গল্পের পটভূমি
অপরিকল্পিত নগরায়ণের দিকে ঝুঁকছে আমাদের গ্রাম। গ্রামীণ অর্থনীতি। পরিবেশখেকো মানুষের হাতে পড়ে সবুজের বিনাশ হচ্ছে; সাধারণ জন-জীবনে, খাওয়া-দাওয়া, চলা-ফেরা রুচি-অভ্যাসে স্বাস্থ্যকর কোনো পরিবর্তন আসেনি। কুসংস্কার, অজ্ঞতা এখনো জড়াজড়ি করে আছে আমাদের। এর মাঝেই গোবরে পদ্মফুলের মতো ফুটে থাকা কিছু মানুষ—জীবনকে শত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাপন করা খনার মতো বয়স্ক কিছু ভূয়োদার্শনিক। যাদের পরামর্শ, উপদেশ বিস্ময়কর ও রহস্যময়।
বাংলার হাজার বছরের বস্তু-সংস্কৃতির ভেতর দিয়ে বেড়ে ওঠা নানাবিধ আচার-অভ্যাস, জল্পনা কল্পনা; গ্রামের জল হাওয়ায় বেড়ে ওঠা কিছু শিক্ষিত প্রজন্মের নগর যাপন। আধুনিক জীবন ব্যবস্থাপনার প্রবল ঘেরাটোপে থেকেও তাদের চোখে গ্রাম নিয়ে কী স্বপ্ন? আছে অপরিকল্পিত নগরায়নকে নব রূপ-কল্পনায় যুগোপযোগী করে সাজানোর প্রত্যয়দীপ্ত ভাবনা। পুঁজিবাদের দানবীয় অসুস্থতার মাঝেও কিছু সুস্থ পরিকল্পনার দোদুল্যমানতা—যার মধ্যে ভয় ও আশঙ্কা দু’টোই আছে!
বাংলার শত মিথ, কিংবদন্তি গাথার পরিচর্যা করাসহ সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যায়নের মধ্য দিয়ে নিজের শেকড়ে ফেরা এবং বৈশ্বিক এই বিবিধ প্রপঞ্চকে মোকাবিলা করা। আমাদের সোনালু মূল্যবোধ ও কৃষ্টি-সংস্কৃতির আচরিত চিহ্নগুলোকে সামাজিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে কিভাবে নতুন করে জাগিয়ে তোলা যায়; যার প্রভাব সমাজ ছাড়িয়ে রাষ্ট্রে পড়বে।রাষ্ট্র ছাড়িয়ে বাংলার পুরো মিডিয়া পাড়াকে প্রভাবিত করবে; উসকে দেওয়া এমনই কিছু উদ্যম ও জিজ্ঞাসা, কৌতূহলী পাঠকের সামনে তুলে ধরার নিমিত্তে—নিজেদের চিরায়ত অস্তিত্বকে যুগোপযোগী করে বাঁচিয়ে রাখার বিবিধ ইঙ্গিতময় পূর্ব শত থেকেই উত্থিত এই গল্প; যার মূল কান্ডারি হতে পারে নতুন প্রজন্ম।
কইতর জুয়ান ॥ আজিজ কাজল
প্রায় দু’শ বছর আগের একটি গর্জন বৃক্ষ। তার মায়া ধরা শরীরে অমসৃণ এক্রেলিক শিল্পের একটা আদল আছে। বৃক্ষটি ঘিরে তৈরি হয়েছে কতো মিথ ওকিংবদন্তি। আজ থেকে চল্লিশ বছর আগের কথা। নিজের ভিটে মাটির অধিগ্রহণ নিয়ে চিন্তায় আছে জুয়াল মিয়া। বৃক্ষটি কাটতে হবে; কর্তন করার প্রথম চিন্তা তারই মাথায় খেলেছিল।
একদিন সন্ধ্যায় ঝোপাচ্ছন্ন ঘন অন্ধকারে, জুয়াল মিয়াসহ প্রায় পনেরো জনের একটি দল, একশো ফুটেরও উঁচু গর্জন
