ত্রয়ী: ৪
ঘুমের সকালে ফেরি করো তুমি চুল শুকানো রোদ
খড় পাতানো হলুদ মাঠে দোয়েল-শালিখ ছায়া টোকাতে মশগুল।
একঘেয়ে শহর তুমি আধুনিক কলা ছলে খাঁচার দিনলিপি
রাত বেঁচে থাকে ল্যামপোস্টের ক্যানভাসে, তারাদের অভিমান কে রাখে খোঁজ।
ফিরে আসবে না বলে তুমি লিখলে না ফেরার অপেক্ষার গান
দূরের দেশে আমার মতো কেউ কি তাকিয়ে বেমালুম নিবেদন প্রাণ।
বৃষ্টির পাখোয়াজ
আলো মাখা রোদে বৃষ্টি এলো ঘাসফড়িংয়ের মাঠে
ভেজা শহরে দোয়েল ছানা ছায়া হয়ে আঁকে
রিকশার হুড তুলে তোমার বাড়ি ফেরার ঘড়ি
দূরের টঙে একদল চিত্রল কিশোর;
. চায়ের কাঁপে চুম্বন খেলে জলরাশি।
মুষলধারার শেষরাতে বেলকনিতে জলের পাখোয়াজে
. বিভোর পুত্র আমি, নগ্ন পায়ে হাঁটি
মা, মনে পড়ে আমাদের মধ্যবিত্ত ঘরে ঝমঝমে রাত;
. ভয় পাওয়া বিজলি পতনের গাঁয়ে
অপেক্ষায় থাকতে জেগে। এখন সকল ভয়ের সাথে
তুমিও চলে গেছ অরূপ তারাদের মাঠে।
হেমন্তের মা ও কন্যারা
বর্ষা শেষে আমাদের এজমালি পুকুরের জল কমতে শুরু করে
মক্তব ফেরার পথে কুয়াশা ছাপিয়ে জেঁকে বসে সূর্য।
হিসাব রাখি, বেড়ালতা গাছের শাখায় কতখানি জল রোজ কমে
হাটবারে বাজানের সাইকেল যখন শিবু কাকার ক্ষেতের আইলে
এঁকেবেঁকে ছোটে। আমি তখন পাখি হই। দেখি সবুজ ক্ষেত
মায়ের নাকফুলের মতো সোনালি বাতাসে দোলে।
ও! হেমন্তে কিন্তু মায়ের হাত-পা কেমন যেন শুকিয়ে
মকবুল হুজুরের মাটির ঘরের মতো হয়ে যেতো।
কত ছবি এঁকেছি মায়ের হাত ও পায়ের বুকে নখ দিয়ে।
এখন বেশ হাসি পায় হেমন্তের সন্ধ্যায় মায়ের কথা মনে পড়লে,
আবার চোখও মুছতে হয় অজান্তে, নাগরিক শীত আসার আগের দিনগুলোয়।
সদ্য জন্ম নেওয়া তোমার কন্যাসন্তান, সে-ও তো আমার বুকপকেটের মা।
খেয়াল রেখো হাত-পায়ে
বিলেতি প্রসাধনীতে লুকিয়ে রেখো হেমন্তের শুকনো রুমাল।
হিমস শহরের প্রার্থনা
তোমাকে বলার মতো শব্দাবলি শূন্যের আত্মপ্রতিকৃতি হয়ে
আহেলিয়া থেকে ট্রাম্পের আঙুলের ভাঁজে সর্বত্র
রুধির মেঘ ঘুরে বেড়ায়―
উত্তরে
দক্ষিণে
. পূর্বে
. পশ্চিমে
তোমাকে শিকার করার অহংকারে, আজ শুধু এইটুকু ফরিয়াদ
গায়েবি বিশ্বাসের শক্তির দখলদারিত্বে নয়
মানুষের ছায়ার শ্লোকে ভাসুক অখিলের মেঘ―
. উত্তরের মানুষ
. দক্ষিণের মানুষ
. পূর্বের মানুষ
. পশ্চিমের মানুষ
আমার জাদু অথবা তুমি
নদী, তুমিও কি ভুল বোঝো ইদানীং
তোমার পাড়ে ডাংগুলির দিনে
আমার মন পড়ে থাকে শিমের মাচায়
ফুলের বেণি, নাকি উষসীফুলের ডালে?
শুনেছি দূরের গ্রামে হাটবারে সার্কাস বসে
জাদু ভেলকিও জানে কেউ কেউ বাজারে।
তাতে কী?
আমার জাদু মক্তবের রেহেলে মুখস্থ করি
আমপারা পাঠে তোমার তালে তালে।