তিনি একক ছিলেন, ছিলেন একাও। কাছের বন্ধু তার ছিল কমই। বন্ধু হতে যে উপাদানগুলোর মিল থাকতে হয় চরিত্রে ও বৈশিষ্ট্যে, তিনি হয়তো তেমন খুব বেশি কাউকে পাননি। তাই তিনি চলেই গেলেন একটু আগে। হুমায়ুন আজাদ তার নাম। আজ তার জন্মদিন। ‘শুভ জন্মদিন স্যার!’
তিনি আমার শ্রেণিশিক্ষক ছিলেন না। তবে বইপত্তর তার পড়েছি অনেক। স্নাতক (স.) পেরুতে বাক্যতত্ত্ব আর ভাষাবিজ্ঞানের ওপর তার লেখা স্পর্শ না-করে পারা যায় না। বিশেষ করে, আমরা যারা একটু ‘ভালো’ করতে চাইতাম, তাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল খাতায় নতুন কিছু দেওয়া। আমার আকাঙ্ক্ষা আর একটু বেশি: সময় আর সমাজ বদলের। তাই, মোহাম্মদ রফিকের ‘সব শালা কবি হবে, পিঁপড়েরা গোঁ ধরেছে উড়বেই’ আমার কণ্ঠস্থ; শামসুর রাহমানের ‘মেষরে মেষ তুই আছিস বেশ’ আবৃত্তি করি; ফরহাদ মজহারের ‘এরশাদ তোমাকে দেখামাত্রই গুলি করবে’ উচ্চারণ করি সজোরে; হেলাল হাফিজের ‘যে জলে আগুন জ্বলে’তো পুরোটাই মুখস্থ; আরও আরও! সে-সময়ই হুমায়ুন আজাদ আমার সামনে আসেন, শুধু একজন ভাষাবিজ্ঞানী হিসেবে নন, সমাজসচেতক একজন লেখক হিসেবে। মনে মনে বলি: ‘কম সাহসী নন!’ কিন্তু তার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়নি তখনো। আমার একজন শ্রেণি-সহচর ছিল বিকাশচন্দ্র রায় নামে। সে প্রফেসর আহমদ শরীফের আড্ডায় যেতো প্রায়ই। তার কাছ থেকে আমি সে আড্ডার ভাব ও বিষয় জানতাম। কিন্তু সেও হুমায়ুন আজাদের প্রসঙ্গ বলেনি কোনোদিন।
আমাকে পরামর্শটা প্রথম দিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সে-সময়কার সহকারী অধ্যাপক ড. মুহম্মদ শাহজাহান মিয়া; আমি তাকে শাহজাহান ভাই বলেই ডাকি। গবেষণাসূত্রে কলকাতায় থাকি। তিনিও গেলেন। আমাদের সৌভ্রাতৃত্ব হলো। সেখানে আমাদের অভিভাবক একজনই; অধ্যাপক ক্ষেত্র গুপ্ত। ফলে, অপরিচিত কলকাতায় শাহজাহান ভাই আর আমার সম্পর্ক দৃঢ় হতে বেশি সময় লাগেনি। সে-সময় তাকে বলেছিলাম, অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের প্রতি আমার অনুরাগের কথা। ব্যক্তি হিসেবে নয়, তার লেখালেখি আর দর্শনের জন্য খুব ভালোলাগে তাকে। শাহজাহান ভাই আমাকে বলেছিলেন, দূর থেকে ভালোলাগলেও কাছে গেলে ভালো নাও লাগতে পারে! আমার আগ্রহের সীমাহীনতা বুঝে তিনি পরামর্শ দিলেন, তাহলে তার লেখার ওপর লেখেন না কেন? আমার হাতে তখন অনেক সময়। ভাবলাম, মন্দ কী! এরপর ঢাকায় এলে পেয়ে গেলাম তার নির্বাচিত কবিতাগ্রন্থ। এটা ১৯৯৪ সালের কথা। তখনো তিনি উপন্যাস রচনা শুরু করেননি। প্রবন্ধগুলো নানাভাবে প্রকাশিত বইয়ে। চিন্তা করলাম, লেখার জন্য কবিতাই ভালো। কারণ, এখানে ধারাবাহিকভাবে তার উত্তরণ আর প্রকাশটি বেশ বোঝা যাবে। সংখ্যাও ধারণযোগ্য। তখন কলকাতায় দে’জ পাবলিশিং-এর তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত মাসিক ‘কলেজস্ট্রীট’ পত্রিকায় আমি মাঝে মাঝে গদ্য লিখি। ওরা শুনে বললো, বেশ তো দিন একটা প্রবন্ধ। আমি লিখলাম: ‘হুমায়ুন আজাদের কবিতা: কালের কপোলে একফোঁটা তলহীন জল’। ‘কলেজস্ট্রীট’ পত্রিকায় বের হওয়ার পর কলকাতা থেকে হুমায়ুন আজাদকে ডাকযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ঠিকানায় উৎসাহ নিয়ে সেটা পাঠিয়ে দিয়েছিলাম।