বৃক্ষটি কাটতে এসেছিল। ফইন্না ছিলা সাহস করে এগিয়ে যায়। গাছের শেকড়ে প্রথমেই সে কয়েকটি কোপ বসিয়ে দেয়! কোপ বসাতেই সুন্দর বৃক্ষটি হতে গদ গদ করে বেরিয়ে আসছে লাল-কালো-ধূসর রঙের ছাইমাখা রক্ত। যে যেদিকে পারছে, দিগ্বিদিক ছুটছে। একটু পরেই সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাতের পিনপতন নীরবতা।
ভোরের আলতো ছোঁয়ায়, নিজের সবুজ পাকা ধানের ম-ম গন্ধ আর সূর্যের মিষ্টিরোদ গায়ে মেখে নিলো জুয়াল। খবর এলো গতরাতে গাছের শেকড়ে কোপ দেওয়া ফইন্না মারা গেছে। বউ ছেলে-পুলের সে কি আহাজারি! একবার রাতে বাজার থেকে ফিরতি-পথে লাল পাড়ার বশিরও বৃক্ষটির নিচ দিয়ে যেতে ওপড়ে দেখতে পায়, ডাল-পালা ছড়ানো বিশাল বৃক্ষটি তার গায়ের ওপর হামলে পড়ছে; সঙ্গে সঙ্গেই ভোঁ-দৌড়। একবার ভরদুপুরে, একটি লাল ঝুঁটিওয়ালা বড় রাজহাঁস বিশাল পাখায় ভর করে এক-ভোঁ-দৌড়ে হঠাৎ শূন্য হয়ে গেছে। আরেক রাতে, অন্ধকারে এই রাস্তা দিয়ে যেতে গুলু মিস্ত্রি তার মৃত ভাইয়ের ভারী গলার খাঁকারি আওয়াজ শুনতে পায়। সঙ্গে সঙ্গেই দেখতে পায় বিশাল এক বাজপাখিকে দ্রুত উড়ে যেতে; তার পেছন পেছন একঝাঁক শাদা কবুতর!
বড় হয়ে বুঝতে পারলো ওইসব হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়া মানে মৃত্যুকে সহজভাবে বরণ করা। একেকটা ডাক্তার যেন একেকটা মৃত্যুদূত।
শোনা গেছে এরপর থেকে বশির নাকি বোবা-মানসিক প্রতিবন্ধী। বিশাল গর্জন বৃক্ষটি ঘিরে, এমন আরও কাহিনি, সত্য-অর্ধ সত্য গল্প জড়িয়ে আছে। এসব মিশকালো ঘটনা ও কিংবদন্তির কথা জুয়াল মিয়ার মাথায় বিদ্যুৎ বেগে ঘুরতে লাগলো। তার গা জড়োসড়ো হয়ে আসছে। মাথা দিয়ে প্রচণ্ড ঘাম কপাল ছুঁয়ে টুপ করে সামনের বালিমাখা রাস্তায় ঝরে ভিজতে লাগলো।
কমল। আজ প্রায় তিরিশ বছর হতে চললো তার নানা বাড়িতে এসেছে। শৈশবের বড় একটা সময় তার এই কইতর জুয়ান পাড়াতেই কেটেছে। এইসব মিথিক্যাল কাহিনি শুনেই তার শৈশব কেটেছিল। এ যেন গার্সিয়া মার্কেজের, তার নানি থেকে শোনা অদ্ভুত সব গল্প! পার্থক্য এই যে, দু’জন দুই ভূগোলের। দুই ধরনের আচার-অভ্যাস ও দুই সংস্কৃতির মানুষ।
