একটি মানচিত্রের উপাখ্যান
কবির অমর পঙ্ক্তিমালা জ্বালিয়েছিল দ্রোহের আগুন
সে আগুন নেচে উঠলো প্রতিটি শিরায়, রক্তকণায়
সৃষ্টির অমোঘ টান মন্থিত হলো স্নায়ুর প্রতিটি তন্ত্রীতে।
একটি মানচিত্র আঁকবে বলে রঙতুলি হাতে নিলো
মাটির নিবিড় পরিচর্যায় বেড়ে ওঠা সূর্য সন্তানেরা।
ষোলতে পা দেওয়া এক টগবগে তরুণ তার মা’র বুকে মাথা রেখে বললো,
আমি ফিরে না এলে দুঃখ করো না, এই শ্যামল প্রান্তরে চেয়ে থেকো
সেখানেই খুঁজে পাবে আমার অস্থিত্ব।
একজন চিত্রকর তার প্রিয়তমার চোখে চোখ রেখে বললো,
শিল্প ও শিল্পীর মৃত্যু নেই, সুন্দরের সাথেই তাদের বসবাস।
একজন অনাগত সন্তানের পিতা আবেগাপ্লুত কণ্ঠে তার স্ত্রীকে বলল–
সন্তানের সাথে দেখা না হলে তাকে বলো,
গুচ্ছ-গুচ্ছ পলাশ ও কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম আবিরে মিশে আছে তার পিতা
সেখানেই খুঁজে পাবে হারানো পিতার গন্ধ।
অতপর তুলির নিখুঁত আঁচড়ে বুকের রক্তে আঁকা হলো এক মানচিত্র;
জন্ম নিলো একদেশ; তার নাম বাংলাদেশ।
আশালতা
লাউয়ের ডগার মতোন দ্রুত বেড়ে ওঠে
প্রত্যাশার অবাধ্য আঙুল
চাঁদের ঠোঁট ও চিবুকের লাবণ্য দেখে
মন হয় ভীষণ ব্যকুল।
পাখিদের শব্দে অন্ধকার ছিঁড়ে আলো ফোটে
সবুজের প্রাচুর্য দেখে কৃষকের চোখ থেকে
স্বপ্নীল শব্দেরা ওড়ে অন্তহীন নীলাকাশে।
রুপার ঝলক দেখার প্রত্যাশা নিয়ে জেলে পাড়ার ছেলেটি
ছুটে চলে জলজ উদ্যানে।
মাঝে মাঝে জোছনার দেহে বিষণ্ন আঁধার নামে
রাতের মৌনতা ভেঙে বেদনার বাঁশি বাজে।
প্রেম ও জল
স্নান করো না এ নষ্ট জলে
বকুল ঝরে না নক্ষত্র হয়ে ওই জলাধারের বুকে
কদম পড়ে না টুপ টুপে শব্দে আষাঢ়ের বৃষ্টিস্নাত দিনে
শরৎ সকালে শিউলির গন্ধে শুদ্ধ হয় না এ জল।
তুমি ফিরে এসো বিস্তীর্ণ নীলাকাশ আবৃত
আদিগন্ত সবুজ প্রান্তরের হৃৎপিণ্ডে থাকা এই সরোবরে
এখানেই আছে অগ্নি ও বিশুদ্ধ জল
জলের প্রতিটি বিন্দু হয় কবিতার মুক্তোদানা
তুমি ফিরে এসো এই সরোবরে
শুদ্ধ হও আগুন ও জলে।