হুমায়ুন আজাদের সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাতের স্মৃতি সআনন্দ নয়। ১৯৯৬। তখন আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রভাষক। পিএইচ. ডি. গবেষণা পুরোপুরি শেষ হয়নি, তবে শেষ পর্য়ায়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে একজন প্রভাষক নেওয়া হবে বলে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছে। আমি রেজিস্ট্রারের অফিসে দরখাস্ত জমা দিয়ে এসে সরাসরি বাংলা বিভাগীয় প্রধানের অফিসে যাই, বিভাগীয় সভাপতিকে বিষয়টি মৌখিকভাবে জানিয়ে যাওয়ার জন্য। এটা আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও করেছিলাম। সেখানে তখন বিভাগীয় সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক ভুইয়া ইকবাল। এর কারণটি হলো, বিভাগের সভাপতি নিয়োগবোর্ডে যেন আমাকে একটু হলেও স্মরণ করতে পারেন। আজকের ভাষায় যাকে ‘লর্বিং’ বলে, তেমনটি আমার কখনো ছিল না। তাই সোজাসাপ্টা পথ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন দরখাস্ত করি, তখন আমি বেকার যুবক, শুধু পিএইচ. ডি. করছি; এই পরিচয়। বিভাগীয় সভাপতি অধ্যাপক ইকবালের সঙ্গে দেখা করার পর তিনি কিন্তু আমাকে তার সামনে বসতে সমাদর এবং চা-সিঙ্গাড়া দিয়ে আপ্যায়িতও করেন। প্রাসঙ্গিকভাবে আমাদের আলাপ-পরিচয়ও হয়। সাহস সেখান থেকেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অফিসে ঢোকার আগেই পিয়নের কাছে জেনে গেলাম অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ হলেন বিভাগীয় প্রধান এবং তিনি অফিসেই আছেন। অফিসে প্রবেশ করলাম। নিজের নাম-পরিচয় বলে হুমায়ুন আজাদকে জানালাম, আমি প্রভাষক পদে দরখাস্ত করেছি। তিনি নির্লিপ্তভাবে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘দরখাস্ত করে বলবার কী আছে?’ আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম কিন্তু সামলে নিয়ে জানালাম, চট্টগ্রামে চলে যাওয়ার আগে ভাবলাম একটু দেখা করে যাই এবং তৎক্ষণাৎ মনে হলো, আমি তার কবিতা নিয়ে তো লিখেছিলাম, সেটাও জানালাম। এবার তিনিও স্থির হলেন কিন্তু সামনের তিনটি শূন্য চেয়ারের অন্তত একটি স্পর্শ করার অধিকারও দিলেন না। বললেন, ‘আমি ভেবেছিলাম কলকাতার কোনো লেখক। তুমি কী করে কলকাতায় লেখা ছাপালে?’ আমি তখন দাঁড়িয়েই গড়গড়িয়ে বলা আরম্ভ করেছি: সরকারি বৃত্তি নিয়ে সেখানে পিএইচ. ডি. করছি অধ্যাপক ক্ষেত্র গুপ্তের (এই নামটি বলার উদ্দেশ্য হলো: বাংলাদেশের সবাই তাকে তার পাণ্ডিত্যের কারণে সমীহ করেন) তত্ত্বাবধানে; কলকাতা থেকে আমার গবেষণাগ্রন্থ ‘গদ্যশিল্পী মীর মশাররফ’ বেরিয়েছে; কলকাতার লিটলম্যাগেও লিখি; চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক আমি; বাংলাদেশ ও ভারতের গবেষণা-পত্রিকায় কয়েকটি লেখা বের হয়েছে ইত্যাদি। তিনি বললেন, ‘তোমার তো ওই মশাররফ-ফশাররফের প্রতি আগ্রহই বেশি!’