কমল এখন ইংল্যান্ড থাকে। বাবা সেই আমলের এন্ট্রান্স পাস। ভালো বাংলা, ইংরেজি, উর্দু এবং ফারসি জানতেন। পুরো এলাকায় দু’জন শিক্ষিত মানুষের মধ্যে কমলের বাবা একজন। ছোট বেলা থেকে তার বাবা ছিলেন বিস্ময়কর মানুষ। ঘরের হেন কাজ নেই, যা তিনি করেন না। চেহারার সর্বত্র নিজের বাপ-দাদার পুরনো আভিজাত্যের মোহ আর স্ট্যাটাসের ছাপ। শত যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও জীবনে কখনো চাকরি বাকরির ধারে-কাছে যাননি। ঘর-কামলা করেন। বাবার বিদ্যাবুদ্ধি, হিউমার, জ্ঞানগম্যির অনেক কিছু কমলেরও মজ্জাগত। তথাগত অজপাড়া গাঁ নামেখ্যাত সুন্দর গ্রামের অখ্যাত বাংলামিডিয়াম স্কুল থেকে পাস করা একটি ছেলে আজ ইঞ্জিনিয়ার! অশিক্ষা ও কুসংস্কারে পূর্ণ একটি জায়গায় বড় হওয়া ছেলে। স্কুলে থাকতেই পেপার পত্রিকা আর বই পড়ার প্রতি আলাদা ঝোঁক ছিল। বলতে হয়, বাবার নেশায় পেয়েছে। কমল ভালো শিল্প বোঝে।
কমলের এখনো মনে আছে; নানা বাড়িতে থাকার সময় একবার তার ডায়রিয়া হয়েছিল। লাগাতার সাতদিন। পানিশূন্যতার কারণে শারীরিকভাবে সে নিস্তেজ ও মৃতপ্রায় হয়ে পড়েছিল। বাজারে এক ডাক্তার চিকিৎসা হিসেবে তাকে তরল পানির মিক্সচার খাইয়েছিল। খাওয়ার পরও অবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়ায় মেডিক্যাল ভর্তি হতে হয় তাকে। বলা যায়, এটি তার জীবনে একটি মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা। ওই ডাক্তার তার মামাতো ভাইয়ের ট্রিটমেন্ট করিয়েছে। ওষুধ হিসেবে ওই একটা মিক্সচার। বড় হয়ে বুঝতে পারলো ওইসব হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়া মানে মৃত্যুকে সহজভাবে বরণ করা। একেকটা ডাক্তার যেন একেকটা মৃত্যুদূত।
ওই অসুস্থতায় সে শারীরিকভাবে খুবই দুর্বল আর ক্ষীণ হয়ে পড়েছিল। পরিণত বয়সে, আগের নাদুশ-নুদুশ চেহারা ফিরে আসতে প্রায় আট দশ বছর লেগে যায়।
এরপর থেকে আস্তে আস্তে খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারেও কমল খুব সচেতন হয়ে ওঠে। এই ব্যাপারে দাদির কাছ থেকেও সে অনেক শলা পরামর্শ পেয়েছিল। ছোটবেলা থেকে কমল দেখে আসছে, দাদি তার মা আর পরিবারকে খাবার দাবারসহ পারিবারিক বিষয়ে কিছু নিষেধাজ্ঞা দিতেন। অদ্ভুত বিষয় হলো, নানি যা ভবিষ্যদ্বাণী করতেন, তা সত্যিই ফলতো; কমলের কাছে এটা সত্যি বিস্ময়কর ব্যাপার ছিল। এ যেন সাক্ষাৎ বাংলার খনা। দাদির গুন-গুন করে গাওয়া সুন্দর পুঁথি, হঁলা একসময় এলাকায় বেশ সমাদৃত ছিল। এখানে অমাবস্যা, পূর্ণিমা আর জোয়ার-ভাটার বিজ্ঞানসম্মত একটা ব্যাপার আছে। আছে পৃথিবীর গ্রাভিটি অব অ্যাট্রাকশান; ম্যাগনেটিজমসহ মাধ্যাকর্ষ ও অভিকর্ষ বল। সেই সময়ের কিছু পুরনো মানুষ; যারা তাদের দেখা ও জীবনাবিজ্ঞতা থেকে, নিজস্ব বোধনে
