[পর্ব: ১.]
মানুষ যখন ভ্রমণে যায়, বিস্ময়ে হতভম্ব হয়। তারপর সেই গল্প আর না বলে থাকতে পারে না। তাই একজন সাধারণ মানুষকে ভ্রমণ প্রথমে নির্বাক করে দেয়। তারপর গল্প বলতে বাধ্য করে। ( ইবনে বতুতা )
হঠাৎ করেই হাইপ্রেশার দেখা দিয়েছে। সারাক্ষণ মাথাব্যথা। এরকম আগে কখনো হয়নি। পরিচিত ডাক্তার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বললাম। তাদের পরামর্শ, ‘হাইপ্রেশার খুব খারাপ অসুখ। নীরব ঘাতক। কোনো কিছু নিয়ে টেনশন করেন নিশ্চয়। এখন থেকে খাওয়া-দাওয়ায় পরিবর্তন আনতে হবে। ওজন কমাতে হবে। দৌড়াতে হবে। খালিপেটে লেবুপানি খেতে হবে।’ এ রকম পরামর্শে কিছুটা ভড়কে যাই। গুগোলে সার্চ দিয়ে হাইপ্রেশার নিয়ে বিভিন্ন পরামর্শমূলক লেখা পড়ে সাবধান হই। কিন্তু মাথা ও ঘাড়ের ব্যথা কিছুতেই কমছে না। ছোট ভাই তাবির পরামর্শ দিয়েছে, হাইপ্রেশারের জন্য চিনি ছাড়া, তেঁতুলগোলা পানি বেশ উপকারী। দোকান থেকে তেঁতুল কিনে আনলাম। দুই দিন পর সে আরও একটি নতুন সংবাদ দিলো। বাসার অনতিদূরে একটি দোকানে তেঁতুলের চা পাওয়া যায়। অল্প চিনিতে তেঁতুলের চা খেলেও হাইপ্রেশার ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসে। এদিকে গিন্নি প্রতিদিন সন্ধ্যায় বাসা থেকে বের করে দেন। বলেন, যাও ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত বাইরে গিয়ে দৌড়ে এসো। শরীর ফিট হবে। হাইপ্রেশারও কমে যাবে।
আসলে দুঃসময়ে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ে। আমিও তখন দুশ্চিন্তায় মাছের চোখের মতো তাকিয়ে থাকি।
চেপে ধরে বিমূর্ত হারমোনিয়ামের রিড। গান ধরে, আহা আলো! আহা আনন্দ! আহা সুর! ভ্রমণপথে দেখে নেবো কবিতার অবাক ফুল।
সেদিন রাত ১২টার দিকে একটা ইমেইল এসেছে। বিখ্যাত ভারতীয় লেখক অজিত কৌর ‘সার্ক সাহিত্য সম্মেলন-২০১৯’-এ অংশ নেওয়ার জন্য এই আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছেন। তিনি সম্মেলনের উদ্যোক্তা; আহ্বায়কও। দীর্ঘ কুড়ি বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রতিবছর দিল্লিতে এই সম্মেলন হয়। আমন্ত্রণপত্র পেয়ে আমি আবেগাপ্লুত হয়ে গেলাম। দীর্ঘদিন দীর্ঘদহন নিয়ে কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ইত্যাদি লিখে চলেছি। আমি যেন তুচ্ছ তৃণের অধিক। কখনো জাগতিক প্রত্যাশা নিয়ে লিখিনি। কেবল ব্যঞ্জনাবহ শব্দের আরাধনায় ডুবে থেকেছি। তবু মহৎ কবিতা লেখার আক্ষেপ নিয়েই বোধহয় মরে যেতে হবে। এখনো কাঙ্ক্ষিত কবিতার কাছে যেতে পারিনি। শব্দশস্যের সম্ভাবনায় বিদ্রূপ বিছানো পথে একাই হেঁটে চলেছি। কোনো দশক নেই। জনহীন প্রান্তিকে আমি যেন এক দলছুট কবুতর। দূরে দাঁড়িয়ে দেখেছি কিছু কবিবেশী কলাগাছ। মিডিয়ার বগলবন্ধু হয়ে সাজিয়েছে কবিতার কৃত্রিম বেসাতি। কোনো খেদ নেই।
