল কচুরিপানারা
পায়ে পায়ে বাজে; জলেস্থলে লিখে রাখি শৈশবের
রোদভাঙা ছায়ারাশি যত; ঢেউ ঢেউ স্বপ্নের কুহক!
আমাদের মধ্যবিত্ত দিন সিঁটিয়ে রয়েছে ভয়ে! কারা
যায় কাঁধে নিয়ে যমকালো অন্ধকার? চন্দ্রার রোদ্দুরে
হরিণ শাবক এক পান করে স্বচ্ছতোয়া জল; পৃথিবী
কি পিপাসার্ত খুব? কেড়ে নিতে চায় ডানাঅলা
নদীগুলো! গভীর শঙ্কায় স্তব্ধ হয়ে আছে চরাচর!
তবু স্বপ্ন দেখি, কেটে যাবে অন্ধকার বিজুলির রথে
এমন অসুখ আর কখনো দেখিনি পৃথিবীর পথে!
আরও পড়ুন: দীর্ঘ কবিতা