ও প্রজ্ঞায় দারুণসব জ্ঞান আয়ত্ত্বকরেছিলো। এজন্য একুশ শতকে এসেও বলা হয়—ময়-মুরব্বিদের কথাও মানতে হয়।
কমল এই গ্রামের কিছু কুসংস্কার না মানলেও কিছু বিষয় সে মানতে রাজি আছে। নিজের মিথ ও কিংবদন্তির স্বার্থে। কারণ এইসব মিথ, কিংবদন্তি-গাথা থেকে তৈরি হয়েছে কত জীবনমুখী গান, কত হঁলা, গাথা বচনামৃত। এসব ধ্রুপদী ব্রহ্মশব্দ এবং কথামালা, পুরো বিশ্ব সাহিত্যের একটা সমৃদ্ধ রচনার কাছাকাছি পর্যন্ত চলে যেতে পারে। রচনার অভিনব কল্পনা-কৌশলে ও শিল্প-সৌন্দর্যে তা কত উঁচুমাত্রায় যে চলে যেতে পারে; সত্যি অভাবনীয়।
প্রায় তিরিশ বছর পর, নানাবাড়ির গ্রামটা কমলের স্মৃতিতেই শুধু সবুজ ও লাবণ্যময় বলে মনে হচ্ছে। সবুজের কাঁচা কাঁচা পরশ মিইয়ে গেছে। চারদিকে অপরিকল্পিত নগরায়নের কংক্রিটের ছাপ। যার যেখানে যেখানে মালিকানা, শুধু সেই জায়গাটার আপাত উন্নতি হচ্ছে। কিছুপুকুর-জলা আর বড় দিঘির অবস্থা কাটা ছেঁড়া এলোমেলো—প্রত্যেকটা বড় ছোট জলার অবস্থা জণ্ডিস রোগীর মতো। কচুরিপানা মিশ্রিত, হলুদাভ! অন্যদিকে বালি আর মাটি লেপা শ্যামল রাস্তার চারদিকে নতুন ইটের খটখটে আওয়াজ। নতুন নতুন কাঁচা পাকা দালান-মার্কেট-মসজিদ।
মাচার ওপর ধরা আছে লাল, কমলা-সবুজ রঙের উজ্জ্বল করলা; প্রতিদিন নাঙা পায়ে হেঁটে হেঁটে শরীরের ইমিউন সিস্টেম বাড়াবে। শারীরিক সুস্থতায় পুরো পৃথিবীর সবুজ মায়া নতুন করে গ্রহণ করবে।
ঘরের আতিথেয়তাও পাল্টেছে। আগে মেহমান এলে লেবুর শরবত, ডাব, কলা চিড়া মুড়ি দিতো। এখন লেবু আর ডাবের ন্যাচারাল শরবতের জায়গায় ট্যাং-জাতীয় পাউডার মাখা আর্টিফিশিয়াল শরবত। চিড়া মুড়ির স্বাস্থ্যকর খাবারের জায়গায় পাউন্ড বিস্কুট। রঙ চা’য়ের জায়গায় কনডেন্স মিল্ক আর ঘন-চিনির শরবত মাখা চা। এই হলো চোখে দেখা বড় পরিবর্তন। আগে গ্রামের মানুষ, পেটের সমস্যায়তাড়ি খাওয়াসহ নানা অসুখে গুড়, বাসক পাতা, ভাদামলতা সহ বিভিন্ন ওষুধ বটিকা খেতো। এখন অসুখ বলেই ফার্মেসিতে যায়। প্রত্যেক ঘরে ঘরেই ওষুধভর্তি। গ্রামের বাপ-দাদা ছেলেপুলেরা বহুবছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যবাসী হওয়ায় আর্থিকভাবে সবাই কম-বেশি সচ্ছল। অসুখবিসুখ হলেই কোনো কিছুর পরওয়া করে না; সবাই মুড়ির মতো ওষুধ খায়। গ্রামের টিন-এজ-উঠতি বয়সীরা রূপসৌন্দর্যের বেলাতেও বেশ ষোলোআনা। প্রৌঢ় অনেক মহিলা, তাদের মেছতা মাখা চেহারা আর গর্ত ভরা মুখের ছোট ছোটস্পটগুলোকে নানা মিক্সচারে শান দেয়—দলা দলা কসমেটিক্স আর স্নো-পাউডারে ভর্তি গ্রাম।
