কথা ছিল
কথা ছিল ফিরে আসবো
বৃষ্টির শব্দের মতো আওয়াজ তুলে
নদী আরপাহাড়ের কাব্য লিখবো
কথা ছিল
তোমার রোদ্দুরে শুকিয়ে নেবো ভিজে যাওয়া আমার বাড়ি ঘর
কথা তো থাকেই
একদিন আকাশের হাত ধরে
নীল ছড়াতে ছড়াতে ধূসর জীবনে
ফোটানোর কথা ছিল নীলপদ্ম
ঠিকানাহীন ভাবনার ছুটি দেওয়া সময়কে
ঝেড়ে ফেলে আর একবার রঙ
ছিটাবো ইচ্ছে মতো
ছিঁড়ে যাওয়া ঘুড়ির মতো দুজনে
ছেঁড়া পথ আবার মিলবে
বেলা শেষে
কথা ছিল
ভেঙে যাওয়া বুকের উঠোনে
চাষ করবো সোনালি রোদ্দুর
অজানা গন্তব্য থেকে হেঁটে আসবে আমাদের অনাগত আগামী
সূর্যের সাথে মিছিল করবো
একটি সমুদ্র আর নিষ্কলঙ্ক আকাশের দাবিতে
কথা তো থাকেই
কিন্তু কোনো কথা থাকে
ধেয়ে আসা সুনামির সাথে
নাচতে নাচতে যেসব কথারা
হারিয়েছে ঘরে ফেরার পথ
যার পায়ের নিচে বয়ে গেছে বিস্তীর্ণ হাহাকার
তার তো আর কথা থাকে না
প্রথম আগুন এবং নিঃসঙ্গতা
আলোকিত আনন্দের ঠিকানায় আমার বোধেরা ঝরেছে ঝরঝর
সারাদিন নিমগ্ন চেতনাকে বালিহাঁসের মতো উড়ে যেতে দেখেছি
তোমার মনের স্বৈরাচারী সীমানা পথে
জোছনারা মোমের মতো গলেগলে হয়েছে নিঃশেষ
তবু ফেরা হয়নি অমীমাংসিত হৃদয়ের চরাচরে
কাব্যবালিকারা বাসন্তিক ছন্দে করেছে নৃত্য
পুবে এবং পশ্চমে
সবখানে জেনেছে আকাশ এসুখ পুড়ে মরার
এ সুখ ভালোবাসার
সারারাত জেগে জেগে কেনো তারে আবিষ্কার করি
সেকথা নাইবা হলো বলা থাক সাধের সিন্ধুকে
জানা হোক হৃদয়ের সন্ত্রাসী চোখ হরণ করেছে
প্রথম আগুনলাগা শিমুলের ভোর
আমি তো পারি না তাদের মতো
যারা ভালোবাসার রক্তকে করেছে জমা
ফেরারি বিবেকের নষ্ট তালিকায়
শুধু জানি তোমার প্রথম বৃষ্টিতে ধুয়ে যাওয়া সকাল দুপুর
সবটাই চলে যাবে বিকেলের মেইলে
শুধু পড়ে থাকবে আমার নিঃসঙ্গ বোধেরা
বুক পকেটে আগুনফুল
আমার মরুভূমি থেকে তোমার জলোচ্ছ্বাস
মাঝখানে কতটা জন্ম কতটা মৃত্যু
রেখে গেছে সময়ের মানচিত্রে শেষ চিহ্ন
ভালোবাসার রক্তে ভিজে যাওয়া আয়না
বারবার মুছে নিয়েছ
বুকের মধ্যে লুকিয়ে রাখা প্রিয় রুমালে
মহাকালের ছেঁড়া মলাটে এঁকে দিয়েছ
ভালো থাকার জ্যামিতিক সূত্র
আর আমার হৃদয় তাণ্ডবে বালিয়াড়ি জীবন
ফিরে দাঁড়িয়েছে ফুল পাখি নদী জলের সামনে
তোমার উর্বর বুকে যখন খুঁজেছি
বেঁচে থাকার অনুষঙ্গ
তাবৎ নক্ষত্র ঝরে পড়েছে সারাদিন বৃষ্টির মতো টুপটাপ
তুমি ভেসেছ তোমার মহাসাগরে
আর আমি মরুভূমিতে পুড়তে পুড়তে
বেঁচে গেলাম
প্রজন্মের পাঠশালা
দুপুররাতে অনবরত কাদা বালি
চষে চাষ করি সাদা কালো কিম্বা
মিছিলে মুখরিত মুখ
চেতনার বীজে অঙ্কুরোদ্গম হবে
ভুলে যাওয়া বিপ্লবী বৃক্ষ
অসংখ্য পাখির বাসায় ভরে উঠবে
সবুজের পাড়া
আর আমি অন্ধকারের আলোয় হেঁটে যাবো শাশ্বত গন্তব্যের দিকে
হৃদয়ের রাজপথে নির্ঘুম চোখের ইতিহাসে
লেখা হবে নীরব দিনলিপি
কার প্রতীক্ষায় পুড়ে যায় তোমার বিস্তীর্ণ নগরী
জন্মদাগের রেখায় এঁকে ফেলো
মায়াবতী সময়ে ঘরে ফেরার পথ
যাবো না তবু নীলময় নীলের কাছে
জানা হবে
ভুলে যাওয়া ব্যাকরণে রয়ে গেছে
বিশুদ্ধ উচ্চারণ
মেখে নেয়া উড়ো ধুলোয় জীবনের পাণ্ডুলিপি পড়ে গেছে চাপা
তবুও হারবো না খুলে ফেলা নস্টালজিয়ার কাছে
ঈশ্বরের মতো মুখস্থ করবো
ভালো থাকার সব মন্ত্র
শ্মশান কাঠের কার্বনে কপি হওয়া
প্রজন্মের কাছে রেখে যাবো
ভেঙে গড়ার দুরন্ত পাঠশালা
অনিবার্য অন্ধকার
প্রতিদিন মুখস্থ করা মুখগুলো
ভুলে যাওয়ার আগে
কালো পর্দা ঠেলে সামনে এসে দাঁড়ালো
একটি শাদা অন্ধকার
অন্ধকার কখনো শাদা হয় তা
এই প্রথম দেখলাম
বাবার শেষ দৃষ্টির সাথে আমিও
অপলক দৃষ্টি রেখেছিলাম
ধবধবে শাদা সে অন্ধকারকে
প্রাণপণে অতিক্রম করে আমার জন্মদাত্রীকে একবার
ছুঁতে চেয়েছিলেন তিনি
ভালোবাসার শেষ উষ্ণতায় শীতল হওয়ার আগে
প্রিয় পুত্রের দিকে ঠোঁট কাঁপিয়েছিলেন কয়েকবার
কিন্তু সে অন্ধকারের শক্তি এতটা প্রবল ছিল
তার কাছে হারমানা ছাড়া আর
কিছুই করার ছিলো না
আমার প্রথম নায়ক
প্রিয়তম পিতা
যিনি কারো কাছে কখনো মাথা নত করেননি
কতো সহজেই তিনি ডুবে যেতে থাকলেন
অনিবার্য অন্ধকারে
আর আমরা তাঁর মুখস্থ মুখগুলো
ক্রমশ বিলিন হতে থাকলাম।