করোনাযোগ: এক
মানুষ একা হতে চেয়েছিল তাই
স্বামীকে ভয় পাচ্ছে স্ত্রী আর
স্ত্রীকে ভয় পাচ্ছে তার স্বামী।
করোনাযুগে সন্তান ভয়ে আছে,
এমনকি ভয়ে আছে মা-বাবাও।
একা হতে চাওয়ার শাস্তি
দেখো কত নির্মম হতে পারে।
যদি চলে যায় এইসব দিন
তবে মানুষ হয়ে যেও,
করোনার মতো সমাজতান্ত্রিক
হতে পারলে মানুষ জিতবেই।
করোনাযোগ: দুই
হাসপাতালগুলো খালি হয়ে যাচ্ছে,
আমাদের বাসাগুলো হাসপাতাল হয়ে যাচ্ছে।
নিয়ম করে জীবাণুনাশক দিতে দিতে
প্রস্তুত করা হচ্ছে সম্ভাব্য রোগীর কেবিন।
শহরে মুখোশ বিক্রেতা বেড়ে গেছে,
কেউ কেউ রাস্তায় জীবাণুনাশক ছিটাতে ছিটাতে
ফেসবুকে ছবি আপলোড দিচ্ছেন।
ঘরে বাইরে সাবান পানির কব্জিডোবানো উৎসবে
ঘষতে ঘষতে হাতের চামড়া উঠে যাচ্ছে।
হাতকে কাজে লাগিয়েই মানুষ এখানে এসেছে,
হাতের জন্যই মানুষ পেয়েছে বিশেষ মর্যাদা।
অথচ সেই হাত আজ শত্রু হয়ে মানুষের সাথে
ঘুরে ঘুরে ছড়িয়ে দিচ্ছে আতঙ্কের বিছানা।
আমরা হাসপাতাল বানাতে পারতাম,
আমরা নিজেদের জন্য হাসপাতাল বানাতে পারতাম,
আমরা মানুষের জন্য হাসপাতাল বানাতে পারতাম।
এসব কিছুই না করে আমরা অন্য অনেক কিছু বানিয়েছি
যা আসলে কোনো কাজে আসছে না, আসবেও না।
শহরে শহরে লকডাউন চলছে,
দলবদ্ধ নিরাপত্তা বাহিনীর টহলে
নিশ্চিত করা হবে সামাজিক দূরত্ব।
উৎপাদন বন্ধ হয়ে আসছে,
বন্ধ হয়ে আসছে সভ্যতার ধাবমান গতি।
প্রতিটি যুদ্ধের পর পাল্টে যায় ভূগোল,
প্রতিটি যুদ্ধের পর পাল্টে যায় মানচিত্র,
প্রতিটি যুদ্ধের পর আসে নতুন রাজনীতি।
মানুষতো ঘুরে দাঁড়াবেই জানি—
তবে,
এ যুদ্ধের পর পাল্টে যাবে মানুষের চেতনা,
এমনকি পাল্টে যাবে পৃথিবীর যাবতীয় ভূগোল,
যার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকা উচিত।
করোনাযোগ: তিন
রোম পুড়িয়ে দেওয়ার পর
ছড়িয়ে যাচ্ছে তার ভয়াল থাবা,
সম্ভাব্য মৃত্যু এড়াতে
বন্ধ রয়েছে কাবা।
আবার শুরু হবে সব
দিন বদলের পরে,
বরুণ ফুলের চোখ ধরে
তোমার প্রতীক্ষায় আছি ঘরে।
যতোই নামুক দুর্যোগ পৃথিবীতে
বন্ধ হবে না রমণ,
এমনকি বন্ধ হবে না জন্ম
কিংবা নিয়মিত মরণ।
বন্ধ হবেনা খাদ্য গ্রহণ
বন্ধ হবেনা মুনাফা,
বন্ধ হবেনা স্বভাব
এমনকি সম্ভাবনা।
গোটা দুনিয়ায় শুধু
থেমে আছে কাজ,
কোন পথে হাঁটছে
এই মানব সমাজ?
করোনাযোগ: চার
যার যেটা করার কথা নয়
অথচ দায়িত্বরত আছে
তারাই পালাতে চাইবে আগামীকাল;
এবং পালাতে চাইবেই, অথচ পারবে না।
স্বেচ্ছায় যারা লিপ্ত হয়নি কর্মে
তারাও পালাতে চাইবে;
যার যেটা নয় কাজ সেই কাজ ছেড়ে
পালানোর দিন এসে গেছে।
পালাতে চাইবে, ভণ্ডরা সব পালাবে,
দায়িত্বপ্রাপ্ত সেবক পালাবে ;
পালাবে সেইসব ডাক্তারের দল যারা
মানসিকভাবে ছিল ব্যবসায়ী।
শুধু পালাবে না তারাই
যারা শিখেছে জীবন,
আর পালাবেনা বিশ্বাসীরা
বহন করতে সভ্যতার ক্ষত।
আগামী পরশু দিনের পর
যার যেটা করা দরকার
তাকে সেটা করতে দিও
যাতে আর কেউ পালাতে না চায়।
ভেঙে দিও এইসব পুঁজির শিক্ষা,
দায়িত্বের নামে ক্ষমতার ভাগাভাগি ;
যাতে করে আর পরশু দিনের পর
পালাতে না চায় কেউ জীবন ছেড়ে।