আমার মৃত্যুর জন্য আপনিই দায়ী ॥ সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল
আপনি শর্ত মোতাবেক আমাকে ভুলে যাবেন!
অথবা আমিই ছিড়ে যাবো,
ছেড়ে যাবো
আপনাদের ভেতর মিশে যাবো কর্পূর।
এতোদিন আপনাদের সদস্য
এবং স্বেচ্ছাসেবক ছিলাম।
আপনাকে নিয়ে পড়াশোনা করেছি, কবিতা লিখেছি।
বঞ্চিত করবেন আপনার অক্সিজেন থেকে।
নাইট্রোজেন, আর্গন, কার্বন ডাই-অক্সাইড,
সামান্য জলীয় বাস্প
এবং বায়ু মণ্ডলের
এক্সোমণ্ডল, তাপমণ্ডল, মেসোমণ্ড, স্ট্রাটোমণ্ডল, ট্রপোমণ্ডল
মধ্যাকর্ষণ ছিঁড়ে ছেড়ে যাবো
বায়ু বেরিয়ে যাবে পায়ুপথে।
রামায়ণে আপনার সংসারে একদিন ঢুঁ মেরেছি
জেনেছি, আপনি পবন নামেও পরিচিত
আপনার সহধর্মিণী অঞ্জনা
ভারতে, মহাভারতে আপনার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
আপনি কুন্তিকে পুত্র সন্তান দিয়েছে
তার নাম ভীমসেন।
আপনি নিরাকার, অদৃশ্য
কিন্তু বহুরূপী!
আপনার রূপ
এবং রূপকথা অদ্ভুত!
আপনি ধর্মেও আছেন, জিরাফেও আছেন!
যাই হোক, আমার মৃত্যু জন্য আপনিই দায়ী!
সংহার ভুলে যাওয়া ॥ প্রেমাংশু শ্রাবণ
পাথরে লুকিয়ে থেকে
বহুদিন ধাতু হাতে নিয়ে
ঘুরে বেড়িয়েছি।
শিকারির রক্তে কাঁপন ধরিয়ে
হৃদপিণ্ড ঘুরে দেখবো বলে
পাথর টুকরো হতে হতে
রয়ে গেছি আবার
শ্বেতপাথরের খাদে।
দাহ্য ছিলাম শিহরে
সেই পোড়া কাঠ।
আগুনের স্মৃতি ঠুকেছি কেবল।
যদি কখনো ফায়ার স্টেশনে
সাইরেন বেজে ওঠে।
যদি কখনো আগুন নেভাতে
বৃষ্টির ফোঁটা নেমে আসে উদোম প্রান্তরে
সেই প্রাচীন দুপুরে
যে পাখির নিঃস্বাসে রচিত হলো
ইস্পাতের ঈষে খুঁড়ে ফেলা
মাটির কাঁকর!
হাতিয়া হাতে তবু
জীবনের সংহার ভুলে যাওয়া।
হোক অরি দমন ॥ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া
ক্যালেন্ডারের পাল্টে পাতা নতুন যখন হয়
আগের বছর পায় তখনই কালের গর্ভে লয়
নতুন দিনের সূর্য ওঠে প্রতিদিনের ন্যায়
সেই পুরোনো আয়ের সাথে জোটে নতুন ব্যয়।
তবু আশা জ্বালায় আলো রাঙায় মনের ঘর
নতুন বছর আপন করে পুরান করে পর
পুরান দেহ পুরান মনে যাত্রা করে পথ
মরীচিকার মায়ায় চলে অচিন ভবিষ্যৎ।
বছর কেবল সংখ্যা বটে জীবন যখন ঘোর
জীর্ণ রাতের শেষেই যত আসুক নতুন ভোর
তবুও শ্বাস রয় বারোমাস এমন যদি হয়
নতুন দিনে সূর্য শুষে নেবেই অবক্ষয়!
মাটি আছে খাঁটি দেহে সোনার মানুষহীন
বদলে কেবল বছর-মাস আর বদলে কেবল দিন
‘নববর্ষ ‘ কেউ ভেবে নেয় ধর্মহীনের ছল
উল্টোরথে দেশ চলে তাই ভুগছে অনর্গল।
প্রতিবছর চাপান-উতোর দানবের উদ্ভব
নববর্ষে বিভক্ত তাই বাঙালির উৎসব
ক্যালেন্ডারে পাল্টে পাতা পাল্টে না তো মন
নববর্ষে চাই উৎসব হোক অরি দমন।
ত্রিশ বছর পর ॥ ক্ষুদীরাম দাস
এই ভূমি আমার
জন্ম এখানেই
কষ্ট লুকানো ভূমিহারা
আমি চিৎকার করে কাঁদি না
লাভের আশা যে শূন্য তাই।
ত্রিশ বছর পর
আমি জেগে উঠি
কষ্টের মায়াজাল থেকে
আমি সরে আসি
দেখি আমি আছি, সে নাই।
আহুতি ॥ সাদিক আল আমিন
ডানাগর্বী চিল উড়ে যায় শুধু
নিচ থেকে প্রান্তর দেখা যায় ধূ-ধূ
কোথাও লাপাত্তা গরু মরে পড়ে আছে
মাংসের গন্ধ মৃত মাংসই ডাকে কাছে
মঙ্গার শিকার যত জন-কোলাহল
নিচ থেকে ঢিল মারে শিশুরা বিরল
বুজুর্গ লোকজন ছায়ায় টানে বিড়ি
তোমাকে বুঝি না, মন-ঋষি আনাড়ি
খেতের পর খেত উর্ধ্বশীষ বোরো
প্রেমের সমাধিতেই এসে হয় জড়ো
দূরে ভেসে যায় ম্লান নদীদিন
কাঁটার কাছে গোলাপের আজন্মের ঋণ
দিঘির জলে সাঁতরায় সুখী জলঢোঁড়া
যাবো কাছে তোমার, পা যে খোঁড়া!