আলোর রিদমিক্
শ্রান্ত বিকেল শরীর এলিয়ে এলোকেশ
ঘরহীন হাওয়ারা বোলায় উষ্ম পরশ
বৃক্ষছোঁয়া রোদেলা বীজ, পাখির শীষ
ফুলের চোখে রঙিন পরিধি অতলান্তিক
সবুজ সঙ্গমে অবাধ আলোর রিদমিক।
পাখির মতন একা যেমন মানুষ, ওড়ে দিকবিদিক
আকাশপানে উড়েছিলাম, স্রোতল শূন্য ফাঁদ
পাবো বলে বদল মেঘের দেখা, অকূল নেশায় ঘেঁষা
চোখের তারায় নীল জৈবিক, উতল নদীর বশ
দূর সীমানায় মুঠোবন্দি ঝিনুক চাঁদের মন
অস্ত রঙে ললাট ভরা, ওষ্ঠ-মাতাল লিরিক
মনে রেখো, যে কথাটি বলবো বলে করেছিলাম পণ
হলো না বলা, চলতে চলতে ক্ষয়ে যায় সে পথিক।
কবির চোখ, মাটির পলক
এ উতলা মৌসুম, রৌদ্র-বৃষ্টির অনন্ত বিশ্বলোক
কুসুমিত রাত্রির আপসে নিষ্কান্ত আলোক
নিভৃতে উজাড় বহে অতল পয়মন্ত ঝোঁক।
দেখোনি, দমকপ্রবণ কবির চন্দ্রাহত চোখ?
অগ্নি, সুষমায় পোড়ে, পোড়ে স্বত্ব যোগাযোগ।
মহাকালের অনুকম্পায় ধ্যানমগ্ন দিন ধীর
কালের আহুতিতে বিভাময়। আপত্তি নিবিড়
বেগচ্যুত বাতাসে বেড়ে ওঠে গ্রন্থিল বৃক্ষ দুর্বার
তীর জুড়ে ঝরে তাবৎ মেঘের জখম শরীর
মুহূর্তে মুহুর্মুহু আত্মার কম্পন, আহ্নিক পারাবার।
ফুটন্ত ফুলেদের অবোধ হাসিতে মায়ার বণ্টন
পেছনে ফেলে আসা পথ মুহূর্তের বৃত্তাকার
দেখোনি, অবসন্ন মাটির দৈন্য নগ্ন পলক?
দীর্ণ চোখে সহে পৃথিবীর ভার, পেষণ পদাঘাত
কবির প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির অন্তরাল। অদৃষ্ট পরিণাম।
বুকে গ্রন্থিবদ্ধ ব্যুহ অপরিতোষ। মুখে মূকবেশী উচ্ছ্বাস।
কনফেশন ওডেস্
পাতায় ঘেরা ফুলের ম্লান মুখ, মেঘহীন মেলানকোলি।
চিবুক ছুঁয়ে অনুষ্ণ বাতাস, জলে উপুড় আকাশের ছায়া
চোখের তারায় বিবরা মৌসুম, ধ্রুব আনমনা
কোথাও শব্দহীন ভাঙচুর হচ্ছে। কনফেশন ওডস্।
অন্তর খুলে শুনি প্রার্থনা সঙ্গীত, উইদআউট ট্রাম্পেটস্।
বিরামহীন শহর, কোলাজ কোলাহল, বর্ণিল শপিংমল
আভিন্যু, স্ট্রিট পার হয়ে পাথরের অট্টালিকা
শোকবাহী দাঁড়িয়ে সুদর্শন ভাস্কর্য শৌর্য নিঃসঙ্গতায়
হেলান দিয়ে উন্নত শির
দীর্ঘ পথ সংকল্পবদ্ধ, তৃণঠোঁটে উপবাসী অভিলাষ
বৃক্ষশাখায় আশ্রিত পাখি সদ্য ঘনীভূত আঁধারে
অতপর কিচমিচ করে বলে ওঠে, আমি নিরাপদ।
এ পৃথিবী নিরাপদগৃহ।
তোমাদের কাছে যারা অভিশাপ, পৃথিবীর কাছে অনিবার্য অস্তি।
বিদ্বেষ-বিষে বাজে ক্রুর অন্ধকার, ছদ্মবেশী রন্ধ্রহীন
মাটির শেকড়ে পর্বত আগামীকাল আশ্লেষী উদগ্রীব
সমুখবর্তী নরপিশাচের তান্ডব নৃত্যে ক্রোধ বেজে চলে অনায়াস
জন্ম-মৃত্যুর সরল কাহিনী অগোচরে মহাকালে ঝরে যায়।
লেনাদেনা
আকাশ ছেয়ে বইছে যে ঝড় সেকি আকুতি রাতভর?
যাবতীয় মেঘের গোপন বিসর্জনে?
তোমার মলিন মুখ, পথচ্যুত নীরব হয়ে যাওয়া
পাঠ করেছি বিপরীত দৃষ্টি নিম্নচাপে-
হেমন্ত বিভ্রান্তি, অসময়ে জল কাঁদে বৃষ্টি বিহবল
কে হয়েছে শীতল, কার বুকে অনল
তুমি ভেবেছ এ বড় ভুল এ তোমার সর্বনাশ
এ বিষম চাওয়ার খরস্রোতা লেনদেন
ছুঁয়েছো পুস্পকাহন, করেছো সাধন অকালমৃত্যুর পরিতাপ।
দুরূহ জেনেও যে পাওয়ায় বিশ্ব সমগ্রতা
সে ফাঁকি সয় না
বোঝাবুঝির বিতণ্ডায় প্রাচীর তুলে
হাতেহাত দূরত্ব বাঁধে না
যে বাতাস ঈশ্বর আলিঙ্গনপিয়াসী সে কি বোনে দ্রোহ
এমন অকুতোভয় বায়বীয় হৃদয় করে না বঞ্চনা
তোমার দেওয়া আঘাতে অধিকারের বাক্য বাড়ে
জমে ঋণের জখম, রাতের শরীর তাও সহে না।
সহজ স্বীকারোক্তি
ধেয়ে আসা ছন্ন মেঘ বিষাদনির্ভর
পুঞ্জ-পুঞ্জ বাতাসের গায়ে কাঁপে থরথর
বেজে চলেছে ভঙ্গুর সেতার
কোথাও ছিঁড়ে গেছে হৃদপিণ্ড কার
যাপনদিন আর্তে মিশেছে যার
শত জনমের বোঝাবুঝি শিশির আকার
দেখেছি বেদনাক্ত চোখে পুরনো রোদের হাহাকার।