শব্দের সারথি
শব্দের সারথি আমি—অনন্তের, দূর-প্রণয়ের…
তাকে খুঁজে খুঁজে অন্বেষণে যা পেয়েছি অবশেষে
তাই নিয়ে ঘর আমি পেতেছি তাকেই ভালোবেসে
অমৃত সুধায় সুখ ছিল বুকে পৃথিবী জয়ের,
নিজেকে চিনেছি তার অভিমানে, যোগে-অনুযোগে
খড়কুটো ঘাস আমি সবিনয়ে অদৃশ্যে ছিলাম
বনজ কুসুম ভেবে কাছে ডেকে দিয়েছে সেলাম
বাহুতে রেখেছে বাহু কবিতার রাগে-অনুরাগে,
জীবাত্মা এখন আমি থাকি পরমাত্মারই খোঁজে,
বৃন্দাবন ছেড়ে জানি পথ আজ মথুরার পথে
আমিও চলেছি হেঁটে যাযাবর পেছনের রথে
প্রতি রোমকূপে আছে সে যে, কিছুটা বিরহ সাজে,
ব্যাকুল পৃথিবী জানে, রজনীগন্ধার বনে বনে
মৃত্যু কোনো শব্দ নয়, শব্দের মরমি এই ধ্যানে।
কথার মুরতি
মানুষ তো আর কিছু নয়, কথার মুরতি ছাড়া,
স্বরলিপি জানে কৃষিমাত্রিক সুরের যে মূর্ছনা;
মানুষ অগম্য বন, রহস্যের মরমি এষণা
প্রযুক্তি পবনে তাই মেঘে মেঘে ওড়ে ধ্রুবতারা।
বর্ণে ও অক্ষরে সাজে শব্দ-মন, নামে ও বেনামে
সত্য ও মিথ্যার মূলসূত্র ফিরে যায় অভিমুখে,
মানুষের কর্ম তুলোধুনো করে ধুনকর-সুখে;
গ্লোবাল ভিলেজে দুর্নীতিও উঠেছে নিলামে।
শব্দের গর্জনে জেগে ওঠে আজো ছন্দের রাখাল
গভীরতা মেনে বৈঠা বেয়ে তীরে ফেরে শব্দরথ,
কবিরা প্রাসাদোপম হলে বেঁচে থাকে যথাযথ
মানুষ নামের কারুপণ্যে তাই অযথা ক্যাচাল।
এই ঘন বনাঞ্চলে মানুষ ও বৃক্ষেরা বামন
হারিয়ে নিজস্ব জ্ঞান,অমাত্যের প্রজারা যেমন।
চৌদ্দশত ষাটদিন
তোমাকে দেখেছি সেই চৌদ্দশত ষাটদিন আগে
এমন তো নয়, পূঁজিপতিদের কবিতা শোনাতে
গেছো খুব দূরদেশে, বিনিময় কিছুটা বাড়াতে
পথ চেয়ে তবু বসে থাকি আমি অশ্রু অনুরাগে।
চিঠিপত্র কিছু নেই, নেই কোনো ইমেল অ্যাড্রেস
সকালের দুধ-চায়ে চুমুক না দিয়ে কেউ যায়?
এভাবে, না বলে কিছু—বৃন্দাবন ছেড়ে খালি পায়
এখনো রেখেছো ধরে তুমি সেই পুরনো অভ্যেস।
কবি বন্ধু রবিউল, সমিল প্রাণের দুই দোস্ত
খুঁজতে খুঁজতে সেও চলে গেছে কাব্যের ওপার
তোমার জন্যেই তার ভালোবাসা এমন—অপার
তুমিও বন্ধুর সঙ্গে প্রাণে প্রাণ—যাত্রায় অগস্ত্য।
কে কাকে খুঁজবে বলো, এমন করোনা কালচারে
মৃত্যুর মিছিল যদি রবাহূত, ডাকে বারে বারে।
মাগো, মা
জলের জবানে ছিলো জম্পেস পুথি ও ব্রত-কথা
ঝিনুকের মায়া-জলে, রক্ত-ক্ষতে যত সুক্তিরাগ
জ্যোৎস্নার আঁতুড়ে ঘরখানা যে-জন্মের অনুরাগ
মাটির গোপনে কাঁদে নাভী-পোঁতা ছিন্নমূল-ব্যথা।
মায়ের আঁচল ভেসে চলে পালতোলা ক্যানভ্যাসে
আকাশ যদিও জরাসন্ধ, শ্রাবণ মেঘের নাও…
দালির ঘড়ির এই তো সময়, তাকে বলে দাও
করোনা-জীবন ফিরে যাক তার ভিন্ন কূটাভাসে।
বৈরাগ্য বসনে, মাগো তুমি উপবাসী শান্ত নদী
এখনো এখানে, এই সমাধিতলের ছায়া পথে
জড়ুলের মতো ঝুলে আছি তোমারই পঞ্চরথে
তুলে নিও ঘরে,পথ ভুলে একাকী হারাই যদি।
শেষ পারানির মুদ্রা তুমি, মনোবীণায় বিক্ষোভ
দু’চোখে বৃষ্টির ধারা, তবু তোমাকে দেখার লোভ।