আঁধারেও চোখ জ্বলে
আমি এতটা পেছনে ফেলে এসেছি
. ফিরে যাওয়া যাবে না!
মরুদেশের বালু এখন উর্বর হয়েছে
তবুও যেতে পারবো না আমি!
সর্বনাশ ও ক্ষতি হবে
. —সেজন্য নয়,
অকল্যাণ ও অনিষ্ট হবে
. —সেজন্য নয়,
একবার ফিরে এলে আর যাই না—
কোথাও যাই না!
এ আমার সঙ্গীতের বিশেষ রাগের নাম—
আমি আমার দ্যোতনা ধরে রাখি
. নিজের তৈরি বাঁশের বাঁশিতে,
কোনটা অপমান—কোনটা নষ্ট গান
. কান ভরার আগে,
আমার বোধ আমাকে উদ্দীপিত করে—
বিড়ালজাতীয় প্রাণীর মতন
আঁধারে আমারও চোখ জ্বলে!
অভিকর্ষ
সিঁড়ির নিচের খোপে আমি এক ডানাভাঙা কবুতর
ছটফট করছি!
. নিষ্ঠুর নির্দয় আঘাতের কারণে
আমার যে ক্ষত থেকে রক্ত ঝরছিল
. —চুঁইয়ে চুঁইয়ে,
সেই রক্তঝরা এখনো থামেনি!
সামনের কলসের জল পান করতে পারছিনে
এমন ব্যবস্থায়—
. পরিত্যক্ত আমি,
কেউ যে আমাকে ঝাঁট দিয়ে তুলে নেবে
সে রকম লোকও নেই!
রাস্তায় রাস্তায় মোম ফেরি করে যে লোকটা
তারও দৃষ্টি নেই,
আজীবন প্রজ্জ্বলিত করে রাখবে অগ্নি—
. এমন শপথ নিয়েছির যে লোকটা,
তারও অভিকর্ষ নেই—আমার অভিমুখে!
উল্টে পড়লে
নিজের চেয়ার থেকে উল্টে পড়ে যাও
দেখবে কী হয়!
আইডেন্টিফিকেশন নেই—
. তুমিও উধাও বহুখান থেকে!
যারা দুধ জমানো বরফের মিষ্টি খাবার
খাওয়ার জন্য আসতো,
. তাদেরও দেখা পাবে না!
মনরক্ষী অনেকে দেওয়াল টপকে
পালাতে থাকবে!
রসদ ভাণ্ডার নিঃশেষ হলে—
দুর্ভিক্ষ ও দুরবস্থার মধ্যে পড়লে
আত্মসমর্পণের জায়গাও কমে যাবে!
অমাবস্যা রাতে ফাজিল ও বখাটেরা কিলবিল করবে,
তার মধ্যে দিয়ে হাঁটতে হবে
হাঁটার সময়ে আলুলায়িত ও বিশৃঙ্খল হলে
. লাবড়া ও ঘণ্টা হয়ে যাবে!
চকচকে ও ধারালো বঁটি
ধার করলেও ধার থাকে না যে বঁটির
তাকে রসুইঘরে রাখছি কেন?
‘ও আমার বঁটি
. কোন কামার বানাইলো তোরে কী দিয়া?’
লোহাও নকল!
আজকাল নকলের রাজত্ব!
ব্যঞ্জন রন্ধনের উপযুক্ত শাকসবজি কাটতে না পারলে
ক্ষুধা মিটাবো কীভাবে?
আপেল নাসপতি থাকে না আমার ঘরে!
বঁটির ধার না থাকলে
. আহারের আয়োজন না করতে পারলে—
বদন ও বদনা দু’টোই ফুটো হয়ে যায়!
ঘরে অন্তত একটা বঁটিও থাকবে না—
. চকচকে ও ধারালো?
আমার বাড়িতে কি শুধু বঁটির এমন অবস্থা?
নাকি বঁটি নিয়ে নাস্তানাবুদ অনেকে এ-তল্লাটে!
দহনকাল
ফুরিয়ে গেলে যা হয়
. শূন্যকলস পড়ে থাকে,
. তা তখন বেশি বাজে!
আবার তখন কেউ কেউ বেশি সাজে!
সাজার বেলা যখন ফুরিয়ে যায়—
তখন আরও বেশি
ছেদনকারী হয়ে ওঠে,
নিজের বাগানে ফুল
. যদি না ফোটে—
তখন নিজের আবর্জনায় ডুবে যায়,
ঝাঁট দেওয়ার মতো ঝাঁটা হাতে থাকে না!
তখন শুধুই
. কপাল চাপড়ানো,
নিজের হাত নিজে কামড়ানো!
আর তখনই—
কোনো হুঁশজ্ঞান থাকে না!
নিজের ভূষণ
যাওয়ার চেয়ে না যাওয়া ভালো!
নিজের উঠানে
মেঘের আনাগোনার মাঝেও থাকা ভালো,
. নিজের ভূভাগে থাকা ভালো!
নিজের জলের আধারে অবগাহন করা ভালো।
ওখানে গিয়ে—
উপেক্ষার টুকরো পাথর হওয়ার চেয়ে
. —না যাওয়া ভালো।
ওখানে গিয়ে
তাচ্ছিল্যের বোঝা বাড়ানোর চেয়ে
. —না যাওয়া ভালো।
ওখানে গিয়ে
অপমানের দাগ লাগোনোর চেয়ে
. —না যাওয়া ভালো।
ওখানে গিয়ে
ক্ষতচিহ্নে মাছি বসানোর চেয়ে
. —না যাওয়া ভালো।
তোমার নিজের ভূষণ, রত্ন ও অলঙ্কার
কাউকে নষ্ট করতে দিও না!
হতবিহ্বল
লেজ খসিয়ে যাই
. গিয়ে পরি তাদের পোশাক!
মুখে তুলে নিই খাদ্যকণা
কতজনা!
বায়ুতাড়িত বৃষ্টির ঝাঁপটা গায়ে
ঝিঁঝিঁ ধরা পায়ে,
. মন উচাটন!
কিসের ধনী, কিসের ধন!
ছিটেফোঁটা পেলেই—তারাই বাপ!
ঝাঁপটা খেয়ে খুলি ঝাঁপ!
বেতনির্মিত ঝুড়িতে ফল ও পানীয়
তা দেখে হতবিহ্বল!
মেশার নামে, পেশার নামে, নেশার নামে—
. ভুলে যাই নিজের আকার,
. ভুলে যাই নিজের ইকার,
কোনটা আনন্দ—কোনটা বিকার!
নিজের পক্ষে যুক্তি তুলি
আগের যুক্তি ফেলে,
. পাতে এখন মাছের ঝোল,
শুটকির বদলে
. পাওয়া যাচ্ছে গোস্ত!
একসাথে চলো যাই দোস্ত!
নিজের উঠানে দাঁড়িয়ে থাকার
মুরোদ হলো না,
. পুরুত এখন ডাকে!
নিজের ভাষা ভুলে গিয়ে
মাসির ডাকে ভুলে যাই মাকে!
বন্ধু গেলো!
তুমিও যাবে? খাবে খাবার!
. আগের রক্ত বহমান হলে
নিজেও দিতে দাবার!
এখন নিজের মুখে কী যে তোলো!
সকালবেলা যে পোশাক পরো,
. বিকালবেলা তা খোলো!
মারহাবা! মারহাবা!
হচ্ছো গুটি! খেলছে কারা দাবা!
সবকিছু আজ ভোলো! সবকিছু আজ ভোলো!
গেরিলা প্রস্থান
যা দিয়েছিলে—ফেরত নাও
রেখে দেওয়ার গরজ নেই!
ভুল ঠিকানা—ভুল মানুষে
. পীড়াদায়ক,
সহ্য করা যাচ্ছে না তো!
গ্রীষ্মকালে আরও তাপ
শান্তি নেই—মসলা বনে,
জ্বর বেড়েছে মাথা গরম!
তোমার সাথে বীজকোষের
খেলা এখন সাঙ্গ হবে,
. চাই গেরিলা প্রস্থানও!
পরিযায়ী পাখি
পরিযায়ী পাখি
তীব্র শীত অনুভব হলে—
আমার নিঝুম দ্বীপে এসো
. খড়মের খড়খড় শব্দ শুনবে না!
টাঙ্গুয়া হাওর ও বাইক্কার বিলে এসো
কোনো লুণ্ঠনকারীর ঘোড়ার খুরধ্বনিও শুনবে না!
সোনাদিয়া কিংবা পদ্মা তীরে—
তীব্র শীতেও জ্বালাবো না জ্বালানি কাঠ,
. ধোঁয়ায় তোমার যদি কোনো কষ্ট হয়
. —ও অতিথি পাখি!
কোনো বেয়াদব বাদ্যযন্ত্র বাজাবে না!
নিরাপত্তা যখন-তখন যেখানে-সেখানে, উধাও হয়েছে—
এখানে হবে না!
নিরাপদ আশ্রয়টুকু তোমাকে দেব—
চোর ও লম্পট হওয়ার কোনো দাগ নেই, আমার ললাটে!
লালসায় দুর্বিনীত হইনি এখনো!
পরিযায়ী পাখি—
তুমি তীব্র শীতে, ঠাণ্ডা ও বরফে থাকতে পারছো না
. —সাইবেরিয়ায়
. তিব্বতের হ্রদে,
মঙ্গোলিয়ায় কিংবা অন্য কোনোখানে!
গানে গানে আমার এখানে চলে এসো
উদ্দীপ্ত বিশ্বাসে,
পরিশ্রান্ত হয়ে আসার পরই—অবসাদ কেটে যাবে
. আগের মতন।
আমাদের উদার ঔদার্য ভালোবাসা
তুষারাবৃত হয়নি এখনো কিংবা হিমাঙ্কের নিচেও যায়নি!
খুঁটি
লাঠি ভর দিয়ে খুঁড়িয়ে চলা লোকটাও
একদিন দৃঢ়পায়ে হাঁটতো, এখন তার
ত্বকের ওপর কালো দাগ, দাড়িতে
বরফের আস্তরণ, তারপরও সে সামুদ্রিক
লবণের গন্ধ নিতে বের হয়—আর তুমি
এতটা নেতিয়ে গিয়েছ—তরুণ বয়সে,
যেন ঘরের নড়বড়ে খুঁটি, তোমার ওপর
ঘরের বাসিন্দারা ভরসা রাখতে পারছে না!