কিন্তু আচমকা এই বিদেশ ভ্রমণের আমন্ত্রণ পেয়ে মনে হলো, কবিতা তবে জাগতিক আশ্রয়ও দেয় বৈকি। এই যে আমি যাচ্ছি কলিজায় কবিতার ওম নিয়ে। এও কম কী? এই ভ্রমণ কেবল সাহিত্য সম্মেলনে অংশগ্রহণ নয়। নিসর্গ ও ইতিহাসের হাতধরে এ যেন অভাবিত এক কাব্যভ্রমণ। আবেগানন্দের আতিশয্যে মনের অজান্তেই কেঁপে ওঠে হাতের আঙুল। চেপে ধরে বিমূর্ত হারমোনিয়ামের রিড। গান ধরে, আহা আলো! আহা আনন্দ! আহা সুর! ভ্রমণপথে দেখে নেবো কবিতার অবাক ফুল।
অনুষ্ঠানে যোগ দেবো, এই মর্মে সম্মতি জানিয়ে আয়োজক কমিটিকে ফিরতি ইমেইল পাঠালাম। তাদের অনুরোধ অনুযায়ী আমার লেখক পরিচিতি ও দুটি কবিতার ইংরেজি অনুবাদ জুড়ে দেই। জুনের শেষদিকে আমন্ত্রণপত্র পেয়েছি। জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় নিয়মিত অনুষ্ঠান-সংক্রান্ত অসংখ্য ইমেইল পাঠিয়েছেন অজিত কৌর। প্রায় আশি বছরের একজন প্রবীণ লেখক কী পরিমাণ দায়িত্বশীল ও স্নেহপরায়ণ, যারা শেষাবধি তাঁর কাছাকাছি গেছেন, তারা প্রমাণ পেয়েছেন। তিনি পদ্মশ্রী খেতাবপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক, ‘সার্ক লিটারেচার ফাউন্ডেশন’র প্রেসিডেন্ট। মূলত তাঁর ঐকান্তিক ইচ্ছায় এই সম্মেলন প্রতিবছর সম্মানের সঙ্গে পালিত হয়ে আসছে।
বুঝলাম তারাও তবে সম্মেলনের অতিথি। কিছুটা আশান্বিত হলাম। আমি একা নই। এদেশ থেকে আরও অনেকেই যাচ্ছেন তবে। যারা যাচ্ছেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ লেখালেখিসূত্রে আমার পরিচিত।
যেহেতু প্রথম বিদেশ ভ্রমণ, সেহেতু অভিজ্ঞদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিতে ভুলিনি। পাসপোর্ট আগেই করা ছিল। এখন ইন্ডিয়ান ভিসার আবেদন করতে হবে। অফিসে যাওয়ার পথে শ্যামলী বাসস্ট্যান্ডে একটি ভিসা প্রসেসিং সেন্টার চোখে পড়ে। একদিন সেখানে গিয়ে ভিসা প্রসেসিং করার ব্যাপারে কথা বলি। তারা মূল পাসপোর্ট, কর্মস্থল কর্তৃক বহির্গমনের ব্যাপারে অনাপত্তিপত্র, পাসপোর্ট সাইজের এককপি ছবি এবং জাতীয় পরিচয়পত্রসহ নিয়ে যেতে বললেন। ৩দিন পর এগুলো নিয়ে দিলাম। ভিসা পাওয়া পর্যন্ত সবমিলিয়ে ৯৫০ টাকা ফি হিসাবে দিতে হলো। অনলাইনে আবেদন করা ফর্ম এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ভারতীয় হাইকমিশনের ভিসা সেন্টারে জমা দিলাম।