কাল রাতের আকাশে পূর্ণিমার চাঁদও উঠেছিল ঠিকই, তবে সভ্যতার বিরূপতা আর হিংস্রতার এই বসুন্ধরায় সেটি ‘ফালি ফালি করে কাটা চাঁদ’! এই ফালি ফালি করে কাটা চাঁদের কথাই তিনি এককভাবে বলে গিয়েছিলেন অনেক আগে, বলে গিয়েছিলেন একা।
আমি তার সম্মুখে দাঁড়ানো আর নিরাপদ বোধ না করে অফিস থেকে বের হয়ে এলাম। অধ্যাপক ভুইয়া ইকবাল যেখানে বেকার-গবেষক আমাকে বসিয়ে চা-সিঙ্গাড়া খাইয়েছিলেন, অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়-শিক্ষক হিসেবে আমাকে বসতেও বলেননি। তখনো কিন্তু জায়গায় জায়গায় কচুরিপানার মতো এত বিশ্ববিদ্যালয় ফোটেনি। বাংলায় স্নাতক (স.) পড়ানো হয় এমন গুরুত্বপূর্ণ চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি, চট্টগ্রাম (অন্য তিনটি ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর) বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক আমি। তিনি আমাকে অন্তত একটু বসতে বলতে পারতেন।
আমি পরে এটা স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছি। কারণ, একজন প্রভাষক-চাকরিপ্রার্থীকে তিনি কেন আগেই সমাদর করবেন? এরও পরে জেনেছি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগবোর্ডে অধ্যাপক ভুইয়া ইকবাল আমার ব্যাপারে ইতিবাচক ছিলেন না। সেই বোর্ডের অন্যতম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন আমাকে বলেছেন, বোর্ডের চেয়ারম্যান উপাচার্য় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম চৌধুরী (আর আই চৌধুরী), বিশেষজ্ঞ-সদস্য অধ্যাপক মুস্তাফা নূরউল ইসলাম আর তিনি একমত পোষণ করায় অধ্যাপক ইকবালের মত টেকেনি। বিভাগে যোগ দেওয়ার পর অধ্যাপক ইকবালের ব্যবহারে আমি একথার সত্যতা অনুভব করেছিলাম। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে আমার নিয়োগের ব্যাপারে নিয়োগবোর্ডে অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের ইতিবাচক ভূমিকার কথা আমি পরে জেনেছি। আমাকে ‘স্থায়ী’ প্রভাষকের পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ‘চাকরি হবে’ আগে থেকেই চাউর হওয়া অন্য একজনকে সহকারী অধ্যাপকের বিপরীতে ‘অস্থায়ী’ প্রভাষকের পদে নিয়োগ দেয় বোর্ড, যদিও বিজ্ঞাপনে তা উল্লেখ ছিল না। নিয়োগবোর্ড বসার আগেই, ততোদিনে আমার পিএইচ. ডি. ডিগ্রিও অর্জিত হয়েছে। ফলে ‘স্থায়ী’ পদেই আমাকে নিতে হবে—এটাই নাকি ছিল বিভাগীয় সভাপতি হুমায়ুন আজাদের কথা! ফলে, শুধু চা-সিঙ্গাড়া দিয়ে হুমায়ুন আজাদকে মাপা যায় না, বোঝা গেলো।
চা-সিঙ্গাড়া কি কখনো তার সঙ্গে খাইনি? অনেক খেয়েছি। তার সহকর্মী হিসেবে এবং খানিকটা প্রিয় সহকর্মী হিসেবেই অনেকবার সে সুযোগ হয়েছে। কিন্তু অন্য চা-সিঙ্গাড়ার কথা বলি। তখন ‘ভোরের কাগজ’ বেশ জনপ্রিয় দৈনিক। ১৯৯৮ সাল হবে। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক রোবায়েত ফেরদৌস আর আমি তখন সেই পত্রিকায় টুকটাক কাজ করি। আমি বিখ্যাত মানুষের সঙ্গে উপলক্ষ্যভিত্তিক আলাপ করে সেই আলাপ পত্রিকায় দেই, ওরা ছাপে। অনুলেখনে আমার নামও ছাপা হয়। প্রতি লেখায় তিনশ টাকা দেয়। দারুণ ব্যাপার! এভাবে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, শামসুর রাহমান, আনিসুজ্জামান, মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান প্রমুখের কথা ছেপেছি। হুমায়ুন আজাদের কথাও নিলাম: একাত্তরের পঁচিশে মার্চে তাঁর স্মৃতি নিয়ে। ‘ভোরের কাগজ’ সেটি ২৫শে মার্চ তারিখে ছাপল। দিন দশেক পরে এক বিকেলে আমি আর রোবায়েত ফেরদৌস মিলে গেলাম হুমায়ুন আজাদের ‘লেকচার থিয়েটার’-এ বসবার ঘরে। কথা-প্রসঙ্গে এলো সেই লেখার কথা। আমরা বললাম, ‘দেখেছেন স্যার লেখাটা?’ তিনি বললেন, ‘দেখেছি। কিন্তু আমাকে তো টাকা দিতে হবে।’ আমরা বললাম, ‘কেন?’ তিনি বললেন, ‘সেটা তো সাক্ষাৎকার হিসেবে ছাপেনি। ছেপেছে আর্টিক্যাল হিসেবে। তো, টাকা দাও।’ আমরা এবার ভাবলাম, ঠিকই। পত্রিকাটি অন্যদের কথা যেভাবে ছেপেছিল হুমায়ুন আজাদের কথা সেভাবে ছাপেনি। উপসম্পাদকীয় কলামে ‘আর্টিক্যাল’ করে ছাপে। আমি পকেট থেকে তিনশ টাকা তার হাতে দিলাম। বললেন, ‘চলো।’ আমরা মধুর ক্যান্টিনে বসলাম। আরও দু-চারজন এসে গেলো। আলাপ চললো। চা-সিঙ্গাড়া এলো। রোবায়েত আর আমি—দুজনের হাতেই সময় ছিল। সিগারেটওয়ালা ছেলেটাকে ডাকলেন স্যার। ধরালেন। কয়েকটি সিগারেট প্যাকেটেও নিলেন। ওঠার আগে দাম শোধ করলেন। হাতে খুচরো বেশ কিছু টাকা ফেরত এলো। স্যার আমাকে বললেন, ‘নাও, এগুলো রাখ।’ আমি বললাম, ‘নাহ স্যার, ওগুলোও আপনার।’ তিনি পকেটে ভরলেন। সেদিনের চা-সিঙ্গাড়াও আমরা মজা করেই খেয়েছিলাম। একথা অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস আর আমি আজও স্মরণ করি। স্মরণ করি, এজন্য যে, একজন লেখকের রচনার অর্থমূল্যও তার প্রাপ্য হওয়া উচিত, হুমায়ুন আজাদ তা জানতেন এবং লেখার পর অর্থমূল্য প্রকাশ্যে দাবি করতেন। লেখকদের অর্থমূল্যে বঞ্চিত করার যে ‘সংস্কৃতি’ আমাদের দেশে এখনো চালু আছে, তার বিরুদ্ধে তার অবস্থান ছিল স্পষ্ট। লিটলম্যাগ বা স্বেচ্ছাশ্রমীদের কথা আলাদা। যে পত্রিকা টাকা দিয়ে কিনতে হয় এবং তারা সেটা বাণিজ্যিকভাবে প্রকাশ করে, সে-সব পত্রিকায় ছাপা হওয়া লেখার জন্য লেকক কেন টাকা পাবে না? কম হোক, কিন্তু অর্থপ্রাপ্তি লেখকের অধিকার। এরপর থেকে নিজেও মনে করি, লেখকের লেখা বিনামূল্যে পত্রিকাগুলোর গ্রহণ করা উচিত নয়। আমি অনেক দৈনিক পত্রিকার সংশ্লিষ্ট সম্পাদকদের কাছে লেখার অর্থমূল্য পাইনি। তারা দেবেন বলেও দেননি। প্রিয় পাঠক, একনামে আপনারা চিনবেন, এমন দৈনিক পত্রিকা অনেক আছে যারা লেখা ছেপে আমাকে টাকা দেয়নি। তাই দৈনিক পত্রিকায় লেখা কমিয়ে দিয়েছি। হুমায়ুন আজাদের সঙ্গে মধুর ক্যান্টিনে বসে খাওয়া চা-সিঙ্গাড়া আমাকে সেদিন ক্ষুব্ধ করেনি, বরং তার প্রতি অনুরাগ বাড়িয়েছিল।
আমি আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ ফুলার রোডে যে ভবনে বাস করি, এর পাশের ভবনেই (১৪, দক্ষিণ ফুলার রোড) শেষ অবধি হুমায়ুন আজাদ বাস করতেন। আমরা যেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি, সেদিন ছাত্রধর্মঘটের জন্য বাংলা বিভাগের অফিস বন্ধ ছিল। যোগদানপত্রে বিভাগীয় সভাপতির প্রতিস্বাক্ষর নিতে এই ভবনের তিনতলায় এসেছিলাম। তিনি প্রতিস্বাক্ষর দিয়েছিলেন। এরপরেও এসেছি। বড় স্মৃতিময় এই ভবন। এখন রাতের খাবার সেরে এই ভবনের চারদিকে প্রায়ই হাঁটি। কালও হেঁটেছি। বড়ো রেইনট্রি-টি আছে, মাঠটি আছে, ভবনটিও আছে কিন্তু শুধু তিনি নেই। কাল রাতের আকাশে পূর্ণিমার চাঁদও উঠেছিল ঠিকই, তবে সভ্যতার বিরূপতা আর হিংস্রতার এই বসুন্ধরায় সেটি ‘ফালি ফালি করে কাটা চাঁদ’! এই ফালি ফালি করে কাটা চাঁদের কথাই তিনি এককভাবে বলে গিয়েছিলেন অনেক আগে, বলে গিয়েছিলেন একা।