ওসামা এল—দিনাসৌরি ১৯৬০ সালে মিশরের মেহেলেত মালেক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আলেক্সান্দ্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জনের পরে শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। অনেক কাগজে নিয়মিতলেখা প্রকাশ হয় যেমনঃ El—Kitaba El—Okhra (The Other Writing) and El—Garad (The Locust) মিশরীয় আধুনিক গদ্যকবিতায় তিনি অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন। চারটি কাব্যগ্রন্থ এবং একটি স্মৃতিকথামূলকগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে: Kalbi El—Harem, Kalbi El—Habib” (My Old Dog, my Beloved Dog). ২০০৭ সালে কিডনি সংক্রান্ত জটিলতায় ওসামা এল—দিনাসৌরি মৃত্যুবরণ করেন।
ভাবালুতা
কথা ছিল—আমার কোলে মাথা রেখে তুমি মারা যাবে।
এ বিষয়ে আমরা একমতও হয়েছিলাম—তাই নয় কি?
এখন কী করি বলো তো—
এই যে শিশিভর্তি ভালিয়াম পিল কিনেছি তোমার জন্য
তুমি খেয়ে ঘুমোবে বলে—
এসব কি আমারই চিবিয়ে খাওয়া উচিত এখন?
আচানক কী ভীষণ বদলে গেলে তুমি!
হঠাৎ করেই জীবনকে আঁকড়ে ধরলে তীব্রভাবে—
আচ্ছা, জীবনটা কী যাচ্ছেতাই এক অন্ধকার, লম্বা সুড়ঙ্গ নয়?
যন্ত্রণা আর অনিশ্চয়তায় ম্রিয়মান অনন্ত যাত্রা নয়?
বুঝে উঠতে পারছি না—এখন আমার কী করা উচিত।
তোমাকে নিয়ে যে এলিজিটা লিখেছিলাম—তার এখন কী দশা হবে?
আমাকে এমন এক কিম্ভূত অবস্থায় ফেলেছো…
না, তোমাকে কখনোই ক্ষমা করা যাবে না এ ধৃষ্টতার জন্য।
ধ্যুত, এখন যে কী করি!
অদূর ভবিষ্যত নিয়ে কতোই পরিকল্পনা ছিল।
এই জীবনটা তুমি পুরোপুরি ধ্বংস করে দিলে।
বেশ আন্তরিক একটা সম্পর্ক গড়ে তুলছিলাম ফুল—বিক্রেতার সাথে যেন
তুমি মারা যাবার পরে মোটামুটি ন্যায্য দামে সে আমাকে
সতেজ আর সুন্দর ফুলগুলো দেয়
প্রতি সপ্তাহে তোমার কবরে দেবার জন্য।
সালাহ—সালেহ স্ট্রিট পার হতে গেলে
আমার হৃৎপিণ্ডটা মোচড় দিয়ে উঠছে
যখন গাড়ি চালিয়ে আমাদের পারিবারিক কবরস্থান
‘বাসাতীন’ এলাকার পাশ দিয়ে যাই
নিজেকে সুস্থির করতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে নিজের সাথে।
উফ্, পানশালা প্রসঙ্গেও বেশ একটা ভাবনা গড়ে তুলেছিলাম
অনেক খুঁজেপেতে সন্ধান পেয়েছি পুরনো, শান্ত একটা পানশালার
যার জানালাগুলো অনেক উঁচুতে
আর আছে হলদেটে কাঠের দেয়াল।
ভেবেছিলাম প্রতিরাতে ওইখানে যাব
ভেবেছিলাম বেছে নেবো কোণের একটা টেবিল—
সেখানে বসে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেবো মদে, ধোঁয়ায় আর কান্নায়—
সেখানে তরুণ কবিরা এসে আমাকে দেখিয়ে বলবে—
এই দেখো, এই সেই নিঃসঙ্গ ভাবুক লোকটি,
একা একা কাটিয়ে দিল সারাটি জীবন…
উহহ্! কাপুরুষের মতো সবকিছু বানচাল করে দিলে তুমি!
সহোদরসম
ছেলেটি মেয়েটিকে বলল—
‘শোনো, চিন্তা কোরো না
প্রেম কিংবা কামনা নয়
আজ থেকে আমরা দু’জন দু’জনকে ভালবাসবো
ভাই—বোনের মতো—
মানেঃ মায়ের মতোই আমার কাছে নিষিদ্ধ তুমি”
মেয়েটি বলে,
‘খুব ভাল কথা’
কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে আবারো মুখ খোলে সে—
‘হুমম… এটা শুধুমাত্র কামনার ব্যাপার নয়
ভাইবোনগুলোও মূলত আমাদের সম্পর্কটাকে
পছন্দ করছে না’
‘এমনকি কখনো কখনো রীতিমতো ঘৃণাও করে’
‘হ্যাঁ, ঠিকই বলেছো…
আবার এরাই আমাদের দুঃসময়ে অনেক সাহায্য করেছে’।
‘তা বটে… আবার মনে করে দেখো—একমাত্র এরাই
ভয়ানকভাবে ক্ষতি করেছে আমাদের’
ছেলেটি উঠে দাঁড়ায়।
সদ্য হাঁটতে শেখা শিশুর মতো টলোমলো পায়ে হাঁটতে হাঁটতে
হারিয়ে যায় পথের বাঁকে।
মেয়েটি বসেই থাকে।
বসে বসে নীরবে লক্ষ্য করে ছেলেটির প্রতিটি পদক্ষেপ।
অপসৃয়মাণ ছায়ার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে বুঝতে পারেনা
তার আনন্দিত হওয়া উচিত নাকি ব্যথিত।
আরও পড়ুন:
মারিয়ানার ৩৫০ বছর আগের প্রেমপত্র: বিরহগাথা ॥ আদনান সৈয়দ