বগুড়ায় বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন করতে গিয়েই কবি ইসলাম রফিকের সঙ্গে পরিচয়। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তার সঙ্গে মেশার সুযোগ হয়েছে। রফিক ভাইয়ের সঙ্গে যখনই দেখা হয়েছে, তখনই মনে হয়েছে এই পৃথিবীতে কবিতার জন্য সব কিছুকেই ত্যাগ করা যায় কিন্তু অন্য কোনো কিছুর জন্যই কবিতাকে ত্যাগ করা যায় না। তার সঙ্গে দীর্ঘ সময়ের এই পথ চলায় কবি ও কবিতা বিষয়ে আমার দেখার চোখের আয়তন পাল্টানোর পাশাপাশি অনুভবের বিন্যাসেও এসেছে অনেক পরিবর্তন।
মানুষ যে কবিতা লেখার মতো অকিঞ্চিৎকর কর্ম কেন বেছে নিয়েছিল, তা বলা হয়তো দুরূহ। যেমন ধরুন, বাল্মীকি অন্তত রামচন্দ্রের মাহাত্ম্য বর্ণনার জন্য রামায়ণ রচনা শুরু করেননি। তিনি ব্যথিত হয়েছিলেন দুটি পাখির প্রণয়লীলায় তার মর্মন্তুদ শরক্ষেপণে। কালিদাস গুপ্তসম্রাট বিক্রমাদিত্যের মনোরঞ্জন নিয়ে কতটা চিন্তিত ছিলেন, জানি না। কিন্তু দিগন্তে কারও কালো আঁখি জলে ভেসে যেতে দেখলে তিনি শব্দের মায়ায় জড়িয়ে মেঘকেই দূত হিসেবে অমরাবতীতে পাঠিয়ে ছিলেন। আর আমাদের কবি ইসলাম রফিক ‘বিজন দ্বীপে বিশ্বাসী বালিহাঁস’-এর কাছেই পাঠিয়েছিলেন প্রথম কবিতাপত্র। এর পরেই তার কবিতার কাছে ফিরে আসা। এরপর ‘পথে পথে শেখা’, ‘প্রেমে প্রেমে লেখা’ নিয়েই এখন পর্যন্ত তিনি থিতু হয়ে আছেন ‘নিরালা রোড’-এর।
জনশ্রুতি আছে, বাংলাদেশের আধুনিক কবি ও সাহিত্যিক আবু হাসান শাহরিয়ারই তাকে রফিকুল ইসলাম নাম থেকে ইসলাম রফিক নামে ব্র্যান্ডিং করেছেন। কবিতার ভুবনে কবি আবু হাসান শাহরিয়ারকেই তাই গুরু মানেন ইসলাম রফিক। অসংখ্যবার তার মুখে এ নিয়ে অনেক গল্প শুনেছি।
ইসলাম রফিক একজন আপাদমস্তক কবি, সম্পাদক ও অক্লান্ত সংগঠক। হাস্যোজ্জ্বল এই মানুষটির কাছাকাছি না গেলে বোঝা যাবে না, তিনি কতটা শিশু প্রকৃতির। নিজে তারুণ্যে অবিচল থেকে গত কয়েক দশকে উত্তর জনপদের অসংখ্য তরুণের মধ্যে কবিতা মাতলামির বীজ বুনে দিচ্ছেন। পাশাপাশি সাংগঠনিক কাজও হাতে কলমে শিখে দিচ্ছে তাদের। একইসঙ্গে মাঠে ময়দানে তিনি প্রচার করছেন; এই পৃথিবী কবিতার জন্যই বেঁচে আছে। কবিতার মধ্যেই একদিন মিলিয়ে যাবে।
কবিতার সংগঠক হিসেবে বাংলা কাব্যের ইতিহাস ইসলাম রফিককে মনে রাখবে এটা আমি জোড় দিয়েই বলতে পারি। কারণ, কবি ও কবিতার জন্য তার যে ডেডিকেশন, তা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। ছোটকাগজ সম্পাদনা-প্রকাশনায়ও ইসলাম রফিক সমানভাবে উজ্জ্বল। দীর্ঘদিন ধরে সম্পাদনা করছেন ছোটকাগজ ‘দোআঁশ’ ও ‘নিওর’। তার সেই ছোটকাগজ সফল ও অসফল, খ্যাত ও অখ্যাত নানা কবির আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে। এই অর্থেও তিনি শিল্পী ও শিল্পের পথপ্রদর্শক।
ইসলাম রফিকের ৪৮ বছরের জীবনের দিকে তাকালে মনে হয়, আমাদের সমাজে কবিতার কাছে এমন সর্বতভাবে নিবেদিত প্রেমিক আর কই? শোকে ও উল্লাসে, কলহে ও মিত্রতায়, রাস্তায়, গৃহে, দাম্পত্যে ও জীবনের আনাচে কানাচে তিনি এমন এক স্বপ্নসুন্দরীর সঙ্গে সহবাস করে যাচ্ছেন, যার নাম শুধুই কবিতা। আমার মনে হয়, আমাদের কবিতা চর্চার ইতিহাসে তার জন্য একটি আসন ছেড়ে রাখতেই হবে।
আমার ধারণা, ইসলাম রফিক ধীরে ধীরে সমাজহিতৈষী হওয়ার দিকেও মন দেবেন। কারণ লেখক সমাজের পাশাপাশি সমাজের সাধারণ মানুষও তার কাছে অনেক কিছু প্রত্যশা করে।
আজ ২৫ এপ্রিল, বগুড়া লেখক চক্রের সভাপতি কবি, সম্পাদক ও জনপ্রিয় সংগঠক ইসলাম রফিকের ৫২তম জন্মদিন। জন্মদিনে তাকে জানাই অফুরান শুভেচ্ছা।