নিজের সঙ্গে কথোপকথন
আমার বারান্দার নীলকণ্ঠ লতায়
অনেকদিন ফুল ছিল না,
নিষ্প্রাণ দেখাতো তাকে,
শেষবার ভাগ্যের ওপর হওয়া রাগ সামলাতে না পেরে
ছিন্নমূল করে দিয়েছিলাম তাকে।
এরপর বড্ড কষ্ট হচ্ছিল নীলকণ্ঠের জন্য
মাঝেমাঝে খুব ইচ্ছে করে
মৃত লতার সঙ্গে কথা বলতে,
প্রাণহীন মৃত লতা কি মরে গিয়ে বেঁচে গেছে!
আজকাল অবুঝ দুপুরটা বড্ড বায়না করে,
কিছুদিন আগে ফেলে আসা স্মৃতির বায়না,
মনে হয় দুপুরগুলো ফিরে আসুক।
সন্ধ্যায় সদ্য ওঠা চাঁদের চিহ্ন দেখলে
যেই মেয়েটার মুখে হাসি ফুটতো।
আজ মনে হয় তার বিষণ্নতা চাঁদকে ছাপিয়ে যাচ্ছে,
নিসঙ্গতার অন্ধকার
আসলেই সবকিছুকেই ছাপিয়ে যায়।
চাঁদটাও ভালো লাগে না ইদানীং,
দেখে মনে হয় আমার সব বিষণ্নতা যেন
চাঁদের মধ্যে গিয়ে জমা হয়েছে।
চাঁদের আশেপাশে আকাশজুড়ে
হাজার তারা জেগে উঠলেও,
সে একা।
দিনশেষ সবাই একা; আমরা সবাই।
ভালো থাকার লোভ
ব্যস্ততা আর দূরত্বের যখন সন্ধি হয়ে যায়
যখন একটু একটু মেঘ জমে
মেঘেরা গাঢ় আকার ধারণ করে,
তখনই সব ভুলিয়ে দিতে,
কারও ঘুমজড়ানো কণ্ঠস্বরে ক্লান্তি কেটে যায়।
উজ্জীবিত হয়ে ওঠে প্রাণ।
শত মাইল দূরে থেকেও
অনুভব করা যায় কারও অস্তিত্ব।
তখন আর একাকিত্ব আমাকে ছুঁতে পারে না,
ঘিরে ধরতে পারে না মন খারাপের ব্যামো।
বহুদিনের বেঁচে থাকার ইচ্ছেরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে,
বহুবছর কারও সঙ্গতায়
ভালো থাকার লোভে আমি অন্ধ হয়ে যাই।
বসন্ত এসেছে
দেখতে দেখতে কুড়িটা বসন্ত কেটে গেছে,
আগুন ঝরা ফাগুনে তবু একা আমি।
বসন্ত নয়,
ঋতুরাজের আগমনী বার্তা নিয়ে এসেছে
অবহেলার খোলা চিরকুট।
গোলাপ ডালে ফুল নেই,
বেলির ও দেখা নেই বহুদিন।
বেলকনির কোথাও একফোঁটা রঙ নেই,
সব আমার হৃদয়ের মতো নির্জীব,
জীবনের মতো রংহীন,
অস্তিত্বের মতো অস্পষ্ট।
আমার ঘরে কোথাও আজ,
বসন্তের কোনো চিহ্ন নেই।
কোনো রূপ নেই,
আমার জীবনে বসন্তের কোনো দাগ নেই।
বসন্ত তার আপন নিয়মে এসে,
এবারে আর আমায় রাঙাতে পারেনি।
কোকিল ডাকেনি, তবু বসন্ত এসেছে।