প্রায় দুই সপ্তাহ পর নির্ধারিত তারিখে গিয়ে ভিসা সংগ্রহের লাইনে দাঁড়ালাম। এত ভোর বেলায় গিয়েও ভিসা প্রার্থীদের দীর্ঘলাইন দেখে ভড়কে গেলাম। সকাল নয়টায় ভিসা সেন্টারের প্রধান ফটক উন্মুক্ত করে দেওয়া হলো। ওমা, কিসের লাইন, কিসের কী! যে যার মতো ভেতরে গিয়ে আবার লাইন ধরলো। এবার ভিসা সেন্টারের দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলাম। ভেতরে ফাঁকা। লাইন ধরার বালাই নেই। ভিসা প্রার্থীদের সেবায় খোলা রয়েছে অসংখ্য কাউন্টার। ফলে কাউন্টারে গিয়ে মাত্র দুই/তিন মিনিটের মধ্যে জমাকৃত পাসপোর্ট পেয়ে যাই। পাসপোর্টে দেখি একবছর মেয়াদি ভিসা দেওয়া হয়েছে। খুশিমনে বাসায় ফিরে আসি। বিদেশে গিয়ে সবচেয়ে সাবধানে রাখতে হয় পাসপোর্ট। কারণ বিমানমন্দরের প্রবেশমুখ থেকে শুরু করে সর্বত্রই এই পাসপোর্ট চেক করা হয়। পাসপোর্ট সহজ ও সাবধানে বহন করা যায়, এরকম একটি ব্যাগ কিনলাম। ব্যাগটি বেল্টের মতো কোমরে পরা যায়। এভাবে ভ্রমণের প্রাক্কালে সম্ভাব্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষ করে নিজের দিকে তাকালাম। দেখি, আবেগী বাউল আমি হয়ে গেলাম পাক্বা ট্রাভেলার।
লোক সমাজে এমন একটি কথা প্রচলিত আছে-‘দিল্লিকা লাড্ডু, যো খায়া ও পস্তায়া, অওর যো নেহি খায়া ওভি পাস্তায়া।’ দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই ‘দিল্লি’র লাড্ডুর প্রতি আমি আরও মোহ অনুভব করছিলাম। কৌতূহল ও উৎকণ্ঠায় আমার মাথাব্যথা আরও বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ থেকে আর কে কে যাচ্ছেন তাও জানি না। জানার চেষ্টা করছিলাম। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে একটি মেইল আসে। যেখানে অনুষ্ঠানের সময়সূচি, থাকার জন্য নির্দিষ্ট হোটেল ও ভেন্যুর ঠিকানা দেওয়া আছে। মেইলটি বাংলাদেশের বেশ ক’জন কবি-সাহিত্যিকের নামে ট্যাগ করা ছিল। বুঝলাম তারাও তবে সম্মেলনের অতিথি। কিছুটা আশান্বিত হলাম। আমি একা নই। এদেশ থেকে আরও অনেকেই যাচ্ছেন তবে। যারা যাচ্ছেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ লেখালেখিসূত্রে আমার পরিচিত। ইতোমধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। সহসা জানা গেলো কবি কামরুল হাসান যাচ্ছেন। তিনি আমার নিকটবর্তী প্রতিবেশী। সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা একই ফ্লাইটে একসঙ্গে যাবো। ‘এয়ার ইন্ডিয়া’র একটি ফ্লাইটে টিকেট নিলাম।