হঠাৎ বিশাল লম্বা একটি হাইরাইজ বিল্ডিং গর্জন বৃক্ষের মতো শত শত ফুট উঁচুতে চলে গেছে! ওপর থেকে দেখলে মনে হয় আকাশ ছুঁয়েছে। সেই লম্বা এভারেস্ট সমান বিল্ডিং থেকে ঝরছে এসির জমানো পানি।
আরেকদিকে ঝরছে কাপড় কাঁচা সাবান, গোসলের সাবান, ডিটারজেন্ট পাউডারের সম্মিলিত কেমিক্যাল মিশ্রিত নোংরা পানি। একদিকে এসির নোংরা পানি, আরেকদিকে বিল্ডিংয়ের গোসল-কাপড়ের কেমিক্যালমিশ্রিত সাবানের পানি, দুটাই ঝরনার মতো গতিবেগে উদ্দাম ও নিম্নগামী—আস্তে আস্তে ফসলি জমির সবুজ ধানের কচি ডগা মাড়িয়ে আসছে। আশ-পাশের স্বচ্ছ পানির বিল-ঝিল আর খালে এসে ঘোলা হচ্ছে। খালের স্বচ্ছ পানি আর কেমিক্যালমিশ্রিত লাল-ঘোলা পানি পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে যেন তুমুল লড়াই করছে! এভাবে বহুবছর লড়াই করার পর, শোনা গেছে কেমিক্যালমিশ্রিত লাল-ঘোলা পানি জিতেছে। বিল-ঝিল আর খালের মাছগুলো, দৃশ্যপট থেকে উড়ে উড়ে হলুদ পাখনার দাবড়ানি খেয়ে কাটা-মাথা পাহাড়ি বাজারের দিকে চলে যাচ্ছে।
কমল হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে উঠলো। অবাক হলো! ইংল্যান্ডে বসে বসে পুরনো অমলিন-সেই সবুজ গাঁয়ের সোনালু স্মৃতি আর এলোমেলো আশঙ্কার মাঝেই যেনো সবসময় বাস করে। ওখানে বসেই বিশ্রাম নেয়। ওখানেই নিজেকে যাপন করে। ওখানেই খায় ওখানেই ঘুমায়। কথা হচ্ছে করপোরেট বাজিধরা কৃত্রিম জীবনের লাগাম টানতে চায় কমল। নিজের ভিটায় ফিরতে চায়। সে চায় সম্মিলিত কিছু স্বপ্নবাজের হাত ধরে তার নিজের গ্রামও উন্নত করবে—আধুনিক পরিকল্পনা ও সবুজ উপস্থিতি মাথায় রেখে। চায় নিজেরও একটি সুন্দর ভিটা। সুন্দর গ্রাম। পাঠ্য বইয়ের সংজ্ঞার মতো কোনো ট্র্যাডিশনাল ভিটা বা আদর্শ গ্রাম নয়! যুগোপযোগী একটি সুন্দর আদর্শ গ্রাম। শনমাখানো চাল, পরিবেশবান্ধব কনক্রিট গাঁথুনি, বাঁশ, গাছের ঠেইল (ঠেস) আর শক্ত গুইট্টার বেড়া দিয়ে বানাবে একটি নান্দনিক বাড়ি। পাশে থাকবে একটি শান-বাঁধানো পুকুর ঘাট। চারপাশে ঘন-সবুজের ছড়ানো স্তূপ। শাক-সবজির বাগান। মাচার ওপর ধরা আছে লাল, কমলা-সবুজ রঙের উজ্জ্বল করলা; প্রতিদিন নাঙা পায়ে হেঁটে হেঁটে শরীরের ইমিউন সিস্টেম বাড়াবে। শারীরিক সুস্থতায় পুরো পৃথিবীর সবুজ মায়া নতুন করে গ্রহণ করবে।