একজন শিক্ষিত মানুষকে সমাজ রাষ্ট্র ও ধর্ম ভয় পায়। একজন শিক্ষিত মানুষকে কুসংস্কার সংক্রামিত করতে পারে না। তাই শুরু হয় বিভাজন-নীতি। নারী-পুরুষের নিক নেম মানুষ। একজন সুশিক্ষিত মানুষ একজন সুনাগরিকও বটে।
একজন সুনাগরিক কখনোই অন্যর ক্ষতির কারণ হয়ে ওঠেন না। তার মানবিক মূল্যবোধ গোটা সামাজিক ব্যবস্থাকে আরও সুন্দর করে তোলে। প্রতিটি মানুষ যেমন সর্বগুণে গুণান্বিত হয় না, তেমনি সঠিক ও সুশিক্ষা পেলে তার দ্বারা কোনো প্রকার অঘটন ঘটে না। উদাহরণ স্বরুপ দেখতে পাই মাটির ময়না সিনেমায় একজন শিক্ষিত কুসংস্কার মুক্ত তরুণ কিভাবে নিজের গণ্ডিকে অস্বীকার করে।
আমরা মনে যতটা সাম্প্রদায়িক হই না কেন, আমাদের দীর্ঘদিনের ধারাকে অস্বীকার করতে পারি না। যদি মিষ্টান্ন দ্রব্যের কথা বলি, তবে বাংলাদেশের এই জনপ্রিয় খাবার তৈরি করে মূলত হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা। মিলাদ মাহফিল ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও লৌকিক আচারে আমাদের মিষ্টান্ন দ্রব্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। পোষাক-পরিচ্ছদে আমাদের আলাদা কোনো বৈচিত্র্য নেই। ধুতি-লুঙ্গি একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করছে। পাঞ্জাবি-ফতুয়া- শাড়ি-থ্রিপিস; সবখানেই অসাম্প্রদায়িক।
তাই একটি বাচ্চা মানুষ হওয়ার বদলে একজন মুসলিম, একজন হিন্দু ও একজন খ্রিষ্টান হিসেবে বেড়ে ওঠে।
হিন্দুসম্প্রদায়ের পুরুষেরা ধর্মীয় বিশ্বাসে যেম দাঁড়ি-গোঁফের প্রাধান্য দিচ্ছে, তেমনি মুসলিম সম্প্রদায়ের পুরুষেরাও দাঁড়ির গুরুত্ব বহন করছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের নারীদের যেমন সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হতে হয়, তেমনি মুসলিম সম্প্রদায়ের মেয়েরাও হয়। তারা কখনোই পিতার সম্পত্তির ন্যায্য হিস্যা পাচ্ছে না। যদিও বা কেউ পায়, সেটা কেবলই হাতেগোনা। নারীরা সব ধর্মেই নির্যাতিত। মুসলিম সম্প্রদায়ে যেমন, ফাতেমাকে সব নারীর প্রতিনিধি করা হয়েছে, তেমনি হিন্দু সম্প্রদায়ে দুর্গাকে।
মজার ব্যাপার হলো, এই একজন নারী মা হিসেবে যতটা সম্মানিত, একজন নারী হিসেবে অতটা সম্মানিত নয়। কারণ সমাজ ব্যবস্থায় একটি পরিবারে মায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। যেখানে বউ মেয়ে অতটা গুরুত্ব বহন করে না। আবার মা যখন বৃদ্ধ বয়সে এসে যান, তখনই সংসারে তার গুরুত্ব কমতে থাকে। তিনি হয়ে ওঠেন একজন অথর্ব বোঝার মতো। কিন্তু সত্যি যদি একজন মুক্ত চিন্তার মানুষ হয় তবে তার মধ্যে বিবেক অবস্থান করে বাড়াবাড়ি পর্যায়ের। তার দ্বারা অন্যায় সংগঠিত হতে পারে না।
আমাদের স্কুলগুলোতে বাচ্চাদের ধর্ম বিষয়ে আলাদা একটি বিষয় থাকায় বাচ্চারা ঠিক সঠিক মানুষ হতে পারে না। ওদের মধ্যে ছোটো বেলা থেকেই বিভাজন নীতিকে কায়দা করে ঢোকানো হয়। তাই ওরা মায়ের প্রতি যতটা অনুগত, ততটাই সহপাঠীর সঙ্গে বিরূপ ভাব বজায় রাখে। তাই একটি বাচ্চা মানুষ হওয়ার বদলে একজন মুসলিম, একজন হিন্দু ও একজন খ্রিষ্টান হিসেবে বেড়ে ওঠে।