জলের সারল্য
মানুষ ভাসতে ভাসতে ভেসে যাচ্ছে বিষাক্ত হাওয়ায়
দীর্ঘ অপেক্ষার ভেতরে লকডাউনের বোতাম ভেঙে
ভেঙে পড়ে। অপরিহার্য বলে আসলে কিছু নেই!
এই দীর্ঘ গৃহযাপন অনিবার্য ক্লান্তি ছাড়া আর কিছু
নয়! কে কাকে মনে রাখে? মানুষ বড় ধর্মপ্রেমী
খুব বেশি বোঝে নুন আর আনাজের স্বাদ…
জলের সারল্য বোঝে যেজন, সে নির্জনতার মধ্যে
বিষাদ ও মৃত্যু—রহস্য দেখতে পায়। কার কতটুকু
প্রতিভা ছিল, তা আজ আর বিবেচ্য বিষয় নয়
শুধু বেঁচে থাকা বলে কথা! সম্পর্কগুলো তপ্ত
বৃক্ষের নিচে অস্পষ্টভাবে বিস্ময়ে অবনত হতে
থাকে। আত্মবিশ্বাসের ভেতরে গিটারের কান্না
বেজে ওঠে। এখন মানুষ মানুষকে কী ভাবে?
সংকট ও সমাধানের কালে করোনা পাশে ঘেঁষে
বসে। এখনো নিজে ভালো থাকবে বলে কেউ
কেউ লুটিয়ে পড়েছে পথের ওপর। তার লোভের
জিহ্বা অভ্যাসবসত চলে যাচ্ছে দিগন্ত বরাবর
জলঢেঁকি
মগজ সরিয়ে নিলে চোখ খুলে খুলে পড়ে। সেই কবে লোভের
ভিড়ে আমার প্রত্যাশা সামান্য করেছি। অত কৌশল জেনে
কী হয় বলো? যে যত বেশি বোঝে, আসলে সে ততবেশি জ্ঞানী
হতে পারে? মাঝেমাঝে আলোও বেঁকে চুরে বসে। কে কাকে
দেখে? আমিই আমাকে দেখি। যে পথ ছিল চিরচেনা, তা-ও
অচেনা হয়েছে বহুদিন, এখন সম্পর্ক বলতে দূরত্বের
মাপকাঠিতে জীবন জলঢেঁকির মতন। কেউ কেউ ছোট হতে
হতে অহেতুক কালো হতে থাকে, মানুষের রঙ বদলে গেলে কী
থাকে বলো? এ যাত্রায় তুমি যদি জিতে যেতে পারো
বকধার্মিকের মুখোশবন্দি মুখ গড়িয়ে গড়িয়ে যাবে আগুনের
দিকে। আমি সকলের ভালো চাই বলেই এত গোল…ক্ষুদ্র
অনন্ত ঘৃণার কাছে
করোনাকালেও প্রতিহিংসার ছোপ ছোপ দাগ
অনন্ত ঘৃণার কাছে নিয়ে যায়। শূন্যতার ভেতরে
দোল খায় উদ্বেগ আর সন্দেহের ছুরি! সে কি
বাঙালি নাকি উর্দু ভাষার ফতোয়াবাজ?
চারদিকে
এত অনুগত ছায়া আসল রহস্যই উদ্ঘাটিত
হতে ঢের বিলম্ব হয়ে যায়
শাদা পোশাকের মানুষটির আত্মার
ভেতর থেকে হু হু করে ক্রন্দন উঠে আসে!
সে যখন ঈশ্বরের মুখোমুখি থিতু হয়ে বসার
উপক্রম করেছে ঠিক তখনই আজরাইলেির
অসংখ্য ডানা জীবনের বৃক্ষতলে মৌলিক মুখোশ
হয়ে নগ্নতার সুড়ঙ্গ পথে
উড়িয়েছে উল্লাস। ঘোমটার নিচে খ্যামটা নাচ
অগ্নিকুণ্ড জ্বেলে
ডাকে অন্ধকার ডাকে অবোধ জন্মমৃত্যু
হাড়ের অভিশাপ সুরহীন গন্তব্যের ভেতরে
আবর্তিত হতে থাকে। একদা ভোরের
হাওয়ায় নীল ঘুম ভেসে বেড়াত ধ্রুপদী
আখ্যান হয়ে…জোনাকি
অপার অরণ্য
অপেক্ষা হলো বরষার জলে ভেজা অপার অরণ্য
জীবন বদলে গেছে বৃষ্টিতে ভেজা চাতক পাখির
মতন। অনুগ্রহ দেখালে অকবিদেরও শিং গজিয়ে
যায়। যেমন লোভী আর হিসাবী মানুষ সবসময়
হাতি মারা প্রেমিকের মতন! অন্ধকার ঝুল বারান্দায়
দাঁড়ানোও যেন মহাবিপদের ধ্বনি বেজে ওঠে বাজ
পড়ছে কোথাও এ রকম মেঘের গর্জন শুনিনি আগে
দূরের আকাশে ঝলসে উঠছে আগুনের উল্লাস…
মানুষের নিষ্কৃতি নেই কী সে পাপ, কী সে পূর্ণতা বোঝে
না অবোধ! সব বোঝে ধূর্ত ঋষি? পাহাড়ে নতুন
উন্মত্ততা পা ওঠায় পা নামায়, এখানেও ধর্মের নামে
কর্দমাক্ত ঈর্ষার গহ্বর! সরোবরের পথের ওপর ঠিক
এ রকম একটি অস্থিরতার চিত্র আমি অবলোকন
করেছিলাম। বিস্ময়করভাবে হেলে পড়েছিল ঝাউপাতা
অযোগ্য মানুষের অপবুদ্ধির কৌশল অনলাইনেও
লেপ্টে যাচ্ছে। হায় করোনাকাল! মানুষের সুবুদ্ধি
আর হবে না। এরই মধ্যে শেয়ারবাজারের দরপতনে
কেউ কেউ দিশেহারা! জীবন থাকে, কী যায়—তার কোনো
ঠিক নেই। আমি যখন এভাবে লোভকে শনাক্ত করলাম
তখন প্রায় ভোর! তারাশঙ্করের গণদেবতা ঢাক বাজিয়ে
শৃঙ্খলাহীন যুগের কথা আউড়াইতে লাগিল, মানুষের
ঈর্ষা আর যায় না! খুলে বললে মহাভারত…