যারা আবেগের কারবারি, ব্যতিক্রম বাদে তাদের প্রায় সবার মাঝেই অন্তরীণ থাকে উদ্বাস্তু পাখিমন। দায়িত্বহীন নিরুদ্দেশ যাত্রার তুমুল তিয়াসা পুষে রাখেন মনেমনে। বন্ধনমুক্তির একটা অদৃশ্য বাসনা ক্রিয়াশীল থাকে বেশ সন্তর্পণে। এটা যেন রোমাঞ্চকর একটা ব্যাপার। কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যৌবনে নাকি রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের মোহে পড়েছিলেন। তিনি মুসাফির বেশে বেরিয়ে পড়েছিলেন নিরুদ্দেশে। কিন্তু মশার কামড় সইতে পারেননি। ফলে পুনরায় ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসেন। আমার মাঝেও এরকম নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়ার প্রবণতা আছে। মনেপড়ে, সেই শৈশবে কোনো কারণ ছাড়াই রেললাইন ধরে হেঁটে চলে গেছি মাইলের পর মাইল। তখন ভ্রমণের দুর্নিবার ইচ্ছা জেগেছিল কাজী নজরুলের জাগরণীমূলক কবিতা ‘সংকল্প’ পড়ে।
থাকবো নাকো বদ্ধ ঘরে
দেখবো এবার জগৎটাকে,
কেমন করে ঘুরছে মানুষ
যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে।
… … … …রইব না কো বদ্ধ খাঁচায়
দেখব এ-সব ভুবন ঘুরে-
আকাশ বাতাস চন্দ্র-তারায়
সাগর-জলে পাহাড়-চূড়ে।আমার সীমার বাঁধন টুটে
দশ দিকেতে পড়ব লুটে:
পাতাল ফেড়ে নামব নিচে,
উঠব আবার আকাশ ফুঁড়ে:
বিশ্ব-জগৎ দেখব আমি
আপন হাতের মুঠোয় পুরে।
বিশ্ব দেখার দুর্বার আকর্ষণ থাকলেও সাংসারিক নানা পিছুটান এবং আর্থিক সীমাবদ্ধতায় সীমিত ছিলাম। তবে স্বদেশের নানাপ্রান্তে ঘুরে বেড়িয়েছি ইচ্ছেমতো। কখনো ছুটে গেছি পাহাড়ি অঞ্চলের সবুজ নিসর্গের কোলে। কখনোবা সমুদ্রের জলে করেছি স্নান। সুন্দরবনের গহিন অরণ্যে চোখ রেখে খুঁজেছি সৃষ্টির অপার বিস্ময়। দেখেছি মায়াহরিণের পলায়নদৃশ্য। এবার আর দেশ নয়। পায়ের তলায় সর্ষে রেখে সুড়সুড় করে হেঁটে যাবো বহুদূর। বিশ্ব দেখার সুযোগ এলো। কে আর রুখবে মোরে?
সিলেটের মাটির সঙ্গে ওই মাটির সাদৃশ্য পাওয়া যায়। সিলেট অঞ্চল যেমন তেল ও গ্যাসের জন্য বিখ্যাত, তেমনি আরবের মাটিও সিলেটের মাটির মতো।
১৬ অক্টোবর ২০১৯ বিকেল ৪টায় বাসা থেকে বের হলাম। মিরপুর ১০ থেকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশে আমাদের ভ্রমণের শুভসূচনা। মা’কে কদমবুসি করে লিফটে উঠলাম। নামতেই ট্রাভেল ব্যাগে চোখ পড়ে। ব্যাগের চেইনে তালা লাগানো হয়নি। ভারী মুশকিলে পড়লাম। টুবুলিকে কল দিলাম। টুবুলি নিচে এসে জানায় বাসায় ছোট তালা নেই। পকেট থেকে টাকা বের করে দেই। এখন বাসার আশেপাশে কোনো দোকানে তালা পাওয়া গেলে তবেই রক্ষা। টুবুলি দৌড়ে বাইরে গেলো। এদিকে কামরুল ভাই কল দিয়েই যাচ্ছেন। রিসিভ করলাম। ‘ফারুক আসেন। গাড়ি রেডি। দাঁড়িয়ে আছি।’ এইতো আসছি ভাই। বাসার সামনে। এই বলে কল কেটে ব্যর্থ মনোরথে হাঁটতে থাকি। তালা ছাড়াই তবে যেতে হবে। ভাবতে ভাবতে পেছন থেকে ডাক এলো।
‘ফুপা, দাঁড়ান। তালা কিনেছি।’ সীমাহীন আনন্দ নিয়ে ঘুরে দাঁড়ালাম। স্বস্তি ফিরে এলো মনে। তাকে মনে মনে দোয়া করি। টুবুলি আমার কন্যা তুবা’র খেলার সাথী। আমার বাসায় থাকে। বয়স ১০/১২ হবে হয়তো। এরই মধ্যে তার বুদ্ধিদীপ্ত মনোভঙ্গি আমাদের বাসার সবাইকে মুগ্ধ করেছে। টুবুলিকে বললাম, ‘বাসায় যা। ভালো থাকিস তোরা। তুবা’র দিকে খেয়াল রাখিস।’
মিনিট দুয়েকের দূরত্বে কামরুল ভাইয়ের বাসা। তিনি বাসার সামনে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় ছিলেন। শুরুতেই তাঁকে এমন অপ্রত্যাশিত অপেক্ষায় রেখে কিছুটা সংকোচ বোধ করছি। দুঃখিত বলে গাড়িতে চড়ে বসলাম। রাস্তায় তেমন যানজট না থাকায় খুব অল্পসময়ের মধ্যে আমরা বিমানবন্দরের কাছাকাছি পৌছে গেলাম। কিন্তু প্রবেশমুখে আমাদের গাড়ি থেমে যায়। আর এগুচ্ছে না। সামনে নিশ্চয় কোনো ভিভিআইপি ব্যক্তির গাড়ি আছে। এদেশে রাস্তায় যানজটের অন্যতম কারণ এই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের গমনাগমন। আমরা অসহায়ের মতো গাড়িতে বসে আছি। বিমানবন্দর দৃশ্যমান হতেই চোখে পড়ে বড় বড় অক্ষরে লেখা ‘হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’। গাড়িতে বসে ভাবছি এই বুজুর্গ ব্যক্তির কথা। উপমহাদেশের একজন বিখ্যাত দরবেশ এবং পীর। তাঁর জন্ম তুরস্কে হলেও ইসলাম প্রচারের লক্ষ্যে ৩৬০ জন সফরসঙ্গী নিয়ে ১৩৩৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সিলেটে আগমন করেছেন।
হজরত শাহজালালের (র.) এদেশে আগমন সম্পর্কে কথিত আছে যে, তার মামা ছিলেন মুর্শিদ সৈয়দ আহমদ কবীর (র.)। তিনি একদিন শাহজালালকে কাছে ডাকলেন। তার হাতে এক মুঠো মাটি তুলে দিলেন। তাকে এও বললেন, ‘স্বাদে বর্ণে গন্ধে এই মাটির অনুরূপ মাটি যেখানে পাবে। সেখানে গিয়ে তুমি বসতি স্থাপন করবে। ইসলাম প্রচারের কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখবে।’ আদেশ মতো হজরত শাহজালাল (র.) বের হয়ে পড়েন। চলতি পথে তার শিষ্য শেখ আলীকে এই মাটি শনাক্তের দায়িত্বে নিয়োগ করেন। এভাবে চলতে চলতে তিনি সিলেটে এসে উপনীত হলেন। সিলেটের মাটির সঙ্গে ওই মাটির সাদৃশ্য পাওয়া যায়। সিলেট অঞ্চল যেমন তেল ও গ্যাসের জন্য বিখ্যাত, তেমনি আরবের মাটিও সিলেটের মাটির মতো। এখানে এসে এই বিশেষ মিল প্রমাণিত হওয়ায় হজরত শাহজালাল (রহ.) সিলেটে বসতি স্থাপন করেন।
